উপার্জন বেশ ভালো হলেও ব্যয়বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে সঞ্চয় তেমন একটা হবে না। শরীর খুব একটা ... বিশদ
শ্রীরামকৃষ্ণ প্রত্যক্ষ করলেন মা অঘটন ঘটনপটীয়সী —হ্যাঁ কে না করতে পারেন, আর না কে হ্যাঁ করতে পারেন। মথুরকে দেখালেন, একই জবাগাছে সাদা জবা লাল জবা, একই ডালে হয়েছে। মা রাজরাজেশ্বরী। জগতের নিয়ম যিনি তৈরী করেন তিনি ভাঙতেও পারেন। শিষ্যরা যখন বিজ্ঞান পড়ে এসে শ্রীরামকৃষ্ণের কাছে প্রাকৃতিক নিয়মের অভ্রান্ততা প্রমাণ করতে চেষ্টা করছে, শ্রীরামকৃষ্ণ গ্রামীণ ভাষায় ‘ইলেক্টিক্টিকের (electricity) কথা বলে বললেন এ শক্তিও সব সময় নিয়ম মানে না। তেতলাবাড়ীর উপরে বজ্রপাত না হয়ে পাশের ছোট চালাঘরেই পড়ল — শ্রীরামকৃষ্ণ প্রত্যক্ষ দেখে হাসলেন। এর প্রায় পঞ্চাশবছর পর ১৯২৭ সালে পদার্থবিজ্ঞানে অনিশ্চয়তা তত্ত্ব (Uncertainty Principle) আবিষ্কারের পরে জগৎ স্বীকার করল এই মায়ার জগতে কার্য্য-কারণ সম্পর্ক সবসময় কাজ করে না।
কেবল পরমহংস নয়। উন্মাদ হবার ভয়ও শ্রীরামকৃষ্ণের মনে এসেছিল। কালী মন্দির প্রতিষ্ঠার পর (প্রতিষ্ঠা ১৮৫৫) পূর্ণজ্ঞানী এক পাগলের মধ্যে শ্রীরামকৃষ্ণ দেখেছিলেন ব্রহ্মজ্ঞানীর এক রূপ: “দক্ষিণেশ্বরে মন্দির প্রতিষ্ঠার কিছুদিন পরে একজন পাগল এসেছিল—পূর্ণজ্ঞানী। ছেঁড়া জুতা হাতে কঞ্চি—একহাতে একটি ভাঁড়, আঁবচারা; গঙ্গায় ডুব দিয়ে উঠে, কোন সন্ধ্যা আহ্নিক নাই, কোঁচড়ে কি ছিল তাই খেলে। তারপর কালীঘরে গিয়ে স্তব করতে লাগল। মন্দির কেঁপে গিয়েছিল। হলধারী তখন কালীঘরে ছিল। অতিথিশালায় এরা তাকে ভাত দেয় নাই— তাতে ভ্রুক্ষেপ নাই। পাত কুড়িয়ে খেতে লাগল— যেখানে কুকুরগুলো খাচ্ছে। মাঝে মাঝে কুকুরগুলিকে সরিয়ে নিজে খেতে লাগল,— তা কুকুরগুলো কিছু বলে নাই। হলধারী পেছু পেছু গিয়েছিল, আর জিজ্ঞাসা করেছিল, ‘তুমি কে? তুমি কি পূর্ণজ্ঞানী?’ তখন সে বলেছিল, ‘আমি পূর্ণজ্ঞানী! চুপ!’
“আমি হলধারীর কাছে যখন এ-সব কথা শুনলাম, আমার বুক গুর গুর করতে লাগল, আর হৃদেকে জড়িয়ে ধরলুম। মাকে বললাম, ‘মা, তবে আমারও কি এই অবস্থা হবে!’ আমরা দেখতে গেলাম— আমাদের কাছে খুব জ্ঞানের কথা— অন্য লোক এলে পাগলামি। যখন চলে গেল, হলধারী অনেকখানি সঙ্গে গিয়েছিল। ফটক পার হলে হলধারীকে বলেছিল ‘তোকে আর কি বলব। এই ডোবার জল আর গঙ্গাজলে যখন কোন ভেদবুদ্ধি থাকবে না, তখন জানবি পূর্ণজ্ঞান হয়েছে।’ তারপর বেশ হনহন করে চলে গেল।”