সম্পাদকীয়

আতঙ্কেই কি ভোলবদল?

মাধ্যমিক পরীক্ষায় ‘বি’ গ্রেড পেয়ে (৩৪—৪৪ শতাংশ নম্বর) কোনও পড়ুয়া প্রথম হয়েছেন, এমন অবাস্তব ঘটনা কল্পনাও করা যায় না। কিন্তু নির্বাচনী গণতন্ত্রে এমনটা হতেই পারে! সাধারণ বিবেচনায় একটি রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠী সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের (ন্যূনতম ৫১ শতাংশ) ভোট পেয়ে সরকার গঠনের দাবিদার হবে—এমনটাই হওয়া উচিত। কিন্তু ভারতের মতো বহুদলীয় ব্যবস্থায় তেমনটা নাও হতে পারে। বরং ভোটের ময়দানে ‘ত্রিমুখী’, ‘চতুর্মুখী’ লড়াইয়ের সুযোগ নিয়ে কোনও দল কোনওরকমে পাশ মার্ক অতিক্রম করেই ‘ফার্স্টবয়’-এর স্বীকৃতি পেয়ে গিয়েছে—এমন নজির হাতের কাছেই আছে। কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। ২০১৯-এর ভোটে লোকসভার ৫৪৩টি আসনের মধ্যে মোদির দল একাই দখল করে ৩০৩টি আসন। কিন্তু শাসক দল ভোট পায় ৩৭ শতাংশের কিছু বেশি। এর অর্থ, দেশের বেশিরভাগ মানুষ মোদির দলের বিরুদ্ধে ভোট দিয়ে অনাস্থা জানিয়েছেন। কিন্তু ভোট ভাগাভাগির মারপ্যাঁচে প্রতিপক্ষ থেকে অনেকটা এগিয়ে দৌড় শেষ করে (সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ভোটের প্রতিনিধি না হয়েও) মোদির দল। রাজনীতির এই আশ্চর্য ললাটলিখন নিয়ে সংসার চালানো মোদিবাহিনী যথেষ্ট বিদ্রুপ ও কটাক্ষের জবাব দিতে প্রথমে ঘোষণা করেছিল এবার ৫০ শতাংশ ভোট পেয়ে ৪০০ আসন পাবে এনডিএ। কিন্তু ১৯ ও ২৬ এপ্রিল দু’ দফার নির্বাচনে ভোট পড়ার হার দেখে কপালে ভাঁজ পড়েছে গেরুয়া শিবিরের। যার জেরে মুখ থেকে শরীরের ভাষা বদলে গিয়েছে পদ্ম নেতাদের। আর সেইভাবে শোনা যাচ্ছে না ৪০০ পারের বজ্র নির্ঘোষ, উন্নয়নের ‘অসত্য’ দাবি, বিরোধী ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চকে ১৫০ আসনে আটকে রাখার দম্ভ। বরং সব ছেড়ে ধর্মীয় মেরুকরণের স্পষ্ট বার্তা ফেরি করতে শুরু করেছে মোদি অ্যান্ড কোম্পানি। কিন্তু বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধি, দারিদ্র্য, অপুষ্টি, অসাম্যের নাগপাশে বন্দি মানুষকে বিভাজনের ভোকাল টনিকে ভুলিয়ে তৃতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় ফেরা যাবে কি না— সেই প্রশ্ন এখন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে বিজেপির অন্দরেই। তবে তারাও কি অশনি সঙ্কেত দেখছে? 
নির্বাচনে ভোটের হার কম হলে তা শাসক গোষ্ঠীর সর্বনাশ ডেকে আনে, এটাই চেনা দস্তুর। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৬৭ শতাংশের বেশি। ২০১৪-তে ৬৬ শতাংশের বেশি। দু’বারই ৫০ শতাংশের কম ভোট পেয়ে সরকার গঠন করেন নরেন্দ্র মোদি। নিজেদের ভোটের হার বাড়াতে এবার সর্বতোভাবে চেষ্টা শুরু করেছে বিজেপি। কিন্তু দু’ দফার ভোট শেষে দেখা যাচ্ছে, প্রায় প্রতিটি কেন্দ্রে গতবারের চেয়ে ভোট পড়েছে কম। প্রথম দফায় যে ১০২টি আসনে ভোট হয়েছে সেখানে ২০১৯-এ ভোটদানের হার ছিল গড়ে ৬৯.৪৩ শতাংশ। এবার তা কমে হয়েছে ৬২.৪ শতাংশ। একইভাবে দ্বিতীয় দফায় ৮৮টি আসনে গতবার গড় ভোটদানের হার ছিল ৬৬ শতাংশ। এবার তা কমে হয়েছে ৬২ শতাংশ। বিজেপির গড় বলে পরিচিত হিন্দি বলয়ের রাজ্য উত্তরপ্রদেশে ৭ শতাংশ, বিহারে ৫ শতাংশ, মধ্যপ্রদেশে ৯ শতাংশ ভোট কম পড়েছে। অন্যভাবে বললে, ডাবল ইঞ্জিনের রাজ্য যোগী আদিত্যনাথের উত্তরপ্রদেশে দ্বিতীয় দফার ভোটে মথুরাতে ৪৭ শতাংশ, মিরাটে ৫৫ শতাংশ, বাগপতে ৫২.৭ শতাংশ, আলিগড়ে ৫৪.৪ শতাংশ, গাজিয়াবাদে ৪৮.০২ শতাংশ ভোট পড়েছে। এইসব কেন্দ্রে গতবারের চেয়ে গড়ে ১০ শতাংশ কম ভোট পড়েছে। ভোট কম হওয়ার কারণ হিসেবে তীব্র গরমকেই ঢাল করেছে বিজেপি নেতৃত্ব। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের একাংশের বক্তব্য, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, গুজরাতের মতো ডাবল ইঞ্জিনের রাজ্যগুলিতে সংখ্যালঘু ও যাদবদের বেশি সংখ্যায় ভোটের লাইনে দেখা গেলেও তেমনভাবে চোখে পড়েনি রাজপুত ও ক্ষত্রিয়দের। অন্য একটি ব্যাখ্যা হল, এবার গেরুয়া শিবিরের প্রচারে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পেয়েছে ‘মোদি গ্যারান্টি’-র কথা। কিন্তু ২০১৪ বা ২০১৯ এর মতো এবার মোদি-ম্যাজিক বা মোদি ঝড়ের অস্তিত্ব চোখে পড়ছে না। তাই ভোটের লাইনে গেরুয়া সমর্থকদের চেনা মুখের অনুপস্থিতিও চোখে পড়েছে। 
৫৪৩টি আসনের মধ্যে দু’ দফায় মাত্র ১৩৫টি আসনে ভোট হয়েছে। তাতেই যেন ললাট লিখন পড়তে শুরু করেছেন বিজেপি নেতারা। তাই দ্বিতীয় দফার ভোটের শেষে মোদি-শাহ-নাড্ডাদের বক্তৃতায় সেই তাচ্ছিল্যের ভঙ্গিটা আর দেখা যাচ্ছে না। শোনা যাচ্ছে না, সিএএ হবেই জাতীয় কথা। যে প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তৃতার সিংহভাগ জুড়ে নিজের নামজপ করেন, তাঁর মুখেও যেন ‘আমিত্ব’ উধাও! এখন আর বিজেপি সরকার নয়, শোনা যাচ্ছে এনডিএ সরকারের কথা এবং শেষ চেষ্টা হিসেবে মেরুকরণের প্রচার। এক্ষেত্রে মোদির নতুন আমদানি হল, রাহুল গান্ধী রাজা-মহারাজাদের অভিযুক্ত করছেন, কিন্তু নবাব-নিজাম-সুলতান-বাদশাহদের অত্যাচার নিয়ে নীরব থাকছেন— এ জাতীয় বক্তব্য। রাহুলকে তিনি ‘শাহজাদা’ বলে ইঙ্গিত করেছেন! বিজেপি নেতাদের প্রচারে কংগ্রেস ইস্তাহার নিয়ে মনগড়া ও অসত্য ভাষণও গুরুত্ব পাচ্ছে! কীসের ভয়ে? এ কি তবে বিনাশকালে বুদ্ধিনাশের ইঙ্গিত? উত্তর মিলবে ৪ জুন।
2Months ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

পারিবারিক অশান্তির অবসানে গৃহ সুখ ও শান্তি বাড়বে। প্রেমের ক্ষেত্রে শুভ। কর্মে উন্নতি। উপার্জন বৃদ্ধি।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.২৬ টাকা৮৪.৩৫ টাকা
পাউন্ড১০৬.৪৬ টাকা১০৯.১২ টাকা
ইউরো৮৯.৭৬ টাকা৯২.২০ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা