সম্পাদকীয়

আধারে আঁধার!

চিঠি পাঠিয়েছে রাঁচির আঞ্চলিক অফিস। যা পোস্ট করা হয়েছে হরিয়ানার গুরুগ্রাম থেকে। চিঠির খামের উপর লেখা রয়েছে, প্রাপকের কাছে চিঠি না পৌঁছলে তা ফেরত যাবে বেঙ্গালুরুর নির্দিষ্ট ঠিকানায়। আধার কার্ড নিষ্ক্রিয় করার নোটিস দিয়ে এমন চিঠি পৌঁছেছে বাংলার বেশ কয়েকটি জেলার কয়েকহাজার মানুষের কাছে। প্রেরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘২০১৬ সালের আধার আইনের ২৮এ ধারা অনুযায়ী আপনি ভারতে থাকার শর্ত পূরণ করতে পারেননি। তাই আপনার আধার কার্ড নিষ্ক্রিয় করা হল।’ এমন একটা চিঠি পেয়ে নাগরিকত্ব চলে যাওয়ার আশঙ্কায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে ব্যাপক। শুধু তাই নয়, এখন কেন্দ্র-রাজ্যের যে কোনও সরকারি পরিষেবা প্রকল্প তো বটেই, বহু বেসরকারি কর্মকাণ্ডেও নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে আধার কার্ড কার্যত জরুরি হয়ে উঠেছে। ফলে আধার কার্ড না থাকলে সেসব পরিষেবা কী করে মিলবে— সেই প্রশ্নও যেন বহু পরিবারের জীবনে আচমকা আঁধার নামিয়ে এনেছে। ওই চিঠি নিয়ে একইসঙ্গে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কোনও পক্ষই এই চিঠির দায় স্বীকার না করায় বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে। তবে সরকারি একটি সূত্র থেকে আবার এই চিঠির সত্যতা মেনে নেওয়া হয়েছে। একেবারে তুঘলকি কাণ্ড। অনেকে আবার চিঠিকাণ্ডের সঙ্গে সিএএ চালুর ঘোষণার মধ্যে যোগসূত্র দেখছেন। মোদি সরকার সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বা সিএএ ২০১৯ সালে তৈরি করলেও তা এতদিন চালু হয়নি। এবার সেই সিএএ-র জুজু দেখানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। লোকসভা ভোটের আগেই তা চালু হয়ে যাবে বলে হুঙ্কার ছেড়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এই আইনে পাকিস্তান, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান থেকে ভারতে আগত হিন্দুদের ‘নাগরিকত্ব’ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। আইনের অন্যতম উদ্দেশ্য হল, ওই তিন দেশ থেকে আগত মুসলিমদের ‘অনুপ্রবেশকারী’ হিসেবে চিহ্নিত করে দেশ থেকে বহিষ্কার করা। এখন ভোটের আগে চুপিসারে আধার কার্ড নিষ্ক্রিয় করার অভিযান আসলে সিএএ আইনের পথ প্রশস্ত করার প্রথম ধাপ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ। উদ্দেশ্য যাই হোক, ‘আধার’ আতঙ্ক তাড়া করছে বহু মানুষকে। এই ‘আধার’কে কেন্দ্র করে মানুষের দুর্ভোগ কম হয়নি। মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষার প্রশ্নে ঘোটালাও কম হয়নি। 
তাই ‘আধার’ নিয়ে চিঠির কারণ যাই হোক, এই নিয়ে একাধিক সঙ্গত প্রশ্ন উঠেছে নাগরিক সমাজে। প্রথমত, কোনও ‘বিদেশি’ নাগরিক (তর্কের খাতিরে) আধারের শর্ত পূরণ না করলেও তাঁর কার্ড নিষ্ক্রিয় করার আগে তাঁকে অফিসে ডেকে কারণ দর্শানোর সুযোগ দিতে হবে। কিন্তু বাংলার বিভিন্ন জেলায় ইতিমধ্যে যাঁরা চিঠি পেয়েছেন, তাঁদের কোনও সুযোগই দেওয়া হয়নি। দ্বিতীয়ত, এমন মারাত্মক বিভ্রান্তি ছড়ানোর পরেও কেন সংশ্লিষ্ট আধার কর্তৃপক্ষ অথবা অমিত শাহের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক ঝেড়ে কাশছেন না? যদি এই চিঠি ‘ভুয়ো’ হয় (অনেকের ধারণা) তাহলেও বা কেন ‘সত্যিটা’ তুলে ধরে বিভ্রান্তি কাটানোর চেষ্টা হচ্ছে না? প্রশ্ন হল, এর পিছনে কি রাজনৈতিক কোনও অভিসন্ধি বা ষড়যন্ত্র রয়েছে? কারণ, আধার কার্ড সত্যিই যদি কাজ না করে তাহলে মানুষ সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন। বাংলার মানুষকে প্যাঁচে ফেলার এটা কি এক নয়া কৌশল? আধার নিষ্ক্রিয় করার নোটিসে সবচেয়ে আতঙ্কিত মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষ। তাঁদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি কেন্দ্রের বিজেপি সরকার পালন না করায় তাঁরা মুখ ফেরাতে শুরু করেছেন। সে কারণেই কি পাল্টা চাপের এই কৌশল? 
আধার চিঠি সত্যি বা ভুয়ো যাই হোক, বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সকলকে আশ্বস্ত করেছেন। রাজ্যবাসীর পাশে দাঁড়িয়েছেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, ভোটের আগে মানুষ যাতে ব্যাঙ্কের মাধ্যমে টাকা না পায়, বিনামূল্যে রেশন না পায়, লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা না পায়, তার জন্য ষড়যন্ত্র করে এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আধার কার্ড থাক বা না থাক, রাজ্যের কোনও প্রকল্প কারও জন্য বন্ধ হবে না। মুখ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি, আধার কার্ড ছাড়া ব্যাঙ্ক পরিষেবা দিতে না চাইলে বিকল্প হিসেবে সমবায় ব্যাঙ্ক আছে। বাংলার একজন মানুষও যাতে কোনও পরিষেবা থেকে বঞ্চিত না হন, সেটা তাঁর গ্যারান্টি। এই সমস্যা সমাধানে একটি অনলাইন পোর্টাল খুলছে রাজ্য সরকার। যাঁদের আধার কার্ড নিষ্ক্রিয় হবে, তাঁরা সেই পোর্টালে আবেদন করলে রাজ্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করবে। মোদি জমানায় কেন্দ্রীয় বঞ্চনার মাধ্যমে রাজ্যবাসীকে ভাতে মারার যে চেষ্টা চলছে তার যোগ্য জবাব তিনি এভাবেই দিয়েছেন। যদিও পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে নড়েচড়ে বসেছে বঙ্গবিজেপি। বলা হচ্ছে, নিষ্ক্রিয় হওয়া কার্ড সক্রিয় হয়ে যাবে। কিন্তু কীভাবে এমন ঘটনা ঘটল তার কি কোনও তদন্ত হবে? যারা এই ঘটনা ঘটিয়ে মানুষকে দুশ্চিন্তায় ফেলল তাদের শাস্তি হবে? আসলে এই কেন্দ্রীয় সরকার মানুষকে স্বস্তিতে থাকতে দিতে চায় না। নানা ফরমানে জীবন অতিষ্ঠ করে তুলতে এই গেরুয়া সরকারের জুড়ি মেলা ভার।
5Months ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

পারিবারিক অশান্তির অবসানে গৃহ সুখ ও শান্তি বাড়বে। প্রেমের ক্ষেত্রে শুভ। কর্মে উন্নতি। উপার্জন বৃদ্ধি।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.২৬ টাকা৮৪.৩৫ টাকা
পাউন্ড১০৬.৪৬ টাকা১০৯.১২ টাকা
ইউরো৮৯.৭৬ টাকা৯২.২০ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা