সম্পাদকীয়

এবার শুধুই রবি

বিড়ালটা প্রথম রাতেই মেরে দেওয়া যেত। গত সেপ্টেম্বরের ১৭ তারিখ কবিগুরুর বিশ্বভারতীকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ বা বিশ্ব ঐতিহ্য ক্ষেত্র হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনেস্কো। সেই স্বীকৃতির কথা জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাসনা গৃহ ও রবীন্দ্র ভবনের সামনে শ্বেতপাথরের ফলক বসান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তাতে দেখা যায় রবীন্দ্রনাথের নামই নেই! আছে আচার্য হিসেবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও তৎকালীন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর নাম। এমন নির্লজ্জ অপকর্মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঢেউ আছড়ে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে। এর প্রতিবাদে সরব হন প্রায় সব রাজনৈতিক দলের নেতা ও বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। প্রতিবাদ জানান বঙ্গ বিজেপির নেতারা এবং রাজ্যপালও। ঘরে বাইরের প্রবল চাপে শেষ পর্যন্ত উপাচার্যের কৃতকর্মের প্রায়শ্চিত্ত করতে নির্দেশ দিয়েছে মোদি সরকারের শিক্ষামন্ত্রক। বলা হয়েছে, নতুন ফলক তৈরি করতে। তাতে শুধু নাম থাকবে বিশ্বকবির। উপাচার্য তো বটেই, এমনকী আচার্য হিসাবে মোদির নামও থাকবে না ফলকে। ফলকে রবি ঠাকুরের নাম ছাড়াও কী লেখা থাকবে তার একটা খসড়া পাঠিয়েছে হঠাৎ তৎপর হয়ে ওঠা শিক্ষামন্ত্রক। তাতে বলা হয়েছে, এই বিশ্ববিদ্যালয় ১৯০১ সালে গ্রামীণ বাংলায় স্থাপিত হয়েছিল। ভারতের প্রাচীন সংস্কৃতি অনুযায়ী সর্বজনীন মানবতার পাঠ পড়ানো হতো এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। ১৯২১ সালে বিশ্বভারতী আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়। এখানে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য ভাবধারার বিনিময় হয়ে থাকে। রবীন্দ্রনাথের বিশ্ব শান্তির ভাবনাকে এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিল। বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য ও জ্ঞানের সাধনায় সারা বিশ্বকে এক ছাতার তলায় আনা হয়েছে বিশ্বভারতীতে। ফলক বিতর্কের অবসান ঘটাতে শিক্ষামন্ত্রকের এই ভূমিকায় সন্দেহ নেই সকলেই খুশি। কিন্তু যে নির্দেশ বা বার্তা দিতে দু’দিনের বেশি সময় লাগারই কথা নয়, শিক্ষামন্ত্রক সেই পদক্ষেপ করতে সময় নিল প্রায় দু’মাস! তবে মজার বিষয় হল, এই নির্দেশ যখন এল তখন বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর গায়ে ‘প্রাক্তন’ তকমা লেগে গিয়েছে। তিনি উপাচার্যের চেয়ারে থাকাকালীন নীরব দর্শকের ভূমিকায় ছিলেন দিল্লির কর্তারা। তবু ভালো, বিলম্বে বোধোদয় হয়েছে। এজন্য অবশ্যই কেন্দ্রের অভিনন্দন প্রাপ্য। 
কিন্তু যাঁর সৃষ্টিকে স্বীকৃতি দিল ইউনেস্কো, তাঁর স্রষ্টাকে বাদ দিয়ে নিজের নাম খোদাই করার স্পর্ধা দেখালেন কী করে প্রাক্তন উপাচার্য, সেই অত্যন্ত জরুরি ও সঙ্গত প্রশ্ন উঠেছে। বিদ্যুৎবাবু বীরভূমের ভূমিপুত্র। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের এই কৃতী অধ্যাপক পড়াতেন দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু শান্তিনিকেতনের জেলার মানুষ হিসেবে তিনি বিশ্বভারতী, রবীন্দ্রনাথ ও এখানকার ঐতিহ্য সম্পর্কে কিছু জানেন না এটা ভাবা কঠিন। আসলে এমন গর্হিত কাজ করার জন্য লজ্জাহীন, হঠকারী ও বেপরোয়া মনোভাব দেখিয়েছেন প্রাক্তন উপাচার্য। সবচেয়ে বড় কথা হল, এই নিয়ে সর্বত্র তোলপাড় শুরু হলেও একটা খারাপ দৃষ্টান্ত স্থাপনের জন্য তাঁকে অনুশোচনা করতে দেখা যায়নি। বরং সদ্য প্রাক্তন এই উপাচার্যের চেয়ারে থাকা ইস্তক ফলক না বদলানোর সিদ্ধান্তে অনড় থেকেছেন!
বিদ্যুৎ চক্রবর্তী অবশ্য তাঁর পাঁচবছরের মেয়াদকালের শুরু থেকে বারবার বিতর্কে জড়িয়েছেন। গোটা বিশ্বে বিশ্বভারতীয় বিশেষ আকর্ষণ পৌষমেলা ও বসন্তোৎসব। ঘটনা হল, তাঁর আমলে পৌষমেলার কার্যত পঞ্চত্ব প্রাপ্তি ঘটেছে। আর বসন্ত উৎসব হচ্ছে নানা বিধি নিষেধের বেড়াজালে। স্বেচ্ছাচারী প্রাক্তন উপাচার্য নোবেল-জয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের বিরুদ্ধে বিশ্বভারতীর জমি দখলের অভিযোগ তুলেছেন। এও বলেছেন, অমর্ত্য ‘আসল’ নোবেল পাননি। তাঁর এই ‘দুর্বিনীত’ আচরণে স্তম্ভিত হয়েছে গোটা রাজ্য। দেখা গিয়েছে, যখনই বিশ্বভারতী নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে তখনই উপাচার্য তাঁর জবাব দিয়েছেন শাসক দলের ভাষায়। বস্তুত উপাচার্যের চেয়ারে বসে তিনি যে ভাষায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ করেছেন, তা বলতে মোদি-শাহদের মতো গেরুয়া শিবিরের তাবড় নেতারাও দু’বার ভাববেন। পড়ুয়া-শিক্ষকদের একটা বড় অংশের সঙ্গেও তাঁর তিক্ত সম্পর্ক হয়েছে। এই সবকিছুর নিট ফল হল, কেন্দ্রীয় সরকারের সংস্থা এনআইআরএফ-এর ২০২২ সালে প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী দেশের সেরা ১০০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় ৬৪ থেকে ৯৮ নম্বরে নেমে গিয়েছে রবীন্দ্রনাথের বিশ্বভারতী। এসব কারণেই হয়তো প্রাক্তন উপাচার্যকে মেয়াদ শেষের পরেও পদে রাখেনি কেন্দ্রীয় সরকার। এর থেকে দেখে আশা করা যায়, অদূর ভবিষ্যতে প্রাক্তন উপাচার্যকে নিশ্চয় অন্যকোনও সরকারি পদে বসানোর মতো আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নেবে না দিল্লির সরকার। এও আশা করা যায়, রবীন্দ্র-ঐতিহ্যকে আগলে রাখতে এবার যেন বিশ্বভারতীতে একজন ‘প্রকৃত’ শিক্ষাবিদকেই স্থায়ী উপাচার্য করে পাঠায় দিল্লি।
8Months ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

পারিবারিক অশান্তির অবসানে গৃহ সুখ ও শান্তি বাড়বে। প্রেমের ক্ষেত্রে শুভ। কর্মে উন্নতি। উপার্জন বৃদ্ধি।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.২৬ টাকা৮৪.৩৫ টাকা
পাউন্ড১০৬.৪৬ টাকা১০৯.১২ টাকা
ইউরো৮৯.৭৬ টাকা৯২.২০ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা