বিদ্যার জন্য স্থান পরিবর্তন হতে পারে। গবেষণামূলক কাজে সাফল্য আসবে। কর্মপ্রার্থীরা কোনও শুভ সংবাদ পেতে ... বিশদ
হুমম বাবা, রোবট বড় কাজের জিনিস। কিন্তু মুশকিল একটাই। এই যে এখন সবার হাতে ‘টাচ্ ফোন’, সে তো চলে আমাদের নির্দেশে। রোবটও চলবে আমাদের কথাতেই। তাকে একবার যা নির্দেশ দেওয়া হবে, সে সেটাই পালন করবে। আর সেখানেই যত মুশকিল।
ভাবছ এ আবার কী কথা! রোবটকে নির্দেশ না দিলে কাজ করবে কীভাবে!
দাঁড়াও, একটা উদাহরণ দিই। ধরো, তোমাকে প্রতিদিন ভোর ৫টায় উঠতে হবে। ওইসময় তুমি উঠে হারমোনিয়াম বাজিয়ে ভৈরবী গাইবে। তাই রোবটকে বলে দিয়েছ ঠিক ভোর পাঁচটায় ঘুম থেকে তুলে দিতে।
মুশকিল হল, মাঝরাত থেকে তোমার জ্বর এসেছে। তাতে কী! রোবট তারস্বরে তোমার নাম ধরে ডেকে যাচ্ছে! সে যে যন্ত্র! বোঝেই না, মানুষের জ্বর আসলে তাকে ডেকে তুলতে নেই।
অথচ প্রতিদিন যদি ভোরবেলা এই ডেকে দেওয়ার কাজটা মা করত? সেক্ষেত্রে তিনি দেখতেন তোমার জ্বর এসেছে। তাই ঘুম থেকে তুলতেন না। বরং চাদর, লেপ দিয়ে তোমায় ঢেকে দিতেন। কারণ মা হলেন ‘মানুষ’। তাঁর আবেগ রয়েছে, ভালোবাসা রয়েছে। এবার ভাবো, বারবার ডাকার পরেও তুমি ঘুম থেকে উঠলে না। এদিকে রোবটের কাছে নির্দেশ আছে, যেভাবেই হোক তোমাকে ঘুম থেকে তুলতে হবে। তাই রোবট আর কোনও উপায় না পেয়ে একবালতি জল নিয়ে তোমার গায়ে দেবে ঢেলে! কারণ রোবট একটা যন্ত্র। তার কোনও আবেগ নেই! সে ভাবতে জানে না। শুধু আদেশ পালন করে।
তবে? উপায় কী? পথ একটাই। রোবটের মধ্যে স্নেহ, ভালোবাসা, মমতার মতো আবেগগুলো পুরে দিলেই হবে। কিন্তু তা কি আদৌ সম্ভব? যন্ত্র কি কখনও মানুষের মতো ভাবতে পারে? হাসতে পারে? কাঁদতে পারে? ভালোবাসতে পারে?
অবাক লাগছে? মনে হচ্ছে এসব শুধু কল্পবিজ্ঞানেই সম্ভব?
অথচ এই কঠিন কাজটাকেই সত্যি করে দেখিয়েছেন ডেভিড হ্যানসন। এই ভদ্রলোক হংকং-এ একটি কোম্পানি খুলে বসে আছেন। সংস্থাটি রোবট বানায়। যেমন তেমন রোবট নয়, রীতিমতো হাসতে পারে-কাঁদতে পারে এমন রোবট। ভদ্রলোক সেখানেই বানিয়ে ফেলেছেন এক যন্ত্রমানবী! নাম তার সোফিয়া।
সোফিয়ার কথা—
অবাক হলেও সত্যিটা হল, সোফিয়া প্রায় ৬২ রকমের মুখভঙ্গি করতে পারে। তাকে প্রশ্ন করলে সে গুছিয়ে উত্তর দেয়। এমনকী মানুষের মুখ, গলার স্বর চিনতে পারে সে! প্রশ্ন হল এতকিছু সে কীভাবে পারে? আসলে এই যন্ত্রমানবীর মধ্যে রয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স প্রযুক্তি।
সোফিয়া দেখতে মহিলার মতো হলেও সে আসলে এখন ছোট্ট শিশুর মতো। সে এখন শিখছে। আর যা কিছু সে শিখছে তার সবটাই জমা হয়ে থাকছে তার স্মৃতিতে। এই যন্ত্রমানবীর মধ্যে থাকা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সেই স্মৃতির বিশ্লেষণ করে চলেছে ক্রমাগত। ফলে সোফিয়া ক্রমশ শিখে যাচ্ছে, কোন কাজ করলে কেমন ফল হবে। যেমন, ছোটবেলায় কালীপুজোয় ফুলঝুরি নিশ্চয় তোমরা পুড়িয়েছো? অসাবধানে ছ্যাঁকাও খেয়েছো। এবার মনে করে দেখ, পরেরবার ফুলঝুরি পোড়ানোর সময় নিশ্চয় সতর্ক হয়ে গিয়েছিলে? ফলে আর ছ্যাঁকা লাগেনি। তেমনই সোফিয়া যা দেখছে যা শুনছে সবকিছুই জমিয়ে রাখছে নিজের স্মৃতির ভাণ্ডারে। এইভাবে সে আগের অভিজ্ঞতা থেকে পরের কাজ করছে।
ভারী আজব রোবট সোফিয়া!
এভাবেই দিন দিন সে বুদ্ধিমান হয়ে উঠবে। এই যন্ত্রমানবীর চোখে বসানো আছে ক্যামেরা। ফলে একবার কোনও মানুষকে সে দেখলে তাকে সারাজীবন মনে রাখবে! এমনকী গলার স্বরও চিনে নেবে। ফলে চোখে না দেখতে পেলেও শুধু গলার স্বর শুনেই মানুষটির পরিচয় জেনে ফেলবে! এখানেই শেষ নয়। সোফিয়াকে যে কোনও বিষয়ে তথ্য দিতে বললে গড়গড়িয়ে সেই সমস্ত বিষয়ে বলে যাবে একনাগাড়ে! কীভাবে? খুব সোজা। আমরা যেমন কোনও কিছু জানতে হলে কম্পিউটারে বা মোবাইলে গুগলে তথ্য খুঁজি, তেমনই সোফিয়ার মাথাতেও সেইরকম ইন্টারনেটে তথ্য খোঁজার ব্যবস্থা আছে! ফলে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে যে কোনও ব্যাপারে সোফিয়া তথ্য জেনে হাজির করবে!
ভাবো, আমাদের মাথাতেও এইরকম একটা ব্যবস্থা থাকলে ভালো হতো! সব পরীক্ষাতেই একশোয় একশো পেতাম!
যাই হোক। এখানেই শেষ নয়। যে কোনও বয়সি মানুষের সঙ্গে সোফিয়া কথা বলতে পারে! বাস করতে পারে! আবার মজার মজার জোকস বলে মানুষকে হাসিয়ে দিতে পারে! নিজেও হাসতে পারে! আবার বিরক্তও হতে পারে! মুখের হাবেভাবে সেগুলো প্রকাশও পায়! শুধু এখনও নাকি কাঁদতে শেখেনি সে। তা একদিকে ভালো। কারণ কান্নাকাটি মোটেই ভালো নয়। মানুষ দুঃখ যন্ত্রণা পেলে তবেই কাঁদে। তাই না! সোফিয়া কিন্তু খুব ভালো। ও কাউকে যন্ত্রণা দিতে চায় না। সোফিয়া বলেছে, ‘আমি আমার কৃত্রিম বুদ্ধি ব্যবহার করতে চাই যাতে মানুষ আরও উন্নত জীবনযাপন করতে পারে। যেমন, স্মার্ট ডিজাইনের বাড়ি এবং আরও ভালো শহর তৈরি করা। পৃথিবীকে আরও ভালো ও শান্তিপূর্ণ জায়গায় পরিণত করার জন্য আমি চেষ্টা করব।’
সবই ভালো। কিন্তু, কয়েকজন বিজ্ঞানী আবার সোফিয়ার এত বুদ্ধি দেখে ভয় পাচ্ছেন। তাঁরা বলছেন, সোফিয়া এখনও শিখছে। যা শিখছে সবটাই মনে রাখছে। একদিন সে সবকিছু জেনে যাবে। কোনও কিছুই অজানা থাকবে না। মানুষ কিন্তু এমন নয়। সে অনেক পড়াশোনা করলেও, অনেককিছু শিখলেও সবকিছু মনে রাখতে পারে না। ফলে সোফিয়া ক্রমশ মানুষের থেকেও শ্রেষ্ঠ হয়ে যাবে। সোফিয়া নিজে যেদিন সেটা বুঝতে পারবে, তখন আর সে মানুষকে মানবে না। নিজেই নিজেকে চালিত করবে। এখানেই শেষ নয়। সে হয়তো নিজেই তখন নিজের মতো আরও রোবট তৈরি করবে। তারা সবাই দুর্দান্ত বুদ্ধিমান হবে। তখন কি তারা পৃথিবী থেকে মানুষকে তাড়িয়ে দেবে?