ব্যবসায় অগ্রগতি ও শুভত্ব বৃদ্ধি। ব্যয়ের চাপ থাকায় সঞ্চয়ে বাধা থাকবে। গলা ও বাতের সমস্যায় ... বিশদ
করাচি বন্দরে পিএনএস মুহাফিজেরই দায়িত্ব ছিল পিএনএস খাইবারকে রক্ষা করা। যাকে বলা যায় ব্যাক আপ। পাকিস্তান ন্যাভাল হেডকোয়ার্টার মেসেজ পাঠাচ্ছে এখনই তোমরা যাও কাউন্টার অ্যাটাকে। মুহাফিজ দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে। রাত প্রায় সাড়ে ১১টা। মুহাফিজ কিছুতেই বুঝতে পারছে না যে, কেন র্যাডারে ধরা পড়ছে না কিছু। আসলে ভারতীয় বাহিনীর স্কোয়াড্রন টোয়েন্টি ফাইভকে অ্যাডমিরাল নন্দা প্রথম থেকে বলে দিয়েছেন যে, একই ফরমেশন রাখবে না। অপারেশনের সময়, বারংবার ফরমেশন চেঞ্জ করবে। তাহলে শত্রুপক্ষ বিভ্রান্ত হবে। সুতরাং যখন আক্রমণ শুরু হয়েছিল, তখন ব্যাপারটা ছিল অ্যারো শেপড আক্রমণ। অর্থাৎ তিরের মতো। এবার সেটা রাখা হচ্ছে না।
প্রথম আক্রমণে পাকিস্তানের গৌরব পিএনএস খাইবারকে ডুবিয়ে দেওয়ার পর এবার ভারতের কিলার টোয়েন্টি ফাইভ সোজা সরলরেখায় দাঁড়ায় পরস্পরের থেকে দূরত্ব রেখে। মুহাফিজকে সবার আগে বিভ্রান্ত করেছে খোদ পাকিস্তানেরই ন্যাভাল হেডকোয়ার্টার। তাদের মেসেজে তাড়াহুড়ো আর উত্তেজনায় ভুল পজিশন পাঠিয়েছে। আর পিএনএস মুহাফিজের এতটাই দুর্ভাগ্য যে, পাকিস্তানের নেভি কন্ট্রোল ঠিক যে ভুল পজিশন পাঠিয়েছে, সেখানে উপস্থিত হওয়ার পর আচমকা র্যাডারে পিএনএস মুহাফিজ দেখতে পেল মাত্র ৫০ কিলোমিটার দূরে দাঁড়িয়ে আছে ভারতের মারাত্মক মিসাইল বোট। অর্থাৎ এখনই কোনও মিসাইল নিক্ষেপ করলে মুহাফিজ ধ্বংস হয়ে যাবে। ভারতের যুদ্ধজাহাজ আইএনএস বীরকে গ্রুপ কমান্ডার বি বি যাদব মেসেজ পাঠালেন। বললেন, কে টু ফাইভ... এনগেজ দ্য এনিমি। ততক্ষণে আইএনএস বীরের র্যাডারে ধরা পড়ে গিয়েছে যে খুব কাছেই দাঁড়িয়ে আছে শত্রুপক্ষের এক জাহাজ। সুতরাং রেডি বীর। এই জাহাজের ক্যাপ্টেন লেফটেন্যান্ট কমান্ডার ও পি মেহতা। তিনি একটুও সময় নষ্ট করলেন না। অর্ডার দিলেন। আকাশে উড়ে গেল মুহূর্তের মধ্যে স্টিক্ট মিসাইল এএসএইচএম।
নিজের পজিশন সেটলড করার আগেই একটা আগুনের গোলা আকাশে উঠতে দেখলেন পাকিস্তান নৌসেনার সেই মুহাফিজ জাহাজের কমান্ডার মাসুদ জাহান। মুহাফিজের অন্যতম নাবিক। তিনি জানেন ওই আগুনের গোলা আসলে কী? চোখের সামনে আকাশের ওই আগুনের গোলা যে সামনে বা পিছনের দিকে পড়বে এবং তাঁরা ধ্বংস হতে চলেছেন সেটা যখন বুঝলেন, ততক্ষণে অনেকটাই দেরি। আলোর গতিতে এসে পড়ল পোর্ট সাইডে সেই মিসাইল।
