সম্পাদকীয়

হিটলারি ফতোয়া!

লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে সংখ্যালঘু মুসলিম বিপদ বোঝাতে হিন্দু নারীদের মঙ্গলসূত্র খোয়ানোর ভয় দেখিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বলেছিলেন, কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে নাকি হিন্দু নারীদের মঙ্গলসূত্র, সোনা-দানা নিয়ে মুসলিমদের তা দিয়ে দেবে। এবার ঘুরপথে খাবারের দোকানের মালিকদের পরিচয় জানানোর ফতোয়া জারি করে কোনটি হিন্দু এবং কোনটি বা মুসলিম পরিচালিত দোকান তা শিবভক্ত পুণ্যার্থীদের নজরে আনতে চাইল বিজেপি শাসিত তিন রাজ্যের সরকার! গেরুয়াবাহিনীর বিভাজন তৈরির এই নতুন কৌশলের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে প্রায় সব বিরোধী রাজনৈতিক দল। এমনকী কেন্দ্রের দুই মন্ত্রী তথা এনডিএ সরকারের দুই শরিক দলের নেতাও এই বিভেদ সৃষ্টির অপচেষ্টার বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। তাতে অবশ্য কেন্দ্র বা সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারগুলির কোনও অনুতাপ নেই। বরং দেখা যাচ্ছে, হিন্দি-হিন্দু-হিন্দুস্তানের স্লোগান তুলে লোকসভা নির্বাচনে যে উত্তুঙ্গ সাম্প্রদায়িক প্রচার শুরু করেছিল মোদিবাহিনী, ভোটের ফলাফলে তাতে চরম ধাক্কা খেলেও কোনও শিক্ষাই নেয়নি শাসকগোষ্ঠী। ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী, শ্রাবণ মাস শুরু হলেই বাঁক কাঁধে শিব মন্দির যেতে শুরু করেন বহু হিন্দু পুণ্যার্থী। গোটা দেশেই বর্ষায় এই ছবি অত্যন্ত পরিচিত। এমনই এক যাত্রার নাম ‘কাঁওয়ার যাত্রা’, যা শুরু হয়েছে সোমবার থেকে। হরিদ্বারের গঙ্গা থেকে বাঁকে করে জল নিয়ে যাঁরা ঘরে ফেরেন তাঁদের ‘কাঁওরিয়া’ বলে। এই যাত্রায় তাঁরা ‘কাঁওয়ার’ বলে পরিচিত। উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড সহ আশপাশের রাজ্য থেকে প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ পুণ্যার্থী প্রায় ২৪০ কিলোমিটার কাঁওয়ার যাত্রায় অংশ নেন। যাত্রাপথে হাজার হাজার হোটেল, রেস্তরাঁ, খাবারের স্টল, চায়ের দোকান, ফলের দোকান রয়েছে, যার মালিক হিন্দু, মুসলমান সহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ। প্রথমে যোগী আদিত্যনাথের উত্তরপ্রদেশ সরকার, পরে পুষ্কর সিং ধামির উত্তরাখণ্ড সরকার ফতোয়া জারি করে বলেছে, দোকানের সাইনবোর্ডে মালিক ও কর্মচারীদের নাম লিখে রাখতে হবে। এতে উৎসাহিত হয়ে মধ্যপ্রদেশের উজ্জয়িনী পুরসভাও সেখানকার মহাকাল মন্দিরের যাত্রাপথের দোকানদারদের জন্য প্রায় একই নির্দেশিকা জারি করেছে। এখানে আবার নামের সঙ্গে ফোন নম্বরও লিখতে বলা হয়েছে। নির্দেশ অমান্য করলে হাজার হাজার টাকা জরিমানার কথাও বলা হয়েছে। 
নির্দেশিকার বিষয়ে প্রতিটি ক্ষেত্রেই রাজ্যগুলির সাফাইয়ের ভাষা এক। পুণ্যার্থীরা যাতে তাঁদের পছন্দমতো খাবারের দোকান নির্বাচন করতে পারেন, খাবারের গুণমান সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হন— তাই এই ব্যবস্থা। সাফাই শুনে মনে হতে পারে উদ্দেশ্য মহৎ। কিন্তু এই নির্দেশিকা এতই বালখিল্য যে তা নিয়ে বিশেষ আলোচনার প্রয়োজন হয় না। নির্দেশ জারির কারণ হিসেবে যেসব যুক্তি দেওয়া হয়েছে তাও একেবারে ছেলেভোলানো। তবু বিজেপি শাসিত এই তিন রাজ্য সরকারের দেওয়া নির্দেশিকার কারণ সমূহকে তর্কের খাতিরে যুক্তিগ্রাহ্য মেনে নিলেও প্রশ্ন ওঠে, গোটা দেশে যে লক্ষ লক্ষ খাবারের দোকান রয়েছে তার মালিক, কর্মচারীর নাম পরিচয় জানানোর জন্য মোদি সরকারের কি কোনও নির্দেশিকা আছে? যদি খাবারের গুণাগুণ বিচারের মাপকাঠি হয় দোকানের-মালিক কর্মচারীর নাম প্রকাশ করা, তাহলে কেন লক্ষ লক্ষ খাদ্যপণ্যের প্যাকেটের গায়ে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির মালিকের নাম রাখাটা বাধ্যতামূলক করবে না কেন্দ্রীয় সরকার? সেই দাবি কি তুলবেন যোগী, ধামিরা? আসলে এখানেই পর্দার আড়ালে থাকা আসল সত্যটা বেরিয়ে এসেছে। ভোটের বাজারে মোদির স্লোগান ছিল, ‘সবকা সাথ সবকা বিকাশ।’ অথচ গোটা প্রচারপর্বে সংখ্যালঘু, বিশেষত মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ উগরে দিয়েছেন মোদি-অমিত শাহরা। এখানেও খাতায় কলমে সব দোকান মালিককে নাম লেখার নির্দেশ দিলেও আসলে যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মালিকদের চিহ্নিত করে হিন্দু পুণ্যার্থীদের যেতে ‘সতর্ক’ করা হচ্ছে তা বোঝার জন্য কোনও দূরদর্শিতা থাকার দরকার নেই। আসলে এও একপ্রকার বিভাজনের ইঙ্গিত। জাতপাতের রাজনীতি। ইতিহাস বলছে, প্রায় ৯০ বছর আগে এই একই কৌশল দেখা গিয়েছিল নাৎসি জার্মানিতে। হিটলার একইভাবে দোকান বা সংস্থার মালিকের নাম লেখা বাধ্যতামূলক করে আসলে ইহুদিদের চিহ্নিত করে অর্থনৈতিকভাবে বিপন্ন ও সন্ত্রস্ত করে রাখার ব্যবস্থা করেছিলেন। 
এখানেও সেই তারই ইঙ্গিত মিলছে। তিন ডাবল ইঞ্জিনের রাজ্যে এই ফতোয়ায় হাজার হাজার মানুষ কাজ হারিয়ে পথে বসতে চলেছেন। এর মধ্যে শুধু মুসলমান নন, হিন্দুও আছেন। মূলত এই বিশেষ সময়ে যাত্রাপথে বহু মুসলমান পরিচালিত দোকানে হিন্দু যুবকযুবতীরাও কাজ করেন। আবার উল্টোটাও হয়। নির্দেশিকা হাতে পেয়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মালিকরা তাঁদের কর্মচারী হিন্দু ভাইদের বলে দিয়েছেন অন্য কোথাও কাজ দেখে নিতে। এই তালিবানি ফতোয়া নিয়ে কেন্দ্রীয়  সরকার মুখে কুলুপ এঁটেছে। রবিবার দিল্লিতে সর্বদল বৈঠকে এই প্রসঙ্গ উঠলে কার্যত তা এড়িয়ে গিয়েছেন রাজনাথ সিং, জেপি নাড্ডারা। যদিও আরএলডি নেতা ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জয়ন্ত চৌধুরি এবং লোক জনশক্তি পার্টির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী চিরাগ পাসোয়ান সরকারকে রাজধর্ম পালনের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। আশার কথা, সুপ্রিম কোর্ট দুই রাজ্য সরকারের দেওয়া নির্দেশিকার উপর অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ জারি করেছে। 
1Month ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

উপস্থিত বুদ্ধি ও প্রখর অনুমান ক্ষমতার গুণে কার্যোদ্ধার। ব্যবসা, বিদ্যা, দাম্পত্য ক্ষেত্রগুলি শুভ।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.১৩ টাকা৮৪.৮৭ টাকা
পাউন্ড১০৮.৩২ টাকা১১১.৮৭ টাকা
ইউরো৯১.২৫ টাকা৯৪.৪৩ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
5th     September,   2024
দিন পঞ্জিকা