সম্পাদকীয়

রামধাক্কা

সেই কবে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু বলেছিলেন, ‘তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব’। ভিন্ন প্রেক্ষাপটে হলেও মোদিবাহিনী নিশ্চয়ই সে কথা মনে রেখেছিল। তাই নির্বাচনী বন্ড চালু করার নামে কর্পোরেট দুনিয়ার কাছে বোধহয় তাদের অলিখিত বার্তাটি ছিল, তোমরা আমাদের তহবিল ভরাও, সরকার তোমাদের ‘স্বার্থ’ দেখবে। একেবারে যেন চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত! কিন্তু শেষরক্ষা হল না। পাঁচ বছর আইনি লড়াইয়ের পর সুপ্রিম কোর্ট দ্ব্যর্থহীন ভাষায় নির্বাচনী বন্ড প্রকল্পকে ‘অসাংবিধানিক’ আখ্যা দিয়ে তা বাতিল বলে জানিয়ে দিল। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ এই ঐতিহাসিক রায় দিয়েছে। লোকসভা ভোটের আগে শীর্ষ আদালতের এই রায়ে কার্যত মুখোশ খুলে পড়েছে নরেন্দ্র মোদিদের। কারণ তথ্য বলছে, ২০১৮ সাল থেকে নির্বাচনী বন্ডে গত পাঁচ বছরে যত টাকা জমা পড়েছে, তার সিংহভাগ গিয়েছে বিজেপির তহবিলে। ঠিক যেমনটি চেয়েছিল শাসনগোষ্ঠী। এই বন্ড চালু করার সময় কেন্দ্রীয় সরকারের যুক্তি ছিল, ভোটের সময় রাজনৈতিক দলগুলি বিভিন্ন সংস্থা বা ব্যক্তির থেকে যে অনুদান নেয়, বন্ডের মাধ্যমে তা হলে এই আর্থিক লেনদেনে স্বচ্ছতা থাকবে। নির্বাচনী বন্ডের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শর্ত ছিল, ‘গোপনীয়তা’ বজায় থাকবে। এই নিয়ে একাধিক মামলার শুনানির পর সর্বোচ্চ আদালত বলেছে, নির্বাচনী বন্ড নাগরিকদের তথ্য জানার অধিকার ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে লঙ্ঘন করছে। বিচারপতিরা মন্তব্য করেন, এতে কোনও কিছুর বিনিময়ে কাউকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এই বন্ড চালু করার কারণ হিসেবে নির্বাচনে কালো টাকার ব্যবহার বন্ধের কথা বলা হয়েছিল। আদালত বলেছে, নির্বাচনী বন্ড কালো টাকা আটকানোর একমাত্র উপায় হতে পারে না। এর অনেক বিকল্প আছে। ব্যাঙ্কগুলি঩কে নির্বাচনী বন্ড বিক্রি বন্ধ করতে নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। জাতীয় নির্বাচন কমিশনকে আদালতের নির্দেশ, এ পর্যন্ত যত বিনিময় হয়েছে এই প্রকল্পে তার সব তথ্য কমিশনের ওয়েবসাইটে ১৩ মার্চের মধ্যে প্রকাশ করতে হবে। তার মানে, গোপন কথাটি আর রবে না গোপনে।
নির্বাচনে সরকারি খরচের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলি বিপুল অর্থ ব্যয় করে, যা কারও অজানা নয়। বন্ড চালুর আগে মূলত নগদে পাওয়া অনুদানের উপর নির্ভরশীল ছিল দলগুলি। সন্দেহ নেই, এইসব অনুদানের সিংহভাগই ছিল কালো টাকা। বন্ড চালুর মাধ্যমে ‘সাপও মরবে, লাঠিও ভাঙবে না’-র যে কৌশল নিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার তা পুরোপুরি সফল সন্দেহ নেই। ক্ষমতায় থাকার সুবাদে শাসকদলই যে এই ব্যবস্থা থেকে বেশি ফায়দা তুলতে পারবে, সেই হিসাব ষোলোআনা মিলে গিয়েছে বলা যায়। তথ্য বলছে, ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে জাতীয় দলগুলি মোট ৮৫০ কোটি টাকা অনুদান পেয়েছে। তার মধ্যে শুধু বিজেপির তহবিলেই জমা পড়েছে ৭১৯ কোটি ৮০ লক্ষ টাকা! ২০২১-২২-এর তুলনায় ২০২২‑২৩ অর্থবর্ষে বিজেপি’র অনুদান বেড়েছে ১৭ শতাংশ! আবার ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে জাতীয় দলগুলিকে অনুদান দিয়েছে ১২ হাজার ১৬৭ জন। এর মধ্যে বিজেপি পেয়েছে ৭ হাজার ৯৪৫টি অনুদান। এমন আরও একাধিক তথ্যে উঠে এসেছে বিজেপির নির্বাচনী তহবিলের ফুলেফেঁপে ওঠার কাহিনি। মোদির দলের তহবিলকে এভাবে ভরিয়ে তোলার ‘বিনিময়ে’ কর্পোরেট কিছু সংস্থাকে যে নানা সুবিধা দিয়ে ‘পুষিয়ে’ দেওয়া হয়েছে—সে অভিযোগও আছে। লক্ষণীয় যে, মোদি জমানায় ধনীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যরকম বেড়েছে। অথচ গরিব আরও গরিব হয়েছে। দেশের ১০ শতাংশ ধনীর হাতে চলে গিয়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ সম্পদ।
বন্ড বাতিলের রায়ের প্রথম পর্ব যদি ‘ঐতিহাসিক’ হয় তাহলে বলতেই হয় দ্বিতীয় পর্বে থাকতে চলেছে রহস্য রোমাঞ্চ। এই প্রকল্পের গোপনীয়তার সুযোগ নিয়ে এতদিন কর্পোরেট দুনিয়ার বহু রথী-মহারথী মোদিদের সিন্দুকে যথেষ্ট দান করেছেন। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশমতো ১৩ মার্চের মধ্যে সেই ‘গৌরী সেন’দের নামের তালিকা প্রকাশ্যে আসতে চলেছে। একইভাবে, সেইসব ‘মহার্ঘ’ দাতাদের তুষ্ট রাখতে মোদি সরকার কতটা উপুড়হস্ত হয়েছে, নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন কর্পোরেট সংস্থা কতটা ছড়ি ঘুরিয়েছে—সে সবও সামনে আসার ষোলোআনা সুযোগ থাকছে। হয়তো বা উঠে আসবে মোদি কর্পোরেটের ‘আঁতাত’-এর চাঞ্চল্যকর কাহিনি, যা এতদিন শোনা গিয়েছে বিরোধীদের মুখে। মার্চে এই ‘রহস্য রোমাঞ্চের’ উন্মোচন হলে গেরুয়া শিবিরের মুখে আরও একপ্রস্থ চুনকালি লাগার সম্ভাবনা আছে। তাই সুপ্রিম কোর্টের রায়কে ‘অগ্রাহ্য’ করতে কোনও ‘অর্ডিন্যান্স’ করার সম্ভাবনাও খারিজ করে দেওয়া যাচ্ছে না। তা না করলেও কোনও একটা বিকল্প পথ বার করে শাসক শিবির এই রামধাক্কা সামলানোর চেষ্টা করবে বলে অনেকেই মনে করছেন। ভবিষ্যতে যাই হোক, এই রায় থেকে দেশবাসীর পাওনা হয়তো একটাই, প্রধানমন্ত্রী বা পদ্মশিবিরের ‘প্রকৃত বন্ধু’ কারা, কাদের স্বার্থ রক্ষা করাকেই মোদি সরকার ‘পাখির চোখ’ করেছে—সেইসব সত্য সামনে চলে আসবে। নির্বাচনী অনুদানের স্বচ্ছতা রক্ষা ও গণতন্ত্রের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা ফেরাতে সচেষ্ট হবে এই ঐতিহাসিক রায়।
5Months ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

পারিবারিক অশান্তির অবসানে গৃহ সুখ ও শান্তি বাড়বে। প্রেমের ক্ষেত্রে শুভ। কর্মে উন্নতি। উপার্জন বৃদ্ধি।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.২৬ টাকা৮৪.৩৫ টাকা
পাউন্ড১০৬.৪৬ টাকা১০৯.১২ টাকা
ইউরো৮৯.৭৬ টাকা৯২.২০ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা