সম্পাদকীয়

কুনাট্যের রকমফের

ন্যায্যপাওনার ক্ষেত্রে দেওয়ালের রং কখনও বাধা হতে পারে কি? সুস্থ মস্তিষ্কে এর উত্তর অবশ্যই ‘না’ হওয়া উচিত। কিন্তু দাতা যদি হয় নরেন্দ্র মোদির সরকার এবং রাজ্যে যদি কোনও বিরোধী সরকার থাকে, তাহলে সবই সম্ভব হতে পারে। সব রাজ্যেই জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের অধীনে সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র বা হেলথ অ্যান্ড ওয়েলনেস সেন্টার রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে এই ধরনের কেন্দ্রের সংখ্যা প্রায় ১১ হাজার। প্রকল্পটি কেন্দ্রের হলেও এর আর্থিক দায়িত্বের কিছুটা রাজ্যগুলিকেও বহন করতে হয়। গোল বেধেছে এই সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলির দেওয়ালের রং নিয়ে। রাজ্যে ২০১১ সালে পালাবদলের পর মমতার সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এই কেন্দ্রগুলিও নীল-সাদা রঙে সেজে উঠেছে। কেন্দ্রের স্বাস্থ্যমন্ত্রক রাজ্যকে চিঠি দিয়ে বলে, সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রের দেওয়ালের রং ইয়েলো মেটাল করতে হবে। না-হলে প্রকল্পের টাকা বন্ধ করে দেওয়া হবে। শুধু মুখের কথা নয়, জুলাই থেকে প্রকল্পে ‘রাজ্যের প্রাপ্য’ পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছে কেন্দ্র। অথচ ২০১১ সাল থেকে এই ধরনের স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মাধ্যমে প্রতিদিন ৩ লক্ষ মানুষ পরিষেবা পান। সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রে কর্মরত প্রায় ৪০ হাজার আশাকর্মী ৭-৮ হাজার টাকা হারে মাসিক ভাতা পান। গত জুলাই থেকে কেন্দ্র টাকা পাঠানো বন্ধ করে দেওয়ায় এই কেন্দ্রগুলিতে স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদান ও আশাকর্মীদের ভাতা বন্ধ হওয়ার মুখে এসে দাঁড়িয়েছে। কেন্দ্রের কাছে এই বাবদ বাংলার প্রাপ্য অর্থের পরিমাণ প্রায় ৮০০ কোটি টাকা। প্রত্যাশিতভাবেই, প্রাপ্য টাকা দেওয়ার আর্জি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী যথার্থই বলেছেন, এতগুলি স্বাস্থ্য কেন্দ্র রং করাতে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। তাই কেন্দ্রের ওই শর্তটাই তুলে নেওয়া হোক। যদিও মুখ্যমন্ত্রীর এই যুক্তিসঙ্গত আবেদন প্রধানমন্ত্রী শুনবেন, এমন আশা কমই। সুতরাং ধরেই নেওয়া যায়, রাজ্যকে ভাতে মারার যে কুনাট্য গত প্রায় দু’বছর ধরে চলেছে, সেই তালিকায় এই ন্যায্য পাওনার বিষয়টাও ঢুকে পড়ল। কোনও সরকার প্রাপ্য মেটানোর শর্ত হিসেবে দেওয়াল রঙের কথা বলতে পারে, মোদিবাহিনী সরকারে না-থাকলে এই অভিজ্ঞতা থেকে নিশ্চিতভাবেই বঞ্চিত থাকত দেশবাসী। আর কত নিত্যনতুন ফরমান কেন্দ্র আনতে পারে, তা ক্রমশ গবেষণার বিষয় হয়ে উঠছে।
আসলে মোদির রাজত্বের দ্বিতীয় ইনিংসের শুরু থেকেই সরকারের রথের চাকা মাটিতে বসে যেতে শুরু করেছে। যত দিন যাচ্ছে মোদি সরকারের প্রতি মোহভঙ্গ হচ্ছে মানুষের। এর পুরো ফায়দা তুলতে জোট বেঁধেছে বিরোধীরা। তাই তৃতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় ফিরতে দাঁত-নখ বের করেছে ‘পদ্মশিবির’। আর শুধু কেন্দ্রীয় এজেন্সি দিয়ে বিরোধীদের চমকানো নয়, মোদি সরকারের রোষের বলি হচ্ছে বিরোধী-শাসিত রাজ্যের অর্থনীতিও। নানা অছিলায় বিরোধী-শাসিত রাজ্যে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি আক্রমণ শানানো হয়েছে মমতার সরকারের বিরুদ্ধে। গত প্রায় দু’বছর ধরে ১০০ দিনের কাজ, গ্রামের গরিব মানুষের আবাস যোজনা-সহ মোট ১০৬টি প্রকল্পের টাকা আটকে রেখেছে কেন্দ্র। টাকার অঙ্কে সেটা ১ লক্ষ ১৫ হাজার কোটি। এর মধ্যে ১০০ দিনের কাজে ৭ হাজার কোটি টাকা ও আবাস যোজনায় ২,৮০০ কোটি টাকা কেন্দ্রের কাছে পাওনা হয়েছে বলে রাজ্যের দাবি। টাকা চেয়ে দিল্লিতে ধর্নায় বসেছে রাজ্যের শাসক দল। কিন্তু কাকস্য পরিবেদনা! সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে রাজ্যের প্রাপ্য টাকা বন্ধের কারণ জানতে চেয়ে চিঠি দিয়েছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। মোদি সরকারের বিরুদ্ধে অনৈতিক আর্থিক অবরোধের অভিযোগ তুলে বিরোধী জোট শরিকরা ক্রমশ সরব হচ্ছে।
অবশ্য টাকা বন্ধ করার সাফাই হিসেবে বিজেপির শীর্ষমহল বলছে, মমতার সরকার নাকি কেন্দ্রের টাকার হিসেব দিচ্ছে না। তাদের অভিযোগ, এজন্য মোদি সরকারের টাকা নয়ছয় হচ্ছে। এই বিতর্কে না-ঢুকেও যে সত্যিটা সামনে আসছে তা হল, যেসব শ্রমিক সত্যিকারের ১০০ দিনের প্রকল্পে কাজ করেছেন, যে গরিব পরিবার আবাস যোজনা প্রকল্পে পাকা বাড়ি পাওয়ার যোগ্য, তাঁদের কোন যুক্তিতে বঞ্চিত করে রেখেছে মোদি সরকার? বস্তুত শুধু বিরোধীরা নয়, এই প্রশ্ন এখন তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে বঙ্গ বিজেপির অন্দরেও। তৃণমূলকে জনসমক্ষে দায়ী করার চেষ্টা করলেও কেন গরিব মানুষের টাকা দেওয়া হচ্ছে না, সেই প্রশ্ন তুলছেন বিজেপির বঙ্গ নেতাদের একাংশ। কারণ বিষয়টি নিয়ে মানুষের তোলা প্রশ্নের সদুত্তর তাঁরা দিতে পারছেন না। শুধু তাই নয়, বাংলাকে বঞ্চনার প্রসঙ্গে ধর্মতলার সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কিছু না-বলায় রীতিমতো বিভ্রান্ত বিজেপির ওই নেতারা। লোকসভা ভোটের আগে তৃণমূলের বিরুদ্ধে তোলা ‘বেনিয়মের’ অভিযোগ ব্যুমেরাং হয়ে তা কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগে পর্যবসিত হতে পারে বলে তাঁদের অনেকেই মনে করছেন। যাই হোক, রাজ্যের ন্যায্য প্রাপ্য বন্ধ করতে আরও কোনও বেড়াল ঝোলা থেকে বেরবে কি না, সেটাই এখন দেখার।
7Months ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

পারিবারিক অশান্তির অবসানে গৃহ সুখ ও শান্তি বাড়বে। প্রেমের ক্ষেত্রে শুভ। কর্মে উন্নতি। উপার্জন বৃদ্ধি।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.২৬ টাকা৮৪.৩৫ টাকা
পাউন্ড১০৬.৪৬ টাকা১০৯.১২ টাকা
ইউরো৮৯.৭৬ টাকা৯২.২০ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা