সম্পাদকীয়

আইন ও নৈতিকতা

রাজ্যে ভোটের উত্তাপের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শিরোনামে চলে এসেছেন রাজভবনের কর্তা রাজ্যপাল। তাঁর বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ করেছেন রাজভবনেরই এক অস্থায়ী মহিলা কর্মী। পুলিসের কাছে লিখিত অভিযোগে ওই মহিলা জানিয়েছেন, রাজ্যপালের অফিস ও কনফারেন্স রুমে দুটি ভিন্ন দিনে তাঁর শ্লীলতাহানি করা হয়েছে। অবসরপ্রাপ্ত আইএএস অফিসার, ৭৩ বছরের সিভি আনন্দ বোস বাংলায় রাজ্যপাল পদে যোগ দিয়েছেন ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে। তাঁর কার্যকালের প্রথম দিকে কিছুদিন রাজ্যপালের সঙ্গে রাজ্য সরকারের সুসম্পর্ক ছিল। কিন্তু তারপরই বিভিন্ন ইস্যুতে দু’পক্ষের তাল কেটে যায়। রাজভবন নবান্ন সংঘাত প্রকাশ্যে আসে। গত প্রায় দেড় বছরে রাজ্যবাসীর অভিজ্ঞতা হল, এই রাজ্যপালের সঙ্গে মমতা সরকারের সম্পর্ক অনেকটা অহি-নকুলের মতো। তবে ইতিহাস বলছে, বামফ্রন্টের দীর্ঘ ৩৪ বছরের শাসনকালেও একাধিক রাজ্যপালের সঙ্গে মহাকরণের সম্পর্ক বারবার ধাক্কা খেয়েছে। শুধু এ রাজ্যই নয়, সরকার-রাজ্যপালের সম্পর্কের এই দ্বন্দ্ব টানাপোড়েন দেখা গিয়েছে অন্য রাজ্যেও। অনেকটা এই কারণেই রাজ্যপালের পদ আদৌ থাকা উচিত কি না, তা নিয়ে বারবার প্রশ্ন উঠেছে। কিন্তু কোনও রাজ্যপালের বিরুদ্ধে তাঁরই অধস্তন কোনও মহিলা কর্মীর আনা শ্লীলতাহানির অভিযোগ যেমন চাঞ্চল্যকর, তেমনই প্রায় নজিরবিহীন। স্বাধীন ভারতে এমন অভিযোগ সাম্প্রতিককালে উঠেছে কি না তা মনে করতে পারছেন না প্রায় কেউই। কলকাতা পুলিস এই ঘটনায় একটি বিশেষ টিম তৈরি করে ‘খোঁজখবর’ নেওয়া শুরু করেছে। তারা রাজভবনের ওই দুই জায়গার সিসি টিভির ফুটেজ দেখতে আগ্রহী। পাশাপাশি, রাজভবনের কিছু কর্মীর সঙ্গে কথাও বলতে চায় পুলিস। যদিও রাজ্যপাল তাতে তীব্র আপত্তি জানিয়েছেন। অভিযোগকারিণী পুলিসের কাছে লিখিত বয়ান দেওয়ার পরেও সংবাদমাধ্যমে আরও জোরালোভাবে তাঁর দাবি তুলে ধরেছেন। অন্যদিকে ক্ষুব্ধ রাজ্যপাল বলেছেন, ‘সত্যের জয় হবেই।’ 
প্রশ্ন উঠেছে, এই অভিযোগের পুলিস কী করতে পারে? সম্প্রতি এই রাজ্যেরই সন্দেশখালিতে নারী নির্যাতন ও শ্লীলতাহানির অভিযোগের তদন্ত করছে সিবিআই। বস্তুত নারী নির্যাতনের অভিযোগ এলে তা অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে ও অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে তদন্তের কথাই বলা আছে আইনে। কিন্তু এক্ষেত্রে বিধি বাম। আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজ্যপাল একটি সাংবিধানিক পদ। তাই তাঁর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করা যায় না। আইনের এই ‘রক্ষাকবচ’-এর কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে রাজ্যপালও বলেছেন, সংবিধানের ৩৬১ নম্বর অনুচ্ছেদের ২ ও ৩ নম্বর ধারায় দেশের রাষ্ট্রপতি বা রাজ্যপালের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে কোনওরকম পুলিসি তদন্ত বা অনুসন্ধানের বিষয়েও যে সাংবিধানিক ‘রক্ষাকবচের’ কথা বলা হয়েছে, সে কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন রাজ্যপাল। এমনকী শ্লীলতাহানি সংক্রান্ত অভিযোগের ইস্যুতে পুলিসের সঙ্গে কোনও বার্তালাপ নয়, এই মর্মে রাজভবনের সমস্ত কর্মীর উদ্দেশে নির্দেশও দিয়েছেন। ‘রক্ষাকবচ’ কে হাতিয়ার করে এ কার্যত পুলিসের এক্তিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলে অনুসন্ধানে সহযোগিতা না করার নির্দেশেরই নামান্তর। যদিও পদে না থাকলে অথবা রাজ্যপালকে পদ থেকে সরিয়ে দিলে তদন্ত হতে পারে বলে জানিয়েছেন আইনজ্ঞরা। তার মানে, একজন ব্যক্তি যতক্ষণ রাজ্যপাল পদে থাকবেন তাঁর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করা যাবে না। এখানেই জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বলা হয়, আইনের চোখে সকলে সমান। আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নন। আইনের ভিত্তিতে সুবিচার পাওয়ার অধিকার সব নাগরিকের আছে। তাহলে রাজভবনের ওই মহিলা কর্মীর অভিযোগের সুরাহা হবে কোন পথে? তাহলে সংবিধান প্রদত্ত ‘রক্ষাকবচের’ সুবাদে কেউ কি এমন গুরুতর অভিযোগের ক্ষেত্রে আইনের বাইরে থেকে যেতে পারেন? এই মৌলিক ও নৈতিক প্রশ্ন দেখা দিয়েছে আম জনতার মনে। আর অভিযোগ ‘অসত্য’ বা ‘ষড়যন্ত্র’ হলে তাও বা প্রমাণ হবে কীভাবে? দীর্ঘ এবং জটিল প্রক্রিয়া হলেও কেন্দ্রীয় সরকারের কি কোনও করণীয় আছে? মানুষের মনে এসব প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।
এমন একটি স্পর্শকাতর অভিযোগকে কেন্দ্র করে সংবিধান, আইনের কথা বাদ দিলেও আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন সামনে এসেছে, তা হল নৈতিকতার। রাজ্যপাল নিজেই বলেছেন, ‘সত্যের জয় হবেই।’ রাজ্যের মানুষও চায়, এই গুরুতর অভিযোগের ক্ষেত্রে সত্য উদঘা঩টিত হোক। কিন্তু আইনের পথে সত্য উদঘাটনের সুযোগ না থাকলে একটাই উপায় অবশিষ্ট থাকে। তা হল নৈতিকতা। নিজেকে ‘নির্দোষ’ প্রমাণ করার জন্য সেই নৈতিকতার আশ্রয় কি নিতে পারেন না মাননীয় রাজ্যপাল? অর্থাৎ, রাজ্যবাসীর মনের ধোঁয়াশা কাটিয়ে নিজের স্বচ্ছ ভাবমূর্তি বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের কথা বলতে পারতেন রাজ্যপাল। তাহলে সরকার পক্ষের কেউ অন্তত তাঁর দিকে আঙুল তুলে বলার সুযোগ পেতেন না যে অভিযোগ ধামাচাপা দিতে নানা কৌশল নিচ্ছেন রাজ্যপাল। তবে আশা করা যায়, একদিন না একদিন সত্যিটা সামনে আসবে। এমন স্পর্শকাতর একটি বিষয়ের ক্ষেত্রে যাবতীয় সংশয়ের নিরসন হওয়াটা খুবই জরুরি। 
2Months ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

পারিবারিক অশান্তির অবসানে গৃহ সুখ ও শান্তি বাড়বে। প্রেমের ক্ষেত্রে শুভ। কর্মে উন্নতি। উপার্জন বৃদ্ধি।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.২৬ টাকা৮৪.৩৫ টাকা
পাউন্ড১০৬.৪৬ টাকা১০৯.১২ টাকা
ইউরো৮৯.৭৬ টাকা৯২.২০ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা