ব্যবসায় অগ্রগতি ও শুভত্ব বৃদ্ধি। ব্যয়ের চাপ থাকায় সঞ্চয়ে বাধা থাকবে। গলা ও বাতের সমস্যায় ... বিশদ
বোলপুরের প্রান্তিক স্টেশনের কাছেই যেখানে তেমন বসত বাড়ি নেই সেইখানে একটা বাড়ি করেছেন অরুণবাবু। বাপ আর মেয়ে দু’জন থাকেন আজ বছর পঁচিশ। আগে সঙ্গে অরুণবাবুর মা ছিলেন। বছরখানেক হল গত হয়েছেন। মেয়ে বিশ্বভারতী থেকে রবীন্দ্রসঙ্গীতে এম.এ. করে নিজেই এখানে একটা গানের স্কুল খুলে বসেছে। এছাড়া ও একটা এনজিও চালায়। সেই এনজিও-র মাধ্যমে আদিবাসী ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া শেখানো হয়। বৃষ্টি এসব নিয়ে খুবই ব্যস্ত।
বাবার সঙ্গে মেয়ের এই সকালবেলাতেই যা একটু দেখা হয়। টুকটাক কথাবার্তা হয়। প্রায় প্রতিদিনই ওর এনজিও-তে আসে শান্তিনিকেতনের পাঠভবনের শিক্ষক অর্চিষ্মান দাশগুপ্ত। সে বৃষ্টিকে এনজিও চালাতে সবরকম সাহায্য করে। মেধাবী সুপুরুষ ছেলে। বৃষ্টির সঙ্গে বাকি জীবনটা একসঙ্গে কাটাতে চায়। বাড়ি শান্তিনিকেতনের পূর্বপল্লিতে। পুরনো আশ্রমিক পরিবার। এই সম্পর্কের কথা অরুণবাবুও জেনেছেন। অরুণবাবুর বৃষ্টির এই সম্পর্কে কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু তিনি চান বৃষ্টিকে তার জীবনের অজানা অতীতটা নতুন সম্পর্কে যাওয়ার আগেই পরিষ্কার করে জানিয়ে দেবেন।
আজ রবিবার। বৃষ্টির আজ তেমন ব্যস্ততা নেই। অরুণবাবু ঠিক করেছেন আজই গল্পচ্ছলে সব জানিয়ে দেবেন মেয়েকে।
অরুণবাবু মেয়েকে বললেন, ‘ওই গানটা একবার শোনাবি আমাকে?’
‘কোন গানটা বাবা?’
‘ওই যে, তুমি যে চেয়ে আছো আকাশ ভরে...।’
মনে মনে প্রস্তুত হচ্ছেন অরুণবাবু। বৃষ্টি জানে, ওর মা মেঘ ওকে জন্ম দিয়ে ওর বছর চারেক বয়সে এক দুরারোগ্য ব্যাধিতে মারা গিয়েছে।
বৃষ্টির এই একটা গুণ খুব ভালো হয়েছে বিশ্বভারতীয় সঙ্গীত ভবন থেকে গান শেখার ফলে। গান গাইতে ওর কোনও জড়তা নেই।
বৃষ্টি গাইছে— ‘তুমি যে চেয়ে আছো আকাশ ভরে/ নিশিদিন অনিমেষে দেখছ মোরে।/ আমি চোখ এই আলোকে মেলব যবে/ তোমার ওই চেয়ে-দেখা সফল হবে...’
অরুণবাবু তার প্রেমিকা মেঘকে যেন বলছেন, ‘মেঘ আজ আমি এক চরম সত্যের সামনে দাঁড়িয়ে। তোমার মেয়ে এখন অন্য পরিবারে যেতে চলেছে। তার আগে ওর সত্য জানা উচিত। তুমি আমাকে অনুমতি দাও।’
মেয়ে তখনও চোখ বুজে গাইছে— ‘সে দিনে ধন্য হবে তারার মালা/ তোমার এই লোকে লোকে প্রদীপ জ্বালা/ আমার এই আঁধারটুকু ঘুচলে পরে...’
গান শেষ করে বৃষ্টি দেখল বাবা নিষ্পলক তাকিয়ে আছে সেই দূরপ্রান্তে।
‘বাবা তুমি মাকে খুব ভালোবাসতে তাই না?’
‘সে আমাকে ভালোবাসার সুযোগ দিল কোথায়?’
অরুণবাবু কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন। তারপর মৃদুস্বরে বললেন, ‘আজ তোকে সব বলব। আমার কথা তোর শোনার সময় আছে?’
‘নিশ্চয় আছে। আজ তো আমার ছুটি।’
ব্রেকফাস্ট শেষে মেয়ের মুখোমুখি বসল অরুণবাবু। তারপর বলতে শুরু করল— ‘তোর মাকে প্রথম দেখি আমি তখন ক্লাস এইটে পড়ি। সে সময় আমরা সিঁথির ফোয়ারার মোড়ের সামনে নতুন বাড়ি করে এসেছি। আমাদের বাড়ির ঠিক দু-তিনটে বাড়ির পর তোর মায়ের মামারবাড়ি। মামারবাড়ি যাতায়াতের পথে মেঘকে দেখে আমার ভালো লেগে যায়। তোর মায়ের চোখ দুটো ছিল হরিণ চোখ। গায়ের রংটাও ঠিক তোর মতো। তবে ওই অল্প বয়স থেকেই ওর হাঁটাটা ছিল গজগামিনী। মেঘের চলন আর ওর চোখ দুটো দেখেই ওকে আমার ভালোলাগা।’
বৃষ্টি বিস্ময়ে বলে উঠল, ‘মায়ের হাঁটা দেখে তুমি মায়ের প্রেমে পড়ে গেলে?’
‘মেঘের আসা আর ফিরে যাওয়া দেখাটা আমার নেশার মতো হয়ে উঠেছিল। আমাদের বাড়ির ছাদ থেকে ওর আসার রাস্তাটা বহুদূর পর্যন্ত দেখা যেত। হয়তো কখনও ছাদে উঠেছি। তখন আমি ক্লাস ইলেভেনে পড়ি। দূর থেকে দেখতে পেলাম মেঘ আসছে। মেঘকে দেখেই আমি ছাদ থেকে নেমে যেখান থেকে রাস্তাটা পুরো দেখা যায় সেই ঘরের জানলার ধারে বসে জোরে জোরে কেমিস্ট্রি পড়তে শুরু করতাম মেঘকে ইমপ্রেস করার জন্য। আমাদের বাড়ির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় আমার জোরে জোরে পড়ার শব্দ শুনে ওর মুখে হালকা একটা হাসি দেখতে পেতাম। ও হয়তো আমার ভণ্ডামি দেখে, আমার নির্লজ্জ চাটুকারিতা দেখে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসত। সেই হাসিটা আমার ভীষণ ভালো লাগত। আমাকে আনন্দে মাতোয়ারা করে দিত।’
‘তোমার মাকে ক্লাস এইট থেকে ভালো লেগেছে আর ক্লাস ইলেভেন পর্যন্ত মাকে প্রোপোজ করতে পারনি!’ কপট বিরক্তি প্রকাশ করল বৃষ্টি।
‘আমাদের সময় এমনটাই ছিল রে। আমাদের ভালোবাসায় অপেক্ষা ছিল। বিবেচনা ছিল। যাকে ভালোবাসব নিজে তার উপযুক্ত কি না সেই ভাবনা ছিল।’
‘তারপর কী হল? কবে মাকে তুমি প্রোপোজ করলে?’
‘সব বলছি। একটু ধৈর্য ধর।’
বৃষ্টি বাবার হাত দুটো ধরে বলল, ‘মা-র কথা বলতে তোমার খুব কষ্ট হচ্ছে বুঝতে পারছি। আমিও মাকে খুব মিস করি বাবা।’
‘মেঘকে প্রোপোজ করেছিলাম আমি তখন কলেজে সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি। এতদিন দ্বিধা ছিল— যদি মেঘ আমাকে ফিরিয়ে দেয়। যদি মেঘের পছন্দের অন্য কোনও ছেলে থেকে থাকে। মেঘ বাদে আমি কি বাঁচতে পারব? এইসব নানান কিছু ভেবে দুর্গাপুজোর ঠিক আগে ওর কলেজের সামনে মেঘকে আমি একটা চিঠি দিয়ে আমার মনের কথা জানিয়েছিলাম। মুখে বলেছিলাম, ‘ইচ্ছে হলে পড়ে দেখবেন। আর চিঠিটা পড়ার আগেই জানাই, আমি আপনাকে খুব পছন্দ করি।’
তোর মা আমার হাত থেকে চিঠিটা নিল। তারপর একদম জড়তা শূন্য গলায় আমাকে বলল— আমি আপনার জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেছিলাম। ভেবেছিলাম আপনার পছন্দের কথা আপনি আমাকে জানাবেন। এদিকে আমার এক বান্ধবীর দাদাও আমাকে পছন্দ করে আমার উত্তরের অপেক্ষায় ছিল। আপনার দিক থেকে কোনও চেষ্টা না দেখে, মাস ছয় আগে আমি বান্ধবীর দাদাকে কথা দিয়েছি যে আমি ওর সঙ্গে আছি। অপেক্ষারও তো একটা শেষ আছে?
এই বলে মেঘ আমার চিঠিটা ওর ব্যাগে ভরে নিল। তারপর আমার দিকে সামান্য এগিয়ে এসে বলল, আমাদের মধ্যে সাধারণ বন্ধুত্ব হতেই পারে। তাতে কিন্তু কোনও বাধা নেই।
আমি ওর দিকে তাকিয়েই থাকলাম। ও আমার পাশ কাটিয়ে এগিয়ে গেল বাসস্ট্যান্ডের দিকে।’
‘তারপর—’
‘তারপর ওর সঙ্গে আমার যখনই দেখা হতো ও দাঁড়িয়ে মিনিট দুই-তিন কথা বলত। ফুটবল খেলতে গিয়ে একবার পায়ে খুব চোট পেয়েছিলাম, সে সময় ও আমাকে চুন-হলুদ লাগাতে বলেছিল। গরম-ঠান্ডা জলে সেক করতে বলেছিল। ওর সঙ্গে কথা বলতে আমার বুকটা ফেটে যেত। তবুও আমি কোনওদিন আমার মনের দুর্বলতা ওর কাছে প্রকাশ করতাম না।’
‘এরপর তোমাদের দু’জনের বিয়ে হল কীভাবে বাবা?’
‘মেঘের সঙ্গে আমার বিয়ে হয়নি তো!’
‘তবে আমি?’ বাবার বুকের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে জিজ্ঞাসা করল বৃষ্টি।
‘আজ তোকে সব বলব মা। মেঘ গ্র্যাজুয়েট হওয়ার এক বছরের মধ্যে ওর প্রেমিকের সঙ্গে বিয়ে হয়ে গেল। ভদ্রলোক ফিল্ম লাইনে ছবি পরিচালনার কাজ করতেন। বিয়ের পরে মেঘ ওর বাপের বাড়ি এলে আমাদের দেখা হতো। তবে তখন আমি ওকে এড়িয়ে যেতে চেষ্টা করতাম। এর মধ্যেই একদিন হঠাৎ তোর মামার মুখে শুনলাম মেঘ তার স্বামীর সঙ্গে বোম্বে চলে গিয়েছে। তোর জন্ম বোম্বেতেই। তোর বাবার নাম স্বপ্নাঞ্জন দত্ত।’
‘তবে বাবা, আমি তোমার কাছে কেন? নিজের জন্মদাতা বাবার পরিচয়ে না বেঁচে তোমার পরিচয়ে কেন আমার পরিচয়?’ উৎকণ্ঠায় কাঁপতে কাঁপতে জিজ্ঞাসা করল বৃষ্টি।
