সম্পাদকীয়

কুমির ছানার গল্প

কুমির ছানা দেখানোর গল্প শোনেননি বা পড়েননি, এমন বাঙালি খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। এক কুমিরের ছিল সাতটি ছানা। এক দুষ্টু শেয়াল কীভাবে ওই কুমিরকে দিনের পর দিন ঠকিয়ে বুদ্ধু বানাত তা নিয়েই গল্প এগিয়েছে। ইদানীং ভোট এলেই ছোটবেলায় পড়া সেই গল্পের কথা মনে করিয়ে দেন বিজেপির কুশীলবরা। বাংলায় মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষকে ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০১৯ সালে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) তৈরি করে বিজেপি সরকার। তখন নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহের বক্তব্য ছিল, করোনা মিটলেই মতুয়াদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। কিন্তু তারপরেও কয়েকবছর অতিক্রান্ত। সিএএ নিয়ে কার্যত টুঁ শব্দ করছে না কেন্দ্রীয় সরকার। যদিও সরকারের সাফাই, সিএএ তৈরি হলেও বিধি তৈরি হয়নি এখনও, তাই আইন কার্যকর করতে দেরি হচ্ছে। কেন্দ্র এমন সাফাই দিলেও আসল কারণ হচ্ছে, সিএএ-এনআরসি নিয়ে গোটা দেশে প্রতিবাদের ঝড় ওঠায় কার্যত ভয়ে গুটিয়ে গিয়েছে মোদি সরকার। সিএএ-ও আপাতত ঠান্ডাঘরে পড়ে রয়েছে। কিন্তু মতুয়া ভোট পেতে সেই নাগরিকত্ব আইনকেই ফের কুমির ছানার মতো হাজির করেছে বিজেপি। তবে এবার একটু অন্য কায়দায়। রবিবার মতুয়াদের গড় গাইঘাটায় ঠাকুরনগরে গিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র দপ্তরের রাষ্ট্রমন্ত্রী অজয়কুমার মিশ্র, ওরফে টেনি। সিএএ কার্যকর করার কথা তাঁর মন্ত্রকের। মন্ত্রী জানান, সিএএ তৈরি হয়ে গেলেও এই আইন নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা চলছে। তাই আইন কার্যকর করতে দেরি হচ্ছে। কিন্তু নাগরিকত্ব না-পাওয়া পর্যন্ত মতুয়া মহাসঙ্ঘের দেওয়া পরিচয়পত্র দেখিয়ে মতুয়ারা সারা দেশে ঘুরে বেড়াতে পারবেন। ওই কার্ডে মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরের সই থাকতে হবে। সঙ্গে এই কার্ড থাকলে মতুয়াদের কোনও ভয় নেই। 
সাধারণভাবে ওপার বাংলা থেকে আগত হিন্দুদের একটা বড় অংশই এরাজ্যে মতুয়া বলে পরিচিত। সংখ্যায় তাঁরা আড়াই থেকে তিন কোটি বলে দাবি করা হয়। উত্তর ২৪ পরগনা, নদীয়াসহ কয়েকটি জেলার একাধিক বিধানসভা কেন্দ্রে নির্বাচনে জয়-পরাজয়ের নির্ণায়ক শক্তি মতুয়ারা। বিজেপির দাবি, উদ্বাস্তু এই মানুষগুলি ভারতের নাগরিকত্ব পাননি। তাই সিএএ-র মাধ্যমে তাঁদের ভারতীয় নাগরিকত্বের স্বীকৃতি দিতে হবে। ঘটনা হল, ২০১৪ সালে মোদি প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সময় থেকেই মতুয়াদের নাগরিকত্বের ইস্যুতে তিনি ধুয়ো দিয়ে চলেছেন। ২০১৯-এর লোকসভা এবং ২০২১-এর বিধানসভা ভোটে শিয়ালের কুমির ছানা দেখানোর মতোই তাঁদের নাগরিকত্বের ইস্যুকে সামনে এনে ফায়দা তোলার চেষ্টা করা হয়েছে। চব্বিশের ভোট আসতেই ফের মতুয়াগড়ে সেই চেনা সুর শোনা গেল এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর গলায়। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, মতুয়া মহাসঙ্ঘের পরিচয়পত্র কি কেন্দ্রীয় সরকারের ‘রবার স্ট্যাম্প’ যে তা দেখিয়ে দেশের সর্বত্র ঘুরে বেড়ানো যাবে? তাছাড়া শান্তনু ঠাকুর এখন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। কাউকে সরকারিভাবে পরিচয় দেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর সইকে যে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, তার দায়দায়িত্ব তিনি সম্পূর্ণভাবে বহন করবেন তো? এর জেরে যদি কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে তার দায়িত্ব নেবেন তো তিনি? 
এর চেয়েও বড় প্রশ্ন হল, মতুয়ারা কি নাগরিক নন? ইতিহাস বলছে, দেশভাগের সময় মতুয়াদের বড় অংশই ভারতে চলে এসেছেন। অনেকে আবার এসেছেন একাত্তরে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর। এর অর্থ, দীর্ঘ কয়েক দশক মতুয়ারা এই রাজ্যে, এই দেশেই বসবাস করছেন। তাঁদের বেশিরভাগেরই ভোটার কার্ড রয়েছে, রয়েছে প্যান কার্ড, আধার কার্ডও আছে অনেকের। যাঁরা ভোট দেন তাঁরা কি ভারতীয় নাগরিক নন? তাহলে তাঁদের ক্ষেত্রে নতুন করে নাগরিকত্বের প্রশ্ন উঠছে কেন? সর্বোপরি মতুয়ারা ভোটে দাঁড়াতে পারেন। ভোটে দাঁড়ানোর জন্য শান্তনু ঠাকুরের কি কোনও কার্ডের প্রয়োজন পড়েছিল? তাই অনেকেই মনে করছেন, লোকসভা ভোটের আগে ফের মতুয়াদের ভাঁওতা দিতে বিজেপি নতুন কার্ডের তত্ত্ব আনছে। মতুয়ারা কোন হিসেবে ভারতীয় নাগরিক নন, তা আগে স্পষ্ট করুক বিজেপি। কারণ ভারতীয় নাগরিকদের অধিকার ভোটাধিকার তাঁদের আছে। সরকারি চাকরি ও শিক্ষায় যে সংরক্ষণ চালু রয়েছে সেখানেও মতুয়া পরিচয়ে তাঁরা ‘কোটা’র সুবিধা পান। বড় কথা হল, যে বিজেপি নাগরিকত্বের কথা বলছে, তাদের রাষ্ট্রমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর নিজেই একজন মতুয়া। তিনি ভারতীয় নাগরিক হিসেবেই ভোটে দাঁড়িয়েছেন, মতুয়াসহ অনেকের ভোটে জিতেছেন এবং মন্ত্রীও হয়েছেন। এসবই বুঝিয়ে দেয়, মতুয়ারাও এ-দেশের নাগরিক। অন্যদের মতো তাঁদেরও সব কিছুতে সমান অধিকার আছে। তবু মতুয়া ভোটে ভাগ বসাতে অসত্য রাজনীতি হচ্ছে। উস্কে দেওয়া হচ্ছে নাগরিকত্বের প্রতিশ্রুতি! কিন্তু গত চারবছরে মোদি-শাহরা যা পারেননি, আগামী দিনেও তা পারবে কি গেরুয়া বাহিনী?
8Months ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

পারিবারিক অশান্তির অবসানে গৃহ সুখ ও শান্তি বাড়বে। প্রেমের ক্ষেত্রে শুভ। কর্মে উন্নতি। উপার্জন বৃদ্ধি।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.২৬ টাকা৮৪.৩৫ টাকা
পাউন্ড১০৬.৪৬ টাকা১০৯.১২ টাকা
ইউরো৮৯.৭৬ টাকা৯২.২০ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা