সম্পাদকীয়

রং নিয়ে রং-বাজি!

রাষ্ট্রযন্ত্রের মাথায় বসে রং-বাজি শুরু করেছেন গেরুয়া শাসক! যে রং ত্যাগের প্রতীক হয়ে দেশের ত্রিবর্ণ রঞ্জিত পতাকায় জ্বলজ্বল করছে, যে রঙের বসন সাধু-সন্ন্যাসীদের আলাদা করে চিনিয়ে দেয়, সেই গেরুয়া রঙের যেন ঠিকাদারি নিয়েছে আরএসএস-বিজেপি। এই ঠিকাদারদের একমাত্র পরিচয় যে তারা হিন্দু। তাদের রং গেরুয়া। অতএব সরকারেও হিন্দুত্বের হাত ধরে গৈরিকীকরণের কাজ চলছে নির্বিচারে। শাসক চায় বলে দূরপাল্লার দ্রুতগামী ট্রেনের রং নীল সাদা থেকে গেরুয়া সাদা হয়ে যাচ্ছে, লোকসভার কর্মীদের পোশাক কিংবা নতুন সংসদ ভবনের প্রবেশপথ সেজে উঠেছে গেরুয়া রঙে। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের রং নীল পাল্টে গেরুয়া না-করায় প্রকল্পের অর্থ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ। এমনকী এই রঙের অত্যাচার থেকে ক্রীড়াজগৎ-কেও বাদ দেওয়া হয়নি। এখন মহিলা-পুরুষ নির্বিশেষে ভারতীয় ক্রিকেট-হকিদলের প্র্যাকটিসের পোশাকে উঠে এসেছে গেরুয়া রং। এই শাসকের গেরুয়া-ফতোয়ায় সিনেমা বন্ধ করে দেওয়ার শাসানিও শোনা গিয়েছে! এখন দেখা যাচ্ছে, দূরদর্শনের ডিডি নিউজের বহু পরিচিত লাল রঙের লোগো বদলে গেরুয়া রং ধারণ করেছে। ১৯৭৬ সালের ১ এপ্রিল আত্মপ্রকাশের সময় থেকে এই লোগোই কোটি কোটি দেশবাসীর মনে জায়গা করে নিয়েছে। এর রং ছিল টকটকে লাল। এই লোগোর সঙ্গে সুর তৈরি করেছিলেন উস্তাদ আলি আহমেদ হুসেন খান এবং পণ্ডিত রবিশঙ্কর। গেরুয়া শিবিরের বদান্যতায় সেই লাল রঙের লোগো হয়েছে গেরুয়া। যা দেখে বিরোধীদের কটাক্ষ—ছিল প্রসার ভারতী, নরেন্দ্র মোদির হাতে পড়ে হল ‘প্রচার ভারতী’। 
এই গেরুয়াকরণের চেষ্টা অবশ্য নতুন নয়। বিজেপি আমলে রঙের সঙ্গে নাম বদলও হয়েছে নির্বিচারে। যেমন, মোগল সরাই স্টেশনের নাম বদলে হয়েছে দীনদয়াল উপাধ্যায়, নাম বদল হয়েছে এলাহাবাদেরও, হয়েছে প্রয়াগরাজ। এমনকী স্বাস্থ্যকেন্দ্রের রং গেরুয়া না করায় প্রকল্পের টাকা আটকে দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে এই মোদি জমানায়। গত নভেম্বরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে চিঠি দিয়ে কেন্দ্র জানায়, ‘জাতীয় স্বাস্থ্য মিশন প্রকল্পে’ নিয়ম মেনে স্বাস্থ্য কেন্দ্রের রং গেরুয়া করা হয়নি। এই ‘অজুহাতে’ প্রকল্পের ৮০০ কোটি টাকা আটকে দেয় কেন্দ্র। তার আগে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাড়ির রং নিয়েও কেন্দ্র-রাজ্য বিরোধ তুঙ্গে ওঠে। এই রং-বাজির আস্ফালন দেখা যায় একটি হিন্দি সিনেমার ক্ষেত্রেও। ওই সিনেমার নায়িকা কেন গেরুয়া বিকিনি পরে গান গেয়েছেন সেই কারণ দেখিয়ে হিন্দুত্ববাদীরা সিনেমাটি নিষিদ্ধ করার দাবিও তোলে। গেরুয়া রং নিয়ে এই চাপিয়ে দেওয়া রাজনীতি যখন সরকারি মদতে জাঁকিয়ে বসেছে তখন মনে করিয়ে দেওয়া যাক যে, দেশের ত্রিবর্ণ পতাকার (গেরুয়া-সাদা-সবুজ) রং নিয়ে গোড়ার দিকে সব থেকে বেশি বিরোধী ছিল আরএসএস। তাদের পত্রিকা অর্গানাইজার-এ স্বাধীনতা দিবসের আগের দিন আরএসএস নেতা গোলওয়ালকর লিখেছিলেন, ‘যারা ভাগ্যের জোরে আজ ক্ষমতায় এসেছে তারা আমাদের হাতে এই ত্রিবর্ণ পতাকা তুলে দিয়েছে। কিন্তু এই ত্রিবর্ণ পতাকাকে কোনওদিন কোনও হিন্দু সম্মান করবে না। তিন শব্দটাই অশুভ। এই তিন রঙের পতাকা দেশের উপর অত্যন্ত খারাপ প্রভাব ফেলবে, দেশের পক্ষে তা ক্ষতিকর।’ ভাগ্যের পরিহাস হল, প্রধানমন্ত্রী হয়ে লালকেল্লায় এই ত্রিবর্ণ পতাকাই তোলেন গোলওয়ালকরের শিষ্য নরেন্দ্র মোদি। 
অথচ এ দেশ যে নানা ধর্ম, নানা বর্ণ, নানা রঙের সমাহারে তৈরি একটি ফুলের তোড়ার মতো—তা দিনের আলোর মতোই সত্য। সম্প্রতি সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত সংস্থা সিএসডিএস-লোকমত-এর একটি সমীক্ষায় প্রকাশ, দেশের ৮০ শতাংশ মানুষ মনে করেন, ভারতে সব ধর্মের মানুষের সমান অধিকার আছে। প্রতি দশ জন হিন্দুর মধ্যে আট জন মনে করেন, এ দেশ সব ধর্মাবলম্বীর। অতএব হিন্দু রাষ্ট্রের খোয়াব দেখিয়ে নিজেদের পছন্দের নাম বা রং লাগিয়ে যে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মন পাওয়া যাবে না সেটা গৈরিক জাতীয়তাবাদীদের মনে রাখা দরকার। মনে রাখা ভালো, দেশের মঙ্গল কখনও নাম বা রং বদলে হবে না। বরং সকলের জন্য রুটি-রুজি, স্বাস্থ্য-শিক্ষা-বাসস্থান করার কাজে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করা উচিত। সেটাই চায় দেশবাসী। 
3Months ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

পারিবারিক অশান্তির অবসানে গৃহ সুখ ও শান্তি বাড়বে। প্রেমের ক্ষেত্রে শুভ। কর্মে উন্নতি। উপার্জন বৃদ্ধি।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.২৬ টাকা৮৪.৩৫ টাকা
পাউন্ড১০৬.৪৬ টাকা১০৯.১২ টাকা
ইউরো৮৯.৭৬ টাকা৯২.২০ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা