উপার্জন বেশ ভালো হলেও ব্যয়বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে সঞ্চয় তেমন একটা হবে না। শরীর খুব একটা ... বিশদ
১৫৬০ সালের ৭ আগস্ট হাঙ্গেরির ধনী বাথারি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এলিজাবেথ বাথারি। তিনি ছিলেন শিক্ষিতা ও সুন্দরী। মাত্র তের বছর বয়েসে অবিবাহিতা অবস্থায় তিনি তাদেরই জমিতে কর্মরত এক কৃষকের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন এবং গর্ভবতী হন। যখন তার বাচ্চাটি জন্মায়, তখন সেই বাচ্চাটিকে অন্য একজন মহিলার কাছে দিয়ে দেওয়া হয় এবং বাচ্চাসহ সেই মহিলাটিকে শহর থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। এরপর ফ্যারেন্সো নাদাসাদির সঙ্গে এলিজাবেথের বিয়ে হয়ে যায়। এলিজাবেথকে বিয়ের উপহার হিসেবে তাঁর স্বামী একটি প্রাসাদের মালিকানা দেন। সেই প্রাসাদ ঘিরে প্রচুর জমি, ফুলের বাগান ও সতেরোটা গ্রাম ছিল।
১৫৯০ থেকে ১৬০৯ এই সময়টা ছিল তাঁর অপরাধী জীবনের প্রধান মুহূর্ত। সাধারণ মানুষের চোখে সেই সময় তিনি রাক্ষসী হয়ে ওঠেন। শত শত মেয়ে সেই সময় কাজের জন্য তার প্রাসাদে যেত কেউই আর ফিরে আসত না। এলিজাবেথকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলতেন— সবাই কলেরায় মারা গিয়েছে। অনেকে অনেক কথা বললেও সাহস করে সরাসরি অভিযোগ কেউই জানাতে পারেনি। এলিজাবেথের নামে আদালতে প্রথম অভিযোগ দাখিল করেন লুথেরানের একজন মন্ত্রী। তাঁর নাম ইস্তাভান ম্যাগান্ডি। ১৬১০ সালে রাজা দ্বিতীয় ম্যাথিয়াস এলিজাবেথের ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়ার জন্য একজন ডিটেকটিভকে নিযুক্ত করেন। সেই ডিটেকটিভ এলিজাবেথের বিরুদ্ধে সাক্ষী দেওয়ার জন্য তিনশো জনকে জেরা করেছিলেন। এদের মধ্যে রাধুনী, প্রাসাদের কাজের লোক, খুন হওয়া মেয়েদের পরিবারের লোকজন, চার্চের ফাদার প্রমুখ ছিলেন। আদালতে তাদের সাক্ষ্যর পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ তখন এলিজাবেথের প্রাসাদে জোর কদমে তল্লাশি শুরু করে এবং এলিজাবেথকে প্রমাণ সহ ধরে ফেলে। সমস্ত প্রাসাদ জুরে বহু গোপন স্থানে মেয়েদের মৃতদেহ রাখা ছিল। বহু আধমরা মেয়েকে শিকলে বাঁধা অবস্থায় অন্ধকার ঘর থেকে উদ্ধার করা হয়।
এলিজাবেথের এই ঘৃণ্য কাজের জন্য তিনজন বিশ্বস্ত কর্মচারি ছিল। এরা গ্রামে গ্রামে গিয়ে গরিব কমবয়েসি অবিবাহিত মেয়েদের বেশি টাকার কাজের লোভ দেখিয়ে প্রাসাদে নিয়ে আসত। তারপর তাদের ওপর পৈশাচিক অত্যাচার হত। মেয়েদের শরীর থেকে রক্ত বার করে সেই রক্তে নাকি স্নান করতেন এলিজাবেথ। যেসব মেয়েকে আধমরা অবস্থার উদ্ধার করা হয়েছিল তাদের কাছে জানা গিয়েছিল যে এলিজাবেথ শুধু রক্তে স্নানই করতেন না, তা পানও করতেন। এলিজাবেথের কু-কর্মের তিনজন সঙ্গী, যাদেরকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল, তাঁরা তাদের সাক্ষ্য দিতে গিয়ে জানিয়েছিলেন, এলিজাবেথ বিশ্বাস করতেন রক্ত দিয়ে স্নান করলে রূপ-যৌবন চিরস্থায়ী হবে। এলিজাবেথের এক কর্মচারি সুজান জানিয়েছিলেন যে একটা ডায়েরিতে এলিজাবেথ যে সমস্ত মেয়েদের হত্যা করতেন তাদের কথা লিখে রাখতেন। এলিজাবেথের সেই ডায়েরি থেকে ছ’শো পঞ্চাশ জনের কথা জানা গিয়েছে। আদালতের রায়ে এলিজাবেথের মৃত্যুদণ্ড হয়নি। কারণ সে ছিল গণ্যমান্য ধনী পরিবারের মহিলা। তবে মৃত্যু পর্যন্ত তাঁকে দরজা জানলাবিহীন প্রাসাদের একটি কুঠুরিতে বন্ধ রাখা হয়েছিল। ১৬১৪ সালের ২১ আগস্ট এলিজাবেথ বাথারির মৃত্যু হয়।
এলিজাবেথের মৃতদেহ কবর দেওয়ার পরে বাথারি পরিবার তাদের রাজকন্যাটির মৃতদেহ তুলে অন্যত্র কবর দেওয়া মনস্থ করেছিল। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় সেই কফিনে এলিজাবেথের মৃতদেহ ছিল না। সেই মৃতদেহ কোথায় হারিয়ে গেল তা আজ অবধি জানা যায়নি।
কাকলি পাল বিশ্বাস