উচ্চবিদ্যার ক্ষেত্রে বাধার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতে হবে। কর্মপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে শুভ যোগ। ব্যবসায় যুক্ত হলে ... বিশদ
আমরা আগেই দেখেছি, ভারতের মতো সুবৃহৎ দেশের আসল উৎস তার রাজ্যগুলি। দেশের সার্বিক বিকাশ রাজ্যগুলির উন্নয়নের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত। রাজ্যগুলি যত দ্রুত উন্নত হবে দেশ সার্বিকভাবে উন্নত হবে তত। রাজ্যগুলির উন্নয়ন প্রক্রিয়া কী হবে তা সংবিধানে নির্দিষ্ট করা আছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, শিল্প, বাণিজ্য, পরিকাঠামো, নগর, গ্রাম প্রভৃতি সবক্ষেত্রে উন্নয়নের যৌথ-দায়িত্ব স্বীকার করা হয়েছে। দায়-দায়িত্বগুলি কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে মোটামুটি নির্দিষ্টভাবে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। কর্মসূচি বা প্রকল্প অনুসারে ব্যয়ের একটা শেয়ার কেন্দ্র দেয়, বাকিটা মেটাতে হয় রাজ্যের নিজস্ব তহবিল থেকে। কিন্তু দুর্ভাগ্য এই যে, কেন্দ্রীয় সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পরই বেশিরভাগ শাসক সাংবিধানিক ব্যবস্থাগুলি মনে রাখেন না অথবা বিশেষ উদ্দেশ্যে উপেক্ষা করেন। এই কারণেই কেন্দ্রীয় শাসকের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগ ওঠে। নেহরুজির আমলে এর শুরু। মোদিজির এটা দ্বিতীয় দফা। কিন্তু কেউ কথা রাখেননি। বঞ্চনা অব্যাহত। এই কারণে দেশজুড়ে বার বার অনিবার্য হয়ে ওঠে কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাত ।
পশ্চিমবঙ্গের উন্নয়নের প্রশ্নে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গোড়া থেকেই আপসহীন। কৃষকের বঞ্চনার বিরুদ্ধে লড়াই করে বাংলায় পালাবদলে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। সেই দায়িত্ব পালনে তিনি আজও আন্তরিক। তাতে গ্রামীণ অর্থনীতির ভোল বদলে গিয়েছে। শহরও কোনওভাবে উপেক্ষিত হয়নি তাঁর আমলে। কলকাতাকে নানাভাবে সাজিয়ে তুলেছেন। জেলার ছোটবড় শহরগুলির উন্নয়নেও তিনি নিরলস। নতুন নতুন শহর নির্মাণেরও পরিকল্পনা নিয়েছেন। কেন্দ্রীয় বঞ্চনার ট্রাডিশনকে পরোয়া না-করেই বিকল্প নীতি নিয়ে তিনি এগচ্ছেন। তারই মাঝে এল করোনার ধাক্কা। বাড়তি ধাক্কা উম-পুন। সব মিলিয়ে বেসামাল অবস্থা। একদিকে জনস্বাস্থ্য, অন্যদিকে অর্থনীতি। শ্যাম রাখতে গেলে কুল রাখা দায়। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রের উচিত, রাজ্যের পাশে আন্তরিকভাবে দাঁড়ানো। সঙ্কীর্ণ রাজনীতি আপাতত ভুলে যাওয়া। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, ভারতীয় রাজনীতি তার কানাগলিতেই চক্কর কাটছে! বার বার দাবি জানানো সত্ত্বেও মোদি সরকার পশ্চিমবঙ্গের বেশিরভাগ ন্যায্য পাওনা মেটাচ্ছে না। না মেটাচ্ছে উম-পুনে লক্ষ কোটি টাকা ক্ষতি বাবদ প্রাপ্য। না মেটাচ্ছে পুর ও নগর উন্নয়নের টাকা। তার ফলে পশ্চিমবঙ্গের নগরোন্নয়ন কমর্সূচিগুলিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে ভয়ানক সমস্যা হচ্ছে। কেন্দ্র ভুলে যাচ্ছে, অন্তত এখন রাজনীতির সময় নয়। উন্নয়ন থমকে যাওয়া আর অর্থনীতিকে নিশ্চল করে দেওয়া সমার্থক। কারণ উন্নয়নের কাজ যত বেশি হবে, তত বেশি টাকার হাত বদল হবে। মানুষের খরচ করার ক্ষমতা বাড়বে। বাজারে পণ্য ও পরিষেবার চাহিদা বাড়বে। এটাই আসল ফিসকাল স্টিমুলাস। কেন্দ্রের এটা উপলব্ধি করা দরকার। রাজ্যগুলির উন্নয়ন থমকে যাওয়া মানে দেশেরও উন্নয়ন আটকে দেওয়া। চীনের বিরোধিতায় আন্তরিক হলে উন্নয়নকেই পাখির চোখ করতে হবে। অন্য কোনও পথ নেই।