সম্পাদকীয়

মণিপুরে যান মোদি

এন বীরেন সিংয়ের সরকার মণিপুরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করতে যে পুরোপুরি ব্যর্থ, ঘুরিয়ে সেটাই মেনে নেওয়া হয় ২৭ সেপ্টেম্বর। আর এটা একযোগে মেনে নিয়েছিল নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহদের কেন্দ্রীয় সরকার এবং বিজেপি পরিচালিত রাজ্য সরকার। ‘ডাবল ইঞ্জিন’-এর তরফে অবশেষে পুরো রাজ্যটিকেই ‘ডিসটার্বড এরিয়া’ (উপদ্রুত এলাকা) ঘোষণাসহ সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হয়। একইসঙ্গে বলবৎ করা হয় বহু বিতর্কিত আর্মড ফোর্সেস স্পেশাল পাওয়ার্স অ্যাক্ট (আফস্পা)। অবশ্য সেই ঘোষণা থেকে বাদ রাখা হয়েছিল রাজধানী ইম্ফল-সমেত নির্দিষ্ট ১৯টি থানা এলাকাকে। কিন্তু পদক্ষেপটির ভিতরে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াবার অভিপ্রায় আদৌ ছিল কি না উঠেছিল সেই প্রশ্ন। মণিপুরবাসীর চোখে, উদ্যোগটি একটি অপদার্থ রাজ্য সরকারকে বাঁচাবার অনৈতিক কৌশলের বেশি মনে হয়নি। বীরেন সিং বিজেপির নেতা এবং তিনি মোদি-শাহের স্নেহধন্য বলেই রাজনৈতিক মহলে পরিচিত। না-হলে দিল্লিওয়ালারা তাঁকে যে কোনওমতেই রেয়াত করতেন না, তা বিজেপির অন্দরমহলও জানে। বীরেনের মাথার উপর মোদি-শাহের হাত না-থাকলে, অন্তত তাঁকে সরিয়ে বিজেপিরই অন্যকোনও নেতাকে কুর্সি এগিয়ে দেওয়া হতো। আর তিনি কোনও বিরোধী রাজনীতির লোক হলে তাঁর সরকারের আয়ু ফুড়ুৎ হতো অনেক আগেই। 
৩ মে থেকে মণিপুর দফায় দফায় জ্বলেছে। দু-চার দিন থমথমে থাকার পর অশান্তি ফের ছড়িয়ে পড়েছিল ২২ সেপ্টেম্বর থেকে। জাতিগত সংঘর্ষ, গোলাগুলি বর্ষণ, নারীধর্ষণ, অপহরণ, লুটপাট প্রভৃতি মানবতা-বিরোধী ঘটনা ওই পাঁচমাসে সেখানে কত যে ঘটে, তার হিসেব রাখা কঠিন ছিল। দেড় শতাধিক নারী-পুরুষের প্রাণ চলে গিয়েছিল ততদিনে। পুড়িয়ে ছাই করে দেওয়া হয়েছিল শ’য়ে শ’য়ে ঘরবাড়ি। হাজার হাজার মানুষ ভিটে, এমনকী গ্রামছাড়া হতেও বাধ্য হন। মেইতেই সম্প‍্রদায়ের মানুষ কুকি অধ্যুষিত এলাকায় প‍্রবেশ করতে পারছিলেন না, উল্টোদিকে কুকিরাও প্রবেশ করতে পারেননি মেইতেই অধ্যুষিত অঞ্চলে। অর্থাৎ একটি ক্ষুদ্র রাজ্য অঘোষিতভাবে দুটি ‘নিষিদ্ধ’ এলাকায় ভাগ হয়ে গিয়েছিল ততদিনে। সবচেয়ে বড় কথা, মন্ত্রীরাও তাঁদের পাড়ার বাইরে পা রাখার সাহস হারিয়ে যেন স্বেচ্ছা বন্দিজীবন কাটাচ্ছিলেন। যথার্থই মন্তব্য উঠে এসেছিল কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গের মুখে, ‘বিউটিফুল’ একটি রাজ্য ‘ব্যাটল ফিল্ড’ হয়ে গিয়েছে! 
কাশ্মীর থেকে মণিপুর—দেশের কিছু অঞ্চল বিচ্ছিন্নতাবাদের সমস্যাকে কেন্দ্র করে যেসব কারণে বারবার বারুদের স্তূপ হয়ে উঠেছে, তার মধ্যে বেকার সমস্যা জিইয়ে রেখে দুরমুশ নীতি গ্রহণকেই রাখতে হবে সবার আগে। এই প্রশ্নে মণিপুর অদূর ভবিষ্যতের জন্য আরও ভয়াবহ কোনও সঙ্কেত রেখে যাচ্ছে কি না, রাজনৈতিক মহল সেই শঙ্কা সেদিনই প্রকাশ করেছিল। এই নির্মম সত্যটি সরকারের মাথাদেরও অজানা নয়। তবু তাৎক্ষণিকভাবে হাততালি কুড়োবার নেশায় সবকিছু ধামাচাপা দেওয়ার নীতিতেই সিলমোহর পড়েছে বারবার। সবাই বোঝাতে চেয়েছেন, একটি গণতান্ত্রিক পরিসরকে কেন্দ্রীয় সরকার এবং সেনা বাহিনীর হাতের পুতুল করে ফেলা কোনও সমাধান হতে পারে না। নতুন করে আফস্পা প্রয়োগের ফল আগামীর জন্য আরও অশুভ ইঙ্গিতবাহী। এতে মেইতেই এবং কুকি সম্প্রদায়ের বিবাদ উল্টে পোক্ত হতে পারে। অবাঞ্ছিত পরিস্থিতির পিছনে যেসব নেতার ব্যর্থতা ও অন্ধ অহমিকা দায়ী ক্ষমতার আসন থেকে তাঁদের পত্রপাঠ বিদায় দেওয়া জরুরি। এই প্রসঙ্গে সর্বাগ্রে রয়েছে বীরেন সিংয়ের নাম। সরকার বদলের পাশাপাশি বিরোধী দল এবং নাগরিক সমাজের মতামত নেওয়া প্রয়োজন। রাজনীতি করার সময় বয়ে যাচ্ছে না, যাবতীয় গেরুয়া মতলববাজি আপাতত মুলতুবি থাক। কিন্তু ‘মুমকিন মাস্টার’ সেসব পাত্তাই দেননি। ২৯ নভেম্বর ঢাকঢোল পিটিয়ে একটি ‘শান্তিচুক্তি’ সম্পাদিত হয়। ত্রিপাক্ষিক চুক্তির মধ্যমণি হল মণিপুর উপত্যকার সবচেয়ে পুরনো সশস্ত্র গোষ্ঠী ইউনাইটেড ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট (ইউএনএলএফ)। অন্য দুটি পক্ষে আছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এবং রাজ্য সরকার। চুক্তি করেই উদ্বাহু দিল্লিওয়ালারা দাবি করতে থাকেন, বিজেপি সরকারই পারে হিংসার অবসান ঘটাতে। কিন্তু তৃপ্তির হাসি এক সপ্তাহও দীর্ঘস্থায়ী হল না! সোমবারই ঘটে গেল এক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। মায়ানমার সীমান্ত লাগোয়া টেংনৌপাল জেলার লেইথু গ্রামের এই মর্মান্তিক ঘটনায় ঝরে গিয়েছে ১৩টি তাজা প্রাণ। ফের অগ্নিগর্ভ মণিপুর। পাঁচ রাজ্যের ভোটে ‘বিপুল সাফল্য’ দিয়ে এই কলঙ্ক ঢাকা সম্ভব নয়। নরেন্দ্র মোদি যথার্থ ‘নায়ক’ হয়ে থাকলে এবার অন্তত মণিপুরে যান। দেশেরই একটি প্রান্তের অসংখ্য মানুষ কেন এবং কতটা কষ্টে আছেন, জানার চেষ্টা করুন। তাঁদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরাবার জন্য আন্তরিক হোন। দেশের অভিভাবকের মানবিক মুখটা একবার দেখতে চায় মণিপুর।
7Months ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

পারিবারিক অশান্তির অবসানে গৃহ সুখ ও শান্তি বাড়বে। প্রেমের ক্ষেত্রে শুভ। কর্মে উন্নতি। উপার্জন বৃদ্ধি।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.২৬ টাকা৮৪.৩৫ টাকা
পাউন্ড১০৬.৪৬ টাকা১০৯.১২ টাকা
ইউরো৮৯.৭৬ টাকা৯২.২০ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা