সম্পাদকীয়

ভরসা থাকুক আদালতে

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ক্ষোভের আগুনে জ্বলছে বাংলাদেশ। আন্দোলনের নেতৃত্বে সে দেশের ছাত্রছাত্রীরা থাকলেও পরিস্থিতির সুযোগ নিতে শাসক বিরোধী নানা শক্তি পথে নেমে পড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তাদের লক্ষ্য হল, এই ক্ষোভকে পুঁজি করে সরকার ফেলে দেওয়া। অন্যদিকে, আন্দোলনকারীদের ‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পুলিস ও নিরাপত্তা কর্মীদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে শাসকদলের ছাত্র সংগঠনও মুখোমুখি সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছে বলেও অভিযোগ। পরিস্থিতি তাই ঘোরালো হয়ে উঠেছে। আপাতত শান্তি ফেরার কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। উল্টে বিক্ষোভ, সংঘর্ষ, অবরোধ, অগ্নিসংযোগ, গুলি, মৃত্যুমিছিল অব্যাহত। মৃতের তালিকায় বেশিরভাগই পড়ুয়া। এই অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি মোকাবিলায় সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, বাতিল হয়েছে লোকাল ও দূরপাল্লার ট্রেন। গুজব আটকাতে সে দেশের ইন্টারনেট পরিষেবাও স্তব্ধ। ফলে গোটা দুনিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগ কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। শুক্রবার বেশি রাতে কার্ফু জারি করে সেনা নামিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর ব্রাজিল ও স্পেন সফর স্থগিত করে দিয়েছেন। সে দেশে পড়তে যাওয়া বা কর্মরত ভারতীয় সহ অন্যান্য দেশের নাগরিকরা প্রাণভয়ে দেশ ছাড়তে শুরু করেছেন। এই অবস্থায় পড়শি দেশের উপর নজর রাখলেও এখনই হাসিনা সরকারকে সমর্থন বা বিরোধিতার রাস্তায় যাচ্ছে না মোদি সরকার। ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র বলেছেন, ‘এটা সে দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়।’ সঙ্গত কারণেই বাংলাদেশের পরিস্থিতির উপর নজর রাখছেন বিদেশমন্ত্রী। তবে এ কথা ঠিক যে, প্রতিবেশী যে কোনও রাষ্ট্রের অস্থিরতা জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে উদ্বেগ বা চিন্তার কারণ। বাংলাদেশের উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে রাষ্ট্রসঙ্ঘ। তাদের মানবাধিকার বিভাগের প্রধান এক বার্তায় বলেছেন, ছাত্রদের উপর হামলা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না। এই হামলা ‘বিস্ময়কর’। তিনি নিরপেক্ষ ও সম্পূর্ণ তদন্তের দাবি তুলেছেন।
স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সাল থেকেই সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণ ব্যবস্থা চালু রয়েছে বাংলাদেশে। তারপরে বিভিন্ন সময়ে সংস্কারের পর ২০১৮ সাল পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে মোট সংরক্ষণের হার দাঁড়ায় ৫৬ শতাংশ। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান ও তাঁদের নাতিনাতনিদের জন্য ৩০ শতাংশ, মহিলাদের জন্য ১০ শতাংশ, জেলা কোটা ১০ শতাংশ, নৃজাতি গোষ্ঠীর জন্য ৫ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ শতাংশ আসন সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ বাকি ৪৪ শতাংশ অসংরক্ষিত। এই কোটা ব্যবস্থা সংস্কার করে অসংরক্ষিত পদ বাড়ানোর দাবিতে ২০১৮ সালে একইভাবে পথে নেমে বিক্ষোভ দেখায় শিক্ষার্থীরা। সেই আন্দোলনের চাপে নৃজাতি ও প্রতিবন্ধী কোটা রেখে বাকি সব সংরক্ষণ বাতিল ঘোষণা করে হাসিনা সরকার। এর বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলা করে মূলত মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের কিন্তু মানুষ। গত ৫ জুন হাইকোর্ট হাসিনা সরকারের সিদ্ধান্তকে অবৈধ ঘোষণা করায় আবার ফিরে আসে ৫৬ শতাংশ কোটা ব্যবস্থা। কিন্তু হাইকোর্টের এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছে হাসিনা সরকার। সর্বোচ্চ আদালতে এই মামলার শুনানি শুরু হওয়ার কথা আজ, রবিবার। কিন্তু তার মধ্যেই ফের কোটা সংস্কার ইস্যুতে দুপক্ষের সংঘর্ষে রক্ত ঝরছে বাংলাদেশে, যা অনভিপ্রেত, দুঃখেরও।
এই পরিপ্রেক্ষিতে যাবতীয় সংঘর্ষ ও অচলাবস্থাকে দূরে সরিয়ে বাংলাদেশে দ্রুত শান্তি ও স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসাটা জরুরি। কারণ সংঘর্ষের ঘটনার সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সে দেশের সাধারণ মানুষ, প্রতিদিনের উপার্জনে যাঁদের অধিকাংশের দিন গুজরান হয়। তাছাড়া সংঘর্ষ, রক্তপাত কোনও সমাধানের পথ হতে পারে না। কোটা সংস্কার করে যোগ্যদের জন্য অসংরক্ষিত পদের সংখ্যা বাড়ানোর যে দাবি তুলেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা, তার তাৎপর্য গভীর। কোটা প্রসঙ্গে মতপার্থক্য থাকতেই পারে। কিন্তু তা হিংসাত্মক হয়ে উঠলে দুর্দশা বাড়ে, জনকল্যাণও হয় না। অহিংস পথে আন্দোলন এবং অহিংস পথে তার মোকাবিলা হলে সকলের পক্ষেই তা মঙ্গলজনক। চাই ধৈর্য, আত্মসংযম। আলোচনাই হতে পারে সমাধানের পথ। অতীতে হাসিনা সরকার অনেক কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে। আশা করা যায় এবারও তা করবে। তাই আন্দোলনকারীদের এই দাবির বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের উপায় বের করা দরকার। ক্রোধের বিস্ফোরণ কারও পক্ষেই মঙ্গলজনক নয়। সরকার প্রয়োজন মনে করলে কোটা সংস্কারের নতুন প্রস্তাব সর্বোচ্চ আদালতেও হয়তো পেশ করতে পারে। তবে সুপ্রিম কোর্ট শেষপর্যন্ত কী রায় দেয় তার জন্য যাবতীয় হিংসার পথ পরিহার করে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করাই শ্রেয়। যা বাংলাদেশকে বর্তমান পরিস্থিতি থেকে মুক্ত করার শ্রেষ্ঠ পথ। যে কোনও শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের কাছে সেটাই কাম্য। বাংলাদেশ আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসুক, পথ দেখাক মুজিবুর রহমানের দেশ।
1Month ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

উপস্থিত বুদ্ধি ও প্রখর অনুমান ক্ষমতার গুণে কার্যোদ্ধার। ব্যবসা, বিদ্যা, দাম্পত্য ক্ষেত্রগুলি শুভ।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.১৩ টাকা৮৪.৮৭ টাকা
পাউন্ড১০৮.৩২ টাকা১১১.৮৭ টাকা
ইউরো৯১.২৫ টাকা৯৪.৪৩ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
5th     September,   2024
দিন পঞ্জিকা