বিদ্যার জন্য স্থান পরিবর্তন হতে পারে। গবেষণামূলক কাজে সাফল্য আসবে। কর্মপ্রার্থীরা কোনও শুভ সংবাদ পেতে ... বিশদ
যেমন ভাবা তেমন কাজ। মাতৃভাষা না জানা মানে তো নিজের মাকে অপমান করা। না। না। সুভাষ কখনও এমন হতে পারে না। অসম্ভব জেদি সুভাষ রাত জেগে শুরু করল তপস্যা। কয়েক দিনের মধ্যে সম্পূর্ণ ইংরেজি স্কুলে সাহেবি পড়াশোনায় অভ্যস্ত সুভাষ বাংলা, সংস্কৃতে দক্ষ হয়ে উঠল। তার প্রমাণ মিলল বার্ষিক পরীক্ষায়। দ্বিতীয় হল সুভাষ। আর সংস্কৃতে ১০০ তে ১০০। প্রধান শিক্ষক বেণিমাধব দাস পিঠ চাপড়ে বললেন, তোমায় অনেক দূর যেতে হবে সুভাষ। মনে রাখবে, জীবনটা হল কাজের জন্য। দেখবে, একটা দিনও যেন নষ্ট না হয়। প্রধান শিক্ষকের সেই নির্দেশ পণ হিসেবে নিল ছোট্ট সুভাষ। হয়েছিলেন দেশনায়ক নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু।
স্বাধীনতা সংগ্রাম, আজাদ হিন্দ ফৌজ গঠন করে জাপানের সাহায্যে আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ ইংরেজ শাসনমুক্ত করার মতোই রুদ্ধশ্বাস ছিল সুভাষের ছোটবেলা। ছোট থেকেই জেদি এবং চঞ্চল সুভাষ স্বামী বিবেকানন্দের ছবির সামনে সম্পূর্ণ শান্ত হয়ে যেতেন। ধ্যানস্থ হয়ে পড়তেন। ছোট থেকেই ঠিক করেন, স্বামী বিবেকানন্দের জীবন এবং বাণী নিজের জীবনের পথে পাথেয় করে চলবেন। অতটুকু বয়স থেকেই স্বামীজির বাণী তাঁকে নাড়া দিত। এক নিঃশ্বাসেই শেষ করে ফেলতেন স্বামীজির লেখা বই। মা প্রভাবতী দেবীকে পড়ে শোনাতেন কথামৃত। আবার ক্ষুদিরাম বসুর ফাঁসি সুভাষের ছোট মনটাকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। ১১ আগস্ট ক্ষুদিরামের ফাঁসির দিন উপোস করে কাটানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ছোট সুভাষ। শুধু নিজে নয়, স্কুলের অন্যান্য সহপাঠীরা সুভাষের নেতৃত্বে ১১ আগস্ট না খেয়ে থাকার সিদ্ধান্ত নেয়। প্রধান শিক্ষক বেণিমাধব দাস ছোট ছোট ছেলেদের স্বদেশপ্রেম দেখে অভিভূত হয়ে পড়েন। তাঁর উৎসাহেই দোকানে দোকানে ঘুরে ক্ষুদিরাম বসুর ছবি জোগাড় করে আনেন সুভাষ। তখন ক্ষুদিরামের ছবি রাখা বা তাঁর সম্পর্কে কথা বলা ছিল ব্রিটিশ শাসনে অপরাধ। অবশ্য সুভাষ ভয় পাওয়ার ছেলে নন। দেশের জন্য যাঁরা প্রাণ দিয়েছেন, তাঁরা সুভাষের কাছে হিরো। তাঁদের জন্য সুভাষ সবকিছু করতে পারেন। ছবি জোগাড় তো তুচ্ছ ব্যাপার। ভারতবর্ষের প্রতি সুভাষের প্রেম এতটাই গভীর ছিল। তিনি বিশ্বাস করতেন, দেশকে না ভালোবাসলে, ইতিহাস না জানলে কোনও জাতি বড় হতে পারে না। ছোট্ট বন্ধুরা, শুধু সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিন পালন করলে হবে না, তাঁর বক্তব্য আমাদের জীবনে ব্যবহার করতে হবে। সেটাই হবে নেতাজির প্রতি আমাদের প্রকৃত শ্রদ্ধার্ঘ্য। জয় হিন্দ।
শাম্ব মণ্ডল