সম্পাদকীয়

প্রচেষ্টা, প্রার্থনা, আশা

চারধাম তীর্থপথ কেন্দ্রিক জাতীয় সড়ক প্রকল্পের অংশ। উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশী এলাকায় সিন্ধিয়ারা থেকে বারকোটের মধ্যে তৈরি করা হচ্ছে সাড়ে চার কিমি দীর্ঘ টানেল বা সুড়ঙ্গ। অঞ্চলটি সাধারণভাবে ভূমিধস ও বন্যা প্রবণ। এছাড়া সবসময় ঝোলানো রয়েছে ভূমিকম্পের খাঁড়া। এমনই একটি বিপজ্জনক জায়গায় কাজ করছিলেন ৫০-৬০ জন শ্রমিক, তাঁরা মূলত ‘পরিযায়ী’। আচমকা ১২ নভেম্বর, রবিবার সকালে সেখানে নেমে আসে বিরাট ধসের বিপর্যয়। সৌভাগ্যক্রমে টানেলের মুখের দিকে যাঁরা ছিলেন, তাঁরা কোনওরকমে বাইরে বেরিয়ে আসেন। কিন্তু বেশিরভাগ শ্রমিকই ওই ফাঁদ থেকে আর বেরতে পারেননি। আটকে পড়া শ্রমিকের সংখ্যা প্রথমে ৪০ বলে জানা যায়, ছ’দিন বাদে পরিষ্কার হয় যে ওই দলে আছেন আরও একজন—অর্থাৎ বিপদে পড়া শ্রমিকের  সংখ্যা ৪১! বিপর্যয়ের পর পেরিয়ে গিয়েছে পুরো একসপ্তাহ। তাঁদের বাইরে বের করার আনার একাধিক কৌশল ফলপ্রসূ তো হয়ইনি, উল্টে ১৭ নভেম্বর, শুক্রবার বিকেলে নতুন বিপদের আঁচ মিলেছে। বিকট আওয়াজ বেরিয়ে এসেছে টানেলের ভিতর থেকে। স্বভাবতই নতুন এবং বড় আকারের ধসের আশঙ্কায় মন আরও খারাপ হয়ে গিয়েছে সকলের। 
সতর্কতা হিসেবে, সেই থেকে উদ্ধারের জন্য খনন কাজ থামিয়ে দেওয়া হয়েছে। দুর্গত শ্রমিকদের সঙ্গে বেতার ব্যবস্থায় যতটা যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে, তাতে বোঝা যাচ্ছে ক্ষীণ হয়ে এসেছে অনেকেরই কণ্ঠস্বর। স্বভাবতই তাঁদের শরীর ও মনের অবস্থা অনুমান করা কঠিন নয়। তাঁদের ক্ষেত্রে কোষ্ঠকাঠিন্য, মাথার যন্ত্রণা, বেড়ে চলা উদ্বেগ, ট্রমা ইত্যাদিরই আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। বিপর্যয়টি এমন ভয়াবহ যে, আপাতত আপ্রাণ চেষ্টা এবং প্রার্থনা ও আশা করে যাওয়ার বিকল্প নেই। উদ্ধারে নিশ্চিত সাফল্যের জন্য আপাতত পাঁচটি উপায়ের কথা ভাবা হয়েছে। দেশ-বিদেশের বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ও সহায়তায় এগনো হচ্ছে সেইমতোই। ‘রসদ, উপায় ও নতুন ভাবনার কোনও অভাব নেই’ বলে ভরসা জোগাচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর। সকলের প্রত্যাশা প্রতিটি প্রচেষ্টা যেন পুরোপুরি সফল হয়। সব ক’জন শ্রমিককে যেন শীঘ্রই ফেরানো সম্ভব হয় অক্ষত দেহে ও সুস্থ মনে। উন্নত জীবনযাপন প্রতিটি মানুষের চাহিদা ও স্বপ্ন। উন্নত জীবন আমাদের আনন্দ দেয় ও সুখী করে। কিন্তু আমরা ভেবে দেখি না, এর পিছনে শ্রমিক শ্রেণির অবদান কতখানি, বস্তুত অপরিমেয়—বিশেষ করে যে মানুষগুলি একের পর এক ঝুঁকিপূর্ণ প্রকল্পের রূপায়ণে নিবেদিত প্রাণ। এই সমস্ত কাজ তাঁদের পেশা, এসব করেই তাঁদের পেট‍ ও সংসার চলে—অবশ্যই সত্য, কিন্তু বিনিময়ে প্রাপ্য মজুরি মিটিয়ে দেওয়াই যথেষ্ঠ নয়, তাঁদের নিরাপত্তার গ্যারান্টিও জরুরি। শ্রমিকের ব্যক্তিগত নিরাপত্তার সঙ্গে প্রাপ্য তাঁর পরিবারের জন্য উপযুক্ত আর্থিক সুরক্ষা। 
উত্তরকাশীর প্রকল্পে ইতিমধ্যেই বিরাট গাফলতি চিহ্নিত হয়েছে—তিন কিমির অধিক দৈর্ঘ্যের সুড়ঙ্গ নির্মাণের ক্ষেত্রে বিকল্প এক বা একাধিক রাস্তা প্রস্তুত রাখতে হয়, যাতে বিপৎকালে শ্রমিকরা নিরাপদ স্থানে সরে যেতে পারেন। নির্মাণ-পরবর্তী জরুরিকালেও এই ধরনের রাস্তার উপযোগিতা অক্ষুণ্ণ থাকে। এই প্রকল্পের নকশায় এমন রাস্তা রাখতে বলা হলেও বাস্তবে তা উপেক্ষা করা হয়েছে বলে অভিযোগ। উদ্ধার কাজ এজন্যই জটিলতর হয়ে উঠেছে বলে মনে করছেন অনেকে। এই ধরনের ক্ষেত্রে সমস্যা-পীড়িত ব্যক্তিদের কারও কারও মধ্যে হাইপোক্সিয়ার (টিস্যু পর্যন্ত অক্সিজেন সরবরাহে ঘাটতি) সমস্যা দেখা দিতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। ক্লস্টোফোবিয়ার (বন্ধ স্থানে আটকে পড়ার আতঙ্ক) লক্ষণও প্রকট হতে পারে অদূর ভবিষ্যতে। তাই উদ্ধার-পরবর্তী-জীবনে কাউন্সেলিংয়ের উপর জোর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে ইন্ডিয়ান সাইকিয়াট্রিক সোসাইটি। ঘরে ফেরার পর প্রত্যেক শ্রমিক যেন যথাসম্ভব দ্রুত স্বাভাবিক হতে পারেন, সেই চেষ্টাই করতে হবে। এই পুরো দায়িত্ব পালনে রাষ্ট্র যেন কোনওভাবেই দায়সারা মনোভাবের পরিচয় না দেয়। উত্তরকাশীর বিপর্যের কারণও দ্রুত খুঁজে বের করে ভবিষ্যতের জন্য পাঠ হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। প্রয়োজনে কঠোর হতে হবে এই ঘটনার পিছনে কারও গাফিলতি বা অপদার্থ চিহ্নিত হলে। এটি শুধু মানবিক দাবি বা প্রত্যাশা নয়, জাতীয় জীবনেও এই সাফল্যের গুরুত্ব বিরাট। কর্তৃপরায়ণ রাষ্ট্রের তরফে মানবিক দৃষ্টান্ত স্থাপিত হলে সেটি ভবিষ্যতের উন্নয়ন প্রকল্পগুলির পক্ষেই ভালো হবে। চাহিদা মতো আরও বেশি দক্ষ, সাহসী ও নিষ্ঠাবান শ্রমিক-কর্মচারী পেতে এটি জরুরি। ভুলে গেলে চলবে না যে, উন্নয়নে যতিচিহ্ন বলে কিছু হয় না, এটি জীবনের মতোই চলমান একটি প্রক্রিয়া।         
8Months ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

পারিবারিক অশান্তির অবসানে গৃহ সুখ ও শান্তি বাড়বে। প্রেমের ক্ষেত্রে শুভ। কর্মে উন্নতি। উপার্জন বৃদ্ধি।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.২৬ টাকা৮৪.৩৫ টাকা
পাউন্ড১০৬.৪৬ টাকা১০৯.১২ টাকা
ইউরো৮৯.৭৬ টাকা৯২.২০ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা