সম্পাদকীয়

ভারতরক্ষা নয় আত্মরক্ষা

সবকা সাথ সবকা বিকাশ। বিকশিত ভারত। আত্মনির্ভর ভারত। প্রধানমন্ত্রীর কুর্সি দখল করার আগে নরেন্দ্র মোদির মুখে শোনা গিয়েছিল স্থায়ী, স্থিতিশীল ও মজবুত সরকার। লক্ষ্যটা ছিল পরিষ্কার—ক্রমশ দুর্বল হয়ে আসা কংগ্রেস। নেহরু থেকে ইন্দিরা—স্বাধীনতা পরবর্তী টানা কয়েক দশক কংগ্রেসও মজবুত সরকারের স্থায়িত্বের কথা বলে দেশবাসীর মন জয় করেছিল। তাদের এই দাবির সত্যতা প্রতিষ্ঠা করে গিয়েছিলেন মোরারজি দেশাই। ইন্দিরা গান্ধীর একনায়কত্ব ও স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে প্রথমবার রায় এনে দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু গুজরাতের সুরাতের এমপি তাঁর সরকারটিকে দীর্ঘায়ু দিতে ব্যর্থ হন। ২৪ মার্চ, ১৯৭৭-এ ভূমিষ্ঠ দেশের প্রথম অকংগ্রেসি সরকারের অপমৃত্যু হয় ২৮ জুলাই, ১৯৭৯-তে—অর্থাৎ মাত্র সওয়া দু’বছর পর। আমরা জানি, দেশাই যে জনতা পার্টির নেতা—সেটি কংগ্রেস, কমিউনিস্ট, বিজেপির মতো কোনও রাজনৈতিক আদর্শের জায়গা থেকে তৈরি হয়নি। ইন্দিরা গান্ধীর জরুরি অবস্থার অল আউট বিরোধিতার জায়গা থেকে গড়ে ওঠা একটি মঞ্চেরই নাম ছিল জনতা পার্টি। দেশাইয়ের খিচুড়ি অতিদ্রুত ঘেঁটে যেতেই ফের ক্ষমতাসীন হন ইন্দিরা।
১৯৮৪ সালের ৩১ অক্টোবর শ্রীমতী গান্ধী নিহত হওয়ার পর তাঁর পুত্র রাজীব প্রধানমন্ত্রী হন অভূতপূর্ব জনাদেশ নিয়ে। ১৯৮৯-এর সাধারণ নির্বাচনে বোফর্স দুর্নীতির অপবাদ মাথায় নিয়ে রাজীবকে ক্ষমতার আসন থেকে দূরে সরে যেতে হয়। কিন্তু তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন পর পর যে দু’জন (ভিপি এবং চন্দ্রশেখর) তাঁরাও হতাশ করেন দেশকে অল্পদিনেই। ২১ মে, ১৯৯১ অনিবার্য হয়ে ওঠা অকাল নির্বাচনী প্রচার পর্বে রাজীবকে হত্যা করা হয়। তারপর থেকেই শুরু হয় কংগ্রেসে ক্ষয়িষ্ণুতার আসল পালা। চন্দ্রশেখরের পর কংগ্রেসের ‘চাণক্য’ নরসিমা রাও প্রধানমন্ত্রী হলেও তাঁর হাতেই শুরু হয় কংগ্রেসের জোট রাজনীতির হাতেখড়ি। পাঁচবছর বাদে নরসিমার বিদায়ের পর ফের তিনজন (অটলবিহারী বাজপেয়ি, দেবে গৌড়া, ইন্দ্রকুমার গুজরাল) অকংগ্রেসি প্রধানমন্ত্রী পেয়েছিল দেশ। বিজেপি নেতা বাজপেয়িকে হটিয়ে ২২ মে, ২০০৪ কংগ্রেসের ‘নিষ্কলুষ মুখ’ মনমোহন সিং প্রধানমন্ত্রী হন। তবে তিনিও ছিলেন ইউপিএ নামক এক জোটের নেতা। মনমোহন টানা দু’বার ইউপিএ সরকারে নেতৃত্ব দেন। কিন্তু তাঁকে যে শরিকদের কাছে সবসময় কুঁকড়ে থাকতে হয়েছে, সেটা আমরা জানি।
জোট সরকারের এই দুর্বলতাকেই বারবার আক্রমণ করেন ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে তামাম গেরুয়া শিবিরের মুখ নরেন্দ্র মোদি। কংগ্রেসের ‘অপশাসন’ এবং জোট সরকারের ‘বিপদ’—এই দুইয়ের মধ্যে পাল্লা দিয়ে চলেছিল মোদির আক্রমণের তীব্রতা। এনডিএ নামক জোটের নেতা হয়েও মোদি টানা দুটি টার্ম (২০১৪-২৪) যে সরকার পরিচালনা করেন তাতে বিজেপির একারই ছিল বিপুল গরিষ্ঠতা। ‘হ্যাটট্রিকে’ বিজেপিকে আরও শক্তিশালী দেখতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু এবার তাঁর জন্য দেওয়াল লেখা হয়েছে যে উল্টোভাবে! চব্বিশে তাঁর সরকার তৈরি হয়েছে নিখাদ এনডিএ হিসেবে, যেখানে বিজেপি ‘ম্যাজিক সংখ্যা’র থেকে ৩২ পিছিয়ে। সেই গ্যাপ পূরণ করে এবার আসল কিংমেকার দুই ‘মার্কামারা পাল্টিবাজ’—অন্ধ্র প্রদেশের চন্দ্রবাবু নাইডু এবং বিহারের নীতীশ কুমার। চন্দ্রবাবুর ঝুলিতে ১৬ জন এমপি এবং নীতীশের কব্জায় ১২ জন। অর্থাৎ চব্বিশে চলেছে আঠাশের খেলা। এই আঠাশ বিগড়ে গেলেই লোকসভায় মোদির ২৪০ পুরো ‘নেই’ হয়ে যেতে পারে। অতএব, আত্মরক্ষার মরণপণ সংগ্রামে অবতীর্ণ এবার স্থায়ী, স্থিতিশীল ও মজবুত সরকারের একদা ফেরিওয়ালা। মঙ্গলবার নির্মলা সীতারামন যে বাজেট পেশ করলেন তার ছত্র ছত্রে ফুটে উঠেছে এই আতঙ্কের ছাপ। সারা দেশকে বঞ্চনার পাশে ‘বিহার ও অন্ধ্র প্রেমেই অন্ধ’ দেখা গেল সরকারকে। বেকারত্ব দূরীকরণের ঘোষণাটি যে এক ধাপ্পা, তা ক্রমশ প্রকাশ্য। পূরণ করা হয়নি কৃষকের এমএসপির দাবি। কমানো হয়েছে সার এবং খাদ্যে ভর্তুকি। বাড়েনি ১০০ দিনের কাজের মজুরি। অগ্নিমূল্যের বাজারে ‘আপনি বাঁচলে বাপের নাম’ গোছের যে বাজেট প্রস্তাব মোদি সরকার রাখল, তার থেকে রাতারাতি উধাও হয়ে গিয়েছে—সবকা সাথ সবকা বিকাশ, বিকশিত ভারত এবং আত্মনির্ভর ভারত স্লোগানের নির্যাস। মোদির আত্মরক্ষার লড়াই ভারতরক্ষার সাধনার পক্ষে যে ক্রমে বিপজ্জনক হয়ে উঠবে, এই বাজেট প্রস্তাব তারই স্পষ্ট ইঙ্গিত রাখল।
1Month ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

উপস্থিত বুদ্ধি ও প্রখর অনুমান ক্ষমতার গুণে কার্যোদ্ধার। ব্যবসা, বিদ্যা, দাম্পত্য ক্ষেত্রগুলি শুভ।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.১৩ টাকা৮৪.৮৭ টাকা
পাউন্ড১০৮.৩২ টাকা১১১.৮৭ টাকা
ইউরো৯১.২৫ টাকা৯৪.৪৩ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
5th     September,   2024
দিন পঞ্জিকা