ব্যবসায় অগ্রগতি ও শুভত্ব বৃদ্ধি। ব্যয়ের চাপ থাকায় সঞ্চয়ে বাধা থাকবে। গলা ও বাতের সমস্যায় ... বিশদ
১৫ জুন ১৯৭১। ভারতীয় নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল এস এম নন্দা পলাশির ক্যাম্প পরিদর্শনে এলেন। তিনি এবং ভারত সরকার একটা সাংঘাতিক কঠিন বাজি হাতে নিয়েছে। যদি ভারতীয় নৌবাহিনীর কমান্ডোদের এই কাজটির জন্য পাঠানো হতো, তাহলে অতটা টেনশন হতো না। কিন্তু এ কাজের দায়িত্বে পূর্ব পাকিস্তানের সাবমেরিনার্স, বিদ্রোহী নৌসেনা, একঝাঁক মুক্তিযোদ্ধা আর ইস্ট পাকিস্তান বেঙ্গল ব্যাটেলিয়নের জওয়ানদের নেওয়া হয়েছে। তাদের এই কয়েকমাসের মাত্র ট্রেনিং-এ এত বড় একটা অভিযানে পাঠালে মিনিট বাই মিনিট অপারেশন সাকসেসফুল হবেই তার নিশ্চয়তা নেই। অন্য দেশ, অন্য অজানা ভূগোলের দিকে পাঠানো হবে অন্য দেশের একঝাঁক যোদ্ধাকে। সবটাই এক চান্স ফ্যাক্টর। তাই অ্যাডমিরাল নন্দা এই বাছাই করা ৩০০ জন যোদ্ধাকে বললেন, আপনাদের উপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। আপনাদের মনোবল। আপনাদের ভবিষ্যৎ বিজয়। ইন্ডিয়ান আর্মি আর নেভির স্ট্র্যাটেজির কুশলতা। সব কিছু আপনাদের হাতে। মনে রাখবেন একটা কথা, শুধুই পাকিস্তানের মোতায়েন করা জাহাজগুলিকে ধ্বংস করাই আপনাদের লক্ষ্য হবে না। এই ধ্বংসলীলার পিছনে আরও গভীর কারণ আছে। আমাদের স্ট্র্যাটেজি যদি সফল হয়, তাহলে আন্তর্জাতিক মহলও কিন্তু ভয় পাবে। তারা বুঝতে পারবে, ইস্ট পাকিস্তানের সমুদ্র কিংবা নদীপথ মোটেই সুরক্ষিত নয়। যে কোনও সময় জাহাজ, ভেসেল অথবা ন্যাভাল বোটে অ্যাটাক করা হতে পারে। তাই পাকিস্তানের আহ্বান সত্ত্বেও ওই সব আন্তর্জাতিক মহল এরপর নিজেদের যুদ্ধজাহাজ কিংবা নৌবাহিনীর বোট পূর্ব পাকিস্তানে সাপ্লাই করতে ভয় পাবে। তারা যতই পাকিস্তানের বন্ধু হোক, নিজেদের সেনাবাহিনীকে এভাবে মৃত্যুর মুখে কে পাঠাবে? তাই তাদের ভয় পাইয়ে দিতে হবে। তার ফলে পাকিস্তান বিদেশ থেকে সাহায্য পাবে না। একবার যদি একসঙ্গে এতগুলো জাহাজ উড়িয়ে দেওয়া যায়, পাকিস্তানের আর্মস আর অ্যামুনিশনের সাপ্লাই লাইনও বন্ধ হয়ে যাবে। আমাদের এয়ার ফোর্স ইতিমধ্যেই কিন্তু বন্ধ করে দিয়েছে এয়ারস্পেস। ইন্ডিয়ার এয়ারস্পেস লঙ্ঘন করলেই গুলি করে নামানো হবে পাকিস্তানের দিক থেকে আসা যে কোনও বিমানকে। এবার সমুদ্র আর নদী রুটও আমরা বন্ধ করে দেব। সম্পূর্ণ বন্দি হয়ে যাবে পাকিস্তান ইস্ট পাকিস্তানের মধ্যেই। তাই এবার ফাইনাল কাজটা আপনাদের হাতযশ আর মনের জোর। পারবেন তো? সমস্বরে প্রায় তিনশো যোদ্ধা হাত মুষ্টিবদ্ধ করে চিৎকার করে বলে উঠলেন, পারব স্যার!
মোট ৮টা গ্রেডে ভাগ করা হল কমান্ডোদের। পলাশির প্রান্তরে গঙ্গায় অন্তত ১৫ থেকে ১৭ ঘণ্টা প্রতিদিন ট্রেনিং। নিয়ম করে পরীক্ষা নিচ্ছেন ভারতের ২০ জন নেভি ইনস্ট্রাকটর। লেফটেন্যান্ট এস দাস, লেফটেন্যান্ট ভি পি কপি, লিডিং সি ম্যান এম কে গুপ্তা, এস সিং। নানা বুজ রয়েছেন নেতৃত্বে। পরীক্ষায় সবথেকে ভালো ফল যারা করছে, তাদের জন্য এ গ্রেড। এভাবে এইচ গ্রেড পর্যন্ত। এ গ্রেডে যারা থাকবে, তারাই লিমপেট মাইন উইথ টাইমার রাখবে যুদ্ধজাহাজে। ওই মাইন জাহাজের কেবলবক্সে রেখে নিমেষের মধ্যেই ঝড়ের গতিতে সাঁতরাতে হবে। দরকার হলে ওলিম্পিক্সের চ্যাম্পিয়নের রেকর্ডও ভেঙে দিতে হবে। শুধুই পরীক্ষার রেজাল্ট নয়। দরকার ভূগোল জানা। তাই ঠিক যেখানে যেখানে জাহাজকে টার্গেট করা হবে, সেই জেলা আর আশপাশের জেলায় যাদের বাড়ি, সেই যোদ্ধাদের চান্স দেওয়া হল। কারণ, নদী, ঘাট, বন্দর, গ্রাম এবং স্থানীয় ভাষা, এটা সম্যকভাবে জানা দরকার। পূর্ব পাকিস্তান মানেই তো আর সর্বত্র একইরকম বাংলা ভাষা নয়। অসংখ্য ভিন্ন উচ্চারণ, ডায়ালেক্ট আর বাচনভঙ্গি। সেরকমভাবেই কথা বলতে পারলে, গ্রামবাসীর সাহায্য যখন লাগবে, সেই সময় সুবিধা হয় অনেক। কোনও গেরিলা যুদ্ধ অথবা বিপ্লবই স্থানীয় জনগণের সহায়তা ছাড়া সফল হতে পারে না। ইতিহাস সাক্ষী।
মোংলা বন্দর অপারেশনের জন্য ৬০ জন কমান্ডো বাছাই করা হল। তারা প্রত্যেকেই খুলনা জোনের। দুঃসাহসিক যাত্রাপথের সম্পর্কে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা আছে তাদের। তাই বাছাই করা হয়েছে এই টিমকে। প্রথমে পলাশি ক্যাম্প থেকে বারাকপুর ক্যান্টনমেন্ট। একপ্রস্থ ব্রিফিং। তারপর ক্যানিং। মাতলা নদীর পাশে একটি বেস ক্যাম্পে এসে রিপোর্টিং। আগে থেকেই সেখানে আছেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল জি এস অরোরা, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শালিক। কলকাতা রেডিওর একজন রিজিওনাল ডিরেক্টর আছেন তাঁদের সঙ্গে। কিন্তু এই নৌবাহিনীর অভিযানে কলকাতার রেডিও সেন্টারের রিজিওনাল সেন্টারের কী ভূমিকা? তিনি এবং তাঁর দুই টেকনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট কেন এসেছেন এই আদ্যন্ত এক গেরিলা অভিযানে? কারণ, এই অভিযানে ঠিক যতটা গুরুত্বপূর্ণ নৌবাহিনী আর সেনা কমান্ডোদের সহায়তা, ঠিক সমপরিমাণ তাৎপর্যপূর্ণ গুরুত্ব কলকাতার আকাশবাণীর। কেন?
পাকিস্তানের যুদ্ধজাহাজ আর মিলিটারি ভেসেল ধ্বংস করার জন্য অপারেশনে যাওয়া কমান্ডোদের সঙ্কেত দেওয়া হবে। মুক্তিযোদ্ধার এই দল থাকবে তখন কোথায়? কোনও জঙ্গলে। নদীবক্ষে। অথবা সমুদ্রবন্দরের কাছে গ্রামের গোপন আস্তানায়। তাহলে কীভাবে পৌঁছনো যাবে সঙ্কেত? বহু চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হল, ভারতীয় রেডিও মারফত দু’টি গান বাজানো হবে। কখন আক্রমণ করতে হবে তার সঠিক সময়ের দুটি অ্যালার্ট দেবে আকাশবাণী।
ন্যাভাল কমান্ডো নম্বর জিরো জিরো থ্রি নাইনের কমান্ডার আমিনুর রহমান খুসরুকে ভারতের লেফটেন্যান্ট জেনারেল অরোরা স্পষ্ট করে দিয়ে বললেন, লুক কমান্ডারস, একটা জিনিস ভুলবেন না। ওই গান কিন্তু একটা নির্দিষ্ট দিনে সারাদিনে শুধুমাত্র দু’বারই বাজানো হবে। আর নয়। এমনকী স্বয়ং আমাদের প্রাইম মিনিস্টার অনুরোধ করলেও আমরা আর বাজাতে পারব না। মিলিটারি সঙ্কেত সিস্টেম এমনই। সুতরাং আপনাদের রেডি থাকতে হবে। আর চরম সতর্ক হওয়া দরকার। কারণ, গান বাজবে যে কোনও মোমেন্টে। ওই গান বাজার অপেক্ষায় আপনাদের রেডিওর অনুষ্ঠান ফলো করতে হবে। এক্সট্রা ব্যাটারি নেবেন। কারণ, অভিযানের পথে ব্যাটারি জলে ভিজে যেতে পারে। রেডিও নষ্ট হতে পারে। তাই দুটো সেট রাখবেন। আর অনেক ব্যাটারি।
কীভাবে আসবে গানের সিগন্যাল? আকাশবাণী কলকাতার পূর্বাঞ্চলীয় প্রোগ্রামে বাজানো হবে সেই সাঙ্কেতিক গান দু’টি। কমান্ডো মুক্তিযোদ্ধাদের রেডি করার জন্য সকাল ৬টা থেকে সাড়ে ৬টায় একবার বাজানো হবে একটি গান। আর অন্য গানটি বাজবে ঠিক রাত সাড়ে ১০টা থেকে রাত ১১টার মধ্যে কোনও এক সময়। পূর্বাঞ্চলীয় প্রোগ্রামের নির্দিষ্ট ফ্রিকোয়েন্সি স্ট্রং। তাই এই গান নদীতেও শোনা যাবে। রেডিওর সাধারণ শ্রোতারা প্রতিদিনের মতোই ভাববে স্বাভাবিক নিয়মেই রেডিওর প্রোগ্রামে গান বাজছে। কিন্তু একমাত্র কলকাতা আকাশবাণীর কিছু কর্মী, ভারতের সামরিক ও নৌসেনার অফিসাররা, গুপ্তচর সংস্থা আইবি এবং RAW, আর অভিযানে যাওয়া মুক্তিযোদ্ধারাই বুঝতে পারবেন বিশেষ ওই দুই গানের অর্থ কী! সেই গান অনুসরণ করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গোটা অভিযানকে চূড়ান্ত রূপ দিতে হবে।
কী সেই গান, যা পাকিস্তানের নৌবাহিনীকে ধ্বংস করার এই মহাযুদ্ধের সর্বপ্রথম শক্তিশালী এক অস্ত্র হতে চলেছে? প্রথম গান পঙ্কজকুমার মল্লিকের। ‘আমি তোমায় যত শুনিয়েছিলাম গান’। যখনই এই গান বাজানো হবে অর্থাৎ ভোর ৬টা থেকে সাড়ে ৬ টায়, তখন রেডি হয়ে যেতে হবে। বুঝে নিতে হবে যে, ভারতীয় স্পাই ও মিলিটারি বাহিনী মাহেন্দ্রক্ষণটি চিহ্নিত করতে পেরেছে যে আজই অভিযান! অতএব তৈরি হও। এই গান শোনার সঙ্গে সঙ্গে যেন মুক্তিযোদ্ধারা বন্দরের ঘাঁটির কাছে পৌঁছে যাওয়ার চেষ্টা করে। এবং অপেক্ষা করতে হবে পরবর্তী গানের জন্য। ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই আক্রমণ করতে হবে। তাহলে অ্যাটাক করা শুরু হবে কখন? সেটা দ্বিতীয় গান বাজার পরই। দ্বিতীয় গান সন্ধ্যা মুখোধ্যায়ের— ‘আমার পুতুল লক্ষ্মী পুতুল আজকে প্রথম যাবে শ্বশুরবাড়ি’। এই গানের অর্থ কী? অর্থ হল, যে টিম যেখানে আছে, তারা সেই বেসস্টেশন ছেড়ে তখনই বেরিয়ে পড়ুক গন্তব্যে। এর পর আর কোনও অ্যালার্ট দেওয়া হবে না। ওই দ্বিতীয় গানই হবে চূড়ান্ত সঙ্কেত।
ব্রিফিং শেষ। বেরিয়ে পড়ল চারটি টিম। টার্গেট মোংলা সমুদ্রবন্দর, চাঁদপুর নৌবন্দর, নারায়ণগঞ্জ নৌবন্দর, দাউদকান্দি ফেরিঘাট এবং হিরণ পয়েন্ট।
কর্ণফুলী নদীতীরে এসে পৌঁছনো গেল দীর্ঘ যাত্রাশেষে। আপাতত নদীতীর ফাঁকা। তবে বৃষ্টি হচ্ছে। নিঃশব্দে আরও একটু উপরে এসে জড়ো হয়েছে ৬০ জনের দল। বোটগুলি জলের অনেকটা ভিতরে রেখে নদীজলে নেমে তটভূমিতে আসা হয়েছে। কিছুক্ষণ অপেক্ষা। দু’জন যোদ্ধাকে মাঝি সাজানো হয়েছে। তারা যুদ্ধজাহাজের অবস্থান আর গতিপ্রকৃতি দেখে আসবে। তারপর সেই গান বাজলে হবে চূড়ান্ত অপারেশন।
যদি তাদের দেখে পাকিস্তানি নৌসেনার সন্দেহ হয় আর গুলিও ছোড়ে, তাহলে কিন্তু তাদের পাল্টা প্রত্যাঘাত করা চলবে না। জলে ঝাঁপ দিতে হবে। থাকতে হবে ডুবে। ডুবসাঁতারে ফিরে আসতে হবে। গুলি লাগতে পারে। হ্যাঁ। তবু পাল্টা আক্রমণ নয়। যাতে পাকবাহিনী বুঝতে না পারে যে, একটি গেরিলা অভিযানের সম্ভাবনা আছে। ১৩ আগস্ট। সন্ধ্যাতেই নিকষ কালো অন্ধকার। ক্যানিং থেকে বেরনোর পর সুন্দরবন পেরিয়ে আসতে হয়েছে। অবিশ্রান্ত বৃষ্টি হচ্ছে। কয়েকদিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে। চরাচর ভেজা । মাটি কর্দমাক্ত। আকাশ থমথমে। ভোর হয়েছে। এখন অপেক্ষা। যোদ্ধাদের ক্লান্ত শরীর অবসন্ন। চোখ আর জেগে থাকতে চাইছে না। কেটে গেল সারারাত। আচমকা তন্দ্রাচ্ছন্ন সেই শরীরগুলোয় চমক লাগল। ভোরের আলো। রেডিও চালানো হল তৎক্ষণাৎ। হঠাৎ চমক। গান বাজছে। ১৪ আগস্ট। স্নায়ুগুলো টানটান। অবশেষে সেই গান। ‘আমি তোমায় যত শুনিয়েছিলাম গান..’ উত্তেজনায় কর্ণফুলী নদীর তীরে যেন লাফিয়ে উঠলেন যোদ্ধারা। মাঝি সেজে পাকিস্তানের জাহাজের কাছে যাওয়া দুই যোদ্ধা নিরাপদে ফিরে এসেছে রাতেই। তারা বলেছে কোনও সন্দেহের অবকাশ নেই। অপারেশন করা যাবে। তবে সার্চলাইট চলে সারারাত। দলনেতা ওয়াহিদ চৌধুরী বললেন, আমরা তিনজন করে ঝাঁপ দেব পানিতে। পেটে বাঁধা হল গামছা। তার মধ্যে প্লাস্টিকে মোড়া লিমপেট মাইন। প্রত্যেক জাহাজে অন্তত তিনটে করে মাইন লাগাতে হবে। কারণ, জলে ভিজে যদি একটি দু’টি না কাজ করে! তাই কোনও ঝুঁকি নেওয়া চলবে না। আজ রাতে দ্বিতীয় গান বাজলে অপারেশন শুরু। টানটান স্নায়ু নিয়ে মানুষগুলি অপেক্ষা করছে। স্বাধীন দেশ গড়ার স্বপ্ন তাদের চোখে। দপ দপ করছে সেই চোখ উত্তেজনায়। কেটে গেল দিনটি।
এখন সন্ধ্যা। দূর থেকেই দেখা যাচ্ছে পাকিস্তানি জাহাজ। তবে একটাই সমস্যা। অবিরত সার্চলাইট। সারাদিন কেটে গেল। রাতের অপেক্ষা। উত্তেজনায় ক্ষুধা তৃষ্ণা যেন নেই। কিন্তু গান বাজছে না। কী হল? প্রথম গান আবার বাজল। অর্থাৎ এখনও গ্রিন সিগন্যাল নয়। অবশেষে পরদিন ভোরে এল মাহেন্দ্রক্ষণ। ‘আমার পুতুল লক্ষ্মী পুতুল’ বেজে উঠল। বন্দর থেকে দুই কিলোমিটার হেঁটে উজানে যাওয়া। নাহলে স্রোতে ভেসে যাবে সবাই। আজ সন্ধ্যার পর অভিযান। একটু পরই নদীতে নেমে কাছাকাছি পৌঁছতে হবে। তারপর পরস্পরের দিকে তাকিয়ে নদীতে নামল এই অসমসাহসীরা। কন্ট্রোল রুমে জেনারেল অরোরা আর অ্যাডমিরাল নন্দা ততোধিক টেনশনে। কাজটা পারবে তো এই কমান্ডোরা? সারাদিনের মতো মুড়ি, ছাতু, কলা খেয়ে নিয়ে তিনজন করে করে নদীতে নামার পর পরস্পরের হাত ধরে থাকল। যাতে কেউ ছিটকে না যায়। সন্ধ্যা নেমে এল। এবার অন্ধকার ঘন হচ্ছে। জলে নামা যাক। সামনেই চরলাক্ষ্যা নেভি বেস ক্যাম্প। ওখানেই পরপর দাঁড়িয়ে পাকিস্তানের জাহাজ।
কিন্তু এ কী ঠান্ডা জল! অসম্ভব এক শীতলতা গ্রাস করল প্রতিটি শরীরকে। আগস্ট মাসে এত ঠান্ডা জল! ঠকঠক করে কাঁপুনি শুরু হল। হাত ধরা ছিল এতক্ষণ। কিছুক্ষণ পর আর পরস্পরকে ধরে রাখা গেল না। হাত ছেড়ে গেল। তিনজন তিনদিকে। প্রতিটি টিমের। মোট ৩৯ জন নেমেছিল। এখন সবাই একা। অন্ধকারে কেউ যেন বুঝতেই পারছে না টিমের বাকিরা কোথায়! প্রত্যেকে নিজেদের মতো করে এগতে থাকল। ঠান্ডা জলে টের পাওয়া গেল আবার ঝিরিঝিরি বৃষ্টি নেমেছে। বুকডোবা জলে দাঁড়িয়ে সকলেই একবার আকাশে তাকাচ্ছে। ঈশ্বর-আল্লাহের দোয়া থাকবে তো? হঠাৎ তীব্র সার্চলাইট এসে পড়ল কর্ণফুলীর জলে!