বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
সম্পাদকীয়
 

ঐক্য ঐক্য খেলা

বিজেপির অন্দরের লড়াই আর গোপন নয়। এনডিএ নামক গেরুয়া জোটও ক্রমশ সোনার পাথরবাটিতে রূপান্তরিত হচ্ছে। তবু নরেন্দ্র মোদির স্বৈরশাসন জারি রয়েছে অবাধে। তার এক ও একমাত্র কারণ, বিরোধীদের মধ্যে অনৈক্য। গান্ধীজি আমৃত্যু সংগ্রাম করেছিলেন অস্পৃশ্যতার বিরুদ্ধে। অন্যদিকে, বিজেপি-বিরোধী দলগুলির রকমসকম দেখে মনে হয়, তারা অস্পৃশ্যতার রাজনীতিতেই শান দিয়ে চলেছে। কেউ কারও ছোঁয়া এবং ছায়া সহ্য করতে পারে না। ২০১৪ সালে ইউপিএ সরকারের পতন ছিল বহুলাংশে এই ভ্রান্ত রাজনীতির অবদান। উনিশেও তারা শোধরায়নি। তাই চব্বিশে হ্যাটট্রিক করার তাক করে বসে আছে মোদি অ্যান্ড কোম্পানি। নরেন্দ্র মোদি আর একবার ভিকট্রি স্ট্যান্ডে হাসিমুখে দাঁড়াতে পারলে যুগপৎ বিজেপি এবং অকংগ্রেসি রাজনীতির নামের পাশে ‘ইতিহাস’ শব্দটি লেখা হবে। রাজনীতির কোনও অধ্যায় প্রতিপক্ষের কাছে জমি ছেড়ে দেওয়ার কথা লেখে না। প্রতিপক্ষকে সবক শেখানোই রাজনীতির লড়াইয়ের শেষকথা। কিন্তু একদশকের অবিজেপি রাজনীতির গতিপ্রকৃতি তার বিপরীত সাক্ষ্যই দিচ্ছে। গত পাঁচ-সাত বছরে অবিজেপি দলগুলি ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কথা যত বলেছে, তার মধ্যে অনৈক্যের বার্তা প্রকট হয়েছে ততোধিক। তাই হাজারো দুর্বলতার মাঝেও, বিজেপি বারবার আত্মবিশ্বাস জাহির করার হিম্মত দেখিয়েছে। কোনও সন্দেহ নেই, চব্বিশের ভোটের আগে বাইরের এই রূপের প্রদর্শনে গেরুয়া শিবির সর্বস্ব পণ করবে। 
বিজেপির বিজয়রথ রুখে দেওয়ার একটাই রাস্তা—অবিজেপি দলগুলির বেনজির ঐক্য। কারণ সরকারের বিরুদ্ধে ফুঁসছে বেশিরভাগ মানুষ। জিনিসপত্রের অগ্নিমূল্য, ব্যাপক বেকারি ও বেরোজগারি তাদের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে। ধর্মীয় মেরুকরণ ও ইতিহাসের বিকৃতির ঘটনায় দেশে-বিদেশে ভূলুণ্ঠিত হয়েছে ভারতের মর্যাদা। ব্যক্তিস্বাধীনতা ও নাগরিক অধিকার হরণের খতিয়ান বৃহত্তম গণতন্ত্রকে বিরাট প্রশ্নচিহ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। করসন্ত্রাস, কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলির অপব্যবহার, নির্বাচন কমিশন ও আদালতের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের চেষ্টা, নানা ক্ষেত্রে জুমলা এবং শ্রমিক, কৃষক ও প্রবীণদের উপর লাগাতার আক্রমণ নস্যাৎ করেছে এই সরকারের গ্রহণযোগ্যতা। অবিজেপি দলগুলির সামনে এত বড় সুযোগ একদশকে আর আসেনি। এটা কি তারা হেলায় হারাবে? বেশিরভাগ অবিজেপি দলের অতিসাম্প্রতিক ঐক্যপ্রচেষ্টাকে তাই বিলম্বিত বোধোদয় বলেই প্রশংসা করতে হয়। তারা অন্তত দুটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে এককাট্টা হতে পেরেছে। আমরা জানি, ইস্যু দুটি হল আদানি এবং মহিলা সংরক্ষণ বিল। ৭ ফেব্রুয়ারি লোকসভায় কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী আদানি ইস্যুতে ছয়টি গুরুতর প্রশ্ন রাখেন। মাস পেরিয়ে গেলেও মোদি তার জবাব দিতে পারেননি। ‘হাম আদানি কে হ্যায় কৌন’ কটাক্ষ সিরিজে নাস্তানাবুদ হয়েও দমছে না সরকার। আদানির বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করার বদলে বিরোধীদের বিরুদ্ধে এজেন্সি লেলিয়ে দেওয়ার মারপ্যাঁচ তারা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। 
তাই বিরোধীরা তাদের আন্দোলন বুধবার সংসদ থেকে সড়কে নামিয়ে আনতে বাধ্য হয়। বিজেপি বিরোধী ১৮টি দলের সাংসদ-প্রতিনিধিরা একযোগে ইডি দপ্তর অভিযানে শামিল হন। হিন্ডেনবার্গ রিপোর্টকে সামনে রেখে যৌথ সংসদীয় তদন্ত কমিটি গঠনের দাবিতেও অনড় তাঁরা। কংগ্রেস সভাপতি ও এমপি মল্লিকার্জুন খাড়্গের লেটারহেডে দেওয়া চিঠিতে সই করেন ১৮টি দলের এমপিরা। অন্যদিকে, মহিলা সংরক্ষণ বিলকে সামনে রেখে বুধবার নয়াদিল্লিতে বিরোধীরা আরও একদফায় এক হওয়ার চেষ্টা করেন। কর্মসূচির আহ্বান করেন কেসিআর-কন্যা কে কবিতা। মহিলা বিল সংসদে পাশের দাবিতে কবিতা ১০ মার্চ দিল্লির যন্তরমন্তরে একদিনের অনশন ধর্মঘটও পালন করেন। সেদিন শামিল হন অন্তত নয়টি দলের প্রতিনিধিরা। আর বুধবার তাঁর ডাকে সাড়া দেন ১৩টি অবিজেপি দলের নেতৃত্ব। কবিতা আরও ঘোষণা করেছেন, মহিলা বিল পাশের দাবিতে তাঁদের কর্মসূচি বর্ষব্যাপী জারি থাকবে। লক্ষণীয় যে, প্রথমোক্ত আন্দোলন সবরকমে এড়ানো দুটি উল্লেখযোগ্য দলের নাম তৃণমূল কংগ্রেস এবং এনসিপি। এরপর দ্বিতীয় আন্দোলনে গরহাজির ছিল কংগ্রেস এবং তৃণমূল। মোদি প্রশাসনের দমন-পীড়ন এবং বৈষম্যের রাজনীতির শিকার কমবেশি সবক’টি অবিজেপি পার্টি। সিঙ্গল ইঞ্জিন রাজ্যগুলিকেও নিত্য এর চড়া মাশুল মেটাতে হচ্ছে। তাহলে এই দু-চারটি দলের তরফে এমন ইচ্ছাকৃত গরহাজিরা কিংবা ‘একলা চলো’র কারণ কী? এতে তাদেরও কি রাজনৈতিক লাভালাভ কিছুমাত্র হবে? দেওয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়ানো আম পাবলিক জানতে চায়, স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে যখন অল আউট খেলার বিকল্প নেই, তখন এই কৌশল তাকেই অক্সিজেন জোগাবে না তো?

17th     March,   2023
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