সম্পাদকীয়

প্রভুভক্তি নাকি চাটুকারিতা?

মাত্র মাস দু’য়েক আগের কথা। একশো দিনের কাজ, আবাস যোজনার মতো বিভিন্ন প্রকল্পে রাজ্যকে বঞ্চনার প্রতিবাদে অক্টোবরের গোড়াতে রাজধানী দিল্লিতে প্রতিবাদ কর্মসূচির ডাক দিয়েছিল তৃণমূল। সেই কর্মসূচিতে অংশ নিতে দলীয় নেতা-কর্মীরা দিল্লি যাবেন বলে একটা আস্ত ট্রেন ভাড়া চেয়ে চিঠি দিয়েছিল রাজ্যের শাসক দল। নিয়ম মেনে যাত্রা শুরুর সাতদিন আগে ২২ বগির ট্রেনের ভাড়া ও সিকিউরিটি ডিপোজিট বাবদ ৬১ লক্ষ টাকা জমাও করা হয়। কিন্তু তারপরেও সবাইকে অবাক করে দিয়ে ৩০ সেপ্টেম্বর সকালে যাত্রা শুরুর মাত্র ১৪ ঘণ্টা আগে, ওই বিশেষ ট্রেন দেওয়া যাবে না বলে রেলের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়। এজন্য একটা যুক্তিও খাড়া করা হয়েছিল। রেলের ওই সিদ্ধান্ত জানার পর প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে প্রায় যুদ্ধকালীন তৎপরতায় দূরপাল্লার বাসের ব্যবস্থা করে দিল্লির কর্মসূচি সফল করেছিল তৃণমূল। সন্দেহ নেই, কেন্দ্রীয় শাসক গোষ্ঠীর প্রতিশোধস্পৃহার চরমতম উদাহরণ হতে পারে এই ঘটনা। হয়তো উদ্দেশ্য ছিল কর্মসূচিটি যাতে ফ্লপ হয় তার ব্যবস্থা করা। অথচ অতি স্বাভাবিক ঘটনা হল, রাজনৈতিক দল বা যেকোনও সংগঠন তাদের কর্মসূচিতে লোক আনার জন্য ট্রেন, বাস ভাড়া করে। এজন্য কেন্দ্র ও সংশ্লিষ্ট রাজ্যের সরকারের কাছে মুখাপেক্ষী হতে হয় তাদের। রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে যতই মতবিরোধ থাকুক, এসব ক্ষেত্রে সৌজন্য বজায় রেখে ভাড়ার ব্যবস্থা করে দেয় সরকার। কেন্দ্রে বিজেপি যখন বিরোধী ছিল বা এখনও যেসব রাজ্যে গেরুয়াবাহিনী বিরোধী আসনে রয়েছে, সেক্ষেত্রেও এই ব্যবস্থাই চলছে। সাধারণভাবে রাজনৈতিক বিরোধ ট্রেন বা বাস ভাড়া পাওয়ার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায় না। যেমন ২০১৫ সালে সিপিএমের ব্রিগেড সমাবেশে বিশেষ লোকাল ট্রেনের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন তৎকালীন রেলমন্ত্রী। কিন্তু সেই সৌজন্য তৃণমূলের ক্ষেত্রে দেখায়নি মোদি সরকার। শুধু তাই নয়, হয়তো-বা মমতার দলের কর্মসূচি বানচাল করে দেওয়ার অভিপ্রায় নিয়ে একেবারে শেষ মুহূর্তে ট্রেন বাতিলের খবর জানানো হয়েছিল। কিন্তু তাদের উদ্দেশ্য অবশ্য পূরণ হয়নি। 
এই ঘটনা যদি প্রতিহিংসাপরায়ণ প্রতিশোধের অন্যতম চরম উদাহরণ হয়, তাহলে পদ্ম ক্ষেত্রে কর্মসূচি চূড়ান্ত হওয়ার আগে ট্রেন ভাড়া দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে এক চূড়ান্ত হাস্যকর ও প্রভুভক্তির নিদর্শন রাখল সেই রেলই। খবরে প্রকাশ, আগামী ২৯ নভেম্বর ধর্মতলার ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে জনসভা করতে চায় বিজেপি। তৃণমূলের শহিদ দিবসের কর্মসূচিও সেখানেই হয়। তৃণমূলের শহিদ দিবসের চেনা ছবিকে টেক্কা দিতে বিজেপির পক্ষ থেকে হচ্ছে ঢালাও আয়োজন। সমাবেশে লোক ভরাতে খরচ করাও হচ্ছে দেদার