সম্পাদকীয়

চ্যালেঞ্জের মুখে নয়া বিশল্যকরণী
 

ভয়ঙ্কর কিছু ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে মানুষ, এমনকী পশুপাখিও গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে। এমন রোগ সংক্রমণ অনেক ক্ষেত্রে তাদের মৃত্যুরও কারণ হয়। এইসব সমস্যা সাফল্যের সঙ্গে মোকাবিলায় চিকিৎসকদের প্রধান সহায়ক হয়েছে যে ওষুধ, তার নাম নিঃসন্দেহে অ্যান্টিবায়োটিকস। কোনও অ্যান্টিবায়োটিক ভাইরাল ইনফেকশনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে না। তবে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের বিরুদ্ধে কাজ করে বস্তুত ম্যাজিকের মতোই—হয় লক্ষ্যবস্তুকে (ব্যাকটেরিয়া) মেরে ফেলে অথবা তার বৃদ্ধির শক্তি কমিয়ে কিংবা বন্ধ করে দেয়। বিশ্বজুড়ে মানুষ এখন অনেক বেশি বছর বাঁচছে। ১৯০০ সালে সদ্যোজাত শিশুদের গড় আয়ু ছিল ৩২ বছর। ২০২১ সালে সংখ্যাটি ৭১ অতিক্রম করেছে। অর্থাৎ ১৯০০ সাল পরবর্তী বছরগুলিতে বিশ্বজুড়ে মানুষের বাঁচার আশা ২২২ শতাংশ বেড়ে গিয়েছে। চমকপ্রদ উন্নতি ঘটেছে শিশুমৃত্যু হ্রাসের ক্ষেত্রে। এর জন্য শিক্ষার প্রসার, জীবনধারণের মানের উন্নয়ন এবং জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতির ভূমিকা অবশ্যই বিরাট। পাশাপাশি বিশেষ কৃতিত্ব দিতে হবে চিকিৎসা বিজ্ঞানের আশ্চর্য কিছু আবিষ্কারকে। সবার উপরে রয়েছে আলেকজান্দার ফ্লেমিংয়ের অ্যান্টিবায়োটিক। 
ফ্লেমিং, বিশ্ববাসীর হাতে এই ‘নয়া বিশল্যকরণী’ তুলে দেন ১৯২৮ সালে। সেই হিসেবে অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কারের শতবর্ষের বাকি এখনও চারবছর। তার অনেক আগেই এই মহৌষধকে চরম চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে জীবাণুবাহিনী। দীর্ঘদিন যাবৎ অত্যন্ত কার্যকরী হিসেবে ব্যবহৃত একাধিক অ্যান্টিবায়োটিক ইদানীং রীতিমতো ‘ফেল’ করছে—রোগ নিরাময়ে তারা আর কোনও কেরামতি দেখাতে পারছে না। মানব সভ্যতার সামনে এই বিপদ যে একদিন আসবে, তা অনেক আগেই আন্দাজ করেন অ্যান্টিবায়োটিকের আবিষ্কর্তা। আবিষ্কারের ১৭ বছর বাদে, ১৯৫৪ সালে নোবেল ভাষণে ফ্লেমিং হুঁশিয়ার করেছিলেন, ‘একটা সময় আসবে যখন খোলা বাজারেও পেনিসিলিন মিলবে। আর সেসব কিনে অজ্ঞের মতোই ব্যবহার করবে কিছু মানুষ। তার ফলে ব্যাকটেরিয়া রেজিস্ট্যান্ট এবং অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠবে।’ দিকপাল বিজ্ঞানীর আট দশক আগের সেই ভবিষ্যদ্বাণী ফলে গিয়েছে অক্ষরে অক্ষরে! স্বভাবতই চতুর লড়াকু অধিক শক্তিসঞ্চয়কারী ব্যাকটেরিয়াই ডাক্তারকুলের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। এই উদ্বেগজনক পরিস্থিতির জন্য অভিযোগের তর্জনী উঠেছে দুই তরফের দিকেই। একদল রোগী ডোজ না-জেনে কিংবা জেনেও নিজেদের ইচ্ছেমতো অ্যান্টিবায়োটিক খেয়ে চলেছেন। অন্যদিকে, কিছু ডাক্তার অ্যান্টিবায়োটিক প্রেসক্রাইব করছেন অপ্রয়োজনে। অভিযোগ, ওই ডাক্তারদের উপরে রয়েছে ফার্মা লবির অন্যায় চাপ। সব মিলিয়ে যে ভয়াবহ পরিস্থিতি উপস্থিত হয়েছে সে এক অন্যরকম মহামারী! আজকের চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের কাছে, নতুন ওষুধ আবিষ্কারের চেয়ে অনেক বড় চ্যালেঞ্জ হল অ্যান্টিবায়োটি রেজিস্ট্যান্স পরিস্থিতি অতিক্রম করা। ২৪টি মেডিক্যাল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি ল্যাবে ৩২ হাজারের বেশি রোগীর নমুনা পরীক্ষা করা হয় একবছর ধরে। তাতে ধরা পড়েছে যে, রাজ্যে বহুল ব্যবহৃত ৪৮টি অ্যান্টিবায়োটিকের মধ্যে ৩৫টিই ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট হয়ে গিয়েছে! সাম্প্রতিক দশকগুলিতে আবিষ্কৃত অ্যান্টিবায়োটিকের নতুন নতুন শ্রেণির কার্যকারিতাও বস্তুত নস্যাৎ করে ছেড়েছে একাধিক প্রাণঘাতী ব্যাকটেরিয়া।
চিকিৎসাবিজ্ঞান মনে করে—এখনও সময় আছে, মানুষকে এখনই যথেষ্ট সংযত হতে হবে। একদিকে, মানুষের চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার হতে হবে পরিমিত এবং বিজ্ঞানসম্মত, অন্যদিকে পশু ও মৎস্য পালন এবং কৃষিকাজেও অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার দূর করা জরুরি। মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ যত্রতত্র ফেলে দেওয়ার বদঅভ্যাসও বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। কারণ সেসব সরাসরি অথবা নর্দমার জলের মাধ্যমে মাটিতেই মিশে যাচ্ছে। তাই পশ্চিমবঙ্গের মতো প্রতিটি রাজ্যে, সারা দেশে এবং বিশ্বজুড়েই সময়োচিত স্বাস্থ্যনীতি গ্রহণ ও তার সফল রূপায়ণ দরকার। এই কাজ কোনও একটি স্বাস্থ্যদপ্তরের একার নয়—সঙ্গে কৃষি, হর্টিকালচার, পশু ও মৎস্য পালন প্রভৃতি দপ্তরের সক্রিয় ভূমিকাও কাম্য। সবচেয়ে বেশি জরুরি জনসচেতনতা বৃদ্ধি।
7Months ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

পারিবারিক অশান্তির অবসানে গৃহ সুখ ও শান্তি বাড়বে। প্রেমের ক্ষেত্রে শুভ। কর্মে উন্নতি। উপার্জন বৃদ্ধি।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.২৬ টাকা৮৪.৩৫ টাকা
পাউন্ড১০৬.৪৬ টাকা১০৯.১২ টাকা
ইউরো৮৯.৭৬ টাকা৯২.২০ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা