সম্পাদকীয়

‘দ্বিতীয় শ্রেণির’ প্রচার

দেখেশুনে মনে হচ্ছে, তৃতীয়বারের জন্য কুর্সিতে বসতে বাঁধনছাড়া হয়ে উঠেছেন নরেন্দ্র মোদি। এতটাই যে, খোলাখুলি প্রচারে মুখে কোনও লাগাম রাখছেন না। এটা সকলেরই জানা যে, বিজেপি দলটা চলে আরএসএসের ভাবধারায়। আর এ দেশকে ‘হিন্দুরাষ্ট্র’ করে তোলাই যে নাগপুরের মূল লক্ষ্য—তাও কারও অজানা নয়। মোদির লক্ষ্য হল, নিজে ক্ষমতার শীর্ষে থাকতে থাকতেই সেই কাজ সম্পন্ন করে যাওয়া। বলা যায়, সেই গোপন এজেন্ডাকে সামনে রেখে লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে মরিয়া হয়ে উঠেছেন তিনি। নিজের দশ বছরের শাসনকালের কোনও ‘ইতিবাচক’ দিক নয়, তাঁর প্রচারজুড়ে শোনা যাচ্ছে, ‘ভোট-জেহাদ’-এর তত্ত্ব। সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্ক ধরে রাখতে ‘তোষণের রাজনীতি’ করছে তৃণমূল এবং কংগ্রেস-বাম সহ বিরোধী ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের দলগুলি। সরাসরি এই অভিযোগ তুলে তিনি হিন্দু ভোট নিশ্চিত করার খেলায় মেতেছেন। এজন্য ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়াতে অসত্যের আশ্রয় নিতেও তিনি দ্বিধা করছেন না। যেমন কংগ্রেসের ইস্তাহার নিয়ে তাঁর ব্যাখ্যা, দেশে ধর্মের আধারে সংরক্ষণ দেওয়ার ষড়যন্ত্র করছে এই দল। এসসি, এসটি, ওবিসিদের জন্য নির্ধারিত সংরক্ষণ ছিনিয়ে নিয়ে নিজেদের ‘জেহাদি ভোট ব্যাঙ্ক’ অর্থাৎ মুসলিমদের দিয়ে দিতে সংবিধান পাল্টাতে চায় কংগ্রেস। কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে বিবাহিত হিন্দু মা-বোনেদের মঙ্গলসূত্র কেড়ে নেওয়া হবে বলে ঘৃণ্য প্রচার করতেও দু’বার ভাবছেন না প্রধানমন্ত্রী! এরপর পশ্চিমবঙ্গে প্রচারে এসে তিনি নতুন তত্ত্ব আমদানি করেছেন। এ রাজ্যের সংখ্যালঘু ভোট ব্যাঙ্ক রক্ষায় শাসক তৃণমূল হিন্দুদের ‘দ্বিতীয় শ্রেণির’ নাগরিক করে রেখেছে বলে অভিযোগ করেন মোদি। ভোটে জিততে একজন প্রধানমন্ত্রী তথা শাসক দলের প্রধান মুখ কী করে এমন উস্কানিমূলক সাম্প্রদায়িক কথা বলতে পারেন, সঙ্গত কারণেই সেই প্রশ্ন উঠেছে।
শুধু মেরুকরণের কথাই নয়, মোদির বিরুদ্ধে মনগড়া তথ্য দিয়ে অসত্য প্রচারের অভিযোগও তুলেছে বিরোধীরা। যেমন মোদি বলছেন, দেশের শিশুরা তাঁর উত্তরসূরি। অথচ ঘটনা হল, বিশ্বের মধ্যে ভারতেই সবচেয়ে বেশি শিশু অভুক্ত থাকে। সংখ্যাটা প্রতিদিন ৬৭ লক্ষ। তৃণমূল মোদির দেওয়া নানা তথ্য খণ্ডন করেছে।  যেমন মোদির দাবি, তাঁর দশ বছরের শাসনে দেশের ২৫ কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমা থেকে বেরিয়ে এসেছেন। প্রকৃত সত্য হল, দারিদ্র্যসীমার নীচে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা এখনও ভারতেই সবচেয়ে বেশি। ২০২১ সালের তথ্য অনুযায়ী, ১৮ কোটি মানুষ দিনে ১৮০ টাকারও কম উপার্জন করেন। মোদির প্রচার, পশ্চিমবঙ্গের উন্নয়ন নিয়ে তৃণমূলের কোনও দিশা নেই। বাস্তব ছবিটা হল, শেষ বারো বছরে বাংলার জিডিপি ৫ লক্ষ কোটি টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১৯ লক্ষ কোটি টাকা। মাথাপিছু বাৎসরিক আয় ৫১ হাজার ৫০০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১ লক্ষ ৪১ হাজার টাকা। মোদি বলছেন, পিএম কিষান সম্মাননিধি প্রকল্পে ৫০০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। তথ্য বলছে, এই প্রকল্পে দেশের ৪২ লক্ষ কৃষকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে মাত্র ৩ হাজার কোটি টাকা জমা পড়েছে। কিন্তু মমতার সরকার রাজ্যের এক কোটির বেশি কৃষককে ১০ হাজার টাকা করে দিয়েছে। বাংলায় কৃষকের আয় এখন তিনগুণ হয়েছে। মোদির দাবি, বাংলায় পিছিয়ে পড়া মানুষের অধিকার কেড়ে নিতে চাইছে তৃণমূল। ঘটনা হল, কেন্দ্রের বিভিন্ন মন্ত্রকে এসটি, এসসি, ওবিসিদের জন্য সংরক্ষিত ৪২ হাজার পদ খালি পড়ে রয়েছে। ১০ হাজার খালি পদ রয়েছে একলব্য স্কুলগুলিতে। এই মোদি জমানায় এসটি, এসসি সম্প্রদায়ের মানুষের উপর অপরাধের ঘটনা বেড়েছে ১৩ শতাংশ। এসটির ক্ষেত্রে তা ১৪ শতাংশ। মোদির ‘সবকা সাথ সবকা বিকাশ’-এর প্রচারকে কটাক্ষ করে বিরোধীরা বলছে, মাথাপিছু আয়ে ২০১৪তে ভারত ছিল ৫৫ নম্বরে। এখন দেশ নেমে দাঁড়িয়েছে ১১১ নম্বরে। মাত্র ১ শতাংশ মানুষের হাতে দেশের ৪০ শতাংশ সম্পদ গচ্ছিত। অন্যদিকে, নীচের তলার ৫৫ শতাংশের হাতে রয়েছে মাত্র ৩ শতাংশ সম্পদ।
এসব তথ্য মোদি জানেন না তা নয়। আসলে এই বাস্তব ছবিটা সামনে থাকায় তিনি ‘অসত্য’ সব তথ্যের আশ্রয় নিচ্ছেন বলে অভিযোগ। তার চেয়েও বেশি, মেরুকরণের রাজনীতিতে ভর করে ভোট বৈতরণী পার হতে চাইছেন। সন্দেহ নেই, বাকি পাঁচ দফা ভোটে মোদির এই আগ্রাসী বিদ্বেষ প্রচার ও অসত্য তথ্য পরিবেশনের প্রবণতা বাড়বে। এতে কিছু মানুষ হয়তো বিভ্রান্তও হবেন, কিন্তু তাতে ক্ষমতায় ফেরার লক্ষ্যপূরণ হবে— এটা নিশ্চিত করে বলা যায় না। বরং ভারতের মতো বহু ভাষাভাষী দেশের ভোটাররা ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র ধরে রাখতে মোদিবাহিনীকে সমুচিত জবাব দেবেন—এই আশা অমূলক নয়। সবটাই নির্ভর করছে জনতার রায়ের উপর। দেশ শাসক তাঁদের বোকা ঠাওরে যদি অসত্য তথ্য দিয়ে মন জয়ের চেষ্টা করেন তাহলে তা অবিবেচকের মূর্খামি বলে গণ্য হতে পারে।
2Months ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

পারিবারিক অশান্তির অবসানে গৃহ সুখ ও শান্তি বাড়বে। প্রেমের ক্ষেত্রে শুভ। কর্মে উন্নতি। উপার্জন বৃদ্ধি।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.২৬ টাকা৮৪.৩৫ টাকা
পাউন্ড১০৬.৪৬ টাকা১০৯.১২ টাকা
ইউরো৮৯.৭৬ টাকা৯২.২০ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা