উপার্জন বেশ ভালো হলেও ব্যয়বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে সঞ্চয় তেমন একটা হবে না। শরীর খুব একটা ... বিশদ
সংস্কৃত শ্লোকাবলীর মধ্যে ছিল “একং সদ্বিপ্রা বহুধা বদন্তি”। কয়েকদিন পূর্ব হতেই সংবর্ধনা সমিতিগুলি কাজে লেগেছিল এবং তাঁর সম্বন্ধে ও তাঁর অভ্যর্থনার জন্য যে বিপুল আয়োজন চলছিল সেই বিষয়ে মাদ্রাজের সংবাদপত্রগুলি মুখর হয়ে উঠেছিল। তাঁর আগমনের দিনে ‘দি হিন্দু’, ‘দি মাদ্রাজ মেল’ প্রভৃতি পত্রিকার প্রতিনিধিরা চিঙ্গলপেট স্টেশনে ট্রেনে উঠে তাঁর সঙ্গে দেখা করলেন:
“গত কয়েক সপ্তাহ ধরিয়া মাদ্রাজের হিন্দু জনসাধারণ বিশ্ববিশ্রুত হিন্দু-সন্ন্যাসী স্বামী বিবেকানন্দের প্রতীক্ষা করিতেছিল। এক্ষণে প্রত্যেক ব্যক্তির মুখেই তাঁহার নাম শুনিতে পাওয়া যায়। কি বিদ্যালয়ে, কি মহাবিদ্যালয়গুলিতে, কি হাইকোর্টে, কি ম্যারিনাতে অথবা রাজপথে ও বাজারে-সর্বত্র দেখা যায় শত শত ব্যক্তি সাগ্রহে জিজ্ঞাসা করিতেছে,‘স্বামী বিবেকানন্দ কখন আসবেন?’ মফঃস্বল হইতে যেসব ছেলেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা দিতে আসিয়াছিল, তাহারা স্বামীজীর অপেক্ষায় এখানেই থাকিয়া গিয়াছে এবং ছুটিতে বাড়ি ফিরিয়া যাইবার জন্য অভিভাবকদের জরুরী পত্র পাইয়াও এখানে থাকিয়া আহারাদির জন্য খরচের মাত্রা বাড়াইতেছে। যেভাবে স্বামীজী এই প্রদেশের অন্যত্র সংবর্ধিত হইয়াছেন, যেভাবে এখানে আয়োজন চলিতেছে, যেভাবে ক্যাসল কার্নানে বিজয়-তোরণ প্রস্তুত হইতেছে, যেভাবে হিন্দু জনসাধারণের ব্যয়ে এই ‘ভগবৎ-প্রেরিত ব্যক্তি’কে এই ক্যাসলে রাখার ব্যবস্থা হইতেছে এবং যেভাবে মাননীয় শ্রীযুক্ত সুব্রহ্মণ্য আয়ারের ন্যায় নেতৃস্থানীয় হিন্দুভদ্র-লোকগণ এই আয়োজনাদিতে আগ্রহ দেখাইতেছেন, তাহাতে কোন সন্দেহের অবকাশ নাই যে, স্বামীজী বিপুলভাবে সংবর্ধিত হইবেন। মাদ্রাজই সর্বপ্রথম স্বামীজীর অনুপম প্রতিভা আবিষ্কার করিয়াছিল এবং তাঁহার শিকাগো গমনের ব্যবস্থা করিয়া দিয়াছিল। যিনি স্বীয় জন্মভূমির সম্মানবৃদ্ধি-কল্পে এরূপ দুঃসাধ্যসাধন করিয়াছেন, সেই সর্বজনসমাদৃত মহাপুরুষকে সম্মানিত করিবার সুযোগও মাদ্রাজ আবার পাইবে।
চারি বৎসর পূর্বে স্বামীজী যখন এখানে আসিয়াছিলেন তখন তিনি ছিলেন অজ্ঞাতপরিচয় সাধারণ ব্যক্তি। সেন্ট থোম অঞ্চলের এক অতি সাধারণ বাংলোতে তিনি প্রায় দুই মাস কাল অবস্থান করিয়া ধর্মবিষয়ে আলাপ-আলোচনাদি করিতেন এবং যাহারা আগ্রহ করিয়া তাঁহার নিকট আসিত তাহাদিগকে শিক্ষা দিতেন ও উপদেশ দিতেন। এমন জন কয়েক শিক্ষিত যুবক ছিলেন যাঁহাদের দৃষ্টি ছিল তীক্ষ্ণ এবং তাঁহারা তখনই ভবিষ্যদ্বাণী করিয়াছিলেন যে, ঐ ব্যক্তির মধ্যে এমন একটা কিছু আছে, এমন একটা শক্তি আছে, যাহা তাঁহাকে অপর সকলের ঊর্ধ্বে উন্নীত করিবে এবং তাঁহাকে জনগণ-অধিনায়কপদে প্রতিষ্ঠিত করিতে সবিশেষ সাহায্য করিবে। এইসকল যুবককে তখন ‘বিভ্রান্ত-ভাবুক’, কল্পনাপ্রবণ ও লুপ্তগৌরব-প্রতিষ্ঠাপক বলিয়া অবজ্ঞা করা হইত। কিন্তু এখন তাঁহারা ইহা দেখিয়া সবিশেষ সন্তোষ লাভ করিতেছেন যে, তাঁহাদের স্বামীজী ইউরোপ ও আমেরিকায় অর্জিত প্রভূত সুখ্যাতি লইয়া তাঁহাদের নিকট ফিরিয়া আসিয়াছেন।