ব্যবসায় অগ্রগতি ও শুভত্ব বৃদ্ধি। ব্যয়ের চাপ থাকায় সঞ্চয়ে বাধা থাকবে। গলা ও বাতের সমস্যায় ... বিশদ
কী ব্যাপার? ভারতের যুদ্ধজাহাজ, মিসাইল বোট, ফুয়েল এসকর্ট শিপ এবং ব্যাক আপ ওয়ারশিপ পুরো টিম তো এগিয়ে গিয়েছে! তাদের কী করতে হবে সেটাও গত প্রায় চারদিন ধরে বিস্তারিত প্ল্যান হয়ে গিয়েছে। আগেই সকলে জানে যে, পাকিস্তানের যুদ্ধজাহাজ পিএনএস খাইবার করাচির অদূরে দাঁড়িয়ে। আর এই অপারেশনের প্রধান লক্ষ্য সর্বপ্রথমে পিএনএস খাইবারকেই ধ্বংস করা। তারপর একে একে অন্য জাহাজগুলিকে ডুবিয়ে দিতে হবে। নিখুঁত প্ল্যান। তাহলে আর নৌসেনা প্রধানের এত টেনশন কেন? তাঁর তো এরকম চরিত্র নয়!
সন্ধ্যা থেকে দু’বার তিনি জিজ্ঞাসা করে ফেলেছেন যে, খাইবারকে আগে টার্গেট করছি তো আমরা? সকলেই একটু অবাক হয়েছে। কিন্তু আসলে কেউ বুঝবে না যে, কেন এই অধীরতা অ্যাডমিরাল নন্দার। এর কারণ অনেক গভীরে। অনেক বড় এক বেদনা আর অপমানের জ্বালা তাঁকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে এতদিন ধরে। এই সুযোগ এসেছে। তাই এবার যেনতেনপ্রকারে পিএনএস খাইবারকে খতম করতেই হবে। কী কারণ? সেটা জানতে আমাদের পিছিয়ে যেতে হবে অ্যাডমিরাল নন্দার মনের সঙ্গে বেশ কয়েক বছর। তাঁর মাথায় সেই বছরের ঘটনাগুলি আজও জীবন্ত। প্রতিশোধের আগুন এক মুহূর্তের জন্য তাঁকে ছেড়ে যায়নি। আজ সেই আগুনে তৃপ্তির ঠান্ডা জল কি পড়বে? তাই তিনি অধৈর্য। আপাতত অপারেশন ট্রাইডেন্ট সফল করার জন্য ভারতের নৌবাহিনী আরব সাগর ধরে অগ্রসর হোক। এটা ১৯৭১। ডিসেম্বর। আমাদের পিছিয়ে যেতে হবে ৬ বছর। দেখা যাক কী হয়েছিল!
১৯৬৫ সাল। সেপ্টেম্বর মাস। তখন নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল বি এস সোমান। ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধ শুরু। অ্যাডমিরাল বি এস সোমান ভারত সরকারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তিনতলায় একটি ঘরে বসে আছেন। তাঁর সামনে একটি নোট রাখা। সরকারি লেটারহেড। সামরিক বিভাগের। সেখানে লেখা আছে, আন্দামান নিকোবর রক্ষা করাই আপাতত ইন্ডিয়ান নেভির প্রধান কর্তব্য। তাই আরব সাগরে পাকিস্তানের দিকে কোনও অফেন্সিভ মুভমেন্ট যেন না হয়। পোরবন্দরের এলাকা ছাপিয়ে আর অগ্রসর হবে না নেভি। ওয়েস্টার্ন সেক্টর সামাল দিচ্ছে আমাদের এয়ার ফোর্স আর আর্মি। মাত্র ২০০ নটসের মধ্যে থাকবে তোমরা। কড়া নির্দেশ।
অ্যাডমিরাল সোমানের মুখচোখ থমথম করছে। এটা ডিফেন্স সেক্রেটারির নোট। এরকম একটা আশ্চর্য নির্দেশ দেওয়ার অর্থ কী? পাকিস্তানের সঙ্গে আর্মি আর এয়ারফোর্স লড়াই করছে। আর ইন্ডিয়ান নেভি কোনও ভূমিকাই পালন করবে না? এটা কীভাবে সম্ভব? পাকিস্তানের অপারেশন গ্র্যান্ড স্ল্যামের জবাবে ভারত সবেমাত্র কয়েকদিন আগেই পাকিস্তানকে অ্যাটাক করেছে। জম্মু-কাশ্মীরের আখনুর সেক্টর দখল করার চেষ্টা করছে পাকিস্তান। আর প্রধানমন্ত্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রী ভারতীয় আর্মিকে বলেছেন, পাঞ্জাব পেরিয়ে আমরা অ্যাটাক করব লাহোরে। পাকিস্তান জবাব পাবে যে, ইট মারলে পাটকেল খেতে হয়।
প্রধানমন্ত্রীর সবুজ সংকেত পেয়ে ভারতীয় সেনা লাহোর, শিয়ালকোট, ডেরার বাবানানক সেক্টরে আক্রমণ করার জন্য অগ্রসর হয়েছে। টানটান উত্তেজনা। লাহোরের কাছে পৌঁছে গিয়েছে ভারতীয় সেনা। লাহোরের আকাশসীমায় ঢুকে পড়ছে ভারতের এয়ারফোর্স। ঠিক এরকম সময় ইন্ডিয়ান নেভি কিছু একটা তো করবে? কিন্তু ভারত সরকার নেভিকে কাজে লাগাতে এখনই চাইছে না।
অ্যাডমিরাল বি এস সোমান সরাসরি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওয়াই বি চ্যবনের অফিসে গিয়ে মন্ত্রীকেই প্রশ্ন করলেন, স্যার, এই সিদ্ধান্তের কারণ কী?
চ্যবন বললেন, আমি বুঝতে পারছি আপনি আপসেট। বাট এটা একটা স্ট্র্যাটেজি অ্যাডমিরাল। আপনি জানেন যে, ইন্দোনেশিয়া নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ দখল করার জন্য এগচ্ছে। আমাদের ওই দ্বীপ নিজেদের দখলে রাখতেই হবে। আর ইন্দোনেশিয়ার এত বড় সাহস হচ্ছে কেন? হচ্ছে, কারণ ওদের মদতদাতা চীন। আপনি তো বুঝতে পারছেন, পশ্চিম সীমান্তে পাকিস্তানকে প্ররোচনা দিয়ে পিকিং যুদ্ধে নামিয়েছে আমাদের বিরুদ্ধে। আর পূর্বদিকে সাগরে এগিয়ে দিচ্ছে ইন্দোনেশিয়াকে। এটা হল টু-ফ্রন্ট ওয়ারের একটা কৌশল চীনের। আমরা সেই ফাঁদে পা দেব না। চীন চাইছে, আমাদের নেভি আরব সাগরের দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ুক। আর সেই ফাঁকে ওরা নিকোবরে ঢুকে আসবে।
অ্যাডমিরাল বললেন, বাট, আমাদের তো ওয়েস্টার্ন ফ্লিট রেডি আছে। সেটা করার জন্য পূর্বদিকে মোতায়েন ফোর্সকে কোনওরকম ডিসটার্ব করা হবে না। গিভ আস অর্ডার স্যার!
চ্যবন বললেন, আমি জানি। আপনার সঙ্গে আমিও একমত। বাট আমাদের প্রোগ্রেস দেখে মনে হচ্ছে, পাকিস্তানকে আমাদের এয়ারফোর্স আর আর্মি যেভাবে চেপে ধরছে, আরব সাগরে ওরা চেষ্টা করেও বেশি কিছু করতে পারবে না।
আর কোনও কথা না বলে অ্যাডমিরাল সোমান চলে গেলেও তিনি পরদিন দেখা করতে চাইলেন খোদ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। লালবাহাদুর শাস্ত্রী জানেন নেভি চিফ কী বলবেন। তিনি চ্যবনকেও ডেকে নিলেন। চ্যবন ঠিক করলেন, আজ তিনি কোনও কথাই বলবেন না। কারণ সত্যিই তো একজন সার্ভিস চিফের কাছে এটা মেনে নেওয়া কঠিন যে, বাকি দুই সার্ভিস অর্থাৎ এয়ারফোর্স আর আর্মি লড়াই করছে। আর তাঁর ফোর্স চুপ করে আছে।
লালবাহাদুর শাস্ত্রী ছোটখাট মানুষ। কিন্তু অসম্ভব মনের জোর এবং ধীর স্থির ব্যক্তিত্ব। তিনি মন দিয়ে অ্যাডমিরালের সব কথা শুনলেন এবং জানিয়ে দিলেন, আমাদের সিদ্ধান্তই ফাইনাল। নেভি এখনও পর্যন্ত কোনও আক্রমণে যাবে না।
ঠিক যে ভয়টা পাচ্ছিলেন অ্যাডমিরাল সোমান, তাই হল। ৭ সেপ্টেম্বর রাতে আচমকা পাকিস্তানের সাতটা জাহাজ করাচি থেকে এগিয়ে এল ভারতের দিকে। এদিকে ওখা বন্দরে একটিমাত্র যুদ্ধজাহাজ রয়েছে। আইএনএস তলওয়ার। যে একা সাতটা পাকিস্তানি যুদ্ধজাহাজকে ঠেকাতে পারবে না। পাকিস্তানের নেতৃত্বে যে যুদ্ধজাহাজ তথা ডেস্ট্রয়ার সেটির নাম পিএনএস খাইবার। অন্তত ২০ মিনিট ধরে বোমাবর্ষণ চলছে। লক্ষ্য দ্বারকা মন্দির ও দ্বারকা শহর। ২০ মিনিটের মধ্যেই আরব সাগরের আকাশে ভারতীয় বিমান বাহিনী হাজির। পাল্টা বোমা মারছে তারা। পাকিস্তানের সাত জাহাজ পিছু হটে আবার ফিরে গেল করাচি।
পাকিস্তান সেই যুদ্ধের পর চরম বিপর্যস্ত ও অসম্মানিত হয়। এমনকী তাসখন্দে মস্কোর উদ্যোগে যে শান্তিচুক্তি হল, সেটাও পাকিস্তানের জন্য চরম অপমানজনক। কিন্তু তাও মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় নেই। কিন্তু জ্বালা মেটাতে পাকিস্তান তারপর থেকে যে প্রবল প্রচারটা শুরু করল, সেটা হল তারা নাকি দ্বারকায় ভয়ঙ্কর ক্ষতি করেছে। এক হাজার বছর পর আবার ভারতের সোমনাথ আক্রমণের মতোই আর একটি আক্রমণ হয়েছে। এবার দ্বারকা। কেন সোমনাথ আক্রমণের সঙ্গে তুলনা টানা হচ্ছে? কারণ, পাকিস্তানের যে যুদ্ধজাহাজগুলি থেকে দ্বারকা শহরে বোমাবর্ষণ করা হয়েছিল, তার অন্যতম পিএনএস খাইবারের অফিসার অন বোর্ড ছিলেন পাকিস্তান নেভির লেফটেন্যান্ট পি এন গজনভী। আর এক হাজার বছর আগে যে আক্রমণকারী সোমনাথ মন্দির ধ্বংস করেছিলেন, তাঁর নামও ছিল মামুদ গজনভী। সুতরাং আবার ভারতকে গজনির সুলতানের ধাঁচেই আক্রমণ করতে সমর্থ হয়েছে পাকিস্তান। ভারত কিছুই বাধা দিতে পারেনি। এই প্রচার পাকিস্তান চরম আকারে শুরু করল।
যদিও সত্যিটা ছিল বিপরীত। পাকিস্তান দ্বারকা আক্রমণ করেছিল বটে। কিন্তু লালবাহাদুর শাস্ত্রী এবং ওয়াই বি চ্যবনরা ঠিকই ধরেছিলেন। ভয়ে ভয়ে এতটাই দূরত্ব থেকে ওই বোমাবর্ষণ হয়েছিল যে, দ্বারকা মন্দির এবং রেলস্টেশনের মধ্যবর্তী স্থানে বেশিরভাগ শেল পড়েছিল। মন্দিরের গায়ে আঁচও লাগেনি। তবে একটি রেলওয়ে স্টোরেজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
কিন্তু তাই বা হবে কেন? এটাই ছিল সেই সময় ভারতের নৌবাহিনীর প্রবল ক্রোধের কারণ। তারা মেনে নিতে পারছে না যে, ভারতের নাকের ডগায় এসে পাকিস্তান এভাবে দ্বারকায় আক্রমণ করে নির্বিঘ্নে ফিরে যাবে? নৌবাহিনীর এই রাগের কথা বুঝেছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী। তিনি তখনই স্থির করেছিলেন ভারতের নৌবাহিনীকে সম্পূর্ণ আধুনিক ফোর্সে পরিণত করা হবে। তারই প্রথম ধাপ একঝাঁক মিসাইল বোট আমদানি। সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে। সেই বোটে থাকবে বিধ্বংসী স্টিক্স মিসাইল!
....
মিসাইল বোট কিনলেই তো হবে না।. সেটা অপারেশনের প্রক্রিয়া শিখতে হবে। অতএব ক্যাপ্টেন কে কে নায়ারের নেতৃত্বে একসঙ্গে ১০ জন লেফটেন্যান্ট কমান্ডারকে পাঠানো হল সোভিয়েত ইউনিয়নে। থাকতে হবে এক বছর। কারণ, শুধু মিসাইল বোট অপারেট করার টেকনোলজি জানলেই হবে না। শিখতে হবে রাশিয়ান ভাষা। বিশেষ সিকিউরিটি টেকনোলজির জন্য এই মিসাইল বোটের প্রতিটি কমান্ড রাশিয়ান ভাষায় সেট করা। কোনও স্যুইচ, কোনও মেসেজ, কোনও রেডিও ট্রান্সমিটার সেট অন্য ভাষায় ম্যাচ করবে না। অতএব, একমাত্র রাশিয়ান ভাষা জানলেই এই বোট অপারেট করা হবে। ছোড়া যাবে নিখুঁত নিশানায় টর্পোডো। কারণ কী? কারণ, এইসব মিসাইল বোট, যদি কখনও শত্রুপক্ষের হাতেও পড়ে, তারা সেটা ব্যবহারই করতে পারবে না। কোড কমান্ড সবই রাশিয়ান। আর কমান্ড কন্ট্রোল না জানলে ইউজ করা যাবে না এক বিন্দুও।
এক বছরের ট্রেনিং নেওয়া হল ভ্লাদিভোস্তক নামক এমন এক প্রান্তসীমায়, যা আদতে উত্তর মেরুর মতোই এক আবহাওয়া। এরপর যখন সেটি ভারতে আনা হল, তখনও গভীর সমুদ্রের তলদেশে নিয়ে গিয়ে বারংবার হল আবার এক বছরের আরও এক দুর্ধর্ষ ট্রেনিং। মিসাইল বোটের অপারেটর লেফটেন্যান্ট কমান্ডাররা তাই হয়ে উঠলেন এক অসম সাহসী যোদ্ধা। বাছাই করা নৌসেনা অফিসার। ১৯৬৫ সালের এক অফিসার থাকা অ্যাডমিরাল নন্দা আজ ১৯৭১ সালে হয়েছেন নেভির প্রধান। আর তাই যখনই আবার পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ শুরু হল এবং ঠিক হল সর্বাগ্রে আরব সাগরে করাচি বন্দরে হামলা করবে ভারত, তখন সবার আগে অ্যাডমিরাল নন্দার মনে পড়ল পিএনএস খাইবারের কথা। যে পিএনএস খাইবার দ্বারকা আক্রমণ করেছিল, আজ তাকেই ধ্বংস করার সুবর্ণ সুযোগ এসেছে হাতে। ঠিক এই কারণে ৬ বছর ধরে ধিকিধিকি করে বুকের মধ্যে লুকিয়ে থাকা প্রতিশোধের আগুন এবার দাউদাউ করে জ্বলে উঠেছে। তাই অ্যাডমিরাল নন্দা বারংবার নিজের ফোর্সের কাছে নিশ্চিত হতে চাইছেন যে, অপারেশন ট্রাইডেন্ট শুরু হওয়ার সময় যেন সবার আগে টার্গেট করা হয় পিএনএস খাইবারকে। এটা তো তাঁরই প্ল্যান। তবু যেন তিনি অধৈর্য হয়ে পড়ছেন। আজ ৬ বছর পর এসেছে সেই সুযোগ অবশেষে। খাইবারকে খতম করার! চরম শিক্ষা দেওয়া হবে।
একটি টিম যাচ্ছে ওখা থেকে। আর একটি গিয়েছে বম্বে থেকে। মিসাইল বোট আর যুদ্ধজাহাজগুলিকে এমনভাবে সাজানো হয়েছে আরব সাগরে, যাদের দূর থেকে দেখলে মনে হচ্ছে একটি তির। অর্থাৎ অ্যারো। তাই এই ফরমেশনের নাম অ্যারো শেপড ফরম্যাট। কিলার ফাইভ স্কোয়াড্রনকে পেরতে হবে ৫০০ কিলোমিটার পথ। ভারতীয় নৌবাহিনীর সেই ট্রেনিং নেওয়া কমান্ডাররাই অংশ নিয়েছে। প্রত্যেকে রাশিয়ান ভাষা জানে। শুধু যে মিসাইল বোট চালাতে হবে তাই নয়। এই অপারেশনে মেরিটাইম অবজার্ভেশন দিতে হবে রাশিয়ান ভাষায়। করাচিতে থাকা নেভির কন্ট্রোলে রেডিও ইন্টারসেপশনে রাশিয়ান ভাষা ধরা পড়লেও তারা সন্দেহ করবে না যে, এটা ইন্ডিয়ার বোট কিংবা ওয়ারশিপ থেকে আসছে। দূর থেকে ভাববে সোভিয়েত ইউনিয়নের কোনও বোট! আসলে ইন্ডিয়ার ঘাতক বাহিনী!
....
এগিয়ে চলেছে স্কোয়াড্রন। আইএনএস নিপাটের র্যাডারে দেখা যাচ্ছে, করাচি বন্দর আর মাত্র ৩৫ কিলোমিটার দূরে। রাত ১০টা ৪৫। দূরত্ব কমে এসেছে। নিঃশব্দে অগ্রসর হচ্ছে গোটা টিম। প্রথম সিগন্যাল আগে থেকেই দেওয়া আছে যে, আইএনএস নির্ঘাত সর্বাগ্রে টার্গেটকে লক করবে। আইএনএস নির্ঘাতে আছে ভয়ঙ্কর স্টিক্স মিসাইল। প্রথমে কিছুটা আকাশে উড়বে। তারপর পলক ফেলার আগেই ছুটবে লক্ষ্যবস্তুকে আঘাত করতে।
পাকিস্তানের যুদ্ধজাহাজ পিএনএস খাইবার ডেস্ট্রয়ার আগেই দেখেছে রাত ১০টা ১৫ মিনিটে একটা কোনও অজানা ফরমেশন এগিয়ে আসছে। ৬০ নটিক্যাল মাইল তখন দূরত্ব। খাইবার নিজেই এগিয়ে যেতে শুরু করল। সে নিজের টর্পেডোকে রেডি করছে। চার্জ করার জন্য। কিন্তু এ কী? অকস্মাৎ আকাশে একটা তীব্র আলো। খাইবারের কমান্ডার ভাবলেন, ভারতের এয়ারফোর্স আবার অ্যাটাক করছে। পাল্টা গুলি করতে হবে। নিমেষের মধ্যে অ্যান্টি এয়ারক্র্যাফট গান থেকে গুলি। কিন্তু যেটা লক্ষ্য করে সেটা মারা হল, তা এয়ারক্র্যাফট ছিলই না। আসলে একটা মিসাইল। ভারতীয় নৌসেনার মারাত্মক শক্তিশালী স্টিক্স মিসাইল। এসে পড়ল খাইবারের বোর্ডে। সবার আগে নাম্বার ওয়ান বয়লার রুমে আগুন ধরে গেল। শব্দ হচ্ছে। বুম...বুম...বুম...। গোটা ফানেল সিস্টেমে কালো ধোঁয়া।
খাইবারের স্পিড কমছে। এবার দাঁড়িয়ে যাবে। অয়্যারলেস অপারেটর তখনও শেষ চেষ্টা করলেন। করাচি কন্ট্রোলে মেসেজ পাঠালেন। বললেন, আন্ডার অ্যাটাক। ইন্ডিয়া এগেইন...। পাগলের মতো মেসেজ যাচ্ছে, ইন পজিশন...জিরো টোয়েন্টি এফএফ টোয়েন্টি...নম্বর ওয়ান বয়লার হিটেড...স্টপড...।
খাইবার যে প্রায় ধ্বংসের মুখে সেটা ততক্ষণে নিমেষের মধ্যে বুঝে গিয়েছেন ভারতীয় নৌসেনার এই টিমের নেতৃত্বে থাকা কমান্ডার যাদব। তিনি এবার আইএনএসকে অর্ডার দিলেন, শ্যুট! তীব্র গতিতে আইএনএস নিপাট থেকে ছুটে গেল আর একটি মিসাইল। করাচি শহর তখনও জেগে। কিন্তু আচমকা যেন মনে হল অনেক দূরের অরণ্যে দাবানল লেগেছে। দাউদাউ করে আগুনের আলো আর কালো ধোঁয়া ঢুকে পড়ছে করাচিতে। হাজার হাজার মানুষ ভয়ে আতঙ্কে শিহরিত। সকলেই একটা কথা বুঝে গিয়েছে। ইন্ডিয়া নির্ঘাত অ্যাটাক করেছে।
ভারতীয় নৌসেনার র্যাডারে দেখা যাচ্ছে পিএনএস খাইবারের শেষ দৃশ্য। ব্লিপ করছে র্যাডার স্ক্রিন। একবার...দুবার...তিনবার...চারবার...।
ব্লিপ সেটিংস ক্রমেই স্তিমিত। তার মানে পাকিস্তানের গৌরবের যুদ্ধজাহাজ দ্বারকা মন্দিরকে লক্ষ্য করে বোমাবর্ষণ করা পিএনএস খাইবার আস্তে আস্তে সমুদ্রগর্ভে ডুবে যাচ্ছে। আনন্দে কমান্ডার যাদব একটা হাততালি দিয়ে উঠলেন। কিন্তু সেটা মুহূর্তের প্রতিক্রিয়া। কারণ, কাজ এখনও শেষ হয়নি। বরং শুরু। খাইবার খতম। পরবর্তী টার্গেট পিএনএস মুহাফিজ।
রাত সাড়ে ১১টা। এগিয়ে আসছে মুহাফিজ! এবার তৈরি হচ্ছে ভারতের আইএনএস বীর! মুহাফিজ রেডি করছে টর্পেডো! ভারতের যুদ্ধজাহাজকে টার্গেট। কাউন্টডাউন শুরু। মাত্র ২০ নটিক্যাল মাইল দূরে। ওয়ান...টু...থ্রি...ফোর...। (চলবে)