সম্পাদকীয়

আসল সত্য সামনে আসুক

মোদি সরকারের চালু করা নির্বাচনী বন্ড প্রকল্পকে ‘অসাংবিধানিক’ বলে তা বাতিল করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। এর চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে এবার পিএম কেয়ার্স ফান্ড নিয়ে যাবতীয় গোপনীয়তার পর্দা ফাঁসের দাবি উঠল নাগরিক সমাজে। আর্জি সেই ‘ত্রাতা’ সর্বোচ্চ আদালতের কাছে। নির্বাচনী বন্ডের মতো এই প্রকল্পেরও কোনও তথ্য প্রকাশ করতে নারাজ কর্তৃপক্ষ। সেই কারণেই এই তহবিলকে ঘিরে অস্বচ্ছতার জোরালো অভিযোগ উঠেছে। অথচ এই প্রকল্পের নামের সঙ্গে পিএম অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রীর নামের বিষয়টি যুক্ত থাকায় অভিযোগ নিরসনের দায় কেন্দ্রের তরফে থেকেই যায়। যদিও এই নিয়ে দিল্লি হাইকোর্টে এক মামলায় কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়েছে, এই প্রকল্প কেন্দ্রের নয়। এটি একটি বেসরকারি জনসেবামূলক তহবিল। তাই দেশের আইন অনুযায়ী পিএম কেয়ার্সের তথ্য জানানো সম্ভব নয়। প্রায় একই ধরনের যুক্তিকে সামনে রেখে এতদিন নির্বাচনী বন্ডের যাবতীয় তথ্যও গোপন রেখেছিল মোদি সরকার। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সেই গোপনীয়তার দরজা খোলার উপক্রম হতেই এবার ‘ব্যাঙ্ক বাঁচাও, দেশ বাঁচাও’ নামে একটি মঞ্চ পিএম কেয়ার্সের বন্ধ দরজা খুলতে সর্বোচ্চ আদালতের কাছে আর্জি জানিয়েছে। এই তহবিলে শত শত কোটি টাকা কারা দিল, সেই টাকা কোথায় কীভাবে খরচ হল, ভারতের প্রতিটি নাগরিকের তা জানার অধিকার আছে বলে মনে করে মঞ্চ। অর্থাৎ, ছবিটা সেই নির্বাচনী তহবিলের মতো। তাই নির্বাচনী বন্ডের মতো পিএম কেয়ার্স ফান্ড নিয়েও প্রচুর প্রশ্ন ও অপার কৌতূহল। এক্ষেত্রেও তাই সঠিক দিশা দেখানোর ভরসা সেই সর্বোচ্চ আদালত।
কথায় কথায় মোদি সরকার দুর্নীতি মুক্ত ভারত গঠনের কথা বলে। কিন্তু এই সরকারের আমলে ‘তহবিল’কে সামনে রেখে কত কী যে ঘটছে লোকচক্ষুর আড়ালে তা নিয়ে জনগণের মনে গুচ্ছ গুচ্ছ প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলিকে ভোটে চাঁদা দেওয়ার বিষয়ে ‘স্বচ্ছতা’ আনার কথা বলে ২০১৮ সালে নির্বাচনী বন্ড চালু করেছিল মোদি সরকার। এ একেবারে ষোলোআনা সরকারি প্রকল্প। অন্যদিকে, পিএম কেয়ার্স তৈরি করার কারণ হিসেবে জানানো হয় করোনায় সাহায্যের কথা। এবং এখানেও চরম দ্বিচারিতার আশ্রয় নিয়েছেন দেশশাসক। ২০২০ সালে এই প্রকল্প চালুর সময় জানানো হল, ‘প্রাইম মিনিস্টার্স সিটিজেন অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যান্ড রিলিফ ইন এমারজেন্সি সিচুয়েশন ফান্ড’ স্বেচ্ছাদানের ভিত্তিতে পরিচালিত জনসেবামূলক প্রতিষ্ঠান। এটা কোনও সরকারি সংস্থা নয়। অথচ প্রধানমন্ত্রীর নামে এই তহবিলের নামকরণ। প্রধানমন্ত্রী মোদি এর চেয়ারম্যান। দেশের স্বরাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা ও অর্থমন্ত্রী আবার তহবিলের অছি পরিষদের সদস্য। এই প্রকল্পের ঠিকানাও সাউথ ব্লকে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর। ওয়েবসাইটে মোদির ছবি। এমনকী নামের সঙ্গে জাতীয় প্রতীক অশোকস্তম্ভও রয়েছে। তাতে চাঁদা চেয়ে সরকারি খরচে বিজ্ঞাপনও দেওয়া হয়। কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মচারী, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ও ব্যাঙ্ক কর্মীদের বেতন থেকে টাকা কেটে তহবিলে জমা করা হয়েছে। রেল থেকে বিদেশ, শিক্ষা থেকে স্বাস্থ্য প্রায় প্রতিটি মন্ত্রক কোটি কোটি টাকা অনুদান হিসাবে দিয়েছে তহবিলে। অথচ এমন একটা তহবিলের সরকারিভাবে কোনও হিসাবরক্ষক নেই! প্রশ্ন উঠছে, এটা নিতান্তই বেসরকারি তহবিল হলে কেন প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীরা তাঁদের পদের ‘অপব্যবহার’ করছেন! প্রধানমন্ত্রীর নামে জাতীয় ত্রাণ তহবিল থাকলেও কেন পৃথকভাবে পিএম কেয়ার্স তৈরি করতে হল, সেই গুরুত্বপূর্ণ ও সঙ্গত প্রশ্নটিও উঠেছে। যদিও প্রায় কোনও প্রশ্নেরই উত্তর দেয়নি কেন্দ্রীয় সরকার। সে কারণেই এই তহবিলকে ঘিরে নানা সংশয় দানা বাঁধছে। করোনাকালে যে পিএম কেয়ার্স ফান্ড তৈরি হল বর্তমানে সেটি কী অবস্থায় রয়েছে তাও জানানো হচ্ছে না। তহবিলের টাকার কী হল তাও মানুষ জানতে পারছে না। এত গোপনীয়তা কীসের? প্রশ্ন উঠছে, এক্ষেত্রেও কি ‘ডাল মে কুছ কালা হ্যায়’? তাই সংশ্লিষ্ট মঞ্চ দেশের প্রধান বিচারপতির কাছে পিএম কেয়ার্স ফান্ডের টাকার ফরেন্সিক অডিট করানোর আর্জি জানিয়েছে।
তথ্য বলছে, ২০২২-এর মার্চ পর্যন্ত পিএম কেয়ার্সে ১৩ হাজার কোটি টাকার বেশি জমা পড়েছে। এর মধ্যে ৬০ শতাংশ অর্থ এসেছে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা থেকে। বিদেশি অনুদানের পরিমাণ ৫৩৫ কোটি টাকার বেশি। কেন্দ্রের দাবি, অনুদানের ৬০ শতাংশ অর্থ খরচ হয়েছে করোনা মোকাবিলায় স্বাস্থ্যক্ষেত্রে। বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছে, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা কিংবা কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের বেতনের টাকা আসে জনগণের দেওয়া করের টাকা থেকে। তাই স্বচ্ছতার স্বার্থেই এই তহবিলের আয় ও ব্যয়ের পূর্ণাঙ্গ হিসাব প্রকাশ্যে আসা উচিত। পিএম কেয়ার্স নিয়ে এই যাবতীয় দাবি নতুন মাত্রা পেয়েছে নির্বাচনী বন্ড সুপ্রিম কোর্ট বাতিল করে দেওয়ার প্রেক্ষিতে। মানুষ আশার আলো দেখেছে। দেশের নাগরিক অনেকেরই বিশ্বাস, এক্ষেত্রেও যাবতীয় ধোঁয়াশা কাটিয়ে সত্যকে সামনে আনতে পারে মহামান্য আদালত। এখন দেখার এই তহবিল নিয়ে সর্বোচ্চ আদালত কী পদক্ষেপ করে।
5Months ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

পারিবারিক অশান্তির অবসানে গৃহ সুখ ও শান্তি বাড়বে। প্রেমের ক্ষেত্রে শুভ। কর্মে উন্নতি। উপার্জন বৃদ্ধি।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.২৬ টাকা৮৪.৩৫ টাকা
পাউন্ড১০৬.৪৬ টাকা১০৯.১২ টাকা
ইউরো৮৯.৭৬ টাকা৯২.২০ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা