সম্পাদকীয়

যস্মিন দেশে যদাচার

নায়ক দামোদর সাভারকর। ইতিহাস ঘাঁটলে মনে হবে কোনও উপন্যাসের রহস্যজনক চরিত্র, যাঁর জীবনের গতিধারা পরতে পরতে বদলেছে। হিন্দুত্ববাদীরা মনে করেন, বীর সাভারকর ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে গান্ধী-প্যাটেল-নেতাজির মতো প্রথম সারির যোদ্ধা। বিরোধীদের দাবি, আন্দামান জেলে থাকাকালীন নিজের মুক্তির জন্য ক্ষমা চেয়ে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের ‘প্রভু’দের সাতবার চিঠি লিখেছিলেন তিনি। ইতিহাস বলছে, প্রথমে ইংরেজদের আনুগত্য, পরে হিন্দুত্বের প্রবক্তা হিসাবে বাকি জীবন কাটিয়েছেন তিনি। তাঁকে কখনওই সেভাবে গান্ধী নেতাজির সঙ্গে একাসনে বসানো যায় না। এই সাভারকর দ্বিজাতি তত্ত্বের কথা বলতে গিয়ে লিখেছিলেন, হিন্দু ও মুসলিমদের জন্য দুটি আলাদা দেশ হতে হবে। তার জন্য ভারতকে ভাগ করার দাবি জানাতে হবে। পরে অবশ্য দেশভাগের জন্য তিনি গান্ধীজির দিকে আঙুল তুলেছিলেন। এমন এক ‘বিতর্কিত’ চরিত্রই মোদি জমানায় সবচেয়ে চর্চিত নাম হয়ে উঠেছে। হিন্দুরাষ্ট্র গঠনের যে লক্ষ্য নিয়ে এগচ্ছে সঙ্ঘ পরিবার এবং বিজেপি, তার স্রষ্টা সাভারকরকে ঈশ্বরের আসনে বসিয়ে প্রায় প্রতিনিয়ত প্রচার চলছে। এবার যাবতীয় যুক্তি তর্ক ও চক্ষুলজ্জার মাথা খেয়ে তাঁর ১৪০তম জন্মবার্ষিকীর দিন ২৮ মে নতুন সংসদ ভবন উদ্বোধনের কথা জানিয়েছে মোদি সরকার! সন্দেহ নেই, দেশের সংসদীয় ইতিহাসে এ বড় লজ্জার কথা। দেশের প্রতিষ্ঠাতাদের অসম্মানও। নতুন সংসদ ভবন উদ্বোধনের আদর্শ দিন হতে পারত সাধারণতন্ত্র দিবস বা স্বাধীনতা দিবসের দিনটি। অথবা দেশের সংবিধান ৭৫ বছরে পা দেবে যেদিন, সেই ২৬ নভেম্বরও উদ্বোধনের আদর্শ দিন হতে পারত। অনেকেই মনে করছেন, আদর্শ হতো সংবিধানের মূল রচয়িতা আম্বেদকর বা জাতির জনক মহাত্মা গান্ধী, দেশের বীর সন্তান বল্লভভাই প্যাটেল বা দেশনায়ক নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিনটিকে এর জন্য বেছে নিলে। এর কোনওটাই না করে কেন সাভারকরের জন্মদিনটি—সেই জোরালো প্রশ্ন উঠছে। কেন্দ্রের উদ্দেশ্যও পরিষ্কার।
বিতর্ক এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভূমিকা নিয়েও। ২০২০ সালে নতুন সংসদ ভবন তৈরির শিলান্যাসের মতো এর উদ্বোধনও করবেন তিনি। কিন্তু এর জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত ব্যক্তি অর্থাৎ রাষ্ট্রপতি থাকতে তিনি কেন উদ্বোধন করবেন? প্রশ্নটি সঙ্গত। দেশের সংবিধান অনুযায়ী সরকারের প্রধান মুখ প্রধানমন্ত্রী। আর সংসদ হল আইনসভার অধীন। আত্মপ্রচারের বিষয়টিকে বাদ দিলে তাহলে কোন যুক্তিতে তাঁর উদ্বোধন শোভা পায়? নিদেনপক্ষে লোকসভার অধ্যক্ষ বা রাজ্যসভার চেয়ারম্যান এই নয়া ভবনের উদ্বোধন করলে এত প্রশ্ন উঠত না। নয়া ভবনের উদ্বোধন প্রসঙ্গে প্রশ্নের কোনও যুক্তিসঙ্গত উত্তর নেই সরকারি তরফে। আসলে সাভারকরের মতো নরেন্দ্র মোদিকেও দেশের বীর সন্তান বলে মনে করে পদ্মশিবির। মাত্র কয়েকদিন আগে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দিল্লিতে এক অনুষ্ঠানে মোদিকে গান্ধীজির সঙ্গে নির্দ্বিধায় এক আসনে বসিয়েছেন! তাঁর দাবি ছিল, আধুনিক ভারত গঠনে মহাত্মা গান্ধী, বল্লভভাই প্যাটেল, মোরারজি দেশাই ও নরেন্দ্র মোদির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। বলাবাহুল্য, এই চারজনই গুজরাতের ভূমিপুত্র। অতএব সাভারকরের জন্মদিনে নয়া সংসদ ভবনের উদ্বোধন হতে পারলে প্রধানমন্ত্রী মোদি তাঁর উদ্বোধক হতেই পারেন। যস্মিন দেশে যদাচার।
ভারতের বর্তমান সংসদ ভবনটি ব্রিটিশ আমলে ১৯২৭ সালে তৈরি। রাজ্যসভা ও লোকসভা মিলিয়ে মোট ৮০০ জন সাংসদের বসার ব্যবস্থা রয়েছে এই ভবনে। বলা হচ্ছে, বর্তমান সময়ে ৯৬ বছরের পুরনো এই সংসদ ভবনে নানা সমস্যা হচ্ছে। বিশেষত দেশের জনসংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় দুই কক্ষ মিলিয়ে সাংসদের সংখ্যাও বেড়ে ১২০০ তে দাঁড়াবে। স্থান সংকুলানের সমস্যা সমাধানে তাই এই নতুন ভবনের প্রয়োজন। অর্থাৎ সাংসদদের জন্য আসন বাড়াতে প্রায় ১৩ একর জমির উপর চারতলা সংসদ ভবন তৈরি হচ্ছে। এর জন্য খরচ? সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, নতুন ভবন তৈরির খরচ বেড়ে ১২৫৯ কোটি টাকা দাঁড়িয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, যে দেশে সব নাগরিক পেট ভরে দু’বেলা খেতে পায় না সেখানে এত বিপুল টাকা খরচের কতটা প্রয়োজন ছিল? তথ্য বলছে, ২০২০ সালে এই প্রকল্পের শিলান্যাসের সময় ভারতে কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা ৫০ লক্ষ ছাড়িয়েছিল। মৃতের সংখ্যা ছিল ৮০ হাজার। সেই পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর মতো গুরুত্বপূর্ণ নির্মাণ কাজকে জরুরি ভিত্তিতে অগ্রাধিকার না দিয়ে সংসদ ভবন তৈরির কাজে জলের মতো টাকা ঢেলেছে মোদি সরকার! তাছাড়া, সংসদকে কতটা মান্যতা দেয় এই সরকার সেই জরুরি প্রশ্নটাও রয়েছে। বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করতে মরিয়া এই সরকার। তারা সে নজিরও বারবার রেখেছে। সংসদে বিরোধী সাংসদদের বক্তব্যের সময়ে মাইক বন্ধ হয়ে যায়! বেকারি, মূল্যবৃদ্ধির মতো গুরুত্বপূর্ণ বহু ইস্যুতে সংসদে আলোচনার সুযোগই থাকে না! মোদিবাহিনী গণতন্ত্রের এই শীর্ষ প্রতিষ্ঠানটিকে যে প্রায় তামাশার জায়গায় পরিণত করার চেষ্টা করেছে তাতে কোনও সন্দেহ নেই। তবু সস্তা হাততালি ও আত্মপ্রচারের ঢাক পেটানোর বাসনায় মোদিবাহিনীর এইসব কারবার চলছে সমানে। যার নেতৃত্বে প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং।
14Months ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

পারিবারিক অশান্তির অবসানে গৃহ সুখ ও শান্তি বাড়বে। প্রেমের ক্ষেত্রে শুভ। কর্মে উন্নতি। উপার্জন বৃদ্ধি।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.২৬ টাকা৮৪.৩৫ টাকা
পাউন্ড১০৬.৪৬ টাকা১০৯.১২ টাকা
ইউরো৮৯.৭৬ টাকা৯২.২০ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা