সম্পাদকীয়

মোদির নয়া সঙ্ঘ-প্রীতি

জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীর হত্যার ঘটনার সঙ্গে নাম জড়িয়ে গিয়েছিল। এজন্য ১৯৪৮ সালে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন আরএসএস’কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। সেই নিষেধাজ্ঞা পরবর্তীকালে শর্তসাপেক্ষে প্রত্যাহার করে নেয় কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু সেই শর্তাবলি রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘ কতখানি মানে তা নিয়ে বিতর্কের অবকাশ রয়েছে। এই প্রসঙ্গে বিরোধীরা দাবি করে যে, আরএসএস ভারতের সংবিধান মানে না এবং তাদের নাগপুর সদর দপ্তরে কখনও ওড়ে না তিরঙ্গা জাতীয় পতাকা। এর ভিতরে, ১৯৬৬ সালে ইন্দিরা গান্ধীর সরকার আরএসএসের উপর চাপিয়ে দেয় অন্য একটি নিষেধাজ্ঞা। সেইসময় ‘গোহত্যা’র প্রতিবাদের নামে ব্যাপক অশান্তি হয়। সেই আগুন দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় ভীত হয়ে পড়ে সরকার। এর পিছনে আরএসএসের ইন্ধন ছিল বলেই মনে করত প্রশাসন। তাই বিশেষ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে সরকারি কর্মীদের আরএসএসে যোগদানের উপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। সেই নির্দেশকে মান্যতা দিয়েছিলেন দলে নরেন্দ্র মোদিরই পূর্বসূরি অটলবিহারী বাজপেয়ি। নিষেধাজ্ঞাটি তাঁর আমলেও বহাল ছিল। ৫৮ বছর পর সেটি চুপিচুপি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে অতিসম্প্রতি (৯ জুলাই, ২০২৪)।দশক পেরিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতার দুই শীর্ষ ব্যক্তিত্ব গুজরাতের সন্তান। গান্ধীজি এবং প্যাটেলও ওই প্রদেশের ভূমিপুত্র ছিলেন। মোদি রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেন কংগ্রেস-মুক্ত ভারত নির্মাণের সংকল্প নিয়ে। সঙ্গে সমানে সংগত করেন অমিত শাহও। এখানেই তাঁরা উভয়সংকট ছিলেন প্যাটেলকে নিয়ে। কেননা, তিনি ছিলেন নেহরুরই সমকক্ষ শীর্ষ কংগ্রেস নেতা এবং জনসঙ্ঘ-বিজেপির চালিকা শক্তি আরএসএস’কে নিষিদ্ধ করার হোতা। প্যাটেলের আরএসএস-বিদ্বেষের চ্যাপ্টার চেপে গিয়ে বিজেপি অন্য বিতর্ক উসকে দেয় যে, সর্দারকে নাকি কংগ্রেসে যথাযোগ্য মর্যাদা দেওয়া হয়নি! তাদের দাবি, নেহরুর বদলে প্যাটেল যদি সাতচল্লিশে প্রধানমন্ত্রী হতেন বা দেশের হাল ধরতেন তবে এমন নড়বড়ে হতো না ভারতের অবস্থা। ‘কাশ্মীর সমস্যা’ বলে কিছু অবশিষ্ট থাকত না এবং সীমান্ত বিরোধের অছিলায় চীনও যখন-তখন পাঙ্গা নেওয়ার হিম্মত দেখাত না ভারতের সঙ্গে। অতএব কংগ্রেসকে জুতসই গাঁথার জন্য, শতবর্ষ প্রাচীন দলটির ভিতরে স্থায়ী ফাটল সৃষ্টির জন্য, প্যাটেলের প্রতি অভূতপূর্ব শ্রদ্ধা নিবেদনের এক অত্যুচ্চ নাটক প্রদর্শিত হয়। নর্মদা নদীতীরে পৃথিবীর সর্বোচ্চ (প্রায় ৬০০ ফুট) প্যাটেল মূর্তির উদ্বোধনে বিজেপি দেশজুড়ে কতটা উদ্বোধিত হল, এমনকী গুজরাতেও—তা নিয়ে সংশয় বাড়ছে। সদ্য সমাপ্ত সাধারণ নির্বাচনের ফলাফল সেই সংশয় বৃদ্ধি করেছে অনেকটাই।
যথেষ্ট দিশেহারা বিজেপির সর্বভারতীয় নেতৃত্ব, সেই কারণেই, রাষ্ট্র পরিচালনায় আর নতুন কোনও এক্সপেরিমেন্টে যেতে চায় না, উগ্র হিন্দুত্বের একবগ্গা লাইন আরও বেশি করে আঁকড়ে ধরতে মরিয়া। নরেন্দ্র মোদি মাঝখানে দল, এমনকী আরএসএস’কেও অগ্রাহ্য করতে সাহসী হয়েছিলেন। অযোধ্যায় রামমন্দির উদ্বোধনে মোদির আধিপত্যবাদ এবং ভোটে ‘মোদির গ্যারান্টি’ নিয়ে আরএসএস-মোদির ঠান্ডা লড়াই প্রকাশ্যে চলে আসে। চরম বিপদ কানের পাশ দিয়ে কাটিয়ে ওঠার পরই মোদির নিশ্চয় সংবিৎ ফিরেছে। তিনি এবার আরএসএস’কে মেনে চলার জন্যই মনস্থির করেছেন। তার জন্য বার্তা দিতে উদগ্রীব হয়ে নিশ্চয় বাজপেয়িকেও ছাপিয়ে খেললেন তিনি। তৃতীয়বার ক্ষমতায় এসেই সরকারি কর্মচারীদের সঙ্ঘে নাম লেখানোর দরজা খুলে দিলেন মোদি। তাতে এক ঢিলে দুই পাখি মরবে—উগ্র হিন্দুত্বের বৃত্তটি সম্পূর্ণ হবে এবং শতবর্ষে ‘যথযোগ্য’ সম্মানজ্ঞাপনও করা হবে আরএসএস’কে। সরকারি কর্মী বাহিনীকে আদর্শগতভাবে পাশে পেয়ে গেলে আরএসএসের কর্মসূচির বকেয়াগুলির রূপায়ণে যে বিশেষ গতি আসবে তাতে সন্দেহ কী? স্বভাবতই সরকারের সিদ্ধান্ত নিয়ে উদ্বাহু বিজেপি নেতৃত্ব এবং অত্যন্ত খুশি সঙ্ঘের কর্তারাও। অন্যদিকে, সমালোচনায় মুখর হয়েছে কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস, বিএসপি, এআইএমআইএম প‍্রভৃতি। এই বিতর্ক একদিন থেমেও যাবে নিশ্চয়। কিন্তু এর ফলে দেশের যে বিশেষ ক্ষতির পথই প্রশস্ত হবে তাতে কোনও সংশয় নেই। ময়দানের রাজনীতি যাই হোক না কেন, বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের সৌন্দর্য আজও অটুট রেখেছে যে সরকারি প্রশাসন, সবচেয়ে বড় আঘাতটি আসতে পারে তার উপর। নষ্ট হতে পারে প্রশাসনের অভ্যন্তরে ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি। মনে আছে কি, স্বাধীনতার শতবর্ষের আগে ‘উন্নত’ ভারত নির্মাণের স্বপ্ন ফেরি করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। আরএসএস’কে শতবর্ষের শ্রদ্ধাঞ্জলি ভারতের স্বাধীনতার শতবর্ষের স্বপ্নভঙ্গের কারণ হবে না তো? 
1Month ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

উপস্থিত বুদ্ধি ও প্রখর অনুমান ক্ষমতার গুণে কার্যোদ্ধার। ব্যবসা, বিদ্যা, দাম্পত্য ক্ষেত্রগুলি শুভ।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.১৩ টাকা৮৪.৮৭ টাকা
পাউন্ড১০৮.৩২ টাকা১১১.৮৭ টাকা
ইউরো৯১.২৫ টাকা৯৪.৪৩ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
5th     September,   2024
দিন পঞ্জিকা