উচ্চবিদ্যার ক্ষেত্রে বাধার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতে হবে। কর্মপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে শুভ যোগ। ব্যবসায় যুক্ত হলে ... বিশদ
কিন্তু এভাবে কি দেশের সঙ্কটজনক পরিস্থিতি আড়াল করা সম্ভব? একদিন না একদিন সত্য প্রকাশ পাবেই। আশার আলো দেখা যাচ্ছে, অর্থনীতির চাকা ঘুরছে বলে প্রধানমন্ত্রী যতই দাবি করুন, কেন্দ্রের সাম্প্রতিক উদ্যোগ তার উল্টো কথাই বলছে। দেশের অর্থসঙ্কট মোকাবিলায় বিকল্প আয়ের হদিশ এখনও দিতে পারেনি মোদি সরকার। তাদের নোটবন্দি সিদ্ধান্তের ক্ষত এখনও শুকায়নি। ক্রমাগত সাধারণ মানুষের ঘাড়ে নানা বোঝা চাপচ্ছে। একদিকে জমানো টাকায় সুদ কমছে, অন্যদিকে দফায় দফায় পেট্রল ডিজেল আর গ্যাসের দাম বাড়চ্ছে। সরকারের অর্থনীতির ব্যর্থতা ঢাকতে বলির পাঁঠা করা হচ্ছে দেশের মানুষকে। সরকারের নানা দপ্তরের কাজকর্মে সমন্বয়ের অভাবও প্রকট। মাথাভারী প্রশাসন দুর্ভাবনার কারণ। দেশের অর্থনীতির যখন বেহাল দশা তখনও অপচয়ের খামতি নেই। কখনও স্ট্যাচু, কখনও মন্দির, কখনও বা বিদেশি অতিথি অ্যাপায়ণে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে তাক লাগানোর দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে এই সরকার। দেশের বেহাল অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে এধরনের দৃষ্টান্ত স্থাপন জরুরি ছিল কি না তা নিয়েই প্রশ্ন। বাহবা কুড়ানোর এই প্রবণতার বদলে ব্যয় সংকোচনের প্রয়োজনীয়তাকে অস্বীকার করা যায় না। তবে তা কখনওই মানুষের রুটিরুজিতে থাবা বসিয়ে নয়। দেশ যখন ভয়াবহ বেকার সমস্যায় ভুগছে তখন রাষ্ট্রায়ত্ত বহু সংস্থায় বিলগ্নিকরণের যে প্রচেষ্টা মোদি সরকার শুরু করতে চাইছে তাতে নতুন করে বহু মানুষ কর্মচ্যুত হবেন। নিজেদের দায়ভার এড়িয়ে অর্থসঙ্কটকে সামাল দিতে সরকারি বহু সংস্থাকে বেসরকারিকরণ করার পথে হাঁটার সিদ্ধান্তটি অবশ্যই বিপজ্জনক। এখনও দেশের মানুষ সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে, সরকারি বা সরকার অধিগৃহীত সংস্থায় টাকা রেখে নিশ্চিন্তবোধ করেন। সেই নিশ্চিত বিষয়টাকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিয়ে ভরসার জায়গাটাই নাড়িয়ে দিতে চলেছে কেন্দ্র। খবর হল, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, প্রাথমিকভাবে ২৩টি রাষ্ট্রয়ত্ত সংস্থাকে বিলগ্নিকরণ করা হবে। সরকারের আয়ের পথ বের করতেই এমন উদ্যোগ। রেলের মতো গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে পাহাড় প্রমাণ লোকসানের পরিমাণকে সামাল দিতেও সরকার হিমশিম খাচ্ছে। সরকার তার দায় এড়িয়ে অর্থসঙ্কট মোকাবিলার চেষ্টা শুরু করেছে। বিভিন্ন সংস্থায় কোথাও স্বেচ্ছা অবসরের প্রকল্প, কোথাও কর্মীদের বিনা বেতনে ছুটি, না হলে স্বেচ্ছা অবসরের অপশন বেছে নিতে বলা হচ্ছে। এই নীতি মানুষকে চূড়ান্ত অনিশ্চয়তা ও বিপদের মুখে ঠেলে দেবে।
বরাবরই লক্ষ্য করা যাচ্ছে, আসল কাজের বদলে এই সরকারের বাগাড়ম্বর বেশি। কিন্তু কেন্দ্রের হাঁড়ির হালটি প্রকাশ হয়ে পড়ায় সস্তায় জনপ্রিয় হওয়ার কৌশল আর কতদিন চলবে? নতুন বিলগ্নিকরণ নীতি চূড়ান্ত করার আগে তা ভেবে দেখুক সরকার। মানুষকে বিপদের মুখে ঠেলে দেওয়া নয়, মানুষের মঙ্গলের জন্য জনহিতকর নীতি গ্রহণই যে কোনও সরকারের দায়িত্ব কর্তব্য হওয়া উচিত।