‘সব বলছি— মেঘ বোম্বেতে চলে যাওয়ার পর কলকাতায় আমার একদম মন টিকছিল না। একদিন আমার মাকে সব বললাম। মা সব শুনলেন। মেঘকে মা চিনতেন। তিনি আমাকে দিল্লিতে মামাবাড়ি ঘুরে আসতে সাজেশন দিলেন। আমি দিল্লি চলে গেলাম। ওখানে চাকরি নিলাম। পরে তোর ঠাকুরমার অসুস্থতার কথা শুনে বাড়ি ফিরে এলাম।
বোম্বে যাওয়ার পরেই তোর বাবার সঙ্গে মেঘের সম্পর্কের অবনতি ঘটে। সিনেমার লাইনে যা হয়। এক কোটিপতি তামিল নায়িকার সঙ্গে স্বপ্নাঞ্জনের একটা ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয়। মেঘ সেটা একদম মেনে নিতে পারেনি। এই অশান্তির মধ্যেই তুই পৃথিবীতে এলি। তোকে নিয়ে মেঘ সেই যে কলকাতায় চলে এল আর ফিরে গেল না। এ সবের আমি কিছুই জানতাম না। আমার সঙ্গে একদিন মেঘের হঠাৎ রাস্তায় দেখা। আমাকে দেখে আগের মতো দাঁড়িয়ে গেল ও। আমি ওকে ‘কেমন আছেন’ বলতে গিয়ে চমকে উঠলাম। ওর মাথার সিঁদুর নেই। ও কোনওদিনই খুব বেশি সাজত না। কিন্তু না সাজার ভেতর যে আভিজাত্য আছে সেটা মেঘের মধ্যে খুব বেশি ছিল।
প্রথম ধাক্কাটা সামলে আমি ওকে বললাম, ‘কবে হল? কীভাবে হল?’
মেঘ আমার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, ‘কিছু হয়নি তো! আমি স্বপ্নাঞ্জনের সঙ্গে আর থাকতে পারলাম না।’
‘কেন?’ আমার গলা কেঁপে গেল।
‘সে অনেক কথা।’
‘আমাকে বলা যাবে না?’
‘এই রাস্তায় দাঁড়িয়ে বলা যাবে না। শুনতে চাইলে একদিন আসুন বাড়িতে। আমি আমার মাকে বলে রাখব।’ আমার মুখে কোনও কথা আসছিল না। চুপ করে দাঁড়িয়েছিলাম। হঠাৎ ও বলল, ‘জানেন তো এই মাস আটেক আগে আমার একটা মেয়ে হয়েছে। খুব মিষ্টি দেখতে হয়েছে। নিজের মেয়ে বলে বলছি না।’
এরপর একদিন তোর মামারবাড়ি গেলাম সাহস করে। তোকে দেখলাম। মেঘের মেয়ে। তুই সত্যিই খুব মিষ্টি দেখতে হয়েছিলি। তোকে দেখলেই আমার মনে হতো তুই আমার আর মেঘের সন্তান। অন্য কেউ এর মধ্যে ঢুকতেই পারে না। ধীরে ধীরে মেঘের সঙ্গে আমার নতুন করে ঘনিষ্ঠতা হল। আমাদের সমস্ত কর্মকাণ্ড ছিল তোকে জড়িয়ে। তোর সুস্থতা, তোর ভালো থাকা সব ছিল আমাদের দু’জনের নিরন্তর নজরদারিতে। আমি এদিকে বেকার। আমার মা তখনও চাকরি করেন। আমার খাওয়া পরার কোনও অসুবিধে নেই কিন্তু তোর আর মেঘের খরচ কীভাবে চলবে। তোর দিদিমার উইডো পেনশনে চলে ওদের সংসার। আমার মা সমস্ত পরিস্থিতি জানতেন। তিনি আমাকে টাকা দিতেন মেঘকে দেওয়ার জন্য কিন্তু মেঘ কিছুতেই সেই টাকা নিত না। আমার আপ্রাণ চেষ্টা ছিল নিজের উপার্জনের। আমার এক বন্ধুর কৃপায় আমার একটা চাকরি জুটল। মাইনে মোটের ওপর ভালোই। দেখতে দেখতে তিন বছর কেটে গেল। তোর তখন চার বছর বয়স। সেই সময় আমি তোর