সম্পাদকীয়

সহানুভূতি!

কুড়ি বছরের যুবকের করা গুলির আঘাতে কি সাপে বর হল ডোনাল্ড ট্রাম্পের? শনিবার মার্কিন মুলুকের সন্ধ্যার ঘটনার পর সব আলোচনাকে ছাপিয়ে এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর ১১৪ দিন পর, ৫ নভেম্বর আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। সেই নির্বাচনের প্রচার সারতেই পেনসিলভেনিয়ার বাটলার শহরে এক জনসভায় যোগ দেন রিপাবলিকান দলের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ট্রাম্প। তারপর সভা শুরুর কয়েকমিনিটের মধ্যেই ঘটে এই দুঃখজনক ঘটনা। ট্রাম্প নিজে দাবি করেছেন, একটা গুলি তাঁর কানের চামড়া ছুঁয়ে চলে গিয়েছে। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ৭৮ বছরের প্রবীণের গাল বেয়ে রক্ত গড়াচ্ছে। তাঁর হাতেও রক্ত লেগে। কিন্তু আচমকা এই আক্রমণের ধাক্কা দ্রুত সামলে ট্রাম্পকে দেখা যায়, মুষ্টিবদ্ধ হাত শূন্যে ছুড়ে দিয়ে বলছেন, ‘ফাইট, ফাইট, ফাইট’! ‘শ্যুটিং মেক মি স্ট্রংগার!’ রক্তাক্ত নেতার মুষ্টিবদ্ধ হাতের ছবি অল্প সময়ের মধ্যেই ভাইরাল হয়ে যায়। তার ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যে গোটা বিশ্বকে বিস্মিত করে চীনের একটি সংস্থা ট্রাম্প টি-শার্ট বাজারে এনে ফেলে। টি-শার্টের বুকে ট্রাম্পের রক্তাক্ত মুখ আর মুষ্টিবদ্ধ হাতের ছবি! নীচে লেখা, তাঁর সেই বলা কথা। নিমেষেই এই টি-শার্ট আমেরিকার রাস্তায় বিকোতেও শুরু করে। এবং দেখা গেল, ট্রাম্পকে ‘হত্যার চেষ্টা’র এই ঘটনা রাতারাতি রিপাবলিকান প্রার্থীর জনপ্রিয়তা কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে বলে জানিয়েছে আমেরিকার বিভিন্ন সংস্থা। পলি মার্কেট নামে একটি সংস্থা জানাচ্ছে, গুলি চলার ঘটনা এক ধাক্কায় আট শতাংশ বাড়িয়ে ট্রাম্পের জয়ের সম্ভাবনা ৭০ শতাংশ ছুঁয়েছে। তাঁর রক্তমাখা মুখের ছবি, অকুতোভয় মনোভাবের কথা ছড়িয়ে দিতে রাস্তায় নেমে পড়েন রিপাবলিকান নেতা ও সমর্থকরা। পাশাপাশি এই ঘটনার জন্য প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে সরাসরি দায়ী করে প্রচারও শুরু হয়। এটা নিশ্চিত, আগামী নির্বাচনে এই হামলার ঘটনা থেকে পুরোপুরি রাজনৈতিক ফায়দা তোলার চেষ্টা করবেন রিপাবলিকানরা। কে বলতে পারে, এই ঘটনা ‘গেম চেঞ্জার’ হবে না? বা ট্রাম্পকে সিংহাসন ফিরে পেতে সাহায্য করবে না? যদিও শোনা যাচ্ছে, আততায়ী আদতে ট্রাম্পের রিপাবলিকান দলেরই সদস্য! 
আমেরিকা বোধহয় বিশ্বের একটি অন্যতম দেশ যেখানে রাষ্ট্রনেতারা বারবার হামলার শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে আব্রাহাম লিঙ্কন, জেমস গারফিল্ড, উইলিয়াম ম্যাককিনলে, জন এফ কেনেডি এবং তাঁর সহোদর রবার্ট এফ কেনেডিকে আততায়ীর হামলায় প্রাণ দিতে হয়েছে। আবার ট্রাম্পের মতো অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছেন ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট, হ্যারি ট্রুম্যান, জেরাল্ড ফোর্ড, রোনাল্ড রেগান, থিওডোর রুজভেল্ট, জর্জ বুশের মতো প্রেসিডেন্ট বা প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী। দেখা গিয়েছে, রাষ্ট্রনেতাদের হত্যা বা আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলকে ডিভিডেন্ড দিয়েছে। যেমন প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন আক্রান্ত হওয়ার পর রোনাল্ড রেগানের জনপ্রিয়তা কয়েকগুণ বেড়ে গিয়েছিল। আবার প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী রবার্ট এফ কেনেডি আততায়ীর গুলিতে প্রাণ হারানোর পর সেই নির্বাচনে তার ব্যাপক প্রভাব পড়ে। ভারতেও দেখা গিয়েছে, নিজের দেহরক্ষীর হাতে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্যু কিংবা আততায়ীর আত্মঘাতী বিস্ফোরণে প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর মৃত্যুর পর সহানুভূতির ভোট ঢেলে পড়েছে কংগ্রেসের বাক্সে। এই সহানুভূতির ভোটের ইঙ্গিত করেই ট্রাম্পের ছেলে এরিক ট্রাম্পকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘এই ফাইটারকেই চাইছে আমেরিকা।’ 
কিন্তু ভোটের এই লাভ-ক্ষতির হিসেবের বাইরেও ফের আমেরিকার অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র, নিরাপত্তার ব্যর্থতা এবং গুলি-বন্দুকের রমরমার অভিযোগ সামনে চলে এসেছে। ভোটের মরশুমে একজন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীকে প্রকাশ্যে গুলি করে মেরে ফেলার চেষ্টা শুধু আমেরিকা নয়, গোটা বিশ্বের কাছেই সতর্কবার্তা। পাশাপাশি এই ঘটনায় ট্রাম্পের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সিক্রেট সার্ভিসের ব্যর্থতার দিকে জোরালো অভিযোগ উঠেছে। ট্রাম্প শুধু প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী নন, তিনি ওই দেশের প্রাক্তন প্রেসিডেন্টও। সুতরাং তাঁর নিরাপত্তায় একচুলও ফাঁক থাকবে না এটাই স্বাভাবিক। সেখানে জনসভা মঞ্চের একশো-দেড়শো ফুট দূরে এক যুবক বন্দুক নিয়ে একটি ছাদে উঠে পড়ল, তারপর ট্রাম্পকে লক্ষ্য করে কয়েক রাউন্ড গুলি চালাল— এটা কীভাবে সম্ভব! এর একটাই অর্থ, আমেরিকার বর্তমান, প্রাক্তন কোনও প্রেসিডেন্টই নিরাপদ নন। তাঁদের উপর হামলা চালাতে কোনও জঙ্গিগোষ্ঠী নয়, দেখা যাচ্ছে, মাত্র একজন বন্দুকধারীই যথেষ্ট! দ্বিতীয়ত, আমেরিকায় যে গুলি-বন্দুক খেলনার মতো ব্যবহৃত হয় তা আবারও পরিষ্কার। এই সেই দেশ যেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান-শপিংমল-সিনেমাহল-কাফেতে বন্দুকবাজদের হামলা, নিরীহ মানুষের মৃত্যুর খবর আর কোনও নতুন মাত্রা যোগ করে না। এর কারণ নাকি আমেরিকার ভ্রান্ত ‘বন্দুকনীতি’। ক্ষমতায় থাকাকালীন ট্রাম্প এই নীতি বদলাতে কোনওদিনই আগ্রহী ছিলেন না। তবে কয়েকদিন ধরে মার্কিন বন্দুকনীতি বদলের সওয়াল করছিলেন। আবার বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বন্দুক নিয়ন্ত্রণে কড়া আইন তৈরির আশ্বাস দিয়েছেন, ট্রাম্প-কাণ্ডের পর এটাই একমাত্র আশার কথা বলা যায়।
1Month ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

উপস্থিত বুদ্ধি ও প্রখর অনুমান ক্ষমতার গুণে কার্যোদ্ধার। ব্যবসা, বিদ্যা, দাম্পত্য ক্ষেত্রগুলি শুভ।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.১৩ টাকা৮৪.৮৭ টাকা
পাউন্ড১০৮.৩২ টাকা১১১.৮৭ টাকা
ইউরো৯১.২৫ টাকা৯৪.৪৩ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
5th     September,   2024
দিন পঞ্জিকা