সম্পাদকীয়

হাস্যকর দাবি

পয়লা এপ্রিল দিনটির কথা মনে রেখেই কি দেশবাসীকে ফের ‘বোকা’ বানানোর চেষ্টা  করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি! রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বা আরবিআইয়ের এক অনুষ্ঠানে তাঁর লম্বা-চওড়া ভাষণ শুনে তেমন মনে হওয়াই স্বাভাবিক। চলতি বছরে ৯০-এ পা দিল ভারতের সর্বোচ্চ ব্যাঙ্ক। সেই উপলক্ষ্যেই পয়লা এপ্রিল মুম্বইয়ে সংস্থার সদর দপ্তরে এক অনুষ্ঠানে আরবিআইকে প্রশংসায় ভরিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী। এতে অবাক না হলেও বিস্ময় তৈরি হয় তাঁর বক্তৃতার একটি অংশ নিয়ে। প্রধানমন্ত্রী দাবি করেন, মূল্যবৃদ্ধি এখন নিয়ন্ত্রণে। করোনার সময় থেকে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে অসাধ্য সাধন করেছে আরবিআই। প্রধানমন্ত্রীর এমন প্রশংসাবাণীতে ব্যাঙ্ক কর্তাদের উল্লসিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দেখা গেল, এর চারদিনের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর দাবিকে কার্যত নস্যাৎ করে আরবিআইয়ের গভর্নর শুক্রবার জানিয়ে দেন, মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ হয়নি। তা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের চার শতাংশ লক্ষ্যমাত্রার উপরেই রয়েছে। অর্থাৎ দাম বেশিই রয়েছে। চলতি অর্থবর্ষেও খুচরো বাজারে মূল্যবৃদ্ধির গড় হার ৪.৫ শতাংশ থাকার সম্ভাবনা। শুধু তাই নয়, এই তীব্র গরমের সময়ে সব্জিসহ খাদ্যপণ্যের দাম আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছে আরবিআই। এবং এইসব কারণেই রেপো রেট গত ছ’বারের মতো এবারেও অপরিবর্তিত (সাড়ে ৬ শতাংশ) রাখার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। এই ঘোষণায় পরিষ্কার, মূল্যবৃদ্ধি ‘নিয়ন্ত্রণে’ বলে যে দাবি করেছেন প্রধানমন্ত্রী, সেই মূল্যবৃদ্ধিকেই রেপো রেট না কমার কারণ হিসেবে দেখিয়েছে আরবিআই। বিরোধীদের অভিযোগ, সর্বোচ্চ ব্যাঙ্কের দেওয়া তথ্য চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর দাবি শুধু অযৌক্তিক নয়, বিভ্রান্তিকরও। শুধু তাই নয়, রেপো রেট অপরিবর্তিত থাকায় গাড়ি-বাড়ির জন্য ইএমআইয়ের চড়া সুদের হার থেকে একটুও স্বস্তি মেলার আশা নেই মধ্যবিত্তের।
বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, করোনার পর থেকেই দেশে পাইকারি ও খুচরো বাজারে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে চলেছে। বৃদ্ধির হারে মাঝেমধ্যে সামান্য তারতম্য ঘটলেও তা কখনওই রিজার্ভ ব্যাঙ্কের বেঁধে দেওয়া শতাংশের নীচে নামেনি। গত পাঁচ মাসে প্রকাশিত কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, ফেব্রুয়ারিতে পাইকারি বাজারে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ০.২০ শতাংশ। কিন্তু খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে ৬.৯৫ শতাংশ হারে। আনাজের মূল্যবৃদ্ধি ১৯.৭৮ শতাংশ, ডালের মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে ১৮.৪৮ শতাংশ। ফেব্রুয়ারিতে খুচরো বাজারেও খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে ৮.৬৬ শতাংশ হারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাইকারি মূল্যসূচকে খাদ্যপণ্যের ভাগ কম। ফলে বাজারে তার প্রভাব তেমন চোখে পড়ে না। কিন্তু খুচরো বাজারে খাদ্যপণ্যের দাম আশঙ্কাজনক বেশি হলে তা ক্রেতাকে সরাসরি আঘাত করে। ফলে এই ছবিটা না বদলালে জীবন হয়ে ওঠে আরও দুর্বিষহ। দেশের আম জনতার অবস্থা এখন তেমনই। দুর্ভাগ্য হল, এসব জেনেবুঝেও প্রধানমন্ত্রী ‘মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে’ বলে মানুষকে ধোঁকা দিচ্ছেন! তিনি হয়তো দেখাতে চাইছেন, মূল্যবৃদ্ধির হার ৮ থেকে কমে ৭ শতাংশ বা ৭ শতাংশ থেকে কমে ৬ শতাংশ হয়েছে। অতএব মূল্যবৃদ্ধি ‘নিয়ন্ত্রণে’ এসেছে, জিনিসপত্রের দাম কমতে শুরু করেছে। কিন্তু ঘটনা হল, নির্দিষ্ট মাত্রার নীচে (৪ শতাংশ) মূল্যবৃদ্ধির হার না নামলে মানুষের কোনও সুরাহা হয় না। প্রধানমন্ত্রী এই বাস্তব সত্যটাকে আড়াল করে একটা ‘ফিল গুড’ ছবি দেখানোর চেষ্টা করছেন। অথচ গরমের মরশুমে খাদ্যপণ্যের দাম আরও বাড়তে চলেছে বলেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছে আরবিআই। বলেছে, দ্রব্য মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে এখন থেকেই কড়া নজরদারি দরকার। কারণ মূল্যবৃদ্ধি শিখরেই আছে। শীর্ষ ব্যাঙ্কের গভর্নরের বক্তব্য, যে হারে মূল্যবৃদ্ধির হার কমার প্রত্যাশা ছিল, সেটা হচ্ছে না। তাই আগামী অক্টোবর মাসের আগে রেপো রেট কমার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। ব্যাঙ্কের সাফাই, মূল্যবৃদ্ধির জন্যই রেপো রেট কমানো যাচ্ছে না। অর্থাৎ গরিব মধ্যবিত্ত সেই তিমিরেই।
ঘটনা হল, খাদ্যপণ্যের ক্ষেত্রে একটা অনিশ্চয়তা রয়েছে। যার ফলে আগামী দিনে দাম আরও বাড়ার সম্ভাবনা। বলা হচ্ছে, যদি ঠিকমতো বৃষ্টি হয় তাহলে মূল্যবৃদ্ধির হার অক্টোবরে ৩.৮ শতাংশে নামতে পারে। দেশে স্বাভাবিক বর্ষা হলে গম ও খরিফ চাষে উন্নতি হবে। তাহলে কৃষি সহ গ্রামীণ কর্মকাণ্ড বাড়বে। যার পরিণতিতে বিক্রিবাটাও বাড়বে। এও বলা হচ্ছে, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমায় পেট্রল, ডিজেল ও রান্নার গ্যাসের দাম সামান্য হলেও কমিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। ফলে খাদ্যপণ্যের দাম আগামী দিনে আরও কমবে। কিন্তু এই একাধিক ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার ফল যদি উল্টো হয়? অর্থাৎ দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টিপাত হল, তাপপ্রবাহে একাধিক ফসল নষ্ট হল, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম ফের বেড়ে গেল— তাহলে তো ফল হবে উল্টো। মানে দাম আরও বাড়বে। উপরন্তু ভোটের স্বার্থে জ্বালানি তেল ও গ্যাসের দাম কিছুটা কমলেও ভোট মিটলে ফের দাম বাড়তে পারে। সব মিলিয়ে তাই আগামী দিন কোনও আশার আলো দেখাচ্ছে না। বরং নরেন্দ্র মোদি ফের ক্ষমতায় ফিরলে দাম বৃদ্ধিই হয়তো রুটিন হয়ে দাঁড়াবে।
3Months ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

পারিবারিক অশান্তির অবসানে গৃহ সুখ ও শান্তি বাড়বে। প্রেমের ক্ষেত্রে শুভ। কর্মে উন্নতি। উপার্জন বৃদ্ধি।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.২৬ টাকা৮৪.৩৫ টাকা
পাউন্ড১০৬.৪৬ টাকা১০৯.১২ টাকা
ইউরো৮৯.৭৬ টাকা৯২.২০ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা