বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
সম্পাদকীয়
 

নয়া রণকৌশল

ছক ভাঙা ছক। গতানুগতিকতা তাঁর না-পসন্দ। চমকেই তাঁর পারদর্শিতা। তিনি নরেন্দ্র মোদি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী। ভোটে জি-২০-র সাফল্যের ফায়দা তুলতে তাঁর মাত্রাতিরিক্ত সক্রিয়তা নজরে পড়ার মতো। জি-২০ সম্মেলন শেষে তিনি প্রায় নজিরবিহীনভাবে যে চমক সৃষ্টি করলেন তা হল, দু’মাসের মধ্যেই আবার জি-২০ ভার্চুয়াল সম্মেলনের ডাক। বোঝাই যাচ্ছে, জি-২০ মঞ্চটিকে তিনি তাঁর ভাবমূর্তি নির্মাণের জন্য ব্যবহার করতে চাইছেন! কারণ ভোট বড় বালাই। ‘মোদি ম্যাজিক’ এখন অস্তমিত। তাই নতুন কিছু চাই। তিনি এখন স্বঘোষিত বিশ্বগুরুর হয়ে ওঠার প্রক্রিয়াকে রাজনৈতিক স্বার্থে কাজে লাগাতে চাইছেন। বিশ্বগুরুর ভাবমূর্তি নিয়ে তিনি ভোটের ময়দানের ঝাঁপাতে চাইছেন। তাই প্রথা ভেঙে ফের নভেম্বরে জি-২০ করার প্রস্তাব দিয়েছেন। নামে প্রস্তাব হলেও আসলে এটি তাঁর সিদ্ধান্ত। এবং, আন্তর্জাতিক মহলকে চমকে দিয়ে এই সিদ্ধান্তটি তিনি কার্যত চাপিয়ে দিলেন অন্যদের উপর। দেশে কয়েকটি রাজ্যের আগামী বিধানসভা ভোটের আগে এই ভার্চুয়াল সম্মেলনের ডাক দিয়েছেন অদ্ভুত এক যুক্তিকে খাড়া করে। বলেছেন, ভারতের সভাপতিত্ব সমাপ্ত হতে এখনও আড়াই মাস বাকি। তাই আমাদের উচিত আরও একটি সম্মেলন করা। সেখানেই আমরা যাচাই করব, আমাদের গ্রহণ করা সিদ্ধান্ত কতদূর বাস্তবায়িত হল। এখানেই প্রশ্ন, মাত্র আড়াই মাসের ব্যবধানে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন আদৌ কতটা সম্ভব? আরও প্রশ্ন, প্রোটোকল অনুযায়ী পরের বছর যেখানে সম্মেলন হবে সেই ব্রাজিলের প্রেসিডেন্টের হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে সভাপতিত্ব হস্তান্তর করার পর এহেন ‘দাদাগিরি’ কতটা শোভন? আসলে কয়েকটি রাজ্যের বিধানসভা ভোট, সর্বোপরি ২০২৪-এর ‘ফাইনাল ম্যাচ’ লোকসভা ভোট প্রচারের আলোকবৃত্তে থাকতে জি-২০-র সাফল্যকে কাজে লাগাতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি তো জি-২০-র মঞ্চটিকেই মোদিময় করে তুলেছিলেন!
দেশ এখন নানা সমস্যায় জর্জরিত। বেকারত্ব রেকর্ড ছুঁয়েছে। মূল্যবৃদ্ধির ধাক্কায় নাজেহাল দেশের মানুষ। বিরোধী ‘ইন্ডিয়া’ জোট ক্রমশ শক্তি বাড়াচ্ছে। দুর্নীতির অস্ত্রে বিদ্ধ মোদি সরকার। কেন্দ্রীয় সরকার দিশাহীন হয়ে পড়ছে। এহেন পরিস্থিতিতে অপ্রিয় সত্যকে আড়াল করতে নতুন কিছু চাই। তাই মোদি সরকার এমন কোনও সাফল্যকে হাতিয়ার করে এগতে চাইছে, যাতে প্রচারের মঞ্চে বলা যায় নরেন্দ্র মোদির জন্যই এই প্রথম ভারতে এমন একটি বড় আন্তর্জাতিক সম্মেলন হতে পারল, যার সুফল পাবে সারা বিশ্ব। সেই ‘বিশ্বগুরু’র ছকের হিসেব কষেই তিনি এগচ্ছেন। এক্ষেত্রে বিশ্বকল্যাণের মোড়কে মোদির ক্যারিশ্মা তুলে ধরতে বিশ্বে তাঁর আধিপত্য বিস্তারের বিষয়টিকে প্রচারের হাতিয়ার করতে মরিয়া চেষ্টা হচ্ছে। গেরুয়া শিবির ইতিমধ্যেই প্রচার করতে শুরু করেছে, মোদিজির দর্শনেই ‘এক বিশ্ব, এক পরিবার, এক ভবিষ্যৎ’ সম্ভব হচ্ছে। মোদি জমানায় হওয়া এই জি-২০ সম্মেলন বিশ্বকে আরও বাসযোগ্য করার পথে, সবাইকে একজোট করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখল। বলা হচ্ছে, জি-২০-র সাফল্য ভারতের কূটনৈতিক ক্ষেত্রে এক স্মরণীয় মুহূর্ত তৈরি করল, যা প্রত্যেক ভারতবাসীর হৃদয়কে নাকি গর্বে ভরিয়ে দিয়েছে। অর্থাৎ জি-২০-র সাফল্যকে ভোটের প্রচারে তুলে ধরতে আসরে নেমে পড়েছেন বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব।
আসলে প্রধানমন্ত্রী মোদি মানেই চমক। এবং, এই চমক সৃষ্টির জন্য তিনি কখন কী করে বসবেন তা হয়তো তাঁর দলের অন্দরমহলই আঁচ করতে পারে না। যাঁর জমানায় বিদ্বেষ বিভাজনের রাজনীতি মাথাচাড়া দিয়েছে, তিনিই ভোটের স্বার্থে কখনও সামনে আনেন জাতীয় ভাবাবেগ, দেশপ্রেম, হিন্দুত্ব, আরও কত কিছু! এবার আনছেন ‘বিশ্ব কল্যাণের বাণী’! মোদি জমানায় স্বচ্ছ ভারত, দুর্নীতিমুক্ত ভারত, কালো টাকা উদ্ধার—এসব ভাঁওতাবাজি এখন দেশবাসী জেনে গিয়েছে। এসব নিয়ে প্রচারে আর বিশেষ সুবিধা হবে না বুঝেই এখন নতুন ট্যাগলাইন বেছে নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। সেটা হচ্ছে বিশ্বমঞ্চে ভারত কতটা এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু যিনি নিজ দেশের দেশবাসীর কল্যাণ করতে অপারগ, বলা ভালো, ব্যর্থ হয়েছেন, তিনি শোনাচ্ছেন বিশ্বকল্যাণের কথা! স্বঘোষিত বিশ্বগুরুতে উত্তীর্ণ হওয়ার এই মরিয়া চেষ্টা ভোটবাক্সে কতটা প্রভাব ফেলবে সেটা লাখ টাকার প্রশ্ন। পেটে ভাত না থাকলে কি বিশ্বকল্যাণের বাণী আম জনতার মগজে ঢুকবে? এভাবে কি আদৌ ভোটে ফায়দা তুলতে পারবে গেরুয়া শিবির?

12th     September,   2023
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