সম্পাদকীয়

সাইনবোর্ডের সাধনা 

যার নয়-এ হয় না, তার হয় না নব্বই-তেও। জনপ্রিয় বাংলা প্রবাদটি বঙ্গ বিজেপির সঙ্গে একেবারে লাগসই। একুশের বিধানসভা ভোটে রামধাক্কা খেয়েছিল তারা। শোনানো হয়েছিল ২৯৪ আসনের বিধানসভায় ২০০-র বেশি পদ্ম ফোটাবার হুংকার। তামাম গেরুয়া মন বলে উঠেছিল, আহা, বাংলার গণতন্ত্রের মন্দির যেন ফটিক জলের পদ্মদিঘিতে পরিণত হবে। কিন্তু হায়, ১০০-র অনেক আগেই (৭৭) থেমে গিয়েছিল দিলীপ বাহিনীর লম্ফঝম্প। শুধু দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষই-বা কেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা, রামরাজ্যের প্রধান মুখ যোগী আদিত্যনাথ-সহ বিজেপির তাবড় জাতীয় নেতৃত্বই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিলেন। বিজেপি নেতৃত্ব ‘বাংলার বাঘিনী’র সঙ্গে একইভাবে পাঙ্গা নিতে গিয়েছিল চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনেও। উনিশের ভোটে দিলীপ ঘোষের নেতৃত্বে গেরুয়া শিবির বাংলা থেকে ১৮টি আসন দখল করে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল। সংখ্যাটি এবার ৩০-৩৫-এর উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার বাজি রেখেছিলেন অমিত শাহ স্বয়ং। পরে প্রধানমন্ত্রী এবং অন্য শীর্ষ নেতৃত্বও গান ধরেছিলেন অবিকল সুরে। কিন্তু দিনের শেষে দলকে হতাশই করলেন সুকান্ত মজুমদার। তাঁর নেতৃত্বে বঙ্গ বিজেপি এই ভোটে ৩৩ শতাংশ সংকুচিত হয়ে গেল। লোকসভায় বিজেপির তরফে প্রতিনিধিত্ব ১৮ থেকে কমে হয়ে গেল মাত্র ১২! বিজেপির ১২টা কেবল লোকসভাতেই বাজেনি, পরবর্তী দুই দফা উপনির্বাচনেও (বিধানসভার মোট ৬টি আসনে) বাংলা তাদের ফিরিয়ে দিয়েছে একেবারে শূন্য (০) হাতে। 
তারপরও বঙ্গ বিজেপির কাণ্ডারীর কোন রূপ দেখছি আমরা? তাঁর মুখোশের আড়ালে ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে বাংলাভাগের দাবি! দ্বিতীয় মোদি সরকারে মন্ত্রিত্ব পেয়ে পৃথক উত্তরবঙ্গ রাজ্যের দাবিতে সরব হন আলিপুরদুয়ারের বিজেপি এমপি জন বারলা। তা নিয়ে জলঘোলাও হয় বিস্তর। এবার আরও একধাপ এগিয়ে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে উত্তরবঙ্গ ভাগের জন্যই তদ্বির করলেন সুকান্ত মজুমদার। তবে সরাসরি নয়, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে উত্তরবঙ্গকে যুক্ত করার কৌশলেই দাবিটি পেশ করা হয়েছে। বিষয়টি সামনে আসতেই সমালোচনায় সরব হয়েছে বাংলার শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। আগামী কাল, শনিবার নয়াদিল্লিতে নীতি আয়োগের বৈঠক। তার আগে বৃহস্পিতবার মুখ্যমন্ত্রীর দিল্লিযাত্রার প্রাক্কালে এই বিতর্ক নিঃসন্দেহে বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে। বুধবার সংসদ ভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আধঘণ্টার বৈঠক করেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি। কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রমন্ত্রী হয়েই কি সুকান্ত মজুমদারের মাথা ঘুরে গেল? তাঁদের শিক্ষামন্ত্রক তো ইতিমধ্যেই কেলেঙ্কারির রেকর্ড গড়েছে। বাকি আছে তাঁদের উত্তর-পূর্বাঞ্চল উন্নয়ন মন্ত্রকের খেল দেখানো। সেটাই কি দেখাতে তৎপর তিনি? উত্তরবঙ্গের ‘উন্নয়ন’ ত্বরান্বিত করা একটি অজুহাত মাত্র। বাংলার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে জুড়ে দেওয়ার প্রস্তাবটি থেকে এটাই খোলসা হচ্ছে যে, উত্তরবঙ্গের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে কেন্দ্রীয় বঞ্চনা একটি দীর্ঘ পরিকল্পনার অঙ্গ। এক বাংলা বারবার বিভক্ত ও রক্তাক্ত হয়েছে। তাই ফের বাংলাভাগের দাবি সরাসরি উত্থাপন করাটা রাজনৈতিকভাবে আত্মহত্যার শামিল। অতএব, এবার নতুন ভেক ধরেছেন ভারতকে অন্তত ৫০টি অঙ্গরাজ্যে বিভক্ত করার রাজনীতির প্রবক্তারা। তার সঙ্গে দুধের সাধ ঘোলে মেটানোর স্বপ্নও দেখছে কি গেরুয়া ব্রিগেড—‘গোটা বাংলার মসনদ চিরঅধরাই যদি উত্তরবঙ্গ ভেঙে নিয়েই কিঞ্চিৎ নবাবি করি’। 
প্রশ্ন এটাই যে, বাংলার উন্নয়নে আন্তরিক হলে উত্তরবঙ্গকে আলাদা ভাবতে হবে কেন? এতেই স্পষ্ট, বাংলাভাগের গেরুয়া ষড়যন্ত্র আদৌ থামেনি। বিজেপির শীর্ষ নেতারা মুখে যাই বলুন, তলে তলে বঙ্গভঙ্গের ব্যাপারে তাঁরা ভীষণভাবে সক্রিয়। হলফ করে বলা যায়, 
একজনও সচেতন বঙ্গবাসী প্রাণ থাকতে এই ষড়যন্ত্রের অংশীদার হতে চাইবেন না। বরং সুযোগ পেলে বাংলা-বিরোধী এই দলটিকে পেড়েই ফেলবেন তাঁরা। বিজেপির শিক্ষাগ্রহণ প্রথমবারেই, অর্থাৎ ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে মুখ থুবড়ে পড়ার পরই প্রত্যাশিত ছিল। কিন্তু তারা শোধরায়নি। শিক্ষা নেয়নি এবার চূড়ান্ত বিপর্যয় থেকেও। বিজেপি যদি বাংলার পক্ষে বিপজ্জনক রাজনীতির ধারাবাহিকতায় এখনই দাঁড়ি না টানে, তবে হলফ করে বলা যায়, এই মাটিতে দলটির কোনও ভবিষ্যৎ নেই। শ্যামাপ্রসাদের বাংলায় জনসঙ্ঘজাত বিজেপি নামক দলটি অতিদ্রুত সাইনবোর্ডে পরিণত হবে—যেমন বাংলা কংগ্রেস, আরসিপিআই প্রভৃতি হয়েছে ইতিমধ্যেই।
1Month ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

যে কোনও ব্যবসায়িক কর্মে অতিরিক্ত অর্থলাভের প্রবল সম্ভাবনা। শিল্পীদের পক্ষে শুভদিন।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.১৪ টাকা৮৪.৮৮ টাকা
পাউন্ড১০৮.২৩ টাকা১১১.৭৮ টাকা
ইউরো৯১.১৫ টাকা৯৪.৩৪ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা