সম্পাদকীয়

অর্ধেক আকাশ মেঘাচ্ছন্ন

এক চরম দ্বিচারিতা চলছে যুগ যুগ ধরে। একদিকে নারী দেবতাজ্ঞানে পূজিতা হচ্ছে, অন্যদিকে গর্ভধারিণী মায়ের প্রসব যন্ত্রণা, সমাজ-সংসারে মেয়েদের ভূমিকা, নারীশক্তি, নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে গল্প-কবিতা-উপন্যাসে, রাজনৈতিক নেতাদের বক্তৃতায়, সরকারি পরিকল্পনার সুনামিতে ভেসে যায় দেশ-কাল-সমাজ। তবু বহু মেয়ে আজও সেই ‘দ্বিতীয় শ্রেণির’ নাগরিক হয়েই রয়ে গিয়েছে! এদেশে, দুনিয়ায়। খুব সম্প্রতি ‘ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরাম’ লিঙ্গ বৈষম্যের যে তালিকা প্রকাশ করেছে তাতে এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীদের নিয়ে দ্বিচারিতার ছবিটা একেবারে দিনের আলোর মতো স্পষ্ট। প্রমাণিত, নারী-পুরুষের লিঙ্গ সাম্যের ভাবনা সোনার পাথরবাটি ছাড়া আর কিছু নয়। ওই রিপোর্ট বলছে, শিক্ষা, কর্মনিযুক্তি, স্বাস্থ্য ও রাজনৈতিক ক্ষমতার মাপকাঠিতে নারী-পুরুষের যে ব্যবধান তাতে বিশ্বের ১৪৬টি দেশের মধ্যে মোদির ভারতের স্থান ১২৯তম। গতবার ছিল ১২৭। বৈষম্যের নিরিখে ভারতের স্থান এখন বাংলাদেশ, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ভুটানেরও নীচে। অথচ বৈষম্য কমিয়ে যে দশটি দেশ তালিকার শীর্ষে উঠে এসেছে তার মধ্যে নিকারাগুয়া, নামিবিয়ার মতো অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া দেশও রয়েছে! আসলে কেউ মুখে বললেই বা প্রচার করলেই নারী-পুরুষের সমানাধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় না। এ জন্য দরকার সংশ্লিষ্ট দেশের যাবতীয় সম্পদ ও সুযোগ নারী-পুরুষের মধ্যে সমানভাবে বণ্টন করার সুনির্দিষ্ট প্রশাসনিক পরিকল্পনা ও শাসকদের সদিচ্ছা। মজার কথা হল, এই সুসংহত উন্নতির জন্য চলতি শতাব্দীর গোড়ায় ২০৩০ সালকে লক্ষ্যপূরণের সময়সীমা ধার্য করা হয়েছে। কিন্তু রিপোর্ট বলছে, ২০৩০ নয়, নারী-পুরুষের মধ্যে সাম্য বা সমানাধিকার আনতে আরও ১৩৪ বছর সময় লেগে যাবে! 
তালিকার সামনের সারিতে থাকা দেশগুলি আগামী শতাধিক বছরের মধ্যে যদিও-বা এই অসাম্য দূর করার স্বপ্ন দেখাতে পারে, ৩৩ কোটি দেবতার দেশ ভারত এই সময়কালে আরও পিছিয়ে পড়বে কি না সেই সঙ্গত প্রশ্ন উঠছে। কারণ, শাসকের পরিকল্পনার অভাব। এটা ঠিক, ভারতের রাষ্ট্রপ্রধান একজন মহিলা। কিন্তু সংসদ বা প্রশাসনের ভিতরের দিকে তাকালেই মহিলাদের ক্ষমতায়ন নিয়ে গেরুয়া শাসকগোষ্ঠীর ‘মায়াকান্না’টা ধরা পড়ে যায়। যেমন, বিগত সরকারে মাত্র ১০ জন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ছিলেন মহিলা। ৫৪৩ আসনের লোকসভায় গতবার মহিলা সাংসদের সংখ্যা ছিল ৭৮ (১৭ শতাংশ)। এবার মহিলা সাংসদের সংখ্যা কমে হয়েছে ৭৪ (১৩.৬ শতাংশ)। ধরা যাক দেশের স্থল, নৌ ও বিমানবাহিনীর কথা। এখানে নারীশক্তির অনুপাত যথাক্রমে ৩.৮ শতাংশ, ৬ শতাংশ, ১৪ শতাংশ। আবার, সুপ্রিম কোর্টে মহিলা বিচারপতি রয়েছেন ৯.০৯ শতাংশ, হাইকোর্টগুলিতে ১৩.৫ শতাংশ। ৭৭ বছরের স্বাধীন দেশে মেয়েদের ক্ষমতায়ন কতটা হয়েছে তার অজস্র উদাহরণ রয়েছে। ছবিটা করুণ। যেমন, সাক্ষরতায় পুরুষ-নারী ফারাকের নিরিখে ভারতের স্থান বিশ্বে ১১২তম। কলেজ শিক্ষায় সুযোগের তফাতের ক্ষেত্রে ভারতের স্থান ১০৫। সাক্ষরতার হারে পুরুষের চেয়ে মেয়েরা পিছিয়ে রয়েছে ১৭.২ শতাংশ। শিক্ষার মতো অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে লিঙ্গ সমতার প্রশ্নে ভারত রয়েছে বিশ্ব তালিকার তলানিতে (৩৮.৮ শতাংশ)। অসংগঠিত ক্ষেত্রে একই শ্রম দিয়েও পুরুষের অর্ধেক মজুরিও পান না মহিলারা। এদেশে ১৫-৪৯ বছর বয়সের প্রায় ২০ শতাংশ মেয়ের ওজন প্রয়োজনের চেয়ে কম, ৫৩ শতাংশ মেয়ে ভোগেন রক্তাল্পতায়। এ কার লজ্জা?
এসব তথ্য পরিসংখ্যান রিপোর্ট প্রায় সকলেরই জানা। ট্রাজেডি হল, যাঁরা প্রশাসনের মাথায় বসে আছেন তাঁদের অধীনস্থ কর্তারাই সমীক্ষা চালিয়ে এইসব তথ্য তৈরি করে বৈষম্যের ছবিটা সামনে আনেন। ঘটনা হল, ক্ষমতাসীন শাসক এইসব অন্যায় অবিচার অস্বীকার করতে যতটা তৎপর থাকেন, বৈষম্য দূর করতে তার সিকিভাগ তৎপরতাও দেখাননি, তবে ভোট এলে এঁরাই ‘মেয়েদের কথা’ ভেবে কিছু অনুদান বিলির কথা ঘোষণা করেন। নারীর ক্ষমতায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট চান। আবার নারী স্বাধীনতা, স্বাধিকার, সম্মান, নিরাপত্তার মতো শব্দগুলো স্বাধীনতা দিবস কিংবা সাধারণতন্ত্র দিবসের সকালে প্রবল আবেগে, কাঁপাকাঁপা গলায় জনগণের উদ্দেশে ভাসিয়ে দেন! এর উল্টোদিকে, সারা বছর ধরে বাল্য বিবাহ, অকাল মাতৃত্ব, ধর্ষণ, গার্হস্থ্য হিংসা, কর্মক্ষেত্রে শ্লীলতাহানির মতো ঘটনার ঘনঘটায় সকাল হয় দেশে। অভিযোগের আঙুল ওঠে অনেকসময় সেই ধারক-বাহকদের বিরুদ্ধেই। আসলে রাজনীতির ঘরেই নারীর প্রতি বৈষম্যের বাস। তাই রাজনীতির পথেই তা দূর করতে হবে। এর জন্য দরকার সদিচ্ছা, ঢক্কানিনাদ নয়। না হলে অর্ধেক আকাশ অনন্তকাল অন্ধকারেই ঢাকা থাকবে। 
 
2Months ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

উপস্থিত বুদ্ধি ও প্রখর অনুমান ক্ষমতার গুণে কার্যোদ্ধার। ব্যবসা, বিদ্যা, দাম্পত্য ক্ষেত্রগুলি শুভ।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.১৩ টাকা৮৪.৮৭ টাকা
পাউন্ড১০৮.৩২ টাকা১১১.৮৭ টাকা
ইউরো৯১.২৫ টাকা৯৪.৪৩ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
5th     September,   2024
দিন পঞ্জিকা