জাহান চিৎকার করে বললেন, পালাও পালাও...জাম্প...জাম্প.. যে যেমন পারছে ঝাঁপ দিচ্ছে সমুদ্রে। এমনকী একটা মেসেজ ট্রান্সমিশনেরও সময় পাওয়া গেল না। কারণ, এরকম শক্তিশালী মিসাইল যে ভারত করাচি বন্দরে ঢুকে মারতে পারে, এটা কল্পনাই করা যায়নি। প্রথমে ভাবা হয়েছিল এয়ারক্র্যাফট থেকে আক্রমণ করছে ভারত। সেই কারণেই খাইবার থেকে ওই ভুল মেসেজ গিয়েছে। এখন বোঝা যাচ্ছে, আসলে করাচি বন্দরকে প্রায় রুদ্ধ করে দিতে ভারতের একঝাঁক মিসাইল বোট আর ব্যাক আপ ওয়ারশিপ এসে গিয়েছে একেবারে করাচি শহরের ঘাড়ের উপরে।
মুহাফিজ মাত্র ৭০ মিনিটের মধ্যেই অগ্নিদগ্ধ হয়ে সম্পূর্ণ ডুবে গেল। মধ্যরাত। অর্থাৎ ৫ ডিসেম্বর। ১৯৭১। গতকালই সন্ধ্যায় পাকিস্তান হামলা করেছিল। আচমকা একের পর এক এয়ারপোর্টে আর এয়াফোর্স বেস স্টেশনে বোমা ফেলে ভেবেছিল ভারতকে চরম বিপদে ফেলা যাবে। কিন্তু মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এখন প্রায় করাচি বন্দরই ভারতীয় নেভি দখল করে নেওয়ার পথে। অবশ্য এখনও অপারেশন ট্রাইডেন্টের অভিযান শেষ হয়নি। আসল কাজ এখনও বাকি! কী আসল কাজ?
নেভি প্রধান অ্যাডমিরাল নন্দা বলে দিয়েছেন নিখুঁত প্ল্যান। করাচি বন্দরের ঠিক কোথায় রাখা আছে অয়েল ট্যাঙ্কার। সেটার ম্যাপ তিনি প্রত্যেক জাহাজের কমান্ডারকে দিয়েছেন। এবার টার্গেট ট্যাঙ্ক। করাচির জ্বালানি সাপ্লাই বন্ধ করে দিতে হবে। এটাই বৃহত্তম ফুয়েল সাপ্লাই ট্যাঙ্ক আর পাইপলাইন।
এবার দায়িত্ব নেবে আইএনএস নিপাট। সেরকমই প্ল্যান। কিন্তু তার কাজ তো জাহাজকে অ্যাটাক করা! সেটা সে করছেও। মোট দু’টি জাহাজকে সে এবার টার্গেট করেছে। তার মধ্যে একটি ভেসেল। নাম এমভি ভেনাস চ্যালেঞ্জার। আর অন্যটির নাম— পিএনএস শাহজাহান। দুটির মধ্যে আছে অসংখ্য অস্ত্র। এমভি ভেনাস চ্যালেঞ্জার কোনও যুদ্ধজাহাজ নয়। চারদিকে তাকে ঘিরে ছিল একঝাঁক জাহাজ। তারা আসলে পাহারা দিচ্ছে চ্যালেঞ্জারকে। কারণ চ্যালেঞ্জার নিছক একটি আর্মস সাপ্লাই শিপ। সায়গন থেকে আমেরিকায় পাঠানো হচ্ছে প্রভূত অস্ত্রশস্ত্র আর গোলাবারুদ। সেটাই সে বহন করে আনবে। আপাতত চারদিন ধরে রয়েছে করাচি বন্দরে। সে সাতেপাঁচে নেই। আমেরিকার সম্পত্তি নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এমতাবস্থায় স্রেফ করাচিতে থাকার কারণেই তাকে এবার মিসাইলের সামনে পড়তে হল। আইএনএস নিপাট বেশি সময়ই নিল না। মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যে তিনটি মিসাইল নিক্ষেপ করল। আর শাহজাহান এবং চ্যালেঞ্জার সম্পূর্ণ ভস্মীভূত। অবশ্য চ্যালেঞ্জার এক ঘণ্টা পর ডুবে গেলেও তিনটি মিসাইলের আঘাতও শাহজাহানকে ডোবাতে পারেনি। কারণ, শাহজাহানের চরিত্রটি হল নৌবাহিনীর পরিভাষায় পার্টিশানড স্ট্রাকচারড। অর্থাৎ সমুদ্রের গভীরেও যদি সেটায় জল ঢুকে যায়, তা সত্ত্বেও চলমান থাকবে। ডুববে না। কিন্তু তা হলেই বা কী? আগুন তো নিভবে না। ভেসে ভেসেই আগুনে দগ্ধ হয়ে যাচ্ছে শাহজাহান।
সবথেকে অবাক হচ্ছে ভারতীয় নৌবাহিনীর তিন গ্রুপ ক্যাপ্টেন। বি বি যাদব, ও পি মেহতা ও বি এন কোভানা। কী ব্যাপার? তাঁরা বুঝতেই পারছেন না যে, পাকিস্তানের হল কী? এতক্ষণেও পাকিস্তান নেভিকে হেল্প করার জন্য পাকিস্তানের এয়ারফোর্স নামছে না কেন? তাঁরা দ্রুততার সঙ্গে অপারেশন খতম করে পালাতে চাইছেন। কারণ, এবার যে কোনও মুহূর্তেই আকাশে উড়বে পাকিস্তানের এয়ারক্র্যাফট আর ফাইটার জেট। তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালাবে। আর সেই কারণেই মেহতা, কোভানা আর যাদব রেডি হচ্ছেন অ্যান্টি এয়ারক্র্যাফট গান নিয়ে।
আর এরকমই বিস্মিত হয়েছেন ঠিক সেই মুহূর্তে পাকিস্তান নাভাল হেডকোয়ার্টারে বসে থাকা রেডিও অপারেশন অফিসার মেহমুদ জাইদি। তিনি রেডিও ট্রান্সমিটার অয়্যারলেসে অফিসারকে বলছেন, স্যার, মারসুর এয়ারবেস কোনও কো-অপারেট করছে না। আমাদের একের পর এক জাহাজ অ্যাটাক করেছে ইন্ডিয়ান নেভি। মনে হয় এয়ারফোর্সও আছে। কিন্তু বারবার জানাচ্ছি, আমাদের এয়ারবেস কোনও রেসপন্স করছে না। কী করব?
ওই অফিসার কোনও কথা বলছেন না। শুধু গম্ভীর মুখে বললেন, জাইদি ছোড় দো! হামারে উস এয়ারবেসকে কোই ভি অয়্যারলেস কাম নেহি কর রাহে হ্যায়। তুমি কন্ট্যাক্ট করতে পারবে না। কারণ, আজ সকালেই ইন্ডিয়ান এয়ারফোর্স মারসুর এয়ারবেস রানওয়ে ভেঙে দিয়ে গিয়েছে। যাতে আমরা প্রসিড করতে না পারি। গোটাটাই ইন্ডিয়া নিখুঁত প্ল্যান করে এগিয়েছে। শুরু থেকে ব্যাকফুটে করে দিয়েছে আমাদের ওই গোঁয়ার প্রেসিডেন্ট। রানওয়ে, এটিসি, রেডিও স্টেশন কিছুই নেই। সব বোমা মেরে উড়িয়ে দিয়েছে ইন্ডিয়ান এয়ারফোর্স আজ সকালেই। এখন আমার তো ভয় হচ্ছে, এই যে করাচিকে ঘিরে রয়েছে ইন্ডিয়ান নেভিফোর্স, শিওর এয়ারফোর্সও কোনও একটা বেসে রেডি হয়ে আছে। আমাদের এয়ারক্র্যাফট বেরলেই ওরা কাউন্টার অ্যাটাক করবে। স্যার...স্যার...স্যার...জাইদি আবার চিৎকার করে উঠলেন।
কী হল? সেই অফিসার পাল্টা জানতে চাইছেন মেসেজে! কী হল জাইদি? স্যার আবার অ্যাটাক করেছে। অ্যাটাকও রিজিউম করেছে ওরা। আবার মেসেজ আসছে। এবার টিপু সুলতান আর টুগরিল জাহাজ ডেসট্রয় করে দিয়েছে। আমরা কী করব স্যার। ওরা কন্ট্রোল রুমে চলে আসবে না তো? আতঙ্কে কাঁপছেন জাইদি। সেই অফিসার স্তব্ধ হয়ে গেলেন। আইএনএস নিপাট এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কোথায় যাচ্ছে? এত কাছে যাচ্ছেন কেন বি বি যাদব? ভাবছেন কমান্ডার মেহতা। বি বি যাদবকে মেসেজ করলেন মেহতা, কী করছেন আপনি? আর কত কাছে যাবেন? যাদব দাঁতে দাঁত চেপে বললেন, ওদের এই করাচি বেসই ধ্বংস করে দেব। আর কোনওদিনই যাতে উঠে দাঁড়াতে না পারে। এসব কী করছেন যাদব? পাগল হয়ে গেলেন নাকি? তিনি জানেন যে, বি বি যাদব একজন চরম সাহসী আর সম্পূর্ণ আনপ্রেডিকটেবল অফিসার। কোনও নিয়মকানুন নয়। এর আগেও দু-একটা অপারেশনে নাকি এরকম করেছেন। তাই বলে করাচিতে ঢুকে পড়বে নাকি? শত্রুর গুহায়?
কমান্ডার যাদবের নির্দেশে পরপর স্টিক্ট মিসাইল নিক্ষেপ হচ্ছে। কয়েক মিনিটের মধ্যেই করাচি জ্বলতে শুরু করল। আগুন জ্বলছে বন্দরে। আগুন জ্বলছে তেলের ট্যাঙ্কে। আগুন লেগেছে স্টোরে। আগুনে ভস্মীভূত হয়ে যাচ্ছে একের পর এক গোডাউন। রেসকিউ বোট। যুদ্ধের দ্বিতীয় দিনেই পাকিস্তান প্রায় মুখ থুবড়ে পড়েছে। এবার ফেরার পালা। অপারেশন সফল। দ্রুত মেসেজ পাঠানো হল নেভি কন্ট্রোল রুমে। দু’টি শব্দ। অঙ্গার ডান। অঙ্গার হল কোড। অর্থাৎ অপারেশন সফল।
গোটা টিম এবার ফিরবে মাংরোলে। এই টিম যে আসলে গুজরাত থেকেই যাত্রা শুরু করেছে সেটা এতক্ষণে পাকিস্তান টের পেয়ে গিয়েছে। সুতরাং পাকিস্তান এয়ারফোর্স আর নেভি বাহিনী ধরেই নেবে যে, ভারতের এই নৌবাহিনী তাদের অভিযান সমাপ্ত করে ফিরবে আবার নিজেদের বেস স্টেশনে। অর্থাৎ গুজরাতের ওখা বন্দরে। কিন্তু ভারতীয় টিম ঝড়ের গতিতে ফিরছে অন্য রুটে। তার মধ্যে আচমকা দুঃসংবাদ। আইএনএস নিপাট নেই। কোথায় গেল? বন্দরের অত কাছে গিয়ে ফেরার সময় আবার নিপাট পিছিয়ে পড়েছে। অন্যরা দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে ভারতের দিকে।
কিন্তু মাঝসমুদ্রে এসে নিপাটের দেখা গিয়েছে নতুন সঙ্কট। হঠাৎ তেলের পাইপ ভেঙে গিয়েছে। সেই পাইপ লিক করে তেল ইঞ্জিন রুমে জমছে। আর এভাবে বেশিক্ষণ চালানো যাবে না। এদিকে র্যাডারে সন্ত্রস্ত চোখ। পিছনে পাকিস্তানের যুদ্ধজাহাজ আর ফাইটার জেট তাড়া করছে না তো! আপাতত একটি ইঞ্জিনেই চলতে হবে। পিছনে করাচি বন্দর। জাহাজে টেকনিক্যাল গোলমাল। আর ভারতের বাকি সব জাহাজ ও মিসাইল বোট ধারে কাছে নেই। তারা অনেক এগিয়ে গিয়েছে। কী করবেন এবার বি বি যাদব? আরব সাগরে কি এত বড় একটা সফল অপারেশনের পর শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানের হাতে ধরা পড়তে হবে? নাকি ধ্বংস হতে হবে এবার তাকেই?
স্যার কী করা যায়? কম্যান্ডার বি বি যাদব গম্ভীর হয়ে নিজের চেম্বারে বসে। তারপর বললেন, কতক্ষণের ফুয়েল আছে?
ইঞ্জিনিয়ার প্রসাদ রঞ্জন বললেন, স্যার প্রচুর লিক করছে। আমাদের হাতে সময় নেই। ইঞ্জিন বন্ধ করে দিতে হবে আর একটু পর। আপনি রেসকিউ রিফুয়েল ইউনিটের সঙ্গে কন্ট্যাক্ট করুন। না হলে আমাদের এখানেই সলিলসমাধি কিংবা পাকিস্তানের হাতে মৃত্যু।
এবার কমান্ডার বি বি যাদব এক মারাত্মক সিদ্ধান্ত নিলেন। ভেসেলে থাকা প্রত্যেকটি কর্মী, অফিসার, ক্রু, ইঞ্জিনিয়ার, নাবিক, অয়্যারলেস অপারেটরকে ডেকে বললেন, আমাকে একটা গ্যাম্বল নিতেই হবে। জুয়া। হয় জিতব। অথবা মরব। সবাই। এছাড়া উপায় নেই। আমরা মাঝসমুদ্রে। পিছনে পাকিস্তানের নৌসেনা তেড়ে আসছে। যে কোনও সময় আকাশে পাকিস্তানের ফাইটার জেট চলে এসে আমাদের বোমা মেরে উড়িয়ে দেবে। এদিকে আমাদের ইঞ্জিন থেকে সব তেল বেরিয়ে যাচ্ছে। এবার আর আমার কাছে অপশন নেই। একটাই উপায়!
কী উপায়? সকলে উদগ্রীব।
বি বি যাদব বললেন, ইন্ডিয়ান কোস্টে যাব না। অন্যদিকে যাব।
মানে! কোনদিকে? কেউ বুঝতে পারছে না যে কমান্ডার কী বলছেন এসব?
আমরা যাব গালফ অফ আডেন! মাকরান কোস্ট। জাস্ট লুকিয়ে থাকব। মাকরান কোস্ট? সর্বনাশ! সে তো বালুচিস্তানের পূর্বদিকে! শত্রুপক্ষের একেবারে চোখের সামনে। আইএনএস নিপাটের প্রত্যেক কর্মী ও নাবিকের চোখেমুখে নেমে এল অবিশ্বাস আর বিস্ময়। বালুচিস্তানের উপকূলে বসে থেকে তারা বাঁচবেন কীভাবে? আবার এটাও ঠিক যে কমান্ডার বি বি যাদব এরকম অসংখ্য অভিযানে এরকমই আশ্চর্য সব সিদ্ধান্ত নিয়ে শেষ মুহর্তে ঠিক রক্ষা পেয়েছেন সঙ্কট থেকে। তাই তাঁর উপর সকলের ভরসা আছে।
অতএব বি বি যাদবের কথাই শেষ কথা! আইএনএস নিপাট সেই সমুদ্রের মধ্যেই হঠাৎ ঘুরে গেল ভারতের অভিমুখ থেকে ৯০ ডিগ্রি পূর্বে। কমান্ডার যাদব কারণটা বোঝালেন। বললেন, দেখ তোমরা, আমরা একবার এই পজিশন থেকে যদি বেরিয়ে যেতে পারি, তাহলে পাকিস্তান এয়ারফোর্স এবং পাকিস্তান নেভি আর আমাদের ট্রেস করবে না। কারণ ওরা ভাববেই না যে, আমরা ওদের এলাকার মধ্যেই দাঁড়িয়ে আছি। ওরা কিছুটা এগিয়ে এই রুটে কাউকে পাবে না তখন ফিরে যাবে।
ঠিক তখন ভারতের দিকে দ্রুত অগ্রসর হওয়া বাকি যুদ্ধজাহাজ আর মিসাইল বোটগুলির প্রত্যেক কমান্ডার আর ক্রুরা অধীর উদ্বেগে ভাবছেন যে আইএনএস নিপাট কোথায় গেল? স্যার বি বি যাদবের কী হল? সকলে আর কি আদৌ বেঁচে আছে? নাকি ইতিমধ্যেই...?
আইএনএস নির্ঘাত, আইএনএস বীর, পোশক, কিলটান, বিদ্যুৎ সকলেই মাংরোলিতে ফিরে এল। নেভি কন্ট্রোল ভারত সরকারকে জানিয়ে দিল যে, করাচির অভিযান সেরে সফলভাবে ফিরে এসেছে আমাদের টিম। শুধু একটি জাহাজ নেই। তার হদিশও নেই। কোথায় সে? কেউ জানে না।
সুতরাং, সাফল্যকে সেলিব্রেট করা যাচ্ছে না। চিন্তা হচ্ছে বি বি যাদবের টিমের জন্য। ঠিক সেদিন দুপুরে আচমকা পাকিস্তানের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হল, ভারতের নৌবাহিনী করাচিতে আক্রমণ করেছিল। পাকিস্তান তার যোগ্য জবাব দিয়েছে। ভারতের একটি যুদ্ধ ভেসেলকে ধ্বংস করে দিতে সক্ষম হয়েছে পাকিস্তানের এয়ারফোর্স। পাকিস্তান নৌসেনা কনফার্ম করছে যে, সেই জাহাজে থাকা ভারতের সব নাবিক আর টেকনিক্যাল স্টাফেরই মৃত্যু হয়েছে। কাউকে জীবিত পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ আইএনএস নিপাটের এই করুণ পরিণতি! চরম এক স্তব্ধতা নেমে এল ভারতীয় সামরিক বাহিনীর মধ্যে। ইন্দিরা গান্ধী পর্যন্ত হতাশ এবং প্রচণ্ড বেদনাহত। তিনি বললেন, আমি পার্সোনালি ওই অফিসারদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলব। দিস ইজ গ্রেট লস! এটা কীভাবে হল! প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওয়াই বি চ্যবন অত্যন্ত ব্যথিত। এত ভালো একটা অপারেশনের এই পরিণতি? অসীম সাহসিকতার মরণোত্তর পুরস্কার পাবেন কমান্ডার যাদব। সেদিনই ঘোষণা করে দেওয়া হল।
....
পরদিন। ৭ ডিসেম্বর। সন্ধ্যা। বম্বে নেভি পোর্টের অদূরে থাকা নজরদারি জাহাজের র্যাডারে ধরা পড়ছে একটি ওয়ারভেসেল। ক্রমেই এগিয়ে আসছে বম্বের দিকে। তৎক্ষণাৎ সতর্ক হয়ে গেল গোটা নৌবাহিনী। তড়িঘড়ি মেসেজ গেল প্রতিটি ডিফেন্স অ্যাকশন এরিয়া কন্ট্রোলে। তৈরি হয়ে যাচ্ছে এয়ারফোর্স। কারণ এরকম সময় কোনও যুদ্ধজাহাজ এই বন্দরে আসার শিডিউল নেই। তাহলে কি পাকিস্তান করাচির প্রতিশোধ নিতে এবার বম্বে আসছে? অবশ্যই পাকিস্তান করাচি বন্দরের উপর এরকম এক আঘাত মেনে নেবে না। আজ নয় কাল প্রতিহিংসা চরিতার্থ করবে। কিন্তু তাই বলে এভাবে বম্বেতে ঢুকে আসবে? এতটা সাহস? স্টিক্ট মিসাইল চার্জ করা হবে?
ঠিক তখনই চরম বিস্ময়। রেডিও ট্র্যান্সমিটারে শোনা যাচ্ছে আইএনএস নিপাটের মেসেজ! জিরো এফ এফ... নিপাট কলিং...!
এ কী? এ তো কমান্ডার বি বি যাদবের কণ্ঠ? এটা কীভাবে সম্ভব? আইএনএস নিপাট তো ডুবে গিয়েছে? পাকিস্তান ঘোষণা করেছে। তাহলে এরা কারা?