টাকা। সেই সভায় থাকার কথা দলের অন্যতম শীর্ষ নেতা অমিত শাহের। বড় নেতার সভায় বড় আয়োজনে লোক আনতে ৮টি ট্রেন ভাড়া করেছে বঙ্গ বিজেপি। নিয়ম মেনে ভাড়া ও সিকিউরিটি ডিপোজিট বাবদ তারা নাকি প্রায় এক কোটি টাকা জমাও করেছে। কিন্তু ঘটনা হল, যখন এই রেল ভাড়া করা হয় তখন ২৯ নভেম্বরের জনসভাই চূড়ান্ত হয়নি। কারণ সেখানে প্রস্তাবিত কর্মসূচির ভাগ্য ঝুলে রয়েছে আদালতে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ সেখানে উপস্থিত হবেন কি না তাও পুরোপুরি নিশ্চিত নয়। অথচ সেই কর্মসূচিকে দেখিয়ে রেল কর্তৃপক্ষ ৮টি ট্রেন ভাড়া দিতে রাজি হয়ে গেল! একেই বলে, নির্লজ্জ চাটুকারিতার এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ। অমিত শাহের জনসভায় লোক আনতে ট্রেন ভাড়া দেবে না রেলমন্ত্রক, কার ঘাড়ে ক’টা মাথা আছে? এখানে জলের মতো পরিষ্কার বিষয়টি হল, রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা। এই মুহূর্তে মোদি সরকারের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি সরব দলটির নাম তৃণমূল কংগ্রেস। সংসদের ভিতরে ও বাইরে কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে জোরালো বক্তব্য তুলে ধরছেন তৃণমূল, মমতা ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়রা। এরই পাল্টা প্রতিশোধ ছিল তৃণমূলের কর্মসূচিতে ট্রেন বাতিলের ঘটনা। 
ট্রেন বাতিল একটা উদাহরণ মাত্র। কখনও বঞ্চনা, অর্থনৈতিক অবরোধ তৈরি করে বিপাকে ফেলার চেষ্টা, কখনও রাজনীতির ময়দানে লড়াইয়ে হেরে ঘুরপথে হেনস্তা করা—বিরোধীদের জন্য এইসব দাওয়াইকেই হাতিয়ার করে সরকার চালাচ্ছে গেরুয়া শিবির। এই মুহূর্তে ১০০ দিনের কাজ, আবাস যোজনার মতো রাজ্যের এক লক্ষ ১৫ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প আটকে রেখেছে কেন্দ্রীয় সরকার। উদ্দেশ্য পরিষ্কার, মমতার সরকারকে অর্থনৈতিক দিক থেকে বিপাকে ফেলা। পাশাপাশি নানা অভিযোগ তুলে রাজ্যের শাসক দলের নেতা-মন্ত্রীদের ফাঁসানোর চেষ্টা। বস্তুত রাজ্যে এখন প্রধান বিরোধী দলের ভূমিকায় ইডি, সিবিআইকে দেখা যাচ্ছে। রেল বাতিলের ঘটনাও ছিল মমতার দলকে হেনস্তা করা, বিপদে ফেলার চেষ্টা। ২০২৪-এর ভোটের আগে পর্যন্ত এসব চলবে ধরেই নেওয়া যায়। এমনকী তা বাড়তেও পারে। কিন্তু এই পথে যে বিশেষ লাভ হবে না, ২০২১-এর বিধানসভা ভোটে তা টের পেয়েছে বিজেপি। তবু চব্বিশের ভোটের আগেও মোদি সরকারের প্রতিশোধের রাজনীতি ও বিমাতৃসুলভ আচরণ দিনের আলোর মতোই স্পষ্ট হয়েছে। জনতা জনার্দন কিন্তু সবই দেখছে।
8Months ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

পারিবারিক অশান্তির অবসানে গৃহ সুখ ও শান্তি বাড়বে। প্রেমের ক্ষেত্রে শুভ। কর্মে উন্নতি। উপার্জন বৃদ্ধি।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.২৬ টাকা৮৪.৩৫ টাকা
পাউন্ড১০৬.৪৬ টাকা১০৯.১২ টাকা
ইউরো৮৯.৭৬ টাকা৯২.২০ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা