সম্পাদকীয়

হিংসা বন্ধে কে আন্তরিক

রাষ্ট্রব্যবস্থার একাধিক বিকল্পের মধ্যে গণতন্ত্রই যে সেরা, তা নিয়ে বিতর্কের অবকাশ কমই। মানুষ সমাজবদ্ধ হওয়ার শুরু থেকে রাষ্ট্রব্যবস্থা গ্রহণের উপর অসংখ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে। আর এই সুদীর্ঘ চর্চার সেরা ফসল হিসেবে, আমাদের সামনে আপাতত রয়েছে গণতন্ত্র। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থারও ভাগ একাধিক। স্বাধীন ভারত তার মধ্যে থেকে গ্রহণ করেছে সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে। ভারত যেহেতু একটি ‘ইউনিয়ন অফ স্টেটস’, তাই এখানে বাড়তি হিসেবে গৃহীত হয়েছে ফেডারালিজম। এজন্য রাজ্যে রাজ্যে বিধানসভা গঠনের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকার গড়তে লোকসভা নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া পুরসভা এবং ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের মতো স্থানীয় সরকারগুলিরও গুরুত্ব বিরাট। এই প্রতিটি সরকার তৈরি হয় জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটদানের মাধ্যমে। তাই ভারতীয় গণতন্ত্রে নির্বাচনের ভূমিকা অনস্বীকার্য। এই প্রতিষ্ঠানগুলি তখনই মানুষের স্বার্থে পরিচালিত হতে পারবে, যখন সেগুলি গঠিত হবে মানুষের রায়ে। টাকা এবং পেশিশক্তির জোরে মানুষের ভোটাধিকার অনেকাংশেই হরণ করা সম্ভব। ভারতবাসী রাজ্যে রাজ্যে ক্ষমতালোভীদের এমন রাজনৈতিক অনুশীলনের সাক্ষী হয়েছে বারবার। ফলে ভোটের ময়দান প্রায়ই রক্তাক্ত হয়। পরিণামে প্রাণ পর্যন্ত যায় বহু মানুষের। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি, বহু কোটি টাকার সরকারি সম্পত্তিও ধ্বংস হয়ে থাকে। অসংখ্য পরিবার সর্বস্বান্ত এবং ঘরছাড়া হয়। প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিটি নির্বাচনকে ‘উৎসব’ হিসেবেই দেখতে চেয়েছে। কিন্তু এই নষ্ট সংস্কৃতির সৌজন্যে নির্বাচন হয়ে ওঠে অনেক ক্ষেত্রেই এক-একটি আতঙ্কের নাম। ‘হরিষে বিষাদ’-এর এত বড় দৃষ্টান্ত আর কীই-বা আছে! 
তবে নাগরিক সমাজ এই জিনিসটাকে কোনোদিনই মেনে নিতে পারে না। তারা এর থেকে মুক্তির পথ খুঁজছে বহুদিন যাবৎ। এজন্য রাজনৈতিক দলগুলির পাশাপাশি ভোটকেন্দ্রিক হিংসায় নানাভাবে জড়িয়ে পড়া মানুষগুলিরও চোখ খুলে যাওয়া জরুরি। সম্ভবত, ওই উদ্দেশ্যে এরাজ্যেই একটি অনবদ্য সমীক্ষা করা হয়েছে এবং সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে তার রিপোর্ট। তাতে দেখা যাচ্ছে, নানা সময়ে ঘটনাগুলিতে জড়িত লোকজনের বেশিরভাগই এজন্য এখন অনুতপ্ত। কৃতকর্মের জন্য অনুশোচনা বোধ থেকে ৮৬ শতাংশ মানুষই স্বীকার করেন, ‘যা করেছি, ভুল করেছি।’ তাঁদের মনে ক্ষত দগদগে হয়ে আছে আজও। একাধিক জেলার কিছু ‘স্পর্শকাতর’ এলাকার সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মী, সাধারণ গ্রামবাসী এবং নানাভাবে হিংসায় জড়িয়ে পড়া যুবদের সঙ্গে কথা বলেন সমীক্ষকরা। সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ৪৩০ জনের মধ্যে পুরুষ ২৯০ জন এবং বাকি ১৪০ জন মহিলা। ৭৯ শতাংশ নারী-পুরুষের দাবি, তাঁরা অন্যের প্ররোচনার ফাঁদে পড়েই মারামারি বা হিংসাত্মক কার্যকলাপের জড়িয়ে পড়েন। এমনকী, ১৪ শতাংশ সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মীও এসব ঘটনার জন্য আফশোস করেন এখনও। তাঁরা আত্মধিক্কারই দিচ্ছেন এই ভাষায়, ‘কাদের জন্য এসব করলাম? যাদের জন্য এত অন্যায় করা, তারাই তো মওকা বুঝে দল বদলে ফেলেছে! মাঝখান থেকে বোকা বনে গিয়েছি কেবল আমরাই।’ 
ভোটে হিংসা কি আটকানো যায় না? রাজনৈতিক দলগুলির কাছে এর উত্তর খুঁজতে যাওয়া বাস্তবিকই বৃথা। কারণ সুরাহার সন্ধান দেওয়ার ব্যাপারে তারা আন্তরিক ক্বচিৎ। রাজনীতির দুর্বৃত্তায়ন ও অর্থায়ন এবং নির্বাচনে হিংসার পক্ষ নিয়েছে এমন দল খুঁজে পাওয়া যায় না, বরং এসবেরই নিন্দায় সরব সমস্ত দল। তবু হিংসার বিরাম নেই, বরং কোনও কোনও স্থানে নৃশংসতা ভয়াবহ আকার নিচ্ছে। অতঃপর, যাবতীয় দায় অন্যের ঘাড়ে ঠেলে দেওয়ার রাজনীতিতেই দড় হয়ে উঠেছে তারা সকলেই এবং একযোগে। নিজের দলের উগ্র-হিংস্র কর্মী-ক্যাডারদের সংযত করার কোনও পাঠ কারও পাঠশালায় নেই। বরং তাদের হয়েই চলে নির্লজ্জ সাফাই। তার ফল যা হওয়ার তাই হয়—হিংসার পুনরাবৃত্তি—সেখানে শাসক এবং বিরোধীতে কোনও ভেদাভেদ নেই। এই দুনিয়ায় যত ধরনের বৈষম্য আছে, তার প্রায় সবেতেই পয়লা নম্বরে ভারত, ব্যতিক্রম কেবল দায় গ্রহণের বেলা। এই একটিমাত্র ক্ষেত্রেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ‘পূর্ণ সাম্যবাদ’—কেউ ছোট বা বড় নয়—সবাই দাঁড়িয়ে আছে একটি বিন্দুতে। প্রত্যেকে প্রত্যেকের বিরুদ্ধে অভিযোগের তর্জনী তুলেই বীরত্ব ফলায় এবং দায়মুক্ত হওয়ার চেষ্টায় ওস্তাদ। ‘রাজনীতি’র লক্ষ্য থেকে যেদিন ‘মানুষ’ বিযুক্ত হয়ে গিয়েছে এবং ‘মোক্ষ’ হয়ে উঠেছে নিছক ‘ক্ষমতা’, সেদিন থেকেই এই সমস্যার সূচনা। ক্ষমতার লক্ষ্য যেদিন থেকে হয়ে উঠেছে নিরঙ্কুশ এবং সর্বগ্রাসী, এই বিপদ সেদিন চরম আকার নিয়েছে। এর একমাত্র সমাধান—রাজনীতিতে বিরোধী পরিসরকেও সমান মান্যতা দান। বিরোধী-শূন্য ক্ষমতার আসনে অনন্তকাল রাজ করার বাসনাই যত নষ্টের গোড়া। ক্ষমতার অধিকারী কোন দল গণতন্ত্রের সৌন্দর্যকে রক্ষা করতে প্রস্তুত? নির্বাচনে হিংসা বন্ধে আন্তরিক হলে সব শাসক দল এই প্রশ্ন সবার আগে নিজেকে করুক।
2Months ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

পারিবারিক অশান্তির অবসানে গৃহ সুখ ও শান্তি বাড়বে। প্রেমের ক্ষেত্রে শুভ। কর্মে উন্নতি। উপার্জন বৃদ্ধি।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.২৬ টাকা৮৪.৩৫ টাকা
পাউন্ড১০৬.৪৬ টাকা১০৯.১২ টাকা
ইউরো৮৯.৭৬ টাকা৯২.২০ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা