ব্যবসায় অগ্রগতি ও শুভত্ব বৃদ্ধি। ব্যয়ের চাপ থাকায় সঞ্চয়ে বাধা থাকবে। গলা ও বাতের সমস্যায় ... বিশদ
৩ ডিসেম্বর। ১৯৭১। সন্ধ্যা। ইন্দিরা গান্ধীর চোখমুখ শক্ত। একটু আগেই খবর এসেছে পাকিস্তান হঠাৎ আক্রমণ করেছে। রাগে ইন্দিরা গান্ধীর ফর্সা মুখ আরও লাল হয়ে গিয়েছে। থমথমে অবস্থায় তিনি বললেন, এবার আমাদের কী প্ল্যান? আই মাস্ট রিচ দিল্লি ইমিডিয়েটলি! ডি পি ধর ইতস্তত করছেন। ইন্দিরা গান্ধী বুঝতে পারলেন না, এত ভাবার কী আছে! এখনই ফ্লাই করতে হবে। তিনি মনে মনে ঠিক করছেন যে, পাকিস্তান আর আমেরিকা দুটো দেশকেই এবার এমন শিক্ষা দেবেন যে, ইন্ডিয়ার রিট্যালিয়েশন ওই দুই দেশ আজীবন মনে রাখবে।
ডি পি ধরের ইতস্তত করার কারণ আছে। ইন্দিরা গান্ধী চাইলেই তো এখনই দমদম বিমানবন্দর থেকে এয়ারফোর্সের এয়ারক্র্যাফ্ট প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে উড়তে পারবে না! কেন? কারণ, ততক্ষণে দেশের নিরাপত্তা প্রধান গুপ্তচর বাহিনীর কর্তা আর এন কাও মেসেজ পাঠিয়েছেন তিন ফোর্সকেই যে, পাকিস্তান জেনেছে ইন্ডিয়ার প্রাইম মিনিস্টার এখন কোথায়। তিনি যে, দিল্লিতে নেই, কলকাতায় আছেন সেটাও সকলে জানে। আর তাই পাকিস্তানের এয়ারফোর্সকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, লক্ষ রাখতে কলকাতা থেকে কখন কোন এয়ারফোর্স এয়ারক্র্যাফ্টের সিরিজ টেক অফ করে মাঝ আকাশে যাচ্ছে। ঢাকা এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলকে বলা হয়েছে, এই নজরদারি চালাতে। সুতরাং, ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে যে বিমান চলছে, পাকিস্তানি বাহিনী যদি সেই বিমানকে গুলি করে নামায়? তাহলে তো শুরুতেই পাকিস্তানের জয় হবে! খোদ ইন্ডিয়ার প্রাইম মিনিস্টারকেই যুদ্ধের প্রথম দিন আকাশে খতম করে দেওয়া হয়েছে! এই সুযোগ সর্বদাই পাকিস্তান পেতে চাইবে। তাই প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে কলকাতা থেকে দিল্লি নিয়ে যাওয়া যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ। প্ল্যান করতে হবে কিছু। নিতে হবে সতর্কতা।
সাধারণ প্যাসেঞ্জার এয়ারক্র্যাফ্ট নয়। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় মিটিং করে ঠিক হল, প্রধানমন্ত্রীকে নেওয়া হবে ট্রান্সপোর্ট কেরিয়ার এয়ারক্র্যাফ্টে। টি ইউ টোয়েন্টি ফোর। এয়ার ফোর্সের ভিআইপি স্কোয়াড্রনের ট্রান্সপোর্ট কেরিয়ারে যে প্রাইম মিনিস্টার থাকতে পারেন, এটা চট করে পাকিস্তানি বাহিনী ধরতে পারবে না। তাই তারা টার্গেট করলেও বিভ্রান্ত হবে কিছুটা যে কোথায় আছেন ইন্দিরা গান্ধী?
এয়ার হেডকোয়ার্টার্স ওই এয়ারক্র্যাফ্টের পাইলটকে কলকাতা থেকে টেক অফের কিছুক্ষণের মধ্যেই জানিয়ে দিল, ডোন্ট প্রসিড টু দিল্লি ডিরেক্টলি। ডাইভারশন সাজেস্টেড! অর্থাৎ কলকাতা থেকে ঘুরপথে এসো। আগে লখনউতে ল্যান্ডিং করো। তারপর আমরা অল ক্লিয়ার দিলে আবার লখনউ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে ফ্লাই করবে। একান্তই যদি পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হয়? তাহলে সোজা গাড়িতে চাপিয়ে আনা হবে প্রধানমন্ত্রীকে। কিন্তু সে তো অনেক দেরি? ইন্দিরা গান্ধী রাজি নন। তিনি ধমকে উঠলেন। বললেন, ‘আমি একটুও দেরি করতে চাই না। আজই আমি পাকিস্তানকে জবাব দেব। ইমিডিয়েট আমরা কাউন্টার অ্যাটাকে যাব। তিনি এমনিতে স্থির হয়ে বসে আছেন। কিন্তু ভিতরটা ছটফট করছে তাঁর। ইয়াহিয়া খানের সাহস আর স্পর্ধা দেখে তিনি স্তম্ভিত! ওরা ভাবছে কী? ইন্ডিয়ার প্রাইম মিনিস্টার একজন মহিলা? তাই তাঁকে ভয় দেখানো যাবে? আমাকে ওরা চেনেনি!’
ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে আছেন প্রাইভেট সেক্রেটারি ডি পি ধর, ইস্ট পাকিস্তান স্পেশাল ডিভিশনের ডিরেক্টর জে এন দীক্ষিত। বিদেশমন্ত্রকের অফিসার পিটার সিনাই। লখনউয়ের কাছে প্লেন পৌঁছতেই হঠাৎ কো-পাইলট উঠে এসে ডি পি ধরকে বললেন, স্যার, আর্জেন্ট মেসেজ ফ্রম দিল্লি! আপনাকে চাইছে। একবার ককপিটে আসবেন?
সার্টেনলি! দ্রুত ডি পি ধর এগিয়ে গেলেন। এক মিনিট। দু’মিনিট। তিন মিনিট। ককপিট থেকে ফিরছেন না তিনি। কী হল? ইন্দিরা গান্ধীর পর্যন্ত ভ্রু কুঁচকে গিয়েছে। এদিকে আর কিছুক্ষণের মধ্যেই লখনউতে ল্যান্ড করতে হবে। অবশেষে চিন্তিত মুখে ফিরলেন ডি পি ধর। ইন্দিরা গান্ধীর কানের কাছে মুখ এনে কিছু বললেন, ফিসফিস করে। তারপর জে এন দীক্ষিতের পাশে আবার এসে বসলেন। জানা গিয়েছে, শুধু এয়ার স্ট্রাইক নয়। পাকিস্তান গ্রাউন্ড অ্যাটাকও করছে। গোটা নর্থ ইন্ডিয়ায় ব্ল্যাক আউট করা হয়েছে। তাই এখন কীভাবে দিল্লি ল্যান্ড করা যাবে? লখনউ এয়ারফোর্স বেস এয়ারপোর্টের কী অবস্থা সেটাও তো অজানা! অবশ্য প্রধানমন্ত্রীর ফেরা পর্যন্ত অপেক্ষা না করে ভারতীয় সেনা রাষ্ট্রপতিকে জানিয়েই পাল্টা জবাব দেওয়াও শুরু করেছে। তবে কতটা এবং কতদূর যাওয়া হবে, সেটা স্থির করবেন প্রাইম মিনিস্টার। তাই সেনাপ্রধান, এয়ার ফোর্স প্রধান এবং নেভি চিফ অপেক্ষা করছেন, কখন দিল্লি ফিরে ইন্দিরা গান্ধী কিছু বলবেন।
প্লেন লখনউয়ে ল্যান্ড করেছে। কলকাতা থেকে লখনউ পর্যন্ত ফ্লাইটে সবরকম সতর্কতা নেওয়া হয়েছিল। চারদিকে এসকর্ট এয়ারক্র্যাফ্ট নিয়ে। পাকিস্তানের পক্ষ থেকে কোনও অ্যাটাক করা হয়নি। নির্বিঘ্নে লখনউয়ে নামার পর অপেক্ষা করা হল, কতক্ষণ পর আসবে দিল্লির সবুজ সংকেত। প্রায় ২ ঘণ্টা। কোনও অল ক্লিয়ার মেসেজ আসছে না।
অবশেষে এসেছে। ইন্দিরা গান্ধী আর ধৈর্য রাখতে পারছেন না। দ্রুত প্রায় দৌড়ে উঠলেন এয়ারক্র্যাফ্টে। তটস্থ বাকিরা। রাত প্রায় ১১টায় দিল্লির পালাম বিমানবন্দরে নামল প্রধানমন্ত্রীর বিমান। পালাম এয়ারপোর্টে অপেক্ষা করছিলেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী জগজীবন রাম। তিনি এগিয়ে এসে বললেন, আমরা রেডি ম্যাডাম। আপনার সিগন্যালের অপেক্ষা। ইন্দিরা গান্ধী শুধু বললেন হুমম! উঠে গেলেন গাড়িতে। সোজা সাউথ ব্লকের অপারেশন রুম। এখন থেকে যা হবে ওয়ার রুম। সেখানে আগে থেকেই বসে আছেন বিদেশমন্ত্রী স্বর্ণ সিং। বসে আছেন স্যাম মানেকশ। সেনাপ্রধান। নেভি প্রধান অ্যাডমিরাল নন্দা কলকাতায় ছিলেন। তিনিও আসছেন। এয়ার চিফ মার্শাল রয়েছেন এয়ারফোর্স কন্ট্রোলে। তাঁকে খবর দেওয়া হয়েছে। আর্মি হেডকোয়ার্টার্স এরিয়ায় চরম তৎপরতা থাকার কথা এখন। অথচ সাউথ ব্লকে যেন শান্ত এক আবহ। কী ব্যাপার? ইন্দিরা গান্ধী সেনাপ্রধান স্যাম মানেকশকে বললেন, স্যাম, আমরা তো এখন একটা যুদ্ধের মধ্যে আছি?
মানেকশ উত্তর দিলেন, হ্যাঁ ম্যাডাম! অবশেষে। বলে হাসলেন। যেন এটা খুব আনন্দদায়ক খবর। আর্মি মুভমেন্ট অলরেডি শুরু হয়েছে। কাল সকালের আগেই পাকিস্তান ভালো মতো উত্তর পেয়ে যাবে। এয়ারফোর্সকে দিয়ে আমরা শুরু করব। নেভিও অলরেডি ওয়েস্টার্ন ফ্লিটকে বলে দিয়েছে। করাচির দিকে মুভ করছি ম্যাডাম আমরা।
ইন্দিরা গান্ধী ভেবেছিলেন, পাকিস্তান যুদ্ধ করছে, আর আমাদের আর্মি হেডকোয়ার্টার্সে এত শান্তি বিরাজ করছে কেন? এটা কি শৈথিল্যের লক্ষণ? কিন্তু স্যাম মানেকশর কথায় বুঝে গেলেন, সামরিক বাহিনী সম্পূর্ণ তৈরি ছিল। তাই কোনও টেনশন নেই।
ইন্দিরা গান্ধী বললেন, স্যাম, মেক ইট শর্ট। মিনিমাম পিরিয়ড প্রিসিশন!
স্যাম মানেকশ বললেন, সার্টেনলি ম্যাডাম। আমরাও সেটা ভেবেছি। কত কম সময়ের মধ্যে পাকিস্তানকে সারেন্ডার করাতে পারি।
প্রধানমন্ত্রীর মুখে এতক্ষণ পর সামান্য হাসি ফুটল। তাঁকে যেতে হবে ক্যাবিনেট মিটিংয়ে। সেখানে গোটা ব্যাপারটা ব্রিফ করার পর আকাশবাণী থেকে দেশবাসীকে বার্তা। ইন্দিরা গান্ধী দেশবাসীকে বলছেন, পাকিস্তান আমাদের উপর একটা যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছে। আক্রমণ করেছে পশ্চিম ভারতে। সুতরাং আমরাও তার পাল্টা জবাব দিতে তৈরি। দেশবাসী আমাদের সঙ্গে আছেন। আমাদের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে দেশবাসীর শুভেচ্ছা থাকুক। ঠিক তখন বিশাখাপত্তনমের কাছে বন্দরের অদূরে প্রবল বিস্ফোরণ হচ্ছে। পাকিস্তান যখন মনে করছে তারা প্রথম আক্রমণ করে ভারতকে চরম বিপদে ফেলে দিয়েছে, আর ভারতের গৌরব যুদ্ধজাহাজ আইএনএস বিক্রান্তকে টর্পেডো দিয়ে উড়িয়ে দিয়ে কোণঠাসা করে দেবে, তাদের সেই আক্রমণকারী সাবমেরিন পিএনএস গাজিতে বিস্ফোরণ ঘটেছে। যুদ্ধ শুরুর মাহেন্দ্রক্ষণে সর্বাগ্রে ধ্বংস হয়ে গেল পিএনএস গাজি। করাচিতে খবর আসার পর গোটা ন্যাভাল হেডকোয়ার্টার্স স্তব্ধ হয়ে বসে আছে। গাজির অভ্যন্তরে থাকা নেভি অফিসার, কর্মী, নাবিকেরা কোথায়? সকলে শহিদ হয়ে গেল নাকি? করাচি ভাবতে শুরু করল, যুদ্ধের শুরুতেই যেখানে এরকম এক চরম দুঃসংবাদ, তার মানে এটা কি কোনও আগাম বার্তা যে, যুদ্ধে পাকিস্তানের পরাজয় হবে? এরকম খারাপ স্টার্টিং হল কেন?
করাচি যখন এসব ভাবছে, তখন তাদের কল্পনাতেই নেই, ভারতীয় নৌবাহিনী কী করতে চলেছে এরপর? মুম্বই এবং গুজরাত থেকে বিদ্যুতের গতিতে এগিয়ে চলেছে একঝাঁক মিসাইল বোট এবং ওয়ারশিপ। লক্ষ্য করাচি! অভিযানের নাম, অপারেশন ট্রাইডেন্ট!
....
এই বাহিনীর নাম কিলার স্কোয়াড্রন টোয়েন্টি ফাইভ। পরিভাষায় বলা হয়, কে টোয়েন্টি ফাইভ! প্ল্যান হল, সবার আগে পূর্ব পাকিস্তানকে সম্পূর্ণ ঘিরে ফেলতে হবে। যাতে এয়ারফোর্স, নেভি, আর্মি— পাকিস্তানের কোনও ফোর্স না পারবে পূর্ব পাকিস্তানের মধ্যে ঢুকতে। না পারবে বেরতে। সবথেকে বড় কাজ ইন্ডিয়ান নেভির। চট্টগ্রাম বন্দরকে সিল করে দিতে হবে। বিশাখাপত্তনমে যখন পাকিস্তানের সাবমেরিন পিএনএস গাজিতে বিস্ফোরণ হচ্ছে, তখন আইএনএস বিক্রান্ত অনেক দূরে আন্দামানের কাছে। তাকে মেসেজ করা হল। বিক্রান্ত এবার এগচ্ছে চট্টগ্রামের দিকে। বিক্রান্তের থেকে উড়বে একের পর এক এয়ারফোর্সের ফাইটার জেট। পাকিস্তানের সবথেকে শক্তিশালী কেন্দ্র হল করাচি। অতএব করাচি বন্দরকে এমনভাবে আক্রমণ করা হবে যাতে এই বন্দর সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। জাহাজ, ট্যাঙ্কার, ফুয়েল অপারেশন ইউনিট, বয়লার সিস্টেম সব ধ্বংস করা দরকার।
অবশ্যই আসল কাজটা করবে মিসাইল বোট। কিন্তু একা পারবে না। কভার ব্যাকআপ চাই। তাই তিনটে যুদ্ধজাহাজ থাকছে। মিসাইল বোটের মধ্যে অ্যান্টি এয়ারক্র্যাফ্ট সিস্টেম থাকলেও সেটা তেমন শক্তিশালী নয়। আরও বেশি র্যাডার রেঞ্জ হওয়া দরকার। তাই আইএনএস নিপাট, আইএনএস নির্ঘাত ও আইএনএস বীরকে আনা হয়েছে। যেগুলির কমান্ডে রয়েছেন কমান্ডার বি বি যাদব, লেফটেন্যান্ট কম্যান্ডার বি কে কাবিনা, আই জে শর্মা এবং ও পি মেহতা। তাঁরা প্রত্যেকেই একদিকে যেমন এই যুদ্ধজাহাজের অপারেশনে পারদর্শী, একইভাবে রাশিয়ান মিসাইল বোটগুলির কমান্ড সিস্টেমের ট্রেনিং নিয়েছেন। কমান্ডার কে এন জাডু এবং কমান্ডার জি এস রাও থাকছেন আইএনএস কাচ্ছাল ও আইএনএস কিলটন নিয়ে। জ্বালানির ব্যবস্থা কী হবে? আইএনএস পোশক ও আইএনএস বিদ্যুৎ নামের দুই রিফুয়েল ইউনিট এতটাই আধুনিক যে, অপারেশন চলাকালীনই তারা যে কোনও যুদ্ধজাহাজে জ্বালানি ভরে দিতে সক্ষম। অর্থাৎ অ্যাটাক করবে কিলার স্কোয়াড্রন টোয়েন্টি ফাইভ। আটটা মিসাইল বোর্ড। আর্মড ব্যাকআপ করার জন্য থাকছে চারটি ওয়ারশিপ। এসকর্ট করবে দুটি যুদ্ধজাহাজ।
জেনারেল স্যাম মানেকশ আগের রাতেই অপারেশন রুমে ইন্দিরা গান্ধীকে বলেছিলেন যে, সবার আগে কাজ শুরু করবে এয়ারফোর্স। ঠিক তাই হল। নিখুঁত প্ল্যান। ৪ ডিসেম্বর সকাল। আচমকা করাচির আকাশে ঢুকে পড়ল ভারতীয় বিমানবাহিনীর চারটি ফাইটার। এটা পাকিস্তানের কাছে প্রত্যাশিত ছিল। করাচি এয়ারফোর্স তৈরিও ছিল। কিন্তু তাদের একটাও গুলি ছুঁতে পারছে না ভারতের ফাইটার জেটকে। ভারতীয় বিমাববাহিনীর আগে থেকেই প্ল্যান করা আছে কী করতে হবে। অজানা টার্গেটকে ধ্বংস করতে সময় লাগে সাধারণত। কিন্তু বেছে বেছে যেখানে বোমা ফেলা হচ্ছে, সেটা দেখে মনে হচ্ছে ইন্ডিয়ান এয়ারফোর্সের এই চারটি বিমানের পাইলটেরা যেন আগে থেকেই করাচি এয়ারস্ট্রিপ সম্পর্কে সব জানেন। এটা হল নেভি চিফ অ্যাডমিরাল নন্দার ব্রিফিং এর ফল। তিনি রীতিমতো ম্যাপ এঁকে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন যে, করাচির কোথায় কী কী আছে। কোন রুটে গিয়ে, ঠিক কত স্পিডে পৌঁছে ফার্স্ট বম্বিং কোন ডিরেকশনে করতে হবে সব বলেছিলেন।
ছবির মতো সেই ব্রিফিং মনে রেখে শুধু কাজটা করে যেতে হবে ম্যাপের পয়েন্ট সামনে রেখে। তাই করছেন ইন্ডিয়ান পাইলটেরা। করাচির এয়ারফিল্ডের র্যাডার-স্টেশন আর ওয়্যারহাউস ধ্বংস হয়ে গেল সবার আগে। এটার নাম মারসুর স্ট্রিপ। এখানে স্রেফ একের পর এক বোমা ফেলা হল রানওয়েতে।
রানওয়ে এমনভাবে ধ্বংস হল যে, অন্তত এক মাস লাগবে মেরামতি করতে। আর কী আশ্চর্য! শুধু এই কাজটা করেই চলে গেল ভারতীয় যুদ্ধবিমানগুলি। কেন? কারণ, এটা এয়ারফোর্সের নিজেদের অপারেশনের প্ল্যান নয়। এটা আসলে বৃহত্তর এক নেভি অভিযানের প্রাক পরিকল্পনা। ভারতীয় নৌসেনার অপারেশন ট্রাইডেন্ট তখনই শুরু করা হবে, যখন নিশ্চিত হওয়া যাবে যে, করাচির মাসরুর স্ট্রিপ থেকে পাকিস্তান এয়ার ফোর্সের কোনও বিমান উড়তে পারবে না। কারণ, করাচি বন্দরের দিকে অগ্রসর হওয়া ভারতীয় নেভির জাহাজ ও মিসাইল বোটকে ধ্বংস করার জন্য সবথেকে কাছে থাকা যে এয়ারস্ট্রিপ থেকে পাক ফাইটার জেট উড়বে সেটি হল ওই মাসরুর। অতএব এটাকে আগে অকেজো করে দাও।
আগে থেকেই ভারতের নেভি আর এয়ারফোর্সের মধ্যে প্ল্যান হয়ে গিয়েছে যে, আগে ৪ ডিসেম্বর সকালে এয়ারফোর্স করাচিতে অ্যাটাক করবে, আর তারপরই যাত্রা শুরু করবে ভারতের নৌবাহিনীর কিলার স্কোয়াড্রন। পাকিস্তান ধরেই নিল ইন্ডিয়ান এয়ারফোর্সের এই চকিত আক্রমণ যেন রুটিন একটা প্রত্যাঘাত। গতকালই পাকিস্তান হামলা চালিয়েছে ওয়েস্টার্ন সেক্টরে। সুতরাং এটা স্বাভাবিক আজ ভারত পাল্টা জবাব দেবে। এটাও সেরকম বম্বিং। কিন্তু পাকিস্তান বুঝতে পারছে না এটা স্রেফ মুদ্রার একটি পিঠ। অন্য পিঠে আসছে ইন্ডিয়ান নেভির কিলার স্কোয়াড্রন! আজ রাতে।
এখন সন্ধ্যা। আরব সাগরের মাঝদরিয়ায় ইন্ডিয়ান নেভির কিলার স্কোয়াড্রন। কে টোয়েন্টি ফাইভের র্যাডারে চোখ রাখা শুরু হল। কোথায় পাকিস্তানের সেই জাহাজ? যাকে সবার আগে অ্যাটাক করা হবে এই অপারেশনে। পিএনএস খাইবার ডেস্ট্রয়ার! কমান্ডার বি বি যাদব রেডিও ট্রান্সমিটারে নেভি হেডকোয়ার্টার্সে মেসেজ পাঠালেন, ট্রাইডেন্ট স্টার্টিং...!