উপার্জন বেশ ভালো হলেও ব্যয়বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে সঞ্চয় তেমন একটা হবে না। শরীর খুব একটা ... বিশদ
ঘটনা দুই: প্রায় তিন বছর আদালতের দরজা আর আইনজীবীর শরণাপন্ন হয়েও আজ পর্যন্ত খোরপোশ আদায় করতে পারেনি সুজাতা। উকিলের মারপ্যাঁচ। কথার ওপর কেবল কথা চলে। কিন্তু কাজের কাজ কিছু এগয় না। আর যে পারে না সুজাতা...
ঘটনা তিন: কোর্ট চত্বর থেকে বেরিয়ে হতাশায় ভেঙে পড়ে জয়িতা। পাঁচ বছর ধরে চলা মামলার আজও ফরসলা কিছু হল না। বিয়ে ভেঙে যাওয়ার পরে এতগুলো দিন অতিক্রান্ত। আজও খোরপোশ সে পেল না। খোরপোশের টাকাটা না পেলে যে তার দিন গুজরান হয় না এমনও নয়। তবু এটা তার সন্তানের বাবারূপী শয়তানটাকে শিক্ষা দেওয়ার লড়াই। নিজের প্রাপ্য অধিকার বুঝে নেওয়ার লড়াই।
উল্লিখিত ঘটনাগুলো এই সমাজেরই চালচিত্র। খোরপোশ না পেয়ে বহু নারী লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। কী এই খোরপোশ? কখনই এর জন্য মামলা করা যায়? অথবা কীভাবেই বা পাওয়া যেতে পারে এই খোরপোশ? এই সমস্ত বিষয় নিয়ে প্রশ্ন রেখেছিলাম কলকাতার উচ্চ ন্যায়ালয়ের বিশিষ্ট আইনজীবী পার্থপ্রতিম কাঞ্জিলালের কাছে।
এক: খোরপোশ কী? কারা পেতে পারেন?
খোরপোশ বা ভরণপোষণ বলতে জীবিকা নির্বাহের জন্য খাওয়া, পরা ও থাকার সংস্থান বোঝায়। খোরপোশ অর্থাৎ নিয়মিত ব্যবস্থার কথা আইনে বলা হয়েছে। খোরপোশর আইন অনুযায়ী কোনও ব্যক্তির স্ত্রী, নাবালক সন্তান, শারীরিক দিক বা মানসিক দিক থেকে প্রতিবন্ধী সন্তান, বাবা বা মা যদি নিঃসম্বল হন এবং নিজেদের খরচপত্র চালাতে অসমর্থ হন, তাহলে সেই ব্যক্তিকে খোরপোশ দিতেই হবে। কেবলমাত্র সাবালিকা বিবাহিতা কন্যার খোরপোশের অধিকার নেই।
খোরপোশের পরিমাণ কীভাবে ধার্য করা হয়?
খোরপোশ স্বামীর আর্থিক সঙ্গতির ওপর নির্ভর করে। তবে যেটা দেওয়া হল অনেক সময় সেটা স্ত্রীর প্রয়োজনের সমতুল না হলে স্ত্রী চ্যালেঞ্জ জানিয়ে জেলা জজের কাছে দায়রা কোর্টে আবার আবেদন করতে পারেন। সেখানেও রায় মনোমতো না হলে সে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের সর্বোচ্চ আদালতের কাছে আবারও আবেদন জানাতে পারে। আইন কিন্তু মেয়েদের পক্ষেই রয়েছে। সাধারণ অবস্থায় স্বামী, স্ত্রী ও নাবালক সন্তানের খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থান দিয়ে থাকেন। একজন স্ত্রী যখন আলাদা বসবাস করেন তখন স্বামী নগদ অর্থ দ্বারা ভরণপোষণ জোগাবেন বলেই আইনীভাবে ধরে নেওয়া হয়।
খোরপোশর দাবিতে স্ত্রী কি আদালতে যাওয়ার অধিকারি?
অবশ্যই। আইনসম্মতভাবে একজন ব্যক্তি তার স্ত্রী, নাবালক পুত্র, অবিবাহিতা কন্যা ও বৃদ্ধ পিতামাতার খোরপোশ দিতে বাধ্য। অন্যথায় ভুক্তভোগীরা আদালতের দ্বারস্থ হতেই পারেন।
আর্থিকভাবে স্বনির্ভর স্ত্রী কি খোরপোশ চাইতে পারেন?
নিয়মানুযায়ী খোরপোশ চাওয়ার সময়ে স্ত্রীকে প্রমাণ করতে হবে তার কোনও স্থায়ী আয়ের উৎস নেই। পাশাপাশি স্বামীরও খোরপোশ দেওয়ার উপযুক্ত আয় থাকতে হবে। স্ত্রীকে প্রমাণ করতে হবে উপযুক্ত আয় থাকা সত্ত্বেও স্বামী তার ভরণপোষণের ব্যবস্থা করেননি। শুধু স্ত্রীই নন, বয়স্ক বাবা, মায়ের চিকিৎসা বা জরুরি প্রয়োজনেও সন্তান যদি ব্যবস্থা না দেয় তাহলে ছেলের বিরুদ্ধে তাঁরাও আদালতের মামলা করতে পারেন।
খোরপোশের বিষয়টি বাবা-মায়ের ক্ষেত্রে কতটা প্রযোজ্য?
আইনের খোরপোশ প্রদানের বিষয়ে শুধু ছেলেদেরই নয় কন্যাসন্তানকেও বলা হয়েছে। আর খোরপোশ বা ভরণপোষণের দায়িত্ব কোনও বিশেষ সন্তান গ্রহণ করবে তা নয়, বরং একাধিক সন্তান থাকলে তাদের সবাইকে নিতে হবে। বাবা বা মায়ের ইচ্ছের বিরুদ্ধে বৃদ্ধাশ্রমে বা অন্য কোথাও সন্তানেরা বাবা মাকে পাঠাতে পারেন না। নিয়মিত খোঁজখবর ও চিকিৎসার দায়ভারও সন্তানেরই ওপর।
অভিযোগ কোথায় জানাতে হবে?
অপরাধের অভিযোগ দায়ের ও বিচার হবে প্রথম শ্রেণীর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে।
খোরপোশ দাবির কতদিনের মধ্যে তা পাওয়া যায়?
যিনি খোরপোশ পাচ্ছেন না তিনি প্রথমে সংশ্লিষ্ট আদালতের কাছে অভিযোগ জানাবেন হলফনামা বা অ্যাফিডেভিটের মাধ্যমে। অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে শমন পাঠানোর নির্দেশ দেবে সংশ্লিষ্ট আদালত। শমন জারি হওয়ার পরে অভিযুক্ত ব্যক্তিটিকে আদালতে উপস্থিত হতে হবে এবং তিনি তার পক্ষপাত সমর্থন করে বক্তব্য আদালতে জানাবেন। উভয় পক্ষের বক্তব্য শোনার পরে আদালত ঠিক করবে টাকার অঙ্ক। সংশ্লিষ্ট আদালত যদি মনে করে স্ত্রী বহুদিন ধরে খোরপোশ থেকে বঞ্চিত, তখন পূর্বাপর বিচার করে রেট্রোস্পেকটিভ এফেক্টের আদেশ দেবে।
আর যদি অভিযুক্ত ব্যক্তি খোরপোশ না দিতে চায় সেক্ষেত্রে শাস্তি কী বা কতটুকু?
সংশ্লিষ্ট আদালতের নির্দেশ অমান্য করে যদি খোরপোশ না দেন সেক্ষেত্রে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হবে।