সম্পাদকীয়

কাগুজে বাঘের হালুম 

নরেন্দ্র মোদি মুখ্যমন্ত্রী থেকে প্রধানমন্ত্রী হতে হাতে তুলে নিয়েছিলেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে খড়্গ। তাঁর অভিযোগ ছিল, ভারত দুর্নীতির আখড়া হয়ে উঠেছে কংগ্রেসের ভ্রান্ত নীতি আর অপদার্থতার কারণে। পাঁচ বছরে কী কী ভালো কাজ করবেন, ২০১৪ সালের ভোটের আগে তার ফিরিস্তি দিয়েছিলেন মোদি শতমুখে! সেই হিসেব মিলিয়ে নেওয়ার বছর, ২০১৯-এ মানুষ দেখল ‘প্রতিশ্রুতি’ পাল্টে গিয়েছে ‘জুমলা’য়—স্বভাবতই পাল্লা ঝুঁকেছে দুর্ভোগের দিকে। তবু নরেন্দ্র মোদিই প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন দ্বিতীয় দফায়—বেশিরভাগ মানুষ বিজেপি-সহ এনডিএর বিরুদ্ধে জনাদেশ দেওয়া সত্ত্বেও। প্রথম কারণ, কিছু মানুষ মোদিকে ‘আর একটা চান্স দেওয়া যাক’ ভেবেছিলেন। দ্বিতীয় কারণ, বহু দলীয় নির্বাচন ব্যবস্থার ত্রুটি—৫১ মানে একশো (১০০) এবং ৪৯ মানে বিগ জিরো (০)! তৃতীয় কারণ, ভাগ্য ভীষণভাবে সহায় ছিল। এবার মোদির সামনে হ্যাটট্রিক করার এবং নেহরুকেও পিছনে ফেলে ইতিহাস গড়ার হাতছানি। কিন্তু দ্বিতীয় দফায় যে তিনটি কারণ সাথ দিয়েছিল, এবার সেগুলি সঙ্গী বদলে ফেলতে চায় যদি? এমন পরিস্থিতিতে একমাত্র পথ হতে পারত অভাবনীয় সাফল্য। কিন্তু কৃষক বিদ্রোহ, তীব্র বেকারত্ব, জিনিসপত্রের অগ্নিমূল্য, পিএফ পেনশনারদের সঙ্গে প্রতারণা, আধার-নিগ্রহ, এনআরসির রক্তচক্ষু, মণিপুর পরিস্থিতি, বিলকিস বানো কাণ্ডে সরকারের অমানবিক ভূমিকা, মহিলা কুস্তিগিরদের সঙ্গে জঘন্য ব্যবহার, ঘোড়া কেনাবেচা এমনকী সংসদের বুকে দাঁড়িয়েও গণতন্ত্র হত্যা প্রভৃতি ইস্যু বরং সরকারের সামনে কাঁটার চেহারায় খাড়া হয়ে আছে। 
সব মিলিয়ে মোদির এক দশক নিশ্চিতভাবে যে জিনিসটি উপহার দিয়েছে তার নাম স্বৈরতন্ত্র! গণতন্ত্রের গুরুতর অসুস্থতা দূরীকরণে বিরোধীদের যে ভূমিকা হওয়া উচিত, ভারতের অবিজেপি দলগুলি সেই ভূমিকা পালনে দীর্ঘদিন যত্নবান ছিল না। দেরিতে হলেও সংবিৎ ফিরেছে তাদের। বাংলার জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে দেশের অবিজেপি দলগুলি, জরুরি সমস্যাগুলিকে সামনে রেখেই, এককাট্টা হয়েছে। কিছুদিন আগেই তৈরি হয়েছে তাদের মহাজোট ‘ইন্ডিয়া’। দেশবাসী দেখেছে, শিরে সংক্রান্তির অবস্থা হয়েছিল মোদি-শাহদের। শুরু হয় ‘ইন্ডি’ জোটের ‘পিণ্ডি’ চটকানোর ছক তৈরি। হাতিয়ার হয়ে ওঠে ইডি, সিবিআই, এনআইএ, আইটি প্রভৃতি ‘সুবোধ’ কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলি। তাদের অতিতৎপরতা যে ‘অপারেশন লোটাস’-এরই গুরুত্বপূর্ণ পার্ট, তা আমরা মহারাষ্ট্রের পর দেখেছি বিহারে। ঝাড়খণ্ডে এখনও জারি রয়েছে এই অনাচার।
কিন্তু এই তথাকথিত ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ও কি যথেষ্ট? ভোট যত এগচ্ছে ততই শক্তিশালী হচ্ছে বিরোধী মহাজোটের অবয়ব। মাত্র ক’দিনের মধ্যে ১১টি রাজ্যে ‘ইন্ডিয়া’র আসন সমঝোতা প্রায় চূড়ান্ত। অন্য কয়েকটি রাজ্যেও আলোচনা চরম পর্যায়ে। বিজেপির বিরুদ্ধে একটাই প্রার্থীর ‘মমতা মডেল’-এ বস্তুত সিলমোহর পড়তে চলেছে বেশিরভাগ রাজ্যে। শনিবার গোয়ায় কংগ্রেস এবং আপ একত্রে জানিয়েছে, সেখানকার দুটি আসনেই কংগ্রেস প্রার্থী দেবে। কংগ্রেসকে সমর্থন করবে আপ। গোয়া ফরওয়ার্ড পার্টিও ‘ইন্ডিয়া’-কে সমর্থনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আজ সোমবার অন্ধ্রপ্রদেশেও আসন সমঝোতা চূড়ান্ত হতে পারে। প্রদেশ কংগ্রেস সভানেত্রী শর্মিলা রেড্ডি জানিয়েছেন, অনন্তপুরে আসছেন মল্লিকার্জুন খাড়্গে। সভায় থাকবেন সিপিআই ও সিপিএম নেতৃত্বও। আলোচনা চলছে আসন রফার। সিদ্ধান্ত ঘোষণা হবে শীঘ্রই। বিহার, ঝাড়খণ্ড, ইউপি, দিল্লি, হরিয়ানা, এমপি, তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র ও গুজরাতে সমঝোতা একপ্রকার চূড়ান্ত। মহারাষ্ট্রের ৪৮টি আসনের মধ্যে ৩৯টিতে একমত হয়েছে কংগ্রেস, শিবসেনা, এনসিপি (শারদ)। বাকি ৯টি আসনের সিদ্ধান্তও দ্রুত হতে পারে। এদিন রায়গড় দুর্গে দলের নতুন প্রতীকের (শিঙা) উদ্বোধন করেন শারদ পাওয়ার। তারপর শারদ বলেন, ‘দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু হবে এবার।’ ঝাড়খণ্ডে ফর্মুলা মেনে সাতটি করে আসনে লড়ার জন্য একমত কংগ্রেস এবং জেএমএম। আরজেডি’কেও ছাড়া হবে একটি আসন। অন্যদিকে, বামপন্থীদের একটি আসন দেবে কংগ্রেস। অর্থাৎ ‘ইন্ডিয়া’ জোট হচ্ছে সার্বিকভাবেই। আপের সঙ্গে কংগ্রেসের জোট হওয়াটা রাজনৈতিক দিক থেকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, শুধুই দিল্লি নয়, হরিয়ানা থেকে গুজরাত—সর্বত্রই হাত মিলিয়েছে তারা। ‘ইন্ডিয়া’র এই বিলম্বিত তৎপরতায় বিস্মিত বিজেপি। ভোটযন্ত্রে মোদি-বধের পালা অনুষ্ঠানের প্রক্রিয়াটি রুখে দেওয়ার কারসাজি অকার্যকর হয়ে উঠছে ক্রমেই। আর কেউ না হোক, তা বিলক্ষণ বুঝতে পারছেন স্বয়ং নরেন্দ্র মোদি এবং অমিত শাহ। ফলে মুখে ‘আব কি বার চারশো পার’ স্লোগানটি কেমন যেন কাগুজে বাঘের হালুম শোনাচ্ছে! 
5Months ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

পারিবারিক অশান্তির অবসানে গৃহ সুখ ও শান্তি বাড়বে। প্রেমের ক্ষেত্রে শুভ। কর্মে উন্নতি। উপার্জন বৃদ্ধি।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.২৬ টাকা৮৪.৩৫ টাকা
পাউন্ড১০৬.৪৬ টাকা১০৯.১২ টাকা
ইউরো৮৯.৭৬ টাকা৯২.২০ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা