সম্পাদকীয়

আসল ম্যাজিশিয়ান

কোনও কোনও পাওয়া, না-পাওয়ার চেয়েও বেদনার এবং অস্বস্তিকর। এমনই এক অনাকাঙ্ক্ষিত প্রাপ্তিযোগ ঘটেছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির। কোনও সন্দেহ নেই, এই প্রথম কোনও অকংগ্রেসি সরকার টানা তিনবার বসল দিল্লির তখতে; নেহরুর রেকর্ডও ছুঁয়েছেন, কিন্তু এমন হ্যাটট্রিকের কীর্তিস্থাপনের দিনেও মোদির মুখের হাসি চওড়া কিংবা কোনোভাবে উজ্জ্বলও দেখায়নি। তার কারণ, লোকসভায় ‘ম্যাজিক সংখ্যার’ চেয়ে অনেক আগেই বিজয় রথ থেমে গিয়েছে বিজেপির। গ্যাপ ৩২ ধাপের, এতটা খাড়াই পথ মোদিকে টেনে নিয়ে চলেছে এনডিএ নামক গেরুয়া জোটের বাকি শরিকরা। অর্থাৎ এক দশক পরে নিজের কোমরের জোরে চলাফেরা করার দম খতম হয়ে গিয়েছে বিজেপির। শরিকদের মধ্যে আছেন আবার এমন দু’জন যাঁদের উপর মোদি এক মুহূর্তের জন্যও ভরসা করতে পারেন না। টিডিপি সুপ্রিমো চন্দ্রবাবু নাইডু এবং জেডিইউ শীর্ষনেতা নীতীশ কুমারের সঙ্গে সর্বক্ষণ শেয়ানে-শেয়ানে কোলাকুলি চলবে তাঁর। গতবার বিজেপির একার ছিল ৩০৩ জন এমপি। এবার সেই সংখ্যা ৩৭০-এ নিয়ে গিয়ে, এনডিএ’কে চারশো পার করে দেওয়ার দায়িত্ব নিজেই কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন মোদি। কিন্তু পদ্মের প্রতিনিধিরা মাত্র ২৪০-এই মুখ থুবড়ে পড়ায়, এনডিএ থমকে গিয়েছে ২৯০-এর কাছাকাছি পৌঁছে। ফলে শুধু একটা দম ফুরনো টাইপের সরকারই বসেনি, সংসদে বিরোধী পরিসরট‍াও হয়ে উঠেছে চনমনে। যে পার্টির অঙ্গীকার ‘কংগ্রেস-মুক্ত’ ভারত নির্মাণ সেই মোদির দলকেই এবার লোকসভায় একজন ‘বিরোধী দলনেতাকে’ মেনে নিতে হয়েছে। এক দশক বাদে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীকে বিরোধী দলনেতা পদে বরণ করে নিয়েছে অষ্টাদশ লোকসভা। মোদি যেহেতু গণতন্ত্রে সামান্যতম আস্থাও রাখেন না, সেই দার্শনিক ভাবনা থেকে এই ঘটনাকে তিনি নিঃসন্দেহে তাঁঁর ‘পরাজয়’ হিসেবেই দেখেন। সহজ অনুমান এই যে, ঠিক এই কারণেই সংসদের যৌথ অধিবেশনে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর অভিভাষণে ভারতীয় গণতন্ত্রের এই ইতিবাচক পরিবর্তিত পরিস্থিতির কোনও উল্লেখ ছিল না।
এবার বিজেপিকে সামনে রেখে গোটা গেরুয়া শিবির বা এনডিএ’কে সমঝে দিল কেন জনতা? মোদি তো বটেই, সকলেই জানেন, এর প্রধান কারণ—দেশের বেহাল অর্থনীতি এবং দেশজুড়ে নানাবিধ অস্থিরতা। একদিকে বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম, অন্যদিকে বাড়ছে বৈষম্যের তীব্রতা ও বিভাজনের রাজনীতি। ‘ভগবান রামচন্দ্রের কৃপায়’ ভোটে নেতৃত্ব রামধাক্কা খাওয়ার পরেও কি শুধরেছেন মোদি স্বয়ং? দেশবাসী এখনও তার কোনও লক্ষণ, নমুনা খুঁজে পেয়েছে বলে মনে হয় না। অনেকের বক্তব্য, নতুন সরকার গঠনের পরেও মোদি প্রশাসন আঁকড়ে রয়েছে প্রবাদে ও শাস্ত্রে বর্ণিত তার ‘অঙ্গার চরিত্র’!
এহেন রাজনৈতিক ভাবনায় সম্পৃক্ত এবং সংস্কৃতি-দর্শনে পুষ্ট দলের পক্ষে ভারতীয় গণতন্ত্র মোটেই সুবিধাজনক নয়, কেননা তাকে বার বার জনগণের সামনে ভোটের জন্য করজোড়ে গিয়ে দাঁড়াতে হয়। যেমন সম্প্রতি বিভিন্ন রাজ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছে মোট ১৩টি বিধানসভা আসনের উপনির্বাচন। কিন্তু উত্তরাখণ্ড থেকে তামিলনাড়ু, হিমাচল প্রদেশ থেকে পশ্চিমবঙ্গ, পাঞ্জাব থেকে বিহার—প্রায় কোথাওই দাঁত ফোটাতে পারেনি পদ্ম প্রতীক। বিরোধীদের মহাজোট ‘ইন্ডিয়া’র দাপটের সামনে স্রেফ ধরাশায়ী হয়ে গিয়েছে বিজেপিসমেত এনডিএ! সোজা কথায়, সঙ্কট বাড়ছে নরেন্দ্র মোদির। শনিবার প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, দশটি আসন জিতেছে ‘ইন্ডিয়া’। মাত্র দুটি আসনে কোনোমতে মুখরক্ষা হয়েছে মোদির পার্টির, তার মধ্যে মধ্যপ্রদেশের অমরওয়ারায় জয় এসেছে ৩,০২৭ ভোটের ব্যবধানে। আর হিমাচল প্রদেশের হামিরপুরে বিজেপির জয়ের মার্জিন মাত্র ১,৫৭১ ভোটের। এদিকে, বিহারের রুপৌলিতে একেবারেই স্থানীয় স্তরের এক নির্দল প্রার্থী হারিয়ে দিয়েছেন নীতীশের বাজিকে। সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ হল, চারধাম প্রকল্পের নির্মাতা মোদিকে হারিয়ে দিয়েছেন খোদ বদ্রীনাথের ভোটাররাই। উত্তরাখণ্ডে সরকারে রয়েছে বিজেপি। অভিন্ন দেওয়ানি বিধি আনা হচ্ছে সেখানে। তারপরেও এই পাহাড়ি রাজ্যের দুই আসনেই গোহারা হল গেরুয়া শিবির। পশ্চিমবঙ্গে সব আসনেই বলে বলে জয় ছিনিয়ে নিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। পাঞ্জাবের জলন্ধর পশ্চিমে বিজেপি পুওর থার্ড! তামিলনাডুর বিক্রাবান্দিতে এনডিএ শরিক পিএমকে প্রার্থীকে বিপুল ভোটে পরাস্ত করেছে ‘ইন্ডিয়া’ শরিক ডিএমকে। এদিনের ফলাফল পরিষ্কার করে দিয়েছে যে, বিজেপি তার নিজের ভোটব্যাঙ্কই ধরে রাখতে ব্যর্থ, এনডিএ শরিকদের শক্তি জোগাবে কোত্থেকে? লোকসভা ভোটে রামরাজ্যের অযোধ্যায় জোর থাপ্পড়ের পর বদ্রীনাথধামও বুঝিয়ে দিয়েছে কেবল মেকি হিন্দুত্ব দিয়ে আর যাই হোক মানুষের মন জেতা যাবে না। মানুষ নিজের ভুল বুঝতে শিখেছে, কৃতকর্মের জন্য অনুশোচনা বোধও তার তীব্র হয়েছে নিশ্চয়। অনুশোচনা মানুষকে শোধরাতে প্রাণিত করে। মানুষ সত্যিই জেগে উঠলে কীসের ‘মোদি ম্যাজিক’? মানুষই আসল ‘ম্যাজিশিয়ান’! 
1Month ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

উপস্থিত বুদ্ধি ও প্রখর অনুমান ক্ষমতার গুণে কার্যোদ্ধার। ব্যবসা, বিদ্যা, দাম্পত্য ক্ষেত্রগুলি শুভ।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.১৩ টাকা৮৪.৮৭ টাকা
পাউন্ড১০৮.৩২ টাকা১১১.৮৭ টাকা
ইউরো৯১.২৫ টাকা৯৪.৪৩ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
5th     September,   2024
দিন পঞ্জিকা