বিদ্যার জন্য স্থান পরিবর্তন হতে পারে। গবেষণামূলক কাজে সাফল্য আসবে। কর্মপ্রার্থীরা কোনও শুভ সংবাদ পেতে ... বিশদ
শীতের মজা
শীতকাল মানেই গাছের পাতায় শিশির, কুয়াশা মাখানো সকাল, উলের জামাকাপড়, কমলালেবু, নলেন গুড় আর মোয়া। শীত পড়তে না পড়তেই, ‘কোথায় পিকনিক হবে’, ‘কখন যাব’, ‘কী কী দেখব’, ‘কী কী খাব’ এই সব নিয়ে আলোচনা লেগেই থাকে। প্রতি বছরের মতো গতবারও পঁচিশে ডিসেম্বর ভোরবেলা বাবা, মা ও কয়েকটি পরিবারের সঙ্গে আমি চন্দননগরের ‘কে এম ডি এ পার্কে’, বাস ভাড়া করে পিকনিক করতে গিয়েছিলাম। শহর ছেড়ে গ্রামের সবুজ দৃশ্য দেখতে দেখতে আর হইচই করতে করতেই পৌঁছে গেলাম পিকনিক স্পটে। সবাই একসঙ্গে গোল হয়ে বসে গরম-গরম চা ও পকোড়া খেতে খেতে আমরা আড্ডায় মেতে উঠেছিলাম। তারপর আমরা ছোটরা চটপট একটা ফাঁকা জায়গা খুঁজে ব্যাডমিন্টন, ফুটবল নানারকম খেলা শুরু করলাম। খানিকক্ষণ পর সবাই মিলে পার্কটা ঘুরে দেখতে বের হলাম। পার্কের শেষ প্রান্তে একটি জলাশয়ে প্যাডলিং বোটিং করে খুব আনন্দ পেলাম। দুপুর হয়ে আসায় আমরা সবাই পোলাও, খাসির মাংস, চাটনি, পাঁপড় জমিয়ে পেট ভরে খেলাম। তারপর মিউজিকাল চেয়ার, গানের লড়াই ইত্যাদি খেলায় খুব মজা করলাম। তারপর বিকেল ঘনিয়ে আসতেই হাতে কমলালেবু আর সবেদা নিয়ে বাসে উঠলাম। ওই সুন্দর জায়গাটি ছেড়ে আসতে ইচ্ছে হচ্ছিল না ঠিকই কিন্তু আসতেই হল। শীতকাল সত্যিই খুব ভালো একটা সময়— গরমও নেই আবার বৃষ্টিও নেই। আর পিকনিক হল আমাদের রোজকার ব্যস্ততার জীবন থেকে বেরিয়ে সকলের সঙ্গে মিলেমিশে আনন্দ করার উপায়।
সেঁজুতি গিরি, সপ্তম শ্রেণী, সাউথ পয়েন্ট হাই স্কুল
শীতের পিকনিক
আজ তোমাদের মজার গল্প শোনাব। গতবছর স্কুলের বাৎসরিক পরীক্ষার পর স্কুল থেকে শীতের পিকনিকে গিয়েছিলাম লক্ষ্মীকান্তপুরের উল্লোনপার্কে। সকাল সাতটায় স্কুল মাঠে জড়ো হয়ে রিজার্ভ বাসে উঠে যাত্রা করি। দিদিমণিরা, বন্ধুরা, বড়দিদিরা গিয়েছিলাম। জানালায় দেখি বড় বড়, বাড়ি-ঘর, দিঘিভরা শালুক ফুল, প্রকৃতির অপরূপ দৃশ্য দেখে মন ভরে ওঠে। যাওয়ার সময় গান শুনে নাচতে-নাচতে গিয়েছিলাম। একসময় উল্লোনপার্কে পৌঁছে গেলাম। পিকনিকের রান্না শুরু হল। আমি আর আমার বন্ধু গাছে উঠলাম, কেউ-কেউ ব্যাডমিন্টন খেলছে। টিফিন খেয়ে দিদিমণিদের সঙ্গে মিউজিয়ামে ঘুরলাম, পার্কের টিকিট কেটে ঘুরলাম, খুব সুন্দর জায়গাটা। দুপুর হল, মধ্যাহ্ন ভোজনের সময়। দিদিমণিরা আমরা নরম ঘাসে গোল হয়ে বসে খেলাম। সবথেকে ভালো লেগেছিল ঝালমাংস। ঝালমাংস খেয়ে মুখের ভিতর হাহু করতে লাগল, সঙ্গে পেলাম মিষ্টি চাটনি। খেতে মজা লাগল। খাওয়া শেষ, ঘুরতে বের হলাম। আমরা বড়দিঘির সামনে গেলাম, দেখি স্পিড বোটের মতো নিজেরা প্যাডেল করে চালাতে হবে। নিজেরা প্যাডেল করে চালালাম। মজা লাগল। কখনও এমন মজা পাইনি। বিকেল হল, বাড়ি ফিরব। সবাই বাসে উঠলাম। বাড়ির দিকে যাত্রা করলাম। ক্লান্তিতে নাচা হল না, গান শুনে বাড়ি ফিরলাম। ফিরে মা-বাবা, ভাইবোনেদের গল্প বললাম। রাতে স্বপ্নতে দেখি ওখানে ঘুরছি। এখনও স্মৃতি উজ্জ্বল।
রোহিণী দাস, ষষ্ঠ শ্রেণী, পাটুনীঘাটা গার্লস হাইস্কুল
মনবিতানে একদিন
শীতকাল কেবল শুষ্ক, নীরস দিনকেই আহ্বান করে না বরং চারদিকে ছড়িয়ে থাকে এক ছুটির আমেজ। বড়দিনের আনন্দের পাশাপাশি থাকে সবার সঙ্গে সময় কাটানোর মজা, যা দ্বিগুণ করে তোলে বন্ধুদের উপস্থিতি। সারা বছর একনাগাড়ে পড়াশোনার পর মন চায় একটু শান্তি-বিনোদন। এই কথা ভেবেই হয়তো বার্ষিক পরীক্ষার শেষে আমাদের প্রধান শিক্ষিকা আয়োজন করেন ‘মনবিতান’-এ এক পিকনিকের। সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রায় সপ্তাহ দুয়েক পর পূর্বনির্ধারিত এক শুক্রবারে, সকালে উত্তেজিত ছাত্রীর দল ও শিক্ষিকাদের নিয়ে রওনা দেয় স্কুল বাস। যাত্রাপথে সবাই শোনায় নিজের পছন্দের গান ও ভাগ করে নেয় কোনও স্মরণীয় অভিজ্ঞতা। অবশেষে বাস এসে থামে নির্দিষ্ট জায়গায়। প্রথমেই লুচি ও আলুরদম সহযোগে প্রাতরাশ সেরে আমরা জায়গাটা পর্যবেক্ষণ করি। তারপর ব্যাডমিন্টন খেলা দিয়ে শুরু হয় আমাদের আমোদ-প্রমোদের পালা। বলা বাহুল্য যে শিক্ষিকারাও আনন্দ সহকারে ছাত্রীদের সঙ্গে যোগদান করেন। যত বেলা বাড়তে থাকে ততই যেন আমাদের ভালোলাগা আরও বৃদ্ধি পায়। গল্পগুজব, নাচ-গান, লুকোচুরি, ছোটাছুটি কিছুই বাদ থাকে না। ক্রমে দুপুর হলে মধ্যাহ্নভোজের জন্য সবাই খাবার স্থানে উপস্থিত হই। সেখানে সুস্বাদু পোলাও, মাংস ও চাটনি, আইসক্রিম খেয়ে যেন আর কিছুই করতে মন চায় না। সুতরাং চারদিক ঘুরে মনবিতানের প্রাকৃতিক শোভা উপভোগ করে অতিবাহিত হয় আরও কিছুটা সময়। এরপর আমরা বন্ধুরা যাই পার্কে। অনেকদিন পর দোলনায় চড়ে বেশ ভালোই লাগল। কিছুক্ষণের মধ্যেই সবাই মাঠে জড়ো হই বাড়ি ফেরার জন্য। বাসে ওঠার আগে আর একবার ভালো করে দেখে নিলাম জায়গাটাকে। প্রকৃতির এমন সুন্দর রূপ আর কতই বা দেখা হয়! ফেরার পথে বাসের জানালা দিয়ে আকাশটাকে দেখে অন্য রকম লাগল। অস্তমান সূর্যের রক্তিম আভা তাকে করে তুলেছে অদ্ভুত সুন্দর। সেই রক্তিমতার রেশটুকু মনে নিয়েই ফিরলাম। ওই সুন্দর দিনের স্মৃতি অম্লান হয়ে রইল আমার মনের মণিকোঠায়।
শ্রীময়ী মণ্ডল, নবম শ্রেণী, দ্য বি এস এস স্কুল
গ্রামের কোলে বনভোজন
দিনটা ছিল রবিবার। শীতের সকালে কুয়াশার বুক চিরে দুপাশের ধানখেতকে পিছনে ফেলে আমাদের গাড়ি এগিয়ে চলেছে বাবার মামার বাড়ি এক্কেবারে এক অজ পাড়াগাঁয়ে। প্রকৃতির শোভা যে এত সুন্দর হতে পারে, এখানে না এলে কল্পনা করতে পারতাম না। আগেই খবর দেওয়া ছিল। সরাসরি পৌঁছে গেলাম আম কাঁঠাল ঘেরা একটা বাগানে, পাশেই বড় পুকুর আর একদিকে বিশাল সব্জি খেত। হাত মুখ ধুয়ে টিফিনে বসে গেলাম। মুড়ি আলুরদম আর গাছের শসা। ছোট-বড় সবাই মিলে বাগান থেকে সব্জি তুলে আনলাম। বড়রা আনাজ কাটতে বসলেন। দাদু জাল ফেলে পুকুর থেকে বড়-বড় মাছ ধরলেন। আমরা ছোটরা সবাই খেলা করতে লাগলাম। রান্নার শেষে খাবার ডাক পড়ল। বড়-বড় কলা পাতায় খাওয়া হবে। না, মেনু বলতে পোলাও বিরিয়ানি নয়। বাগান থেকে সদ্য তোলা মুলো, বেগুন দিয়ে পুঁইশাক আর ফুলকপি দিয়ে পুকুরের ধরা মাছের ঝোল, সঙ্গে আমড়ার টক। তার কী যে অনবদ্য স্বাদ তা বলে বোঝানো যাবে না। সূর্যাস্তের আগেই আমরা বাগান থেকে ফিরে এলাম।
শ্রীজিতা মাইতি, পঞ্চম শ্রেণী
ঘোষপাড়া নিশ্চিন্দা বালিকা বিদ্যাপীঠ
আমার প্রথম পিকনিক
গত ২৫ নভেম্বর রবিবার আমার প্রথম শীতে পিকনিক খাওয়া। আমি দাদু দিদার কাছেই থাকি ও এখানেই পড়াশোনা করি। দাদু, মামা, মাসি মিলে পিকনিকের সব ব্যবস্থা করে ফেলল। দাদু সকালেই মাংস কিনতে গেলেন। মাসি সকালের টিফিনের জন্য ডিম সেদ্ধ, কেক সন্দেশ, কলা দিয়ে প্যাকেট তৈরি করে ফেলল। আমাদের পিকনিক হবে কল্যাণীতে, যেখানে কুলিয়াপাট মেলা হয় সেখানে। কাছেই ছোট দিদার বাড়ি, ছোট দিদাই জায়গার ব্যবস্থা করেছেন। দুটো মারুতি গাড়িতে আমরাও মালপত্র নিয়ে রওনা হলাম। সকাল ৮টায় পৌঁছে গেলাম। খুব সুন্দর জায়গাটা। বিশাল ঝিল-এর পাশেই মন্দির, বাঁধানো ঘাট ও আমবাগান। সবাইকে ডেকে টিফিন দেওয়া হল। টিফিন খেয়ে আমরা ব্যাট বল নিয়ে ক্রিকেট খেলতে লাগলাম। বড়রা রান্নায় ব্যস্ত থাকল। দুপুর দেড়টা নাগাদ রান্না তৈরি। সবাইকে খেতে বসতে দেওয়া হল, পরিবেশন করলেন দুই দাদু ও মামা। আমাদের খাওয়ার পর ছোটদিদা মামা ও দাদুদের খেতে দিলেন। এবার ক্যুইজ শুরু হল, বিকাল বেলা আমার দিদার হাতের পাটিসাপটা দিয়ে টিফিন হল। এবার ফেরার পালা।
সাবর্ণ দেবনাথ, চতুর্থ শ্রেণী,
জ্ঞানমুকুল বিদ্যালয়, উত্তর ২৪ পরগনা
সান্তার উপহার পিকনিক!
পিকনিক কথাটা শুনলেই আমার মনে যেন দারুণ আনন্দ হয়। এইসময় পরীক্ষা শেষ হয়ে যায়, তাই মা-বাবার হাত ধরে শুধু ঘুরতে যাওয়ার মজা। শীতকাল মানেই বড়দিন, আর বড়দিন মানেই কেক খাওয়া, আনন্দ করা আর সান্তাক্লজের গিফ্ট পাওয়া। আমি তখন থ্রি-তে পড়ি, মা বলল সান্তাক্লজ এবার আমাকে একটা স্পেশাল গিফ্ট দেবে। ২৫ ডিসেম্বর ঘুম থেকে উঠে দেখি সবাই তৈরি আমি ভাবলাম কী হল? তখন মা, বাবা, মামা, মামণি, দাদা, দিদি বলল আজ বড়দিন তাই সবাই মিলে পিকনিকে যাব। আমি তো আগে কিছুই জানতাম না, তাই শুনে অবাক হলাম। মামারবাড়ি বেড়াতে গিয়ে পিকনিক সেটা তো দারুণ মজা। আমি তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নিলাম, এবার সবাই মিলে গেলাম হাজারদুয়ারী। সেখানে গিয়ে অনেক ঐতিহাসিক সৌধ দেখলাম। মা, বাবা অনেক কিছু দেখাল যেগুলো আমি জানতাম না। মতিঝিলে কী সুন্দর জল, চারপাশে কত রকমের ফুল, কত রকমের গাছ দেখলাম। আর সব থেকে মজার ছিল ঘোড়ায় টানা টাঙা গাড়ি। আমি প্রথমে ঘোড়া দেখে খুব ভয় পাচ্ছিলাম। মামা হাত ধরে টেনে তুলল। এরপর তো আমার আর নামতেই ইচ্ছে করছিল না। আরও কত কী যে দেখলাম আর কত মজা যে করলাম সে কী বলব। সারাদিন যে কীভাবে কেটে গেল বুঝতেই পারলাম না। পিকনিকে কত কিছু খেলাম, কত খেললাম। সারাদিনে দৌড়াদৌড়ি করতে করতে কখন যে সন্ধ্যা হয়ে গেল বুঝতেই পারলাম না। আমার কাছে এটাই সান্তাক্লজের দেওয়া সেরা উপহার।
স্বপ্নদীপ অধিকারী, চতুর্থ শ্রেণী, স্কটিশ চার্চ কলেজিয়েট স্কুল
মজার পিকনিক
শীতকাল মানেই সোয়েটার-মোজা-টুপি পরে নানান জায়গায় বেড়ানো, কেক-কমলালেবু-মোয়া খাওয়া আর পিকনিক করা। গতবছর আমরা আঁকার স্কুল থেকে সবাই মিলে হাওড়ার গড়চুমুকে ৫৮গেট বলে একটা খুব সুন্দর জায়গায় পিকনিক করতে গিয়েছিলাম। খুব ভোরবেলা আমরা মা বাবার সঙ্গে বাসে করে রওনা দিলাম। বাসেই কেক ও কমলালেবু খেতে খেতে, সবাই মিলে গান গাইতে গাইতে খুব হইচই করে যাচ্ছি। এদিকে কখন ড্রাইভারকাকু রাস্তা হারিয়ে ফেলেছে। গ্রামের ভেতর ঢুকে, অনেক ঘুরে ঘুরে অনেক দেরিতে আমরা পিকনিক স্পটে পৌঁছলাম। রাস্তায় ঘুরতে ঘুরতে খিদেয় পেট চুঁই-চুঁই করছে। কিন্তু জায়গাটায় গিয়ে মন ভরে গেল। খুব সুন্দর একটা ডিয়ার পার্কও রয়েছে ওখানে। এত হরিণ একসঙ্গে আমি আগে দেখিনি। ওখানে আমরা একটা ছোট গাছের ডালে উঠে খুব খেলছিলাম আর ভাবছিলাম বুঝি একটা বিরাট গাছে উঠতে পেরেছি। এছাড়া আমরা পাসিং দ্য পিলো, মিউজিকাল চেয়ারও খেলেছিলাম। খেলাগুলোয় খুব মজা হয়েছিল। শেষকালে অনেক পরে প্রায় বিকেলের কাছাকাছি আমরা মাঠে গোল হয়ে খেতে বসলাম। মাছ, মাংস, দই, মিষ্টি দিয়ে দারুণ খাওয়া-দাওয়া হল। সন্ধে নামার একটু আগে আমরা আবার বাসে উঠে বাড়ির জন্য রওনা দিলাম। সারাটা দিন বন্ধুদের সঙ্গে খুব মজায় কেটে গেল।
শরণ্যা বসু, ষষ্ঠ শ্রেণী,
জি ডি বিড়লা সেন্টার ফর এডুকেশন