উপার্জন বেশ ভালো হলেও ব্যয়বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে সঞ্চয় তেমন একটা হবে না। শরীর খুব একটা ... বিশদ
কোটির মধ্যে একজনের কথা থাকুক- তিনি তো সাধনা ও সিদ্ধির প্রত্যন্তরেখায় অবস্থিত! একোনকোটি সাধকগণ, যাঁদের সাধনা ও সিদ্ধির মধ্যে অপরিমেয় ব্যবধান, তাঁদের সাধনপথে অন্তরায়সমূহের আলোচনা করা যেতে পারে। মূল অন্তরায় তো অবিদ্যা। সেই অবিদ্যারই অসংখ্য শাখা-প্রশাখা অজস্র অন্তরায় সৃষ্টি করে। ভারতীয় দার্শনিকগণ অতি প্রাচীনকালেই আবিষ্কার করেছিলেন যে, আমরা যা কিছু দেখছি তা ভুল, যা কিছু শুনছি তা ভুল, যা কিছু আস্বাদ করছি তা ভুল, ইত্যাদি। অর্থাৎ প্রত্যেকটি জ্ঞানেন্দ্রিয়ের মাধ্যমে আমাদের মনে যে-বোধ উৎপন্ন হচ্ছে, তা ভ্রান্ত। বস্তু একটিই আছে, অথচ আমরা তাকে নানা রূপে, নানা রসে, নানা গন্ধে, নানা শব্দে, নানা স্পর্শে ভিন্ন ভিন্ন বস্তু বলে অনুভব করছি এটাই অবিদ্যা। এবং এই অবিদ্যা হতেই কাম ক্রোধ লোভ মোহ মদ মাৎসর্য ভয় শোক ইত্যাদি যাবতীয় অনর্থের সৃষ্টি। যদিও অবিদ্যার এই বিবরণ অদ্বৈতবেদান্তমতেই দেওয়া হলো, তথাপি সাধারণভাবে বলা যায়, অধিকাংশ ভারতীয় দার্শনিকই কোন-না-কোন ভাবে অবিদ্যা অর্থাৎ মিথ্যাজ্ঞান বা বিপরীতজ্ঞানের অস্তিত্ব স্বীকার করেছেন। সুতরাং অবিদ্যার সংজ্ঞা যাই হোক না কেন, তা যে-কোন মতের যে-কোন পথের সাধকেরই সাধনায় ‘সাধারণ’ অর্থাৎ অ-বিশেষ অন্তরায়। এবং অবিদ্যা হতে উদ্ভূত ষড়রিপু আদিও অনুরূপভাবেই ‘সাধারণ’ অন্তরায়। এই অন্তরায়গুলি অল্পবিস্তর সকলেরই সুবিদিত। গীতোক্ত দৈবী সম্পদের যা কিছু আসুরী সম্পদ আছে, সে-সকলই যে, যে-কোন সাধনপথে ‘সাধারণ’ অন্তরায়, তা না বললেও চলে।
মহর্ষি পতঞ্জলি তাঁর যোগদর্শনে ব্যাধি মানসিকজড়তা সংশয় প্রমাদ আলস্য বিষয়তৃষ্ণা মিথ্যা-অনুভব একাগ্রতার অপ্রাপ্তি এবং
একাগ্রতা লাভ করেও ঐ অবস্থায় স্থিতিলাভ করতে না পারা—এই নয়টিকে সাধনে অন্তরায় বলেছেন। যোগপথ সম্পর্কেই এই অন্তরায়গুলি উল্লেখিত হলেও, মনে রাখা প্রয়োজন যে, অধ্যাত্মসাধনাকে একটি বিজ্ঞানরূপেই উপস্থাপিত করেছেন। এই কারণে সাধনসংক্রান্ত তাঁর সিদ্ধান্তগুলি সকল সম্প্রদায়েই স্বীকৃত। ফলতঃ পূর্বোক্ত নয়টি অন্তরায় কি রাজযোগী, কি জ্ঞানযোগী, কি ভক্তিযোগী, কি কর্মযোগী—সকল সাধকেরই সাধনপথে ‘সাধরণ’ অন্তরায়।