বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
সম্পাদকীয়
 

আশঙ্কার পূর্বাভাস

টানা তিনবার প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে বসার জন্য তাঁর পাখির চোখ ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচন। ‘মোদি ম্যাজিক’ আর হিন্দুত্বের তাস খেলে সেই ফাইনাল ম্যাচে জিততে মরিয়া বিজেপি। অন্যদিকে গেরুয়া শিবিরকে আটকাতে সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে চাইছে বিরোধীরা। রাজ্য-রাজনীতির বাধ্যবাধকতাকে দূরে ঠেলে দিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে এককাট্টা হতে বদ্ধপরিকর মমতা, রাহুলরা। সন্দেহ নেই, মহাশক্তিধর যুযুধান এই দুই পক্ষ শেষপর্যন্ত রণাঙ্গনে মুখোমুখি হবে, নাকি বিজেপির বিরুদ্ধে ছত্রভঙ্গ বিরোধীদের দেখা যাবে—তা সময় বলবে। কিন্তু ’২৪-এর ফাইনালের আগে কর্ণাটকের থাপ্পড় হজম করার পর এবার বাকি চার রাজ্যে বিধানসভা ভোটেও অশনিসঙ্কেত দেখছে পদ্মবাহিনী। রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড় ও তেলেঙ্গানা রাজ্যে এবছরই ভোট। এর মধ্যে রাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশ নিয়ে বিজেপির অভ্যন্তরীণ দলীয় রিপোর্ট ও সঙ্ঘ পরিবারের চোখ স্পষ্ট মোদিবাহিনীর সর্বনাশ দেখতে পাচ্ছে। সদ্য অনুষ্ঠিত কর্ণাটকে বিজেপির ভরাডুবির কারণ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে ‘মোদি ম্যাজিক’ ও হিন্দুত্বের প্রচারকে তির্যক ভাষায় আক্রমণ করা হয়েছে সঙ্ঘের মুখপত্র ‘অর্গানাইজার’-এ। তাতে কর্ণাটকের উদাহরণ টেনে বলা হয়েছে, শুধুমাত্র মোদির ক্যারিশমা ও হিন্দুত্বকে হাতিয়ার করে ভোটে জেতা যাবে না। বিভিন্ন রাজ্যে তাদের কিছু মন্ত্রীর বিরুদ্ধে যে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে তাকে গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে। সঙ্ঘের এই সতর্কবার্তার মধ্যেই রাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশে বিজেপির পরাজয়ের ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে দলের অভ্যন্তরীণ প্রাথমিক রিপোর্টে। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে দীর্ণ এই দুই রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিজেপির অনুকূল নয় বলেও প্রাথমিক সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়েছে। নেতৃত্বের আশঙ্কা, মধ্যপ্রদেশে প্রবল সরকার-বিরোধী হাওয়া এবং রাজস্থানে কংগ্রেস সরকারের চমকপ্রদ জনমোহিনী নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি সোনিয়া-রাহুলের দলকে জয়ের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে পারে।
কোনও সন্দেহ নেই, কর্ণাটকে কংগ্রেসের বিপুল জয় শতাব্দী প্রাচীন দলটির শরীরে বাড়তি অক্সিজেন জুগিয়েছে। দক্ষিণের এই রাজ্যের ফলাফল লোকসভা ভোটের আগে আক্ষরিক অর্থেই মোদিবাহিনীকে কড়া চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড় করিয়েছে। তাই মোদিমুখ দেখিয়ে যে ভোটে জেতা কঠিন, সেই সারসত্যটা বুঝে গিয়েই রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়ে সিঁদুরে মেঘ দেখছে সঙ্ঘ পরিবার এবং বিজেপির সমীক্ষা। নিজেদের ঘরের মধ্যেকার এই পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি বিভিন্ন এগজিট পোলের সমীক্ষাও বিজেপির ভরাডুবির ভবিষ্যদ্বাণী করেছে। এবছরের প্রতিমাসে পৃথক জনমত সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, বিজেপির আসনসংখ্যা ক্রমশ কমছে। জানুয়ারিতে এক সমীক্ষায় মধ্যপ্রদেশে বিজেপিকে ১০৩টি আসন দেওয়া হল, ফেব্রুয়ারিতে তা কমে দাঁড়ায় ৯৫-এ, তার পরের মাসগুলিতে আসনসংখ্যা নেমে হয়েছে ৮০, ৭০, ৬৫ এবং ৫৫। অন্যদিকে, রাজস্থানে অশোক গেহলট ও শচীন পাইলটের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব থাকলেও প্রতিটি সমীক্ষাতেই শাসক দল কংগ্রেসকেই এগিয়ে রাখা হয়েছে। সমীক্ষা ও দলীয় রিপোর্টের নির্যাস অস্বস্তি বাড়িয়েছে মোদিবাহিনীর। 
দুই রাজ্যে বিজেপির সম্ভাব্য হাল খারাপ হওয়ার কারণ হিসেবে মূলত দলের প্রবীণ নেতাদের গুরুত্ব না-দেওয়া এবং গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথা বলা হয়েছে। কর্ণাটকে বিজেপির প্রবীণ নেতা ইয়েদুরাপ্পাকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখার ভালোরকম খেসারত দিতে হয়েছে মোদি-শাহদের। একইভাবে রাজস্থানে বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়া এখন কার্যত বাতিলের খাতায়। সেখানে মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সির দাবিদার চন্দ্রপ্রসাদ যোশি ও সতীশ পুনিয়া। মধ্যপ্রদেশে কংগ্রেস সরকার ভেঙে দিয়ে বিজেপির সরকার গঠন, সেই সরকারের বিরুদ্ধে জনরোষ, বিজেপির প্রবীণ নেতা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কৈলাস যোশির ছেলের কংগ্রেসে যোগদানের মতো ঘটনায় গোবলয়ের এই রাজ্যে কংগ্রেসকে এগিয়ে রেখেছে। একইরকম অবস্থা ছত্তিশগড়েও। তেলেঙ্গানায় বিজেপির জয়ের সম্ভাবনা হাতেগোনা কিছু আসনে। বলা হচ্ছে, কর্ণাটকের ফলাফল থেকে শিক্ষা নিয়ে এই রাজ্যগুলিতে প্রবীণ ও স্থানীয় নেতাদের গুরুত্ব দিয়ে লড়াইয়ে নামার কৌশল নিয়েছে বিজেপি। কিন্তু এই কৌশল বদলালেও অনেক দেরি হয়ে গেল না তো? আসলে কথার মারপ্যাঁচ আর অসত্য প্রতিশ্রুতি দিয়ে যে আর ভোটারদের মন জয় করা যাবে না, তা ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে। বিজেপি থেকে মুখ ফেরাচ্ছে বিভিন্ন রাজ্যের মানুষ। মোদি সরকার-বিরোধী হাওয়া বইতে শুরু করেছে। ২০১৪-র ভোটের আগে যা তাদের জন্য মোটেই সুখবর নয়। তাই একটা আশঙ্কা তাড়া করছে পদ্মশিবিরকে।

10th     June,   2023
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