বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
সম্পাদকীয়
 

রইল বাকি এক

গণতন্ত্রের তিনটি স্তম্ভ বারবার প্রশ্নের মুখে পড়েছে। মানুষের মৌলিক চাহিদা ও অধিকার যখনই বিপন্নপ্রায় হয়ে উঠেছে প্রশ্নগুলি বেশি উত্থাপিত হয়েছে তখনই। মানুষ সংশয় প্রকাশ করেছে আইনসভা বা সংসদ, এগজিকিউটিভ বা সরকার এবং মিডিয়া বা সংবাদ মাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে। সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য ব্যক্তিস্বাধীনতা, ব্যক্তিগত গোপনীয়তাসহ প্রতিটি সাংবিধানিক অধিকাররক্ষাও মানুষের একান্ত চাহিদা। কিন্তু কোনও রাষ্ট্রে গণতন্ত্র দুর্বল হতে থাকলে এইসমস্ত অধিকার অলঙ্কারমাত্র হয়ে শোভা দেয়, মানুষের চাওয়া-পাওয়ার অঙ্গ আর থাকে না। তখন দেশবাসীর আশ্রয়স্থল বলতে অবশিষ্ট থাকে কেবল আদালত বা গণতন্ত্রের চারটি স্তম্ভের অন্যতম বিচার বিভাগ। স্বাধীন ভারত, রাষ্ট্রপরিচালনার সংসদীয় গণতান্ত্রিক মডেল গ্রহণ করেছে। সেই হিসেবে ভারতই বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের মান্যতা পায়। কিন্তু একটি আদর্শ গণতন্ত্র নাগরিকদের যে-সকল অধিকার এবং সুযোগ-সুবিধা দিতে অঙ্গীকারবদ্ধ, বলা বাহুল্য, ভারত রাষ্ট্র তার অনেক কিছুই দিতে পারেনি। আরও পরিষ্কার করে বলা যায়, গণতান্ত্রিকতার অনুশীলনের ত্রুটিবিচ্যুতির কারণে সাধারণ মানুষের বহু অধিকারই নস্যাৎ হয়ে গিয়েছে। তাই আন্তর্জাতিক স্তরে ভারতীয় গণতন্ত্র ‘পারশিয়ালি ফ্রি ডেমোক্রেসি’ কিংবা ‘ইলেক্টোরাল অটোক্রেসি’ হিসেবেই পরিচিত। এই সমস্ত খোলসের আড়ালে, ভারতে প্রকারান্তরে স্বৈরতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থাই কায়েম রয়েছে বলা হচ্ছে না কি? 
এর জন্য ভারতের অন্যায্য রাজনৈতিক সংস্কৃতিকেই দায়ী করতে হয়। সংবিধান বহু দলের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডকে স্বাগত জানালেও, সর্ববৃহৎ বা শাসক দলের এক ও একমাত্র লক্ষ্য হয়ে ওঠে ‘বিরোধীমুক্ত’ ব্যবস্থা কায়েম করা। তার ফলে রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা ও লড়াইতে পেশিবল এবং অর্থনির্ভরতা বৃদ্ধি পায়; রাজনীতির দুর্বৃত্তায়ন ও অর্থায়নই গ্রাস করে নির্বাচন এবং প্রশাসনিক যন্ত্রকে। কোনও সন্দেহ নেই, ভারতের সাম্প্রতিক গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি এই চক্রব্যূহেই প্রবেশ করেছে। সংসদের ভিতরে ও বাইরে বিরোধিতার পরিসর ক্রমশ ছোট হয়ে আসছে। প্রভাবশালী মিডিয়ার একাংশকেও ‘হ্যাঁ হ্যাঁ বলা সঙ’ বানাতে বদ্ধপরিকর সরকার। আর গোপন নেই যে, সরকার তাতে অনেকাংশে সফলও হয়েছে। সিবিআই এবং ইডির মতো অত্যন্ত মর্যাদাসম্পন্ন কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলির অপব্যবহারের অভিযোগ নিয়ে বিরোধীরা দীর্ঘদিন যাবৎ সরব। আয়কর বিভাগও ‘অবাধ্য’ বিরোধীদের জব্দ করার হাতিয়ার ওঠে অনেক ক্ষেত্রে। নরেন্দ্র মোদির সরকার চায়—সিএজি, এনএসও, আরবিআই, জাতীয় নির্বাচন কমিশন প্রভৃতিও সরকারের সুরে সুর মিলিয়ে চলুক। সরকারের এই ধরনের একতরফা চাহিদা কখনওই ন্যায্য নয়, বরং স্বৈরশাসনের স্পষ্ট লক্ষণ। 
এই ধরনের চাহিদার কোনও সীমা থাকে না, তা চূড়ান্তরূপে সর্বগ্রাসী। ভারতীয় গণতন্ত্র সংবিধানকেই সর্বোচ্চ আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছে। কিন্তু মোদি সরকারের কর্মপদ্ধতি সংবিধানের এই সুপ্রিমেসিকেই যেন সর্বক্ষণ চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে এবং তার ভিতর দিয়ে প্রকট হচ্ছে সংসদ ও সরকারের সুপ্রিমেসি প্রতিষ্ঠার মতলব। সরকারের এই অন্যায় বাসনার সামনে অবশিষ্ট অন্তরায়ের নাম বিচার বিভাগ। তার এবংবিধ মতলব রুখতে জনস্বার্থে একের পর এক মামলা হয়ে থাকে। বলা বাহুল্য, এই ধরনের মামলায় সরকারের পরজয়ই বহুলাংশে নিয়মে পরিণত হয়েছে। স্বভাবতই আদালত বা বিচার বিভাগের উপর খুশি থাকার কারণ সরকার খুঁজে পায় না। সরকার তাই যেকোনওভাবে বিচার বিভাগের উপরেও তার একচ্ছত্র কর্তৃত্ব চায়। তারা চায়, বিচার বিভাগও আর বেসুরো গাইবে না। এই ইচ্ছেপূরণ তখনই সম্ভব, যখন হাইকোর্টগুলি এবং সুপ্রিম কোর্ট সরকারের পছন্দের বিচারপতিতে ভরে থাকবে। বিচারপতি নিয়োগের জন্য যে কলেজিয়াম ব্যবস্থা রয়েছে, তা নস্যাৎ করতে মরিয়া আইনমন্ত্রক। শনিবার দিল্লিতে আয়োজিত এক কনক্লেভে আইনমন্ত্রী কিরেন রিজিজু পরিষ্কার করে দিয়েছেন, বিচারপতি নিয়োগে সরকারকেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকারী দেখতে চান তাঁরা। সরকারের এই ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েও প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় পরিষ্কার করে দিয়েছেন, আইন বিভাগের এতে কোনও সায় নেই। আমরা জানি না, সরকার এবং আইনসভার সর্বগ্রাসী চিন্তার সামনে বিচার বিভাগের স্বাধীনতাও আর কতদিন অবশিষ্ট থাকবে। শুভবুদ্ধিসম্পন্ন সব মহলের, এই ব্যাপারে বিচার বিভাগেরই পাশে থাকা কর্তব্য। দেশ আগামী দিনে স্বৈরতান্ত্রিক শাসকের হাতের পুতুলটি হয়ে উঠবে কি না, তা এই লড়াইয়ে বিচার বিভাগের জয়-পরাজয়ের উপর বহুলাংশে নির্ভর করবে।

20th     March,   2023
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