সম্পাদকীয়

ডোনেশন কিসসা

২০১৭-১৮ সালের বাজেট অধিবেশনে অর্থ বিল ২০১৭ পাস করানো হয়। তার মধ্যেই ছিল ‘দ্য স্কিম অব ইলেক্টোরাল বন্ড’। ২ জানুয়ারি, ২০১৮। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রকের ডিপার্টমেন্ট অব ইকনমিক অ্যাফেয়ার্সের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করা হয়, দেশের রাজনৈতিক দলগুলির তহবিল সংগ্রহের ব্যবস্থায় ‘অস্বচ্ছতা’ দূর করার জন্যই সরকার এই ব্যবস্থা এনেছে। ভারতের যেকোনও নাগরিক এবং সংস্থা স্টেট ব্যাঙ্কের (এসবিআই) নির্দিষ্ট কিছু শাখা থেকে এই বন্ড কিনতে পারবে। এগুলি কিছু নির্দিষ্ট সময়ে ১ হাজার, ১০ হাজার, ১ লক্ষ, ১০ লক্ষ এবং ১ কোটি টাকার মূল্যমানে কেনা যাবে। বন্ডগুলিতে ক্রেতার নামধামের কোনও উল্লেখ থাকবে না। রেজিস্টার্ড এবং উপযুক্ত রাজনৈতিক দলগুলি তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে সেগুলি ভাঙিয়ে নিতে পারবে। আমরা আরও জানি, এ নিয়ে পরবর্তীকালে তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি হয়। তখন সরকার সাফ জানিয়ে দেয়, এই তহবিলের কোনও হিসেব, এমনকী দাতা ব্যক্তি বা সংস্থার নাম জানতে চাওয়া আইনত ‘অন্যায়’। যে তহবিলের ভিত্তিই ‘স্বচ্ছতা’, তার ক্ষেত্রেই এমন আজগুবি কথা কেন? অনুদান প্রাপ্তির তুলনামূলক পরিসংখ্যান সামনে আসতেই এই অভূতপূর্ব লুকোছাপার রহস্যটা বেরিয়ে পড়ে। মোট অনুদানের বেশিরভাগটাই গিয়েছে মোদির পার্টিতে। কোন মোদি? যিনি ক্রমাগত বুক বাজিয়ে চলেছেন, ‘না খাউঙ্গা, না খানে দুঙ্গা’ বলে! অন্যদিকে, কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ বিরোধী দলগুলির ঝুলিতে গিয়েছে ছিটেফোঁটা মাত্র। সোজা কথায়, নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতাসীন হওয়ার তৃতীয় বর্ষে রাজনৈতিক দলগুলির জন্য ‘বৈধ’ তহবিল সংগ্রহের অছিলায় বিজেপিকেই ধনাঢ্য বানাবার খুড়োর কল খুলেছিল সরকার। 
রাষ্ট্রযন্ত্র যতবার একনায়কের ভূমিকা নিয়েছে, দেশ ততবার ভরসা রেখেছে ন্যায়ালয়ের উপর। ইলেক্টোরাল বন্ড ইস্যুতেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এই সংক্রান্ত মামলার চূড়ান্ত রায় সামনে এসেছে ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪। সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ সর্বসম্মতভাবে মোদি সরকারের ‘ইলেক্টোরাল বন্ড’কে ‘অবৈধ’ ঘোষণা করেছে। একইসঙ্গে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এই ব্যবস্থা বন্ধ করার জন্যও। শীর্ষ আদালত পরিষ্কার করে দিয়েছে যে, ব্যবস্থাটি ‘অসংবিধানিক’। কারণ সংবিধানের ১৯(১)(এ) অনুচ্ছেদে নাগরিককে তথ্য জানার যে অধিকার দেওয়া হয়েছে, ইলেক্টোরাল বন্ড মাহাত্ম্য তার পরিপন্থী। সুপ্রিম কোর্ট সাহস জোগানোর পর সামনে চলে এসেছে আর এক কেলেঙ্কারি। দুটি অনলাইন মিডিয়া ফাঁস করে দিয়েছে, এই বন্ডের মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহে তীব্র বৈষম্যের রহস্যটা কী? কেন একতরফাভাবে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা ঢুকছে কেবল বিজেপিরই ঝুলিতে? আপাতত যা সামনে এসেছে বিশেষজ্ঞরা তাকে হিমশৈলের চূড়ামাত্র বলেই মনে করছেন। কারণ এতে পাওয়া গিয়েছে মাত্র ৩০টি সংস্থার ডোনেশন চিত্র। গত লোকসভা ভোটের আগে (২০১৭-১৮) মধ্যপ্রদেশের এক মদ কোম্পানি বন্ড মারফত বিজেপিকে সওয়া চার কোটি টাকা অনুদান দিয়েছিল। কিন্তু পরের বছর তারা বিজেপিকে ভুলে টাকা দেয় কংগ্রেসকে। আর যায় কোথায়! ২০২০ সালের জুলাইতে, ঘোর করোনাকালে ওই কোম্পানির ঘরে হানা দেয় জিএসটি ইন্টেলিজেন্স। স্যানিটাইজার বিক্রয়ে কর খেলাপের অভিযোগে শ্রীঘরবাসের বন্দোবস্ত করা হয় সংস্থার দুই শীর্ষকর্তাকে। তাঁরা জামিনে মুক্ত হওয়ার দিনকয়েক পরেই এক কোটি টাকা ডোনেশন ঢোকে বিজেপির তহবিলে। তারও কিছুদিন পর থেকে একাধিক দফায় বিজেপিকে তাঁরা আরও মোট তিন কোটি টাকা দেন। সংশ্লিষ্ট মিডিয়া খোঁজ নিয়ে দেখেছে, এ কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, আরও অনেক সংস্থার ক্ষেত্রেই এমনটা ঘটেছে। ‘অসাধু’ সংস্থার বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় এজেন্সির তৎপরতা বাড়তেই বেড়ে গিয়েছে বিজেপিকে ডোনেশনের বহর। অনুদান কেউ দিয়েছে ১০ কোটি তো কারও ‘দরাজ’ হাতে উঠে এসেছে আরও বেশি টাকা! আপাতত ৩০টি সংস্থা থেকে ৩৩৫ কোটির কাহিনি জলের মতোই স্পষ্ট। 
সবটাই গেরুয়া প্রীতি কিংবা কাকতালীয়? ‘দুর্জনের’ খবর, বিভিন্ন সংস্থাকে বাধ্য করা হয়েছে একতরফা দাতা হতে! এও দেখা গিয়েছে, বিজেপির ঘরে বেহিসেবি ডোনেশন পৌঁছে যেতেই অনেক সংস্থার যাবতীয় ময়লা, পাপ ইত্যাদি ধুয়েমুছে সাফ হয়ে গিয়েছে! মোদি ক্ষমতায় এসেছিলেন দুর্নীতি বিরুদ্ধে খড়্গ হাতে নিয়ে। পরবর্তী দশবছরে একের পর এক ‘জুমলা’র সঙ্গে তিনি ‘উপহার’ দিয়েছেন অসাংবিধানিক কর্মকাণ্ডেরও মালা! কিন্তু এবারও তাঁর মুখে বিরোধীদের দুর্নীতির মূলোৎপাটনের হুংকার! বিন্দুমাত্র রাজনৈতিক সততা থাকলে গেরুয়া শিবিরের কারও মুখেই এই আস্ফালন আসত না, তাঁরা সবাই একসঙ্গেই মুখ লুকোতেন। তা নিশ্চয় করবেন না কাচের ঘরের বাসিন্দারা। অতএব, সংবাদ মাধ্যম এবং বিচার ব্যবস্থার উচিত আরও নিষ্ঠার সঙ্গে এই জমানার সবগুলো বেড়ালকে ঝুলি থেকে টেনেহিঁচড়ে বের করে আনা।
5Months ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

পারিবারিক অশান্তির অবসানে গৃহ সুখ ও শান্তি বাড়বে। প্রেমের ক্ষেত্রে শুভ। কর্মে উন্নতি। উপার্জন বৃদ্ধি।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.২৬ টাকা৮৪.৩৫ টাকা
পাউন্ড১০৬.৪৬ টাকা১০৯.১২ টাকা
ইউরো৮৯.৭৬ টাকা৯২.২০ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা