উচ্চবিদ্যার ক্ষেত্রে বাধার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতে হবে। কর্মপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে শুভ যোগ। ব্যবসায় যুক্ত হলে ... বিশদ
স্বাধীন ভারতের জন্মলগ্ন থেকেই এদেশে সংসদীয় গণতন্ত্র চালু রয়েছে। বহু ভাষাভাষীর দেশে কেন্দ্র বা রাজ্যে কারা শাসন চালাবে তা নির্ধারিত হয় জনগণের ভোটে। ভোট এলে বহু দল তাদের প্রতিশ্রুতি নিয়ে হাজির হয় মানুষের কাছে। ভারতের সংসদীয় গণতন্ত্রের এটাই সৌন্দর্য। এভাবে এই পথেই নরেন্দ্র মোদি থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় এসেছেন। কিন্তু অভিযোগ উঠছে, এই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ভেঙে ফেলতে চাইছে গেরুয়া শিবির। এক দেশ এক রেশন কার্ড, কংগ্রেস মুক্ত ভারত ইত্যাদি স্লোগানের পরিপ্রেক্ষিতে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে তাহলে ‘এক জাতি এক দল’—এটাই কি গেরুয়া শিবিরের প্রধান লক্ষ্য বা গোপন এজেন্ডা? মানে বহু দলীয় রাজনীতির কফিনে পেরেক মেরে একদলীয় স্বৈরাচারী ব্যবস্থা চালু করাই কি তাদের আসল লক্ষ্য? এই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটিই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তুলে দিলেন তৃণমূলের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক কর্মসূচি ২১ জুলাইয়ের শহিদ স্মরণ মঞ্চ থেকে। বুঝিয়ে দিলেন, ভারতের মতো ১৩০ কোটির সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশে এমন সর্বনেশে ব্যবস্থা চালু করার ঘোর বিরোধী তিনি। কোনও রাখঢাক না করেই বিজেপিকে নিশানা করে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় তা জানিয়ে দিলেন।
আসলে এখন রাজ্যে করোনা আর উমপুনের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলার জন্য লড়াইয়ের পাশাপাশি আরও একটা লড়াই এসে পড়ল। ভোট যুদ্ধের শরিক এখন প্রতিটি রাজনৈতিক দল। যুদ্ধে জয়ী হতে কেউ সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখাচ্ছেন, কেউ বা ক্ষমতায় এলে রাজ্যবাসীকে সারা জীবন বিনামূল্যে রেশন আর চিকিৎসা ইত্যাদি পরিষেবা দেওয়ার অঙ্গীকার করছেন। ভোটে জেতার জন্য নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দেওয়াতে কোনও নতুনতা নেই। কেউ প্রতিশ্রুতি পালন করুন, কেউ বা করবেন না, অথবা কিছুটা পালন করেন। তবে প্রতিশ্রুটি পালনটাই আসল ব্যাপার। তাই সব কিছু খতিয়ে দেখে জনগণের রায় কোন দিকে যাবে আপাতত সেই অপেক্ষায় থাকতে হবে রাজ্যবাসীকে।
কত প্রতিশ্রুতিই তো দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আচ্ছে দিন, প্রতিটি দেশবাসীর অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা দেওয়া, বছরে ১ কোটি বেকারের চাকরি এমন কত কিছুই। তার কোনটা বাস্তবায়িত হয়েছে? পাশাপাশি বাংলার প্রতি বিমাতৃসুলভ আচরণ আর বঞ্চনার ধারাও যেন এখন ট্রাডিশনে পরিণত হয়েছে। উল্টে নোটবন্দি, এনআরসি, এনপিআর সহ একাধিক বিষয়ের কারণে নাস্তানাবুদ হতে হয়েছে দেশবাসীকে। তাই রাজনৈতিক কোনও দল বা নেতানেত্রীর দেওয়া প্রতিশ্রুতি তাঁরা কতটা পালন করলেন বা করার চেষ্টা করলেন সে বিচার করবে মানুষ। কিন্তু গণতন্ত্রে বিরোধী দলের বক্তব্যের গুরুত্ব অপরিসীম। সেই বক্তব্যের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা হলে তার ফল মারাত্মক হতে বাধ্য। একটা দেশে একটা রাজনৈতিক দল, নাকি গণতন্ত্রের এই দেশে বহু রাজনৈতিক দলের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে—এই প্রশ্নটি তুলে দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজনৈতিক দূরদর্শিতার পরিচয় যেভাবে রাখলেন তা অন্যান্য বিরোধী দলগুলিকেও নিঃসন্দেহে ভাবাবে।