মাকে আবার প্রোপোজ করলাম আমাকে বিয়ে করার জন্য। মেঘ কিছুতেই রাজি হল না। ওর বক্তব্য ছিল— তোমাকে বিয়ে করতে আমার কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু আমাদের বিয়ের পরে যদি আবার কোনও সন্তান হয় তখন। তোমার মন যদি এই মেয়ের থেকে সরে যায় তবে তো আমার শান্তির থেকে উল্টে নতুন আর এক বিড়ম্বনা শুরু হবে। মেঘের এই কথায় আমি প্রবল আপত্তি করলাম। বললাম, ‘ঠিক আছে আমি কথা দিলাম তোমার কাছ থেকে আমি আর নতুন সন্তান চাইব না। বৃষ্টিই হবে আমাদের একমাত্র মেয়ে।’
তখন মেঘ বলল, ‘তুমি না চাইতে পার কিন্তু তোমার মা তো চাইতেই পারেন। তোমার মা-এর নিজের নাতি-নাতনি চাওয়ার মধ্যে তো কোনও অপরাধ নেই।’
তখন আমি বললাম, ‘আমার মা একদম অন্যরকম। তুমি আমার মায়ের সঙ্গে পরিষ্কার কথা বলে দেখ। মেঘ, আমি তোমাকে ছাড়া আমার জীবন ভাবতেই পারি না। আমি অন্তর থেকে বলছি। বৃষ্টির বাবা আমি। ও আমার সন্তান। আমি শুধু তোমাকে আর বৃষ্টিকে চাই। বল, সেই কবে থেকে আমার অপেক্ষা তোমার জন্য।’ এতটা বলে একটু থামলেন অরুণবাবু। একটা দীর্ঘশ্বাস পড়ল ভেতর থেকে।
‘তারপর কী হল বাবা?’
‘তারপর মেঘ একদিন এল আমার মায়ের কাছে। মা ওকে জানাল যে, তিনি এখনই তোকে নিজের নাতনি বলে স্বীকার করে নিয়েছেন।’
সেদিন তোর মা ফিরে এল আমাদের বাড়ি থেকে। ফেরার পথে আমাকে বলল, ‘তুমি আমাকে খুব ভালোবাসো তাই না?’
আমি বললাম— ‘এখনও তোমার মনে সন্দেহ আছে তাতে?’
মেঘ বলল— ‘একদিন যে আমি তোমাকে ফিরিয়ে দিয়েছিলাম।’
‘তাতে কী হয়েছে। ফিরলেই তো ভালোবাসা আরও দৃঢ় হয়।’
সে বলল, ‘আমি তো স্বার্থপর। তোমার জন্য অপেক্ষা না করে অন্যকে ভালোবেসে সংসার করেছি। আবার তার কাছে প্রতারিত হয়ে অসভ্যের মতো তোমাকে আশ্রয় করতে চাইছি।’
আমি বললাম— ‘এ কী বলছ তুমি! তুমি তো একজনের ভালোবাসাকেই গ্রহণ করেছিলে। যে তোমাকে মুখ ফুটে বলতে পেরেছিল— ভালোবাসি। আমি তো পারিনি বলতে।’
মেঘ মাথা ঝাঁকিয়ে বলেছিল— ‘তুমিও তো বলেছিলে। তবে কিছুদিন পরে। আমি তো তার অনেক আগেই জানতাম তুমি আমাকে ভালোবাসো। তবু—’
বলতে বলতে থেমে গেলে মেঘ। সেই আমাদের শেষ কথা। পরদিন ও চলে গেল। একসঙ্গে অনেকগুলো ঘুমের ওষুধ খেয়েছিল। সুইসাইড নোটে আমার উদ্দেশে লিখেছিল— ‘অরুণ, তুমি আমাকে স্বার্থপর ভেব না। পরজন্ম বলে যদি কিছু থাকে, তবে জেনো এই মেঘ তোমার জন্য আমৃত্যু অপেক্ষা করবে। আমার আর ভুল হবে না। তুমি আমাকে বলেছ— বৃষ্টি তোমার সন্তান। ওকে তুমি দেখ।’ অরুণবাবুর গলা ধরে এল।
বৃষ্টি বাবাকে ছেড়ে উঠে গেল খোলা জানলাটার কাছে তারপর গেয়ে উঠল— ‘নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে রয়েছ নয়নে নয়নে।’