সম্পাদকীয়

জন্মদিন: গান্ধী থেকে মোদি

জন্মদিনই বোধহয় উদযাপনের সুন্দরতম মুহূর্ত। নিজের জন্মদিন পালিত হলে প্রতিটি সাধারণ মানুষ খুশি হয়। আর সাধারণ মানুষ পালন করে বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব এবং মনীষীদের জন্মদিন। বহুকাল পূর্বে আবির্ভূত সব মহামানবের জন্মদিন আমাদের জানা থাকে না। সেক্ষেত্রে আমরা পালন করি তাঁদের জন্মতিথি। জন্মদিন ঘিরে প্রিয়জনদের শুভেচ্ছা সাধারণ মানুষের বাঁচার আনন্দ বাড়িয়ে তোলে। আর বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব এবং মনীষীদের জন্মদিন বা জন্মতিথি পালন করা হয় তাঁদের শুভেচ্ছা পেতে। তাঁরা অগণিত মানুষের আদর্শও বটেন। তাই জন্মদিন বা জন্মতিথি উদযাপন উপলক্ষ্যে মহান ব্যক্তিত্বদের আদর্শ নতুনভাবে স্মরণ করা হয়। সেসব সাধারণ মানুষের মধ্যে বেশি করে ছড়িয়ে দেওয়ার অবকাশ হিসেবেও বেছে নেওয়া হয় দিনটিকে। লক্ষণীয় যে, জন্মদিন, মৃত্যুর পরেও কিছুকাল উদযাপনের মুহূর্ত গণ্য হয় সামান্যসংখ্যক মানুষের ভাগ্যে। সমকালে বিখ্যাত বহু ব্যক্তিকে ঘিরে উন্মাদনাও কালে কালে ক্ষীণতর হয়ে আসে। ব্যতিক্রম রাম, কৃষ্ণ, মহাবীর, বুদ্ধ, খ্রিস্ট, মহম্মদ, চৈতন্য, নানক, রামকৃষ্ণ, বিবেকানন্দ প্রমুখ মহামানব। বিশ্বের নানা প্রান্তের কোটি কোটি মানুষ বস্তুত তাঁদের ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে গিয়েছেন। প্রেমের এই বাঁধন কোনওদিন ছিঁড়ে যাওয়ার নয়, প্রজন্মের পর প্রজন্ম তা বহন করে চলেছে। তাই মহামানবদের জন্মদিন ও জন্মতিথি আমরা শুধু পালন করি না, সেগুলি স্বতঃস্ফূর্ত বাৎসরিক উৎসবেরই চেহারা নেয়। এইসব উৎসব মানবজাতিকে শুদ্ধ হওয়ার এবং অগ্রগমনের প্রেরণা জোগায়।
ভারতের রাজনীতিতে সর্বকালের সেরা ব্যক্তিত্ব নিঃসন্দেহে মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী। নিজের জন্মদিন পালন নিয়ে গান্ধী মহারাজের বরাবরের আপত্তি ছিল। এমনকী ২ অক্টোবর তাঁর জন্মদিনে তিনি বিশেষ কোনও বার্তাও দিতে চাননি কখনও। ব্যতিক্রম একবারই ঘটেছিল, ১৯৪৪ সালের ২ অক্টোবর, তাঁর ৭৫তম জন্মদিনে। স্বাধীনতা সংগ্রামের অর্থ সংগ্রহের জন্য কস্তুরবা গান্ধী মেমোরিয়াল ট্রাস্ট গঠন করে ৭৫ লক্ষ টাকা সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়। কিন্তু ওই বিপুল পরিমাণ অর্থ সংগ্রহের ব্যাপারে সকলেরই সংশয় ছিল। কারণ কংগ্রেসের অনেক শীর্ষস্থানীয় নেতাই তখন কারাবন্দি। কিন্তু আশ্চর্য এই যে, গান্ধীজির আহ্বানে সাড়া দিতে দেশবাসী দ্বিধা করেনি—সংগ্রহের পরিমাণ এক কোটি টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। তহবিল গান্ধীজিকে হস্তান্তর উপলক্ষ্যে সেবাগ্রাম আশ্রমে একটি জাঁকজমপূর্ণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। মূল উদ্যোগ নিয়েছিলেন গান্ধীজির ঘনিষ্ঠ শিল্পপতি যমুনালাল বাজাজের কন্যা মদালাসা। বিরাট মঞ্চ বানিয়ে অসংখ্য প্রদীপের আলোয় ঝলমলে রঙ্গোলির আয়োজন করেন তিনি। সেখানে কস্তুরবা দেবীর একটি বিরাট ছবিও ছিল। কিন্তু গান্ধীজির কাছে এর আগাম কোনও খবর ছিল না। বিষয়টি জানামাত্রই তিনি ভীষণ ব্যথিত বোধ করেন এবং মদালাসাকে বকাবকি করেন। গান্ধীজি বলেন, ‘হাজার হাজার গ্রামের মানুষ রান্নার তেল পায় না, আর সেই তেল পুড়িয়ে প্রদীপ জ্বালাবে তুমি!’ তাঁর এক জীবনীকার লিখেছেন, গান্ধীজির নির্দেশে প্রদীপ প্রজ্বলনের সেই অনুষ্ঠান সেদিন বাতিল করতে হয়েছিল। সেবাগ্রামের মোট ৭৫ মিনিটের অনুষ্ঠানে গান্ধীজিও ছিলেন। 
সেবার কংগ্রেসের পতাকা উত্তোলন এবং প্রভাতফেরির মধ্য দিয়ে দেশজুড়েই তাঁর জন্মদিন পালিত হয়। এছাড়া ছিল খাদিবস্ত্র বিক্রয় এবং চরকা কাটা। স্বাধীন ভারতে একবারই তাঁর জন্মদিন পালনের সুযোগ পেয়েছিল দেশবাসী—১৯৪৭ সালের ২ অক্টোবর। জীবদ্দশায় শেষ জন্মদিনে গান্ধীজি যে বার্তা দিয়েছিলেন, সেটাই সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ—‘একজনের জন্মদিন পালনের সর্বোত্তম উপায় হল কাজে আরও গতি সঞ্চার এবং প্রার্থনা। তোমরা সত্যিই যদি আমার জন্মদিন পালন করতে চাও তবে কারও ভিতরে কোনও উন্মাদনা রাখবে না এবং মনের মধ্যে পুষে রাখা যাবতীয় ক্রোধ দূর করে ফেলবে।’ গান্ধীজিকে সামনে রেখেই রাজনীতিতে চূড়ান্ত সফল হওয়ার স্বপ্ন দেখেন আজকের রাজনীতির কারবারিরা। কিন্তু তাঁর শিক্ষা গ্রহণ করেছেন ক’জন? সামান্য থেকে একটু নামী নেতা—অনেকেই চান তাঁদের প্রতিটি জন্মদিনের অনুষ্ঠান স্মরণীয় করে তুলতে। এবার এই পংক্তিতে নরেন্দ্র মোদিও—দেশের প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং! ১৭ সেপ্টেম্বর, রবিবার তাঁর জন্মদিনের অনুষ্ঠানটিকে সরকার জন্মসপ্তাহ উদযাপনের চেহারা দিয়েছে। এজন্য নয়া সংসদ ভবন এবং বিপুল অঙ্কের একাধিক সরকারি প্রকল্পকেও ব্যবহার করা হচ্ছে। বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, স্বঘোষিত ‘বিশ্বগুরু’র নেতৃত্বে জি-২০ আয়োজনের ‘সাফল্যের’ কৃতিত্ব দীর্ঘায়িত করাই এই বহ্বারম্ভের উদ্দেশ্য। আর এখানেই প্রশ্ন, মোদিসহ আজকের নেতারা প্রাক্তন হওয়ার পরও কি দেশবাসী তাঁদের এইভাবে ‘ভালোবাসায়’ ভরিয়ে রাখবে? এমন কোন অনবদ্য আদর্শ বা দৃষ্টান্ত রেখে যাচ্ছেন তাঁরা—প্রশ্নটি নিজেদেরকেই করা উচিত তাঁদের।
10Months ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

পারিবারিক অশান্তির অবসানে গৃহ সুখ ও শান্তি বাড়বে। প্রেমের ক্ষেত্রে শুভ। কর্মে উন্নতি। উপার্জন বৃদ্ধি।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.২৬ টাকা৮৪.৩৫ টাকা
পাউন্ড১০৬.৪৬ টাকা১০৯.১২ টাকা
ইউরো৮৯.৭৬ টাকা৯২.২০ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা