সম্পাদকীয়

নিন্দনীয় প্রয়াস

‘নহি দেবী, নহি সামান্যা নারী।/ পূজা করি মোরে রাখিবে ঊর্ধ্বে/ সে নহি নহি,/ হেলা করি মোরে রাখিবে পিছে/ সে নহি নহি।/ যদি পার্শ্বে রাখ মোরে/ সংকটে সম্পদে,/ সম্মতি দাও যদি কঠিন ব্রতে/ সহায় হতে,/ পাবে তবে তুমি চিনিতে মোরে।’ —চিত্রাঙ্গদা’য় বলেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ১৯৬৩ থেকে এ পর্যন্ত মোট ১৬ জন মহিলা মুখ্যমন্ত্রী পেয়েছে ভারত। এই কীর্তির দ্বারোদ্ঘাটন করেন সুচেতা কৃপালনী। ২ অক্টোবর, ১৯৬৩—গান্ধীজির জন্মদিনে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের তরফে তিনি উত্তরপ্রদেশের দায়িত্ব নেন। টানা তিনটি টার্ম বা ১৫ বছর মুখ্যমন্ত্রিত্বের রেকর্ড রয়েছে শীলা দীক্ষিতের (১৯৯৮-২০১৩)। আবার মাত্র ২৩ দিনেই মুখ্যমন্ত্রিত্বের মেয়াদ শেষ হয়েছিল ভি এন জানকী রামচন্দ্রনের (এআইএডিএমকে)। তিনি তামিলনাড়ুর দায়িত্ব পেয়েছিলেন। দেশের ২৮টি রাজ্য এবং ৮টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মধ্যে এই মুহূর্তে মহিলা মুখ্যমন্ত্রী মাত্র একজন। তিনি পশ্চিমবঙ্গের জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী পদে, সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমোর এটা তৃতীয় টার্ম। অদূর ভবিষ্যতে মমতাকে বৃহত্তর দায়িত্ব নিতে হলে অন্যকথা, না-হলে শীলা দীক্ষিতের রেকর্ড ভেঙে দেওয়াটা তাঁর কাছে কেবলই সময়ের অপেক্ষা। মহিলা মুখ্যমন্ত্রী প্রসঙ্গে আর একটি উজ্জ্বল নাম বিজেপির সুষমা স্বরাজ (১৯৯৮)। সংসদীয় রাজনীতিতে তাঁর উত্থানের শুরু ১৯৭৭-এ—মাত্র ২৫ বছর বয়সে হরিয়ানা রাজ্যের সর্বকনিষ্ঠ ক্যাবিনেট মন্ত্রী হন তিনি। অন্যদিকে, স্থানীয় সরকার (গ্রাম পঞ্চায়েত, পুরসভা/ পুর কর্পোরেশন) পরিচালনাতেও গৌরবজনক অধ্যায় রচনা করেছেন ভারতকন্যারা। তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে উজ্জ্বল মুখ নিঃসন্দেহে আরিয়া রাজেন্দ্রন সি। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে সিপিএমের কাস্তে হাতুড়ি তারা প্রতীকে জিতে তিনি কেরলের তিরুবনন্তপুরম পুর কর্পোরেশনের মেয়র হন। তখন তাঁর বয়স মাত্র ২১ বছর। তিনিই সারা ভারতের কনিষ্ঠতম মেয়র।
কিন্তু মেয়েদের এই জয় মোটেই সহজে আসেনি। এ এক বিরাট লড়াইয়ের ফসল। রাজনীতি এবং সংসদীয় গণতন্ত্রের ছবিটার দিকে তাকালেই তা স্পষ্ট হয়। ১৮২ সদস্যের গুজরাত বিধানসভায় মহিলা মাত্র ১৫ জন। ২০১২ সালে সেখানে ১৬ জন মহিলা এমএলএ ছিলেন। মহিলা সদস্যের ন্যূনতাকেই যেন ‘ঐতিহ্য’ করে নিয়েছে মহাত্মা গান্ধী এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির গুজরাত। ২০২২ সালে গুজরাতে বিভিন্ন দলের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন মোট ১,৬২১ জন। তাঁদের মধ্যে ১৩৯ জন মহিলা, তবে প্রধান চার দলের প্রতিনিধি মাত্র ৪০ জন। অর্থাৎ লিঙ্গবৈষম্যের শুরু নির্বাচন আয়োজনের সূচনাতেই। মহিলা প্রার্থী ছিলেন বিজেপির ১৮ জন এবং প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেসের ১৪ জন। বিজেপি এবং কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ব্যাপক হুংকার ছেড়ে অরবিন্দ কেজরিওয়ালও পাঁচজনের বেশি মহিলাকে ফিল্ডিংয়ে পাঠাতে পারেননি। আরও দুর্ভাগ্য হল, ভোটারদের মনে দাগ কাটতে পারেননি আপ-এর একজনও মহিলা প্রার্থী। জয়-পরাজয় পরের কথা, গুজরাতে প্রার্থী মনোনয়নে বামপন্থী বা কমিউনিস্টরাও প্রগতিশীলতার সামান্যতম ছাপ রাখতে পারেননি। লোকসভায় সর্বাধিক মহিলা সদস্য ছিল বিদায়ী সংসদেই—কিন্তু তাঁরা মাত্র ১৫ শতাংশ! আরও হতাশ করেছে রাজ্যসভা—মহিলা সদস্য ১৩ শতাংশ মাত্র! সমস্ত রাজ্য বিধানসভা মিলিয়ে মাত্র ৯ শতাংশ মহিলা সদস্য।
বুঝতে অসুবিধা হয় না কেন আইনসভায় নারী প্রতিনিধিত্বের প্রশ্নে ‘মহান’ ভারতের র‍্যাঙ্ক নীচের দিক থেকে ২০তম। জনসংখ্যা, এমনকী ভোটার সংখ্যারও প্রায় অর্ধেক মহিলা হওয়া সত্ত্বেও কোনও দলই প্রার্থী নির্বাচনের ক্ষেত্রে মহিলাদের প্রাপ্য গুরুত্ব দেয়নি। ভোটদানের ক্ষেত্রেও অনেক রাজ্যে মহিলাদের অগ্রণী ভূমিকা লক্ষণীয়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য—হিমাচল প্রদেশ এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলি। অথচ কোনও কোনও রাজ্য থেকে আইনসভায় মহিলাদের প্রবেশাধিকারই জোটেনি, কিংবা বড়জোর একজন বা দু’জনের ভাগ্যে সেই শিকে ছিঁড়েছে। আদিবাসী মহিলা রাষ্ট্রপতি (দ্রৌপদী মুর্মু) ‘উপহার’ দিয়েছে মোদির পার্টি। মোদি সরকারই পাস করেছে আইনসভায় মহিলাদের জন্য ন্যূনতম ৩৩ শতাংশ আসন সংরক্ষণের বিল। মহিলা ভোট যথাসম্ভব বেশি হারে ঝুলিতে ভরারও নানা কৌশল জারি রয়েছে সব পার্টির। তবু চলতি লোকসভা নির্বাচনেও দেখা যাচ্ছে, বিশেষভাবে জারি রয়েছে নারীশক্তিকে পিছিয়ে রাখার সুপ্রাচীন খেলাটাই। তার জলজ্যান্ত সাক্ষ্য দিচ্ছে দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিজেপির প্রার্থী তালিকা। মোদি-শাহের গেরুয়া শিবির এখনও অব্দি ৪৩৪টি আসনে তাদের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে। কিন্তু বিস্তর ঢক্কা নিনাদের পরও সেই তালিকায় মহিলা মাত্র ৭০ জন বা ১৬ শতাংশের সামান্য বেশি! রাজনৈতিক দলগুলি ভোট জেতাবার হাতিয়ারমাত্র করে রেখেছে মহিলাদের। এটা কোনোভাবেই নারীকে সমানাধিকার প্রদানের মনোভাব ও সংস্কৃতি নয়, ‘অর্ধেক আকাশ’ আচ্ছন্ন রাখারই নিন্দনীয় প্রয়াস।
2Months ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

পারিবারিক অশান্তির অবসানে গৃহ সুখ ও শান্তি বাড়বে। প্রেমের ক্ষেত্রে শুভ। কর্মে উন্নতি। উপার্জন বৃদ্ধি।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.২৬ টাকা৮৪.৩৫ টাকা
পাউন্ড১০৬.৪৬ টাকা১০৯.১২ টাকা
ইউরো৮৯.৭৬ টাকা৯২.২০ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা