সম্পাদকীয়

গেরুয়া ভাঁওতার নয়া দফা

‘ভোট’-এর সঙ্গে লাগসই সেরা শব্দটি হল ‘ভাওঁতা’। বাংলার মাটিতে সবচেয়ে বেশি ভাওঁতা দেওয়া যায় ‘উদ্বাস্তু’ শ্রেণিকে। ভারতের স্বাধীনতা, থুড়ি দেশভাগের সঙ্গেই ওতপ্রোত হয়ে রয়েছে শব্দটি। স্বাধীনতা আন্দোলনে যে বাংলার অবদান অপরিমেয়, দেশভাগের মূল্য সেই প্রদেশকেই চোকাতে হয়েছে সবচেয়ে বেশি। স্বাধীনতা এসেছে বাংলা আর পাঞ্জাব প্রদেশ দুই টুকরো করার বিনিময়ে। তার ফলে পূর্ববঙ্গ এবং পশ্চিম পাঞ্জাবের লক্ষ লক্ষ পরিবার নতুন আশ্রয়ের খোঁজে ভারত ভূখণ্ডে চলে আসতে বাধ্য হয়। এদেশ থেকেও কিছু মানুষ চলে যান দুই প্রান্তের পাকিস্তানে। এখানে উদ্বাস্তুদের তিনটি শ্রেণি স্পষ্ট—(এক) পূর্ববঙ্গ থেকে ভারতে উঠে এসেছেন একদল মানুষ। (দুই) আর একদল মানুষ ভারতে এসেছেন পশ্চিম পাঞ্জাব থেকে। (তিন) ভারত থেকে কিছু মানুষ চলে গিয়েছেন পাকিস্তানে। ভারতভাগের কারণে শেষোক্ত দুই শ্রেণির মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন একবারই। শুধু পূর্ববঙ্গের মানুষের দুর্ভাগ্যই হয়েছে প্রলম্বিত। পূর্ববঙ্গ একবার ‘পূর্ব পাকিস্তান’ নাম নিয়েছিল। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানের অমানুষ শাসকের অত্যাচার দুর্বিষহ করে তোলে পূর্ব পাকিস্তানের জনজীবনকে। স্বভাবতই পূর্ব পাকিস্তানের আপামর মানুষ নামল স্বাধীনতার যুদ্ধে। একাত্তরের যুদ্ধ-পর্বে আরও কয়েক লক্ষ মানুষ উঠে এলেন ভারতে। এবারের সংখ্যাটি সাতচল্লিশের চেয়ে বেশিই। ‘স্বাধীন বাংলাদেশ’ তৈরির পর বহু মানুষ নিজ নিজ ভিটেয় ফিরেও গিয়েছিলেন। তাঁরা ভেবেছিলেন, গণতন্ত্রপ্রিয় সমস্ত বাঙালি এবার তাঁদের গর্বের আত্মপরিচয় ফিরে পাবেন। কিন্তু সংখ্যালঘুদের একটি বড় অংশ নতুন দেশটিকেও আর নিরাপদ ভাবতে পারলেন না। কারণ, পাকিস্তান দুই টুকরো হওয়ার দায় ‘হিন্দু ভারত’-এর উপর চাপিয়ে দিয়ে রাজাকার বাহিনী পূর্ববঙ্গের হিন্দুদের উপর শুরু করল নতুন অত্যাচার। মুজিব-হত্যার পর সেই নির্যাতন নিল বেপরোয়া চেহারা। বাংলাদেশ ছাড়া হল আরও কয়েক লক্ষ পরিবার। তারা আশ্রয় নিল ভারতেরই নানা স্থানে। 
সব মিলিয়ে ফলে ব্রিটিশ ভারতের সবচেয়ে সমৃদ্ধ প্রদেশ দুটির ভূগোলের সঙ্গে তাদের আর্থ-সামাজিক কাঠামোও ধাক্কা খেল বিরাট। আর এখানেই ফুটে উঠেছে তীব্র বৈষম্যের স্পষ্ট রেখা। পাঞ্জাবি উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণে দিল্লি কোনও কার্পণ্য করেনি। আর ভারতভাগের পরিণামে বারবার এবং সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া সত্ত্বেও, বাঙালি উদ্বাস্তুদের কপালে জোটেনি তার কানাকড়িও। পূর্ববঙ্গের উদ্বাস্তুদের সকলের জায়গা হয়নি পশ্চিমবঙ্গে। হাজার হাজার পরিবার বাধ্য হয়েছিল অসম, ত্রিপুরা-সহ পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিতে, এমনকী দণ্ডকারণ্য ও আন্দামানেও পাড়ি জমাতে। দিল্লি, মুম্বই, পুনা, বিলাসপুর প্রভৃতি স্থানেও ভাগ্যান্বেষণে গিয়েছেন কিছু মানুষ। অন্নসংস্থানের অনিশ্চয়তা ঘোচেনি সাতাত্তর বছরেও, ওইসঙ্গে প্রতিনিয়ত তাড়া করে ফেরে ‘নাগরিক’ পরিচয়ের ধন্দ। এই বঙ্গসন্তানরা সবচেয়ে বেশি নিপীড়নের শিকার অসমে। দিল্লি, মুম্বই প্রভৃতি স্থানে রুটিরুজির খোঁজে যাওয়া মানুষগুলিকে ‘বিদেশি’ দেগে দিয়ে হেনস্তা করা হয় অহরহ। রাজনীতিতে মানুষের অসহায়তার চেয়ে বড় ‘পণ্য’ কিছু নেই। নেহরু, ইন্দিরার সরকারকে বিঁধে ‘উদ্বাস্তু কল্যাণের’ আগুনে-রাজনীতি করেছিল সিপিএম-সহ বাম দলগুলি। সাতাত্তরে জ্যোতি বসুর রাইটার্স দখলের পিছনে এই রাজনীতির ভূমিকা ছিল বিরাট। 
বামেদের বিদায়ের পর সেই রাজনীতিতে থাবা বসাতে মরিয়া মোদি-শাহের পার্টি বিজেপি। বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান প্রভৃতি দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘু (পড়ুন, বাংলাদেশের হিন্দু) উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব দিতে ২০১৯-এ নতুন আইনও (সিএএ) তৈরি করেছে মোদি সরকার। এর আগাম প্রচারের নিশ্চিত ফায়দা তুলেছিল গেরুয়া শিবির গত লোকসভা নির্বাচনে। অন্যদিকে, তৈরি আইন কার্যকর না-করার মাশুল তারা দিয়েছে বাংলাতেই, পরবর্তী বিধানসভার ভোটে। স্বভাবতই উদ্বিগ্ন বিজেপি ফের চাগিয়ে তুলেছে সিএএ ইস্যু। চারদিন আগে মতুয়াগড় ঠাকুরনগরে গিয়ে আজব কথা বলে যুগপৎ উদ্বাস্তু শ্রেণির বিরাগভাজন এবং হাসির খোরাক হয়েছেন স্বরাষ্ট্র দপ্তরের রাষ্ট্রমন্ত্রী অজয় মিশ্র। এবার বোধহয় সেটাই মেরামত করলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী স্বয়ং। প্রতিশ্রতি দিতে তিনি সোজা ছুটে এলেন কলকাতায়। বুধবার ধর্মতলার মঞ্চ থেকে অমিত শাহ দাবি করলেন, ‘নাগরিকত্ব আইন চালু করবই!’ আইনটি এতদিনেও কার্যকর না-হওয়ার দায় তিনি বিরোধীদের ঘাড়েই চাপালেন। কিন্তু বিধি তৈরি হল না কেন চারবছরেও? এর জন্য এক ও একমাত্র দায়ী মোদি সরকার। আসলে বাধা বিরোধীরা না যত, তার চেয়ে তো ঘরেই! অসম-সহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলি যে সিএএ-র বিরুদ্ধে ভয়ানক খড়্গহস্ত। সিএএ কার্যকর হলে অসমের ডাবল ইঞ্জিন সরকার দেহ রাখবে না তো? এই চিন্তাই পেড়ে ফেলছে নেতৃত্বকে। অতএব, উদ্বাস্তু বাঙালির প্রাপ্তি আর একদফা গেরুয়া ভাঁওতাই। আইনটি তৈরির যৌক্তিকতা, প্রাসঙ্গিকতার প্রশ্নটিও গুরুত্বপূর্ণ এবং অমীমাংসিত।              
7Months ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

পারিবারিক অশান্তির অবসানে গৃহ সুখ ও শান্তি বাড়বে। প্রেমের ক্ষেত্রে শুভ। কর্মে উন্নতি। উপার্জন বৃদ্ধি।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.২৬ টাকা৮৪.৩৫ টাকা
পাউন্ড১০৬.৪৬ টাকা১০৯.১২ টাকা
ইউরো৮৯.৭৬ টাকা৯২.২০ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা